বাঘের আবার রাতের পালা- দিনের পালা কি! গভীর অরণ্যে দাম্ভিক পদক্ষেপে যখন খুশি ঘুরে বেড়ানোই তার জন্য স্বাভাবিক। কিন্তু অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার স্বার্থে এখন শুধু রাতেই সক্রিয় নেপালের বাঘ।
নেপালি বাঘদের ওপর পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় এমনটিই দেখেছেন একদল বিজ্ঞানী।
চলাফেরার জন্য বাঘের কাছে দিন-রাতের তেমন পার্থক্য নেই। সাধারণত খুব ভোর অথবা সন্ধ্যা তাদের শিকারের সময়। বনের মধ্যে নিজের বিচরণ ক্ষেত্র নিশ্চিত করা এবং তার তদারকির জন্য রাত-দিন যে কোনো সময় জঙ্গলে ঘুরে বেড়ায় বাঘ। এর ফাঁকেই ঘুমায়, বিশ্রাম নেয় এই শিকারি প্রাণীটি।
কিন্তু নেপালের চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানের বাঘেরা তাদের এ অভ্যাস পাল্টে ফেলেছে বলে প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ওই উদ্যানে চলাফেরার জন্য বাঘ ও মানুষ একই পথ ব্যবহার করে। তাই মানুষ এড়াতে বাঘেরা দিনের বেলা চলাফেরা কমিয়ে রাতে বিচরণ করছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।
হিমালয় উপত্যকায় চিতওয়ান জাতীয় উদ্যানে বর্তমানে ১২১টি বাঘের বাস। আর উদ্যানের সীমানা ঘেঁষেই মানুষের বসতি। জীবনযাপেনের জন্য বনের কাঠ, ঘাস ও অন্যান্য উপাদানের ওপর নির্ভর করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের।সে কারণে প্রতিদিনই তাদের বনে যেতে হয়, বনপথে হাঁটাতে হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের ‘মিশিগান স্টেট’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক নেইল কার্টার বলেন, “বনের খাবারের ওপর নির্ভর করেই বেঁচে থাকে বাঘ। আবার বনের বিভিন্ন উপাদান মানুষের জন্যও দরকার। যদি আমরা এসব বনকে শুধু বাঘের অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা করি তবে সংঘর্ষ চলতেই থাকবে। যদি মানুষকে প্রাধান্য দেওয়া হয়, বাঘের অস্তিত্ব বিপণ্ন হবে। আবার বাঘকে প্রাধান্য দেওয়া হলে মানুষের জীবন বিপন্ন হয়ে পড়বে।”
“এটি সম্পদের অধিকার নিয়ে সেই পুরনো দ্বন্দ্ব”, বলেন তিনি।
গবেষণার জন্য চিতওয়ান উদ্যানে মুভি ক্যামেরা স্থাপন করেছিলেন কার্টার। সেখানে দুটি ঋতু তিনি কাটিয়েছেন বাঘের ওপর চোখ রেখে।
বনের বিভিন্ন জায়গায় স্থাপিত ক্যামেরায় মানুষ, বাঘ ও অন্যান্য প্রাণীর চলাফেরা রেকর্ড করা হয়। ওই ক্যামেরাগুলোয় বাঘের শিকারের দৃশ্যসহ অন্যান্য আচরণও ধারণ করা হয়।
তাতে দেখা যায়, ওই বনের বাঘগুলো রাতেই বেশি চলাফেরা করছে। ঘোরা-ফেরা, খেলা-ধুলা ও শিকারের জন্য রাতকেই বেছে নিয়েছে প্রাণীটি।
সাধারণত মানুষ রাতের বনকে এড়িয়ে চলে। আর এ সুযোগকেই কাজে লাগাচ্ছে বাঘগুলো।
গবেষণায় পাওয়া এই ফলাফল ‘সম্পদের অধিকার’ প্রতিষ্ঠায় বাঘ-মানুষের চিরন্তন দ্বন্দ্ব সমাধানে কাজে আসবে বলে মনে করছেন গবেষকরা। বন দিনে হবে মানুষের, রাতে হবে বাঘের।
গবেষণার ফলাফলটি যুক্তরাষ্ট্রের ‘ন্যাশনাল একাডেমি অব সায়েন্স’ এর জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






