somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বপ্ন সুপারশপের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়দিনের শুনানিতে যুক্তি উপস্থাপন

৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ৮:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শুনানি ছিল ২৫ জুলাই ২০১৬, এবং সরি, আপডেট দিতে দেরি হইলো! প্রচণ্ড কাজের চাপ ছিল। সেদিন স্বপ্ন সুপারশপের পক্ষে চারজন আসছে, আর আমি একা। তাদের মধ্যে দুইজন ল ইয়ার, আর আমার পক্ষে কেউ নাই। মনে হইল হিংস্র নেকড়ের পালের মাঝখানে আমি নিঃসঙ্গ মেষশাবক!

প্রথমেই স্বপ্ন সুপারশপের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের অধীনে প্রথম অপরাধ ৪০ ধারা লঙ্ঘন নির্ধারিত মূল্যর অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় এবং দ্বিতীয় অপরাধ ৩৭ ও ৪৪ ধারা লঙ্ঘন মূল্যবৃদ্ধির স্টিকার মোড়কে না সাঁটানো সংক্রান্ত বিষয়ে আমার আনীত অভিযোগের প্রেক্ষিতে স্বপ্ন সুপারশপের ‘ভ্যাট ল ইয়ার’ আবোল তাবোল বলা শুরু করল যে তাদের এসি আছে, ট্রলি আছে, কাস্টমারকে গাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দেয়, গার্ড ক্রেতাকে স্যালুট দেয়, স্যার বইলা সম্বোধন করে – এই জন্য জিনিসপত্রের দাম বেশি রাখে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, “আপনি তো ল ইয়ার, আইনের কোন চিপায় এইসবের জন্য জন্য জিনিসপত্রের দাম বেশি রাখার অনুমোদন আছে বলেন? আর যদি তা আপনারা ‘সার্ভিস চার্জ’ বইলা রাখেন, তবে তা আপনারা নিজেরাই রাখবেন। তাহলে সে টাকা ভ্যাট হিসাবে রাখেন কেন? ভ্যাটের নামে নেয়া মানে এই টাকা সরকারকে দিতে হবে! এসি, ট্রলি এইসব আপনারা দেন না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দেয়?”

বেচারা আমার উপরে মহা বিরক্ত হইলো, তারপর এক মোটা সাইজের বই বাইর করল, বলল যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপণ অনুযায়ী সুপারশপ ৪% ভ্যাট প্রদান করবেন যা ভোক্তার নিকট হতে আদায়যোগ্য। ম্যাজিস্ট্রেট জিজ্ঞাসা করল আমার কিছু বলার আছে কিনা।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ (২০০৯ সনের ২৬ নং আইন) এর ৪০ ধারায় উল্লেখ রয়েছেঃ “কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধির অধীন নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে কোন পণ্য, ঔষধ বা সেবা বিক্রয় বা বিক্রয়ের প্রস্তাব করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”

আমি যাওয়ার আগেই নিচের তিনটা আইন ইন্টারনেট হতে ভালমত পইড়া গেছিলাম;

১. মূল্য সংযোজন কর আইন,১৯৯১, (১৯৯১ সনের ২২ নং আইন)
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=755

২. মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন,২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নং আইন)
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_pdf_part.php?id=1106

৩. ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ (২০০৯ সনের ২৬ নং আইন )
http://bdlaws.minlaw.gov.bd/bangla_all_sections.php?id=1014

এবং একই সাথে গুগলে সার্চ দিয়া জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের গেজেটগুলি দেইখা গেছিলাম। আমি এরপর একে একে যুক্তি উপস্থাপন শুরু করলাম:

৪০ ধারা লঙ্ঘনে প্রথম যুক্তিঃ
বাংলাদেশে কোন মোড়ক-আবৃত পণ্যে অবশ্যই MRP (Including VAT) অর্থাৎ ভ্যাট অন্তর্ভুক্ত করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য উল্লেখ থাকতে হবে। বাজারে প্রচলিত প্রায় প্রতিটা পণ্যেই তা রয়েছে। Liquid Anti-septic Dettol এর গায়ে লেখা MRP (Including VAT) 42 BDT কিন্তু তারা রাখে ৪৩ টাকা। আইন সম্পর্কে কেউ না জেনেও সাধারণ স্বল্প শিক্ষিত বা প্রান্তিক শ্রেণির মানুষ-ও সরাসরি স্পষ্টভাবে বলতে পারবেন যে এটা অতিরিক্ত। সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য-র উপরেও যদি অর্থ নেয়া আইনসঙ্গত হয়, তবে এই শব্দগুচ্ছ “সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য” সম্পূর্ণ অর্থহীন।

আইন কি বলে? মূল্য সংযোজন কর আইন, ১৯৯১ (১৯৯১ সনের ২২ নং আইন)এর ৭২/২ (চ) অনুযায়ী “করযোগ্য পণ্য কেবল নির্ধারিত মোড়ক, থলিয়া বা কোষে সরবরাহকরণ এবং যে মোড়ক, থলিয়া বা কোষে উহা সরবরাহ করা হয় তাহাতে উহার খুচরা মূল্য মুদ্রণ, উৎকীর্ণকরণ বা বুনন বাধ্যতামূলক”

৪০ ধারা লঙ্ঘনে দ্বিতীয় যুক্তিঃ
মুদি দোকান বা ফার্মেসি থেকে ডেটল কিনলে বাড়তি টাকা লাগবে না, স্বপ্ন সুপারশপ বাড়তি নিবে, এটাতো হতেই পারে না। এক বাংলাদেশে দুই আইন চলতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিক সমান অধিকার বা সুযোগ লাভ করবেন, তাই একই পণ্য কিনতে দুই ধরনের মূল্য রাষ্ট্রের নাগরিকের জন্য বৈষম্য স্বরূপ।

উল্লেখ্য বাংলাদেশের সংবিধানের ৭ (২) নম্বর অনুচ্ছেদ “জনগণের অভিপ্রায়ের পরম অভিব্যক্তিরূপে এই সংবিধান প্রজাতন্ত্রের সর্বোচ্চ আইন এবং অন্য কোন আইন যদি এই সংবিধানের সহিত অসমঞ্জস্য হয়, তাহা হইলে সেই আইনের যতখানি অসামঞ্জস্যপূর্ণ, ততখানি বাতিল হইবে৷” অনুযায়ী যদি বৈষম্য সৃষ্টিকারী কোন আইন বা গেজেট বাংলাদেশে ঘোষণা হয়েও থাকে তা জন্ম থেকেই অবৈধ।

৪০ ধারা লঙ্ঘনে তৃতীয় যুক্তিঃ
সুপার শপের উপর যে ৪% ভ্যাট বা কর আছে (আদৌ যদি থাকে) - সেটা আরোপ হবে তাদের নিজস্ব উৎপাদিত পণ্যর উপর। যেমন আড়ং নিজস্ব ব্রান্ডের পোশাক উৎপাদন করে, এই ক্ষেত্রে তা প্রযোজ্য হবে, (এবং স্বপ্ন সুপারশপের সম্ভবত নিজস্ব উৎপাদিত পোশাকের শোরুম রয়েছে ঢাকার কাজিপাড়া এলাকায়।) কিন্তু যে কোন মোড়ক-আবৃত পণ্যে যেমন সাবান, শ্যাম্পু, টিসুপেপার, ডেটল বা এই জাতীয় কিছু তারা তৈরি করেনি, তারা শুধুই মধ্যসত্ত্বভোগী। একজন মধ্যসত্ত্বভোগী কিভাবে অন্যের তৈরি পণ্যে বাড়তি মূল্য যুক্ত করে? ডেটল কোম্পানি নিজেরাই ভ্যাট নিচ্ছে এবং সরকারি কোষাগারে জমা দেয়। ডাবল টাক্সেশন কিভাবে যুক্তিসঙ্গত?

আরো পরিষ্কারভাবে বললে, কোন রেস্টুরেন্ট নিজস্ব বাবুর্চি দিয়ে চিকেন সুপ তৈরি করল, সেটা যেহেতু তাদের নিজস্ব উৎপাদিত, রেস্টুরেন্ট তার উপর ভ্যাট বসাতে পারে। কিন্তু ওয়াসা উৎপাদিত পানির বোতল ‘শান্তি’ যদি তার সাথে তারা বিক্রি করে, এটা তাদের নিজস্ব উৎপাদন নয়, তাই সেখানে বোতলের গায়ে মুদ্রিত ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’র অতিরিক্ত নেয়ার সুযোগ নেই।

৪০ ধারা লঙ্ঘনে চতুর্থ যুক্তিঃ
স্বপ্ন সুপারশপের প্রতিনিধি যে গেজেটের কথা উল্লেখ করেছেন, যার মাধ্যমে সুপারশপের উপর আরোপিত ৪% ভ্যাট ভোক্তার উপর আরোপ করা যায়, সেই ধরনের সুস্পষ্ট বক্তব্য সম্বলিত কোন গেজেট তারা দেখাতে পারেননি। কোথাও স্পষ্ট ভাবে বলা হয়নি যে, “সুপারশপের উপর ৪% ভ্যাট প্রযোজ্য এবং তা ভোক্তা প্রদান করবেন”। পুরো বিষয়টাই ঘোলা পানিতে মাছ শিকার।

বরং তার উল্টোটা-ই স্পষ্টভাবে আছে মূল্য সংযোজন কর আইন,১৯৯১ (১৯৯১ সনের ২২ নং আইন) এবং মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক আইন,২০১২ (২০১২ সনের ৪৭ নং আইন) এর প্রতিটা ছত্রে ছত্রে।

আরো উল্লেখ্য, মূল্য সংযোজন কর আইন,১৯৯১ (১৯৯১ সনের ২২ নং আইন) এর ২ক ধারা অনুযায়ী “আপাততঃ বলবৎ অন্য কোন আইন, বিধি, প্রবিধান, চুক্তি বা আইনের ক্ষমতাসম্পন্ন অন্য কোন দলিলে যাহা কিছুই থাকুক না কেন, এই আইনের বিধানাবলী প্রাধান্য পাইবে।” তাই এই জাতীয় তথাকথিত গেজেটের কোন অস্তিত্ব যদি থাকেও, তা জন্ম হতেই অবৈধ।

৪০ ধারা লঙ্ঘনে পঞ্চম যুক্তিঃ
বিগত ২৮ জুন ২০১২ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপণ ‘এস,আর,ও নম্বর-২৪২-আইন/২০১২/৬৫৯-মূসক’ এর ৪(গ) ধারা অনুযায়ী এবং পরবর্তীতে ২৭ জানুয়ারি ২০১৪ তে তার কিঞ্চিৎ সংশোধনী ‘এস,আর,ও নম্বর-১৮-আইন/২০১৪/৬৯৫-মূসক’ অনুযায়ী নির্দেশ হল এইরূপ “সুপারশপ, ঔষধ ও পেট্রোলিয়াম জাতীয় পণ্যর ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরবরাহের সময় মূল্য সংযোজনের হার ১৩.৩৩ শতাংশ হিসাবে গণনা করিয়া তাহার উপর ১৫% অর্থাৎ সরবরাহ মূল্যর উপর ২ শতাংশ মূসক প্রদেয় হইবে”

লক্ষ্য করুন, এটা ‘ব্যবসায়ী পর্যায়ে সরবরাহের সময়’, কোনভাবেই ‘ভোক্তা পর্যায়ে বিক্রয়ের সময় নয়’। আরো দেখুন, ‘সরবরাহ মূল্যর উপর ২ শতাংশ মূসক’, কোনভাবেই ‘বিক্রয় মূল্যর উপর ২ শতাংশ মূসক’ নয়। তাই ১৩.৩৩ শতাংশ হিসাব করেই ১৫% হয়, কোনভাবেই ১৫% এর উপর আরো ২ শতাংশ নয়।

৪০ ধারা লঙ্ঘনে ষষ্ঠ যুক্তিঃ
স্বপ্ন সুপারশপের বক্তব্য অনুযায়ী মুদি দোকানের মালিক-ও ভ্যাট দেন, তবে তা বছর শেষে – একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ, যা প্যাকেজ ভ্যাট। সুপারশপ-ও তা দেয় ৪% হারে, ইত্যাদি ইত্যাদি ... এক্ষেত্রে আমার প্রশ্ন, মুদি দোকানদার-তো তার প্রদেয় প্যাকেজ ভ্যাট নিজের পকেট থেকেই দিচ্ছেন, কোন মোড়কজাত পণ্যর গায়ে লিখিত ‘সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য’র অতিরিক্ত রাখছেন না। তাহলে স্বপ্ন চেইন শপ কোন যুক্তিতে তা ভোক্তার নিকট হতে আদায় করছেন?

৪০ ধারা লঙ্ঘনে সপ্তম যুক্তিঃ
স্বপ্ন সুপারশপের যদি মনে হয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের জারি করা প্রজ্ঞাপণ অগ্রহণযোগ্য বা ভিন্ন কোন প্রচলিত আইনের সাথে অ-সামঞ্জস্যপূর্ণ, তবে তারা বাংলাদেশের সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করবেন। সেটা না করে পণ্যের গায়ে লিখিত সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য-র অতিরিক্ত রেখে প্রচলিত অন্য আইন লঙ্ঘন করার কারন কি? তাদের লিগ্যাল এডভাইজার আছে, ভ্যাট এডভাইজার আছে – অথচ হাইকোর্টে যাওয়ার ক্ষমতা নাই? এটা হল কর্পোরেট ম্যানেজমেন্টের নমুনা!


উল্লেখিত বর্ণনা ও যুক্তি অনুযায়ী স্বপ্ন সুপারশপের বিরুদ্ধে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন,২০০৯ (২০০৯ সনের ২৬ নং আইন) এর ৪০ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ প্রমাণিত। শুধু তাই নয়, পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে ঐ একই আইনের ৩৭ ও ৪৪ ধারা ভঙ্গের অভিযোগ রয়েছে। এবার তাদের এই দ্বিতীয় অপরাধ নিয়ে আলোকপাত করা যাক।

৩৭ ধারায় রয়েছে “কোন ব্যক্তি কোন আইন বা বিধি দ্বারা কোন পণ্য মোড়কাবদ্ধভাবে বিক্রয় করিবার এবং মোড়কের গায়ে সংশ্লিষ্ট পণ্যের ওজন, পরিমাণ, উপাদান, ব্যবহার-বিধি, সর্বোচ্চ খুচরা বিক্রয় মূল্য, উৎপাদনের তারিখ, প্যাকেটজাতকরণের তারিখ এবং মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ স্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ করিবার বাধ্যবাধকতা লঙ্ঘন করিয়া থাকিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক পঞ্চাশ হাজার টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”

৪৪ ধারায় রয়েছে “কোন ব্যক্তি কোন পণ্য বা সেবা বিক্রয়ের উদ্দেশ্যে অসত্য বা মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা ক্রেতা সাধারণকে প্রতারিত করিলে তিনি অনূর্ধ্ব এক বৎসর কারাদণ্ড, বা অনধিক দুই লক্ষ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হইবেন।”

স্বপ্ন চেইন শপে ডেটল শেলফে সাজান থাকে, এবং ক্রেতা তা তুলে নিয়ে ক্যাশ কাউন্টারে জমা দিয়ে অর্থ পরিশোধ করেন। আমি শেলফ হতে যখন হাতে নেই, তখন তার মূল্য তার গায়ে লেখা ছিল সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৪২ টাকা, তারা যে তার মূল্য ৪৩ টাকা রাখবে, ডেটলের বোতলের গায়ে সেই ঘোষণা ছিল না অর্থাৎ স্বপ্ন চেইন শপ আলাদাভাবে কোন নিজস্ব স্টিকার সেঁটে তা ভোক্তার কাছে পরিষ্কার করেনি । ক্যাশ কাউন্টারে জমা দেয়ার পর তার মূল্য রাখা হয় ৪৩ টাকা তাই তা সুস্পষ্টভাবেই ৩৭ ও ৪৪ ধারা লঙ্ঘন।

শুনানি শেষে উভয় পক্ষকে যার যার অবস্থানের আইনগত ব্যাখ্যা ও অন্যান্য যুক্তি যদি থাকে তা লিখিত ভাবে জানাতে বলা হয়। সেই উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আমি চিঠি-ও দিলাম একদিন পর। এবং দেয়ার মাঝে কিছু ফিল্ড পর্যায়ের তদন্ত করে অভিনব কিছু তথ্য আবিষ্কার করলাম। কিছু সুপারশপ এই ‘ভ্যাট’ আদায় করছেন না। উদাহরণস্বরূপ গত ২৫ জুলাই ২০১৬ বিকালে আর. এফ. এল. এর নিজস্ব সুপারশপ ‘ডেইলি শপিং’ হতে ৩২ টাকা মূল্যের একটি ডেটল কেনা হয়, যার মূল্য ৩২ টাকাই রাখা হয়। শুধু তাই না, তাদের মানি রিসিপ্টে মুদ্রিত ছিল “Prices are inclusive of 4% VAT” আবার কিছু সুপারশপঃ স্বপ্ন, এগোরা, ক্যারি ফ্যামিলি, মিনা বাজার ঠিক-ই ভ্যাট রাখছে। এবং এই তথাকথিত ভ্যাট রাখার ক্ষেত্রেও শুভঙ্করের ফাঁকি আছে। পূর্বের যুক্তিতে উল্লেখিত গেজেট অনুযায়ী এই ‘ভ্যাট’ (???) হল ২%, কিন্তু স্বপ্ন, এগোরা, ক্যারি ফ্যামিলি, মিনা বাজার রাখছেন ৪%, এবং শুধু তাই না! স্বপ্ন বাদে অন্য সুপারশপে (এগোরা, ক্যারি ফ্যামিলি, মিনা বাজার) ৪২ টাকার ডেটলে ৪% ভ্যাট নিয়ে হল ৪৩.৬৮ টাকা, কিন্তু রাখা হল ৪৪ টাকা, বাকি ৩২ পয়সা কোথায় গেলো? বিন্দু বিন্দু জলেই কিন্তু সিন্ধু হয়।

আমি ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাস থেকে আসার সময় বললাম, স্বপ্ন সুপারশপের প্রথম অপরাধ ৪০ ধারা লঙ্ঘন অতিরিক্ত মূল্যে বিক্রয় এবং দ্বিতীয় অপরাধ ৩৭ ও ৪৪ ধারা লঙ্ঘন মূল্যবৃদ্ধির স্টিকার মোড়কে না সাঁটানো – দুটির দণ্ড আলাদাভাবে ঘোষণা করে তা পৃথকভাবে কার্যকর করার জন্য। এবং তারা এই অপরাধ আমার সাথেই তিনবার করেছেন, আমি তিনটি মানি রিসিপ্ট জমা দিয়েছি। বাংলাদেশে কোন দুশ্চরিত্র পুরুষ যদি নারী অপহরণ করে ধর্ষণ ও পরে হত্যা করে, তবে তিনি একটা অপরাধ করেছেন বলে বিবেচিত হয় না বরং অপহরণ, ধর্ষণ, হত্যা তিনটির অভিযোগে বিচারক আলাদাভাবে শাস্তি দেন, যা পৃথকভাবে একটির পর একটি কার্যকর হয়।

একই সাথে স্বপ্ন সুপারশপ-কে আমার পরামর্শ দিলাম, তারা যেন পরবর্তীতে আদৌ যদি এই ধরনের কোন ২% বা ৪% ভ্যাট প্রজ্ঞাপন থাকে তবে তার বিরুদ্ধে যেন হাইকোর্টে সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রিট পিটিশন করে।

[এই হল ২৫ জুলাই শুনানি ও তার পরেরদিনের ফিল্ড পর্যায়ের তদন্তের আপডেট, আরো কিছু ঘটলে জানাবো।, সাথের ছবিতে আর. এফ. এল. এর নিজস্ব সুপারশপ ‘ডেইলি শপিং’ এবং ক্যারি ফ্যামিলি, মিনা বাজারের মানি রিসিপ্টের ছবি দিলাম]

​যারা পূর্বের ব্লগ পড়েননি, তাদের জন্য ... ​​

​প্রথম পর্বঃ ​স্বপ্ন চেইনশপে অতিরিক্ত মূল্য আদায়, বৃহস্পতিবার ১০টায় টিসিবি ভবনে শুনানি
www.somewhereinblog.net/blog/tawhidurrahmandear/30145141
www.facebook.com/tawhidurrahmandear/posts/10209355475101327


দ্বিতীয়​ পর্বঃ​ চেইনশপে বা সুপারস্টোরে বহুদিন ধরেই "ভুল" বা "অন্যায়" চলছে, সমাধান করতে আপনার সহযোগিতা চাই
www.somewhereinblog.net/blog/tawhidurrahmandear/30145387
www.facebook.com/tawhidurrahmandear/posts/10209365749438179


আজকের লেখা ফেসবুকেঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ১০:০৯
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের সংগ্রামী জনতার স্লুইস গেট আক্রমণ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২১


(ছবির লাল দাগ দেয়া জায়গাটিতে গর্ত করা হয়েছিল)

শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

২৩শে এপ্রিল পাক সেনারা ফুলছড়ি থানা দখল করে। পাক সেনা এলাকায় প্রবেশ করায় মানুষের মধ্যে ভীতিভাব চলে আসে। কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাড়ির কাছে আরশিনগর

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ০৯ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫০


বাড়ির কাছে আরশিনগর
শিল্পকলা একাডেমির আশেপাশেই হবে চ্যানেলটার অফিস। কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করল মৃণাল। কিন্তু খুঁজে পাচ্ছে না সে। এক-দু'জনকে জিগ্যেসও করল বটে, কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারছে না।

কিছুদূর এগোনোর পর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি ভালো আছি

লিখেছেন জানা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৪৯



প্রিয় ব্লগার,

আপনাদের সবাইকে জানাই অশেষ কৃতঞ্গতা, শুভেচ্ছা এবং আন্তরিক ভালোবাসা। আপনাদের সবার দোয়া, সহমর্মিতা এবং ভালোবাসা সবসময়ই আমাকে কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে শক্তি এবং সাহস যুগিয়েছে। আমি সবসময়ই অনুভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বাধীনতার সুফল কতটুকু পাচ্ছে সাধারণ মানুষ

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৯ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:২৮

(১) আমলা /সরকারের কর্মকর্তা, কর্মচারীর সন্তানদের জন্য আলাদা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার প্রস্তাব হতাশাজনক। মুক্তিযুদ্ধের ১৯৭১ সালের রক্ত দেওয়া দেশের এমন কিছু কখনো আশা কি করছে? বঙ্গবন্ধু এমন কিছু কি আশা... ...বাকিটুকু পড়ুন

এলজিবিটি নিয়ে আমার অবস্থান কী!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১০ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:১৫

অনেকেই আমাকে ট্রান্স জেন্ডার ইস্যু নিয়ে কথা বলতে অনুরোধ করেছেন। এ বিষয়ে একজন সাধারণ মানুষের ভূমিকা কী হওয়া উচিত- সে বিষয়ে মতামত চেয়েছেন। কারণ আমি মধ্যপন্থার মতামত দিয়ে থাকি। এ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×