রেলপথ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের আসবেন বলে স্টেশনের চেহারাই পাল্টে দিয়েছিল বগুড়া রেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু মন্ত্রীর সফর শেষের সঙ্গে সঙ্গেই স্টেশন ফিরে গেছে আবার সেই পুরানো চেহারায়।
শুক্রবার রেল স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, রেল লাইনের ওপরে ও পাশে আধা কিলোমিটার এলাকা জুড়ে গড়া ওঠা ‘হঠাৎ মার্কেট’ ও কাঁচা বাজার আবার বহাল তবিয়তে বসে গেছে। উধাও হয়ে গেছে স্টেশনের ঝকঝকে-তকতকে অবস্থাও।
বৃহস্পতিবার মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ট্রেনে করে লালমনিরহাট যাওয়ার পথে সকালে বগুড়া স্টেশন পরিদর্শন করেন।
মন্ত্রীর সফরের আগের দিন বুধবার রেল স্টেশন ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করা হয়। ফতেহ আলী ব্রিজ থেকে তিন মাথা মোড় পর্যন্ত তিন কিলোমিটার রেল পথের দু’ধারে সেমিপাকা অবৈধ স্থাপনা ভেঙে ফেলা হয়েছে। পাকা ঘরগুলোতে ছিল তালা মারা। তুলে দেওয়া হয়েছিল রেল লাইনের পাশের ‘হঠাৎ মার্কেট’।
সফরের সময় মন্ত্রী যাতে স্টেশনের অব্যবস্থাপনা দেখে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীর বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিতে পারেন তার জন্যই স্টেশনটিকে নতুন সাজে সাজিয়ে তোলা হয়েছিল বলে জানিয়েছিলেন রেল কর্মকর্তারা।
সেদিন স্টেশনের অবস্থা দেখে রেলের এক নিয়মিত যাত্রী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের কাছে মন্তব্য করেছিলেন, “জীবনে স্টেশনের এ অবস্থা দেখি নাই। এমন যদি সব সময়ই থাকত ভাল হতো।”
তবে সেদিন বগুড়া রেল স্টেশন সুপারিনটেন্ডেন্ট বেলাল উদ্দিনের কাছে স্টেশনের এ অবস্থা কতদিন থাকবে জানতে চাইলে তিনি একটু হেসে অন্যদিকে চলে গিয়েছিলেন।
শুক্রবার সেখানে গিয়ে দেখা যায়, অবার হঠাৎ মার্কেটে পসরা সাজিয়ে বসেছেন কাপড়ের দোকানিরা। ক্রেতাদের ভিড় স্টেশন থেকে হকার্স মার্কেটের শেষ সীমানা পর্যন্ত অর্ধ কিলোমিটার জুড়ে।
দোকানিরা জানান, সাধারণত এখানে পাঁচশ দোকান বসে। এখানের বেশির ভাগ ক্রেতাই শহরের নিন্মবিত্তরা। এর পাশেই বসেছে কাঁচা বাজারও।
‘হঠাৎ মার্কেট’ এর কাপড় ব্যবসায়ী আব্দুল ওহাব বলেন, ট্রেন কাছে আসলেই দোকানিরা তাড়াহুড়া করে তাঁবু খুলতে লেগে যান।
তিনি জানান, রেল কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে স্থানীয় কিছু যুবক এই মার্কেট ইজারা নিয়ে চালাচ্ছে। প্রতিদিন ৫০ টাকা করে দিতে হয় দোকানিদের। এর সঙ্গে রেলের নিচ থেকে ওপরতলার লোকজন জড়িত বলে জানান ওই দোকানি।
২০১০ সালে এখানেই রেল দুর্ঘটনায় মারা যান মার্কেটের ব্যবসায়ী বগুড়া শহরের বৃন্দাবন পাড়ার আব্দুল জলিল এবং ফুলবাড়ির এক স্কুলছাত্রী। তারপরেও অবৈধভাবে এ মার্কেট চলছে বলে জানান ক্রেতারা।
তারা জানান, লালমনিরহাট থেকে রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বগুড়ায় এলে ‘হঠাৎ মার্কেট’ লোক দেখানো একদিন বন্ধ থাকে। পরে আবার আগের মতোই সব চলে।
বগুড়া রেল স্টেশন ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সাইদুর রহমান বলেন, মন্ত্রী যাওয়ার পর আবার অবৈধ মার্কেট বসেছে। এটি দেখার দায়িত্ব রেলের কানুনগো মোকাররম হোসেনের। তিনি চাইলেই পুলিশ সহযোগিতা করবে।
বগুড়া রেলের স্টেশন সুপারিনটেন্ডেন্ট বেলাল উদ্দিন বলেন, রেল লাইনের ওপর দোকান সরানোর দায়িত্ব তাদের নয়। তিনি দুই বছর আগে দুর্ঘটনার কথাও স্বীকার করেন।
কানুনগো মোকাররম হোসেন বলেন, আবার মার্কেট বসেছে কিনা তার জানা নেই। তবে আগে বসত। মন্ত্রীর সফরের সময় দোকানিদের সেখানে বসতে না করে দেওয়া হয়েছিল বলে জানান কানুনগো।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।






