লন্ডন, অগাস্ট ৩০ (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)- ইউকে বর্ডার এজেন্সি বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির নন ইউরোপীয় বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির লাইসেন্স বাতিল করায় প্রায় ৩ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী বিপাকে পড়েছেন। চরম অনিশ্চয়তায় পড়েছে তাদের শিক্ষাজীবন।
এই ইউনিভার্সিটিতে প্রায় ৫শ’ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। ইউনিভার্সিটির এসব বিদেশি শিক্ষার্থীরা অন্যত্র ভর্তি হওয়ার সুযোগ না পেলে যুক্তরাজ্য থেকে তাদের বের করে দেওয়া হতে পারে।
এই প্রথমবারের মতো একটি নামকরা ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটির বিদেশি শিক্ষার্থী ভর্তির লাইসেন্স বাতিল হওয়ায় লন্ডনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।
ইউকে বর্ডার এজেন্সি এই বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইসেন্স বাতিল সম্পর্কে যুক্তি দেখিয়ে বলেছে, শিক্ষার্থীদের ক্লাসে উপস্থিতি নিয়মমাফিক মনিটর করছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। তাই তাদের এখানে থাকার কোনো অধিকার নেই।
অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইউকে বর্ডার এজেন্সির এই বক্তব্য নাকচ করে বলেছে, তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।
লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর এক বিবৃতিতে বলেছেন, তারা দেশের শীর্ষস্থানীয় আইনজীবীদের মাধ্যমে ইউকেবিএ’র সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়বেন।
প্রফেসর ম্যালকম গিল বলেন, ইউকে বর্ডার এজেন্সি তাদের নিজেদের গাইডলাইন নতুন করে লিখছে, যা দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর জন্যে উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটিশ অর্থনীতিতে বছরে ৫ বিলিয়ন পাউন্ডের অবদান রাখেন। ইউনিভার্সিটিগুলো মনে করে, ২০২৫ সাল নাগাদ এই অবদান ১৭ বিলিয়ন পাউন্ড ছাড়িয়ে যাবে।
যুক্তরাজ্যের স্বরাষ্ট্র দপ্তর এবং ইউকে বর্ডার এজেন্সি কর্তৃক বিশ্ববিদ্যালয়ের বিদেশি স্টুডেন্ট স্পন্সরের লাইসেন্স বাতিল করায় বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা আতংকের মধ্যে আছেন। বিপুল আর্থিক ক্ষতির পাপশাপাশি তারা এখন নিজেদের ভবিষ্যত নিয়ে শংকিত।
নিয়ম অনুযায়ী এই ছাত্র-ছাত্রীরা ৬০ দিনের মধ্যে অন্য কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারলে তাদেরকে যুক্তরাজ্য ছাড়তে হবে। সেপ্টেম্বর মাসে সেশন শুরু হওয়ায় নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার আশাও ক্ষীণ।
এছাড়া নতুন করে টিউশন ফি যোগান দেয়ারও সঙ্গতি নেই তিন হাজারের মতো বিদেশি শিক্ষার্থীর। লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশসহ উপমহাদেশীয় শিক্ষার্থীদের কাছে বেশ জনপ্রিয়। এই বিশ্বদ্যিালয়ে মোট ৩০ হাজারের মতো ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে এবং এর মূল ক্যাম্পাসগুলো অবস্থিত বাঙালি অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডন ও উত্তর লন্ডনে।
লন্ডন মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট ইউনিয়নের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও গভর্নিং বডির সদস্য বাংলাদেশি ছাত্র সৈয়দ রুম্মান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চরম উদ্বেগের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
সৈয়দ রুম্মান জানান, তিনি নিজে দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র এবং নভেম্বরে তার ভিসার মেয়াদ শেষ হয়ে যাবে। এ অবস্থায় তিনি কী করবেন ভেবে উঠতে পারছেন না। যদিও ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের যথাসাধ্য সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তারা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে তদবিরও করছে।
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশিসহ বিদেশি শিক্ষার্থীরা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনের বাসবভনের সামনে মৌন বিক্ষোভ করেছে। বিভিন্ন স্টুডেন্ট ইউনিয়নও তাদের সাথে প্রতিবাদে যোগ দেয়।
বিদেশি স্টুডেন্ট ভর্তির ক্ষেত্রে ইউকেবিএ’র লাইসেন্স প্রাপ্ত ‘হাইলি ট্রাস্টেড স্ট্যাটাস’ মর্যাদার লন্ডন মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটির লাইসেন্স সাময়িকভাবে বাতিলের সিদ্ধান্ত হয় গত মাসে। বুধবার রাতে ইউকেবিএ লাইসেন্স বাতিলের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয়কে।
এর আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষে পার্লামেন্টের হোম অ্যাফেয়ার্স সিলেক্ট কমিটির চেয়ারম্যান কিথ ভাজ এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখার জন্য হোম অফিসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন।
লন্ডন মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী ভর্তি এবং ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট স্পন্সর নীতিকে টোরি সরকারের ইমিগ্রেশন নীতি বস্তবায়নে হুমকি বলে মনে করছে ইমিগ্রেশনের নীতি নির্ধারক মহল।
এই ইউনিভার্সিটির শতকরা ২২ ভাগ শিক্ষার্থী যুক্তরাজ্যের বাইরের দেশ থেকে আসা। পূর্ব লন্ডনের অলডগেইট এবং শোরডিচ, মুরগেটই, নর্থ লন্ডনের হলওয়ে এবং হাইবেরিতে ক্যাম্পাস আছে লন্ডন মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটির। হঠাৎ করেই হোম অফিসের এধরনের সিদ্ধান্তে প্রায় ৩ হাজার বিদেশি শিক্ষার্থী দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা এখন কী করবেন বুঝে উঠতে পারছেন না।
ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্টদের স্পন্সরশিপ বাতিল হওয়ায় এই ইউনিভার্সিটি আর বিদেশি (নন ইউরোপীয়) শিক্ষার্থীদের ভর্তি করতে পারবে না। বর্তমানে যারা লন্ডন মেট্রাপলিটন ইউনিভার্সিটিতে অধ্যয়নরত আছেন তাদেরও নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে হবে। তা না হলে তারা কেবল আর ৬০ দিন যুক্তরাজ্যে থাকতে পারবেন।
এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ কোর্সেরই ইন্টারন্যাশনাল বাৎসরিক ফি প্রায় ১০ হাজার পাউন্ড। এ অবস্থায় গ্র্যাজুয়েট, পোস্টগ্র্যাজুয়েট এমনকি পিএইচডি প্রোগ্রামের শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। কারো কারো মাত্র আর এক সেমিস্টার বাকি রয়েছে। এই অবস্থায় হাজার হাজার পাউন্ড খরচ করে লেখাপড়া করে শেষ মুহুর্তে এসে তারা ডিগ্রি পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে।
এই অবস্থায় অনেকে নিজ দেশে ভ্রমণের জন্য যেতে চাইলেও যেতে পারছেন না। কারণ দেশে গেলে তাদেরকে আর ব্রিটেন প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না।
যুক্তরাজ্যে ২০০৯ সালে বিদেশি শিক্ষার্থীদের জন্য পয়েন্ট ভিত্তিক টিয়ার ৪ সিস্টেম চালুর পর থেকে বিভিন্ন কলেজে ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট আসার হিড়িক পড়ে। এই নিয়মের সুযোগ নিয়ে অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান স্টুডেন্ট ভিসার অপব্যাবহার শুরু করে বলে অভিযোগ করে স্বরাষ্ট্র দপ্তর। বহু কলেজ বিদেশি ছাত্র-ছাত্রী স্পন্সর করার অধিকার হারায়। কিন্তু এই প্রথম কোন বিশ্ববিদ্যালয়কে এ ধরনের পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হল।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






