ক্রিয়েটিভ: পার্ট ০১
দূর্যোগ মাল্টিমিডিয়ার ক্রিয়েটিভ হেড পোষ্টের জন্য লোক খোঁজা হচ্ছে । ইন্টারভিউ দিতে এসেছে কয়েকশ লোক । ম্যাক্সিমাম ই উরাধুরা টাইপ । পথহারা মুহিত ও এসেছেন । পড়নে ফতুয়া, মেয়েদের ডিভাইডার উপরে হলুদ রংয়ের মাফলার ।
দূর্যোগ মাল্টিমিডিয়ার সিওও রিদওয়ান সালমান জিজ্ঞাসা করলেন "চুল কাটেননা কেন, কি হইছে?" তার চ এর উচ্চারণ চ আর ছ এর মাঝামাঝি ।
"জ্বি স্যার চুল কাটলেও আমি পথহারা মুহিত না কাটলেও পথহারা মুহিত"
"জ্বি না চুল কাটলে আপনি ভদ্র মুহিত, আর না কাইটা আপনি পথহারা.."
" স্যার আমি ক্রিয়েটিভ লাইনের লোক ...."
মেজাজ বিগড়ে গেলো রিদওয়ান সাহেবের " শোনেন মি: পথহারা, আপনারে একটা বাজে ডার্টি জোকস বলি, কিছু মনে কইরেননা, এক টয়লেটের ইউরিনালে পাশাপাশি মূত্র বিসর্জন করছিলেন এক বাঙ্গালী আর এক ব্ল্যাক ম্যারিকান । ব্ল্যাকের বিশাল জিনিস দেইখ্যা বাঙ্গাল কইল, ভাই কেমন কি? হাউ ডিড ইউ মেইক ইট লাইক দিস ? ব্ল্যাক বললো, এই কমোডে আইসা প্রতিদিন দশবার কইরা বারি দিবেন্, এইভাবে একমাস চলবো । যাহোক একমাস পরে আবার সেই ব্ল্যাকের সাথে দেখা হলে বাঙ্গাল বলেন ভাই একমাসে তো প্রচুর বারি দিলাম কিন্তু কিছুইতো হইলোনা । উত্তরে ব্ল্যাক মহাশয় বললো, সাইজ না হইলে কি হইবো, কালারটাতো সেইম হয়্যা গেছে ।"
"কেন এই ডার্টি জোকসটা বললাম বুঝেছেন ?"
"জ্বিনা স্যার "
" গান গান?"
"জ্বি স্যার "
" গীটার বাজান ?
"জ্বি স্যার "
" গনজিকা সেবন করেন ?"
"জ্বি স্যার "
"কোন গায়ককে বেশী পছন্দ?"
"জ্বি স্যার বব মার্লে, আর আমাদের গুরু "
"ঠিক ই ধরছিলাম...,শুনেন পথহারা সাহেব, চুল বড় রাইখ্যা, গীটার হাতে গনজিকা সেবন করলে পথহারা হওয়া যায়, বব মার্লে হওয়া যায়না"
"এইটা কি?"
"জ্বি স্যার মাথা"
"ভিতরে কি?"
"জ্বি স্যার আমারটাতে ঘিলু, আপনারটাতে জানিনা স্যার "
উত্তর শুনে একটু নড়েচড়ে বসলেন রিদওয়ান সাহেব ।
"এই এডভারটাইজম্যান্ট টার দিকে তাকান । শ্যাম্পুর পেপার এড । কেমন হয়েছে ?"
"জ্বি স্যার ভালোই তবে আমার বমি বমি ভাব হয় ।"
"কি বলেন মিয়্যা, গানজা খায়া আসছেন নাকি ?"
"জ্বি স্যার ঢুকার আগে দুই স্টিক খেয়েছি, না খেলে এই এড দেখলে এইখানেই বমি কইরা দিতাম ।"
" জানেন এইটা ফেইসবুকে ৩০ লাখ লাইক পাইছে, বেষ্ট এড অফ ২০১৭, মিয়্যা গানজা খায়া মাথায় গু ঢুকছে আপনার ।"
" কি কইরা বললেন এইটা দেইখ্যা আপনার বমি বমি লাগে, আপনি কি প্রেগন্যান্ট নাকি?"
" জ্বি না স্যার, আপনারা জানেননা পৃথিবীতে ১২ জন পুরুষ মানুষের একজন হইলো কালার ব্লাইন্ড, আর ০.৫% নারীও তাই । যে কালার আপনারা ইউজ করছেন প্রায় ৮০%
কালার ব্লাইন্ড পুরুষ এই কালারটা দেখতে পায়না । এইটা তো পুরুষদের শ্যাম্পু না কি স্যার । তার মানে আপনার ৭% শতাংশ পুরুষ সেগমেন্ট এই কালারটা দেখতে পাচ্ছেনা । আমার ধারণা আপনিও কালার ব্লাইন্ড স্যার ।"
" হাউ ডেয়ার ইউ টেল মি এজ ব্লাইন্ড ।"
"জ্বি না স্যার ব্লাইন্ড বলিনি, বলেছি আমার ধারনা আপনিও কালার ব্লাইন্ড । এইখানে কয়েকটা শার্টের ছবি আছে । এগুলোর কালার বলুন ।"
"দেখলেন তো স্যার আপনি হালকা হলুদকে বললেন গ্রীন, সবুজকে বললেন রেড, আর হালকা পিন্ককে বললেন হোয়াইটিশ । স্যার আপনি সিভিয়ারলি কালার ব্লাইন্ড । ফেইসবুকে ৩০ লাখ লাইক সাময়িক । এরকম বহু লাইক নিয়ে বহু কোম্পানী ডুবে গেছে স্যার ।"
" আপনার কোম্পানীর ডিস্ট্রিবিউশানটা খুবই শক্তিশালী, তাই গু গোবরও বেচে দিতে পারছেন । আপনাদের এডভারটাইজমেন্ট গুলা এককথায় রাবিশ ।"
কথাগুলো বলেই হুরহুর করে বমি করে দিল পথহারা মুহিত ।
ক্রিয়েটিভ:পার্ট ০২
দূর্যোগ মাল্টিমিডিয়ার চাকুরীটা হয়েই গিয়েছিলো পথহারা মুহিতের । সে ক্রিয়েটিভ হেড পোষ্টে সিলেক্টেড হলেও তাকে প্রথম একমাস প্রসেস মেনেজমেন্টের হেড হিসাবে দায়িত্ব দেওয়া হলো । সি,ও,ও মি: রিদওয়ান সালমান তাকে বললেন
“মি: পথভুলা ও সরি মি: পথহারা আপনার কাজ হলো এই মাল্টিমিডিয়া কার্যরত সকল ইম্প্লয়ীদের এফিসিয়েন্সী বাড়াতে হবে ।“
তো পথহারা মুহিত প্রতিদিন আসেন আর বাথরুমের সামনে বসে থাকেন । তাকে আলাদা রুম দেওয়া হয়েছে । তার সাথেই এটাচড টয়লেটও আছে, কিন্তু তবুও তিনি কমন বাথরুমের সামনেই চেয়ার গেড়ে বসে থাকেন । প্রথমদিন কেউ বুঝতে না পারলেও , দ্বিতীয়দিন ব্যাপারটা প্রথম খেয়াল করেন হিউম্যান রিসোর্স অফিসার সোনামুনি দে । তিনি ই কম্প্লেন রেইজ করেন হেড অফ হিউম্যান রিসোর্স মোনা ইবনে মালের কাছে ।
ব্যাপারটা আরও কয়েকদিন পরে সি,ও,ও রিদওয়ান সাহেবের কানে আসলে উনি বলেন “আহ হা লোকটা ক্রিয়েটিভ , থাকুক না বসে । কারও তো কোন ডিস্টার্ব করছেনা |”
তো এভাবে এক মাস কেটে যায় । প্রথম মাসের স্যালারীর দিন ফিন্যান্স ম্যানেজার চিপা খান ( না উনার নাম চিপা নয়, তবে না চিপে একটি টাকার বাজেটও পাশ করতে চাননা আর নিজের পকেটের টাকা খরচের ব্যাপারেও খুব চিপা স্বভাবের হওয়ায় আনিস খান সাহেবকে সবাই চিপা খান নামে ডাকেন ।) সবার স্যালারী দিয়ে দিলেও পথহারা মুহিতের স্যালারীর সময় চুপ করে বসে থাকেন ।
পথহারা মুহিত আসলে চিপা খান জিজ্ঞাসা করেন, " কি ভাই কিসের স্যালারী, আপনি তো বাথরুমের সামনেই বসে থাকেন, কোন কাজই তো করেননি, তদুপরী আপনি অফিসের স্পেস নষ্ট করেছেন , কার্বন ডাই অক্সাইড ছেড়েছেন |”
এই কনভার্সেশানের মাঝে সিওও রিদওয়ান সাহেব আসলে উনি বলেন " তো হ্যা মি: পথহারা প্রথমে বলেন বসে বসে এই যে একমাস পার করলেন । কেন ?"
“জ্বি স্যার আপনি জানেন বোধহয়, পৃথিবীর বেশীরভাগ আবিস্কারই বসে বসেই হয়েছে । এই যেমন মি: চিপা খান থুক্কু মি: আনিসখান সাহেবের টেবিলে রাখা দুটি খাবারের আইটেমের কথাই বলি, প্রথমত: চা, কথিত আছে প্রায় ২৭০০+ বছর আগে চীনা সম্রাট শেন নাং চা গাছের তলে বসে গরম পানি খাচ্ছিলেন । বসেই ছিলেন তিনি । হঠাৎ একটি চা পাতা তার গরম পানির মধ্যে পরে এবং রং ছড়ায় । তো হার্বালিষ্ট শেন নাং তার স্বভাবসুলভ টেস্ট করলে দেখেন বাহ বেশ ভালোই জিনিসটা । ব্যাস আবিস্কৃত হলো চা । আর উনার টেবিলে রাখা দ্বিতীয় বস্তু আপেল গাছের তলে বসে থাকা নিউটন সাহেবের মাধ্যাকর্ষন আবিস্কারের কথাতো আপনারা সবাই জানেন । এছাড়াও মহানবী সা: , গৌতম বুদ্ধ সহ সকল ধর্ম প্রচারকেরই বসে বসে ধ্যানের কথাতো সবারই জানা । "
সিওও জিজ্ঞাসা করলেন " তো পন্ডিত মশাই, আপনি বসে বসে কি আবিষ্কার করলেন ?"
" জ্বি স্যার আপনার নিশ্চয়ই মনে আছে যে আপনি আমাকে একটা টাস্ক দিয়েছিলেন ইম্প্লয়ীদের এফিসিয়েন্সী বাড়ানোর ।"
" তো কি বের করলেন বাথরুমের সামনে বসে বসে ?"
"স্যার আপনি বোধহয় জানেননা যে, একজন এভারেজ আমেরিক্যান দিনে একবার বড় টয়লেটের জন্য ১২ মিনিট ব্যায় করে, এভাবে তাদের ৭০ বছরের আয়ুতে ২১৩ দিন শুধু বাথরুমের বড় কাজ করতেই ব্যায় করে । আর ছোট কাজ করতে ব্যায় করে আরও অনেক দিন । "
"আমেরিকানদের টয়লেটের হিসাব নিয়ে আপনার কাম কি ? মিয়্যা আপনি আজকে আবারো গানজা খাইছেন, তাই তো ।"
"জ্বি স্যার গাঁজা খেলেও আসল কথাটা বলি স্যার, আপনাদের ইম্প্লয়ীরা এভারেজে টয়লেটে বড় কাজের জন্য ২০ মিনিট, আর ছোট কাজের জন্য প্রায় ৫মিনিট ব্যায় করে, দিনে প্রায় এক ঘন্টা ব্যায় করে বাথরুমেই, যা যেকোন আমেরিকান অর্গানাইজেশানে কার্যরত ইম্প্লয়ীদের বাথ্রুমের পিছে ব্যায় কৃত সময়ের প্রায় দ্বিগুন ।"
“শিকাগোর ওয়াটার সেভার ফসেট কোম্পানীতো কয়েক বছর আগে ইম্প্লয়ীদের দৈনিক বাথরুম ব্যাবহারের টাইম ম্যাক্সিমাম ছয় মিনিট করে দিয়েছিলেন , এতে করে প্রোডাক্টিভিটি অনেক গুন বেড়ে গিয়েছিলো, কিন্তু পরে অবশ্য ইম্প্লয়ী অসোন্তোষ দেখা দেয় । যাহোক স্যার আপনাদের ইম্প্লয়ীদের বাথরুমে যাওয়ার সময়টা ২৫% কমালেই প্রোডাক্টিভিটি বাড়ানো যাবে । কারন প্রতিটা ইম্প্লয়ী ১৫ মিনিট করে সেভ করলে ১০০ ইম্প্লয়ী ১৫০০ মিনিট কাজের পিছে ব্যায় করবে ।"
" স্যার আপনাদের এই চিপা খান সাহেব অন্যদের চেয়েও বাথরুমে দশ মিনিট বেশি ব্যায় করেন, স্যার উনাকে বলুন, টয়লেটের টাইম অপচয় কমাতে, আর আমার এই মাসের স্যালারীটা দিয়ে দিতে ।"
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জানুয়ারি, ২০১৮ বিকাল ৪:২২