কুকুর সাধারণত তাদের বিশ্বস্ততা, প্রভুভক্তি, বন্ধুত্বের জন্য পরিচিত। তবে কিছু কিছু কুকুর এইসব গুণের উপরে উঠে অবিশ্বাস্য কিছু করে ফেলে যেটা তাদেরকে ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই দেয়।টোগো, তেমনই এক কুকুর।
জাতে সাইবেরিয়ান হাস্কি এই সারমেয়টি বিখ্যাত হয়ে আছে মানবকল্যাণে তার অবদানের জন্য। লিওনহার্ড সেপলা নামক এক ডগ ব্রিডার, ট্রেইনার, মুশারের (যারা ডগ-স্লেড চালায়)স্লেজডগের লিড ডগ ছিল ছোটবেলা থেকেই বুদ্ধিমত্তা, দুরন্তপনা দিয়ে মুগ্ধ করে দেওয়া টোগো।
যারা জানেন না তাদের জানিয়ে দেই, স্লেজ হচ্ছে আর্কটিকের বরফাচ্ছাদিত মেরু এলাকায় মালামাল পরিবহনের একমাত্র মাধ্যম, আধুনিক বরফে চলার উপযোগী ট্রাকগুলো আসার আগ পর্যন্ত।কুকুরটানা স্লেজগাড়ি সবচেয়ে বেশি প্রচলিত ছিল।৬-১০টি কুকুরের একটি দল স্লেজগাড়ি টানত। স্লেজটানা দলের লিড ডগ বা দলনেতা কুকুরকে হতে হয় দলের মধ্যে সবচেয়ে দ্রুতগামী, সেই সাথে তীক্ষ্ণ বিচক্ষণতা সম্পন্ন।
ঘটনাটা ১৯২৫ সালের, হিমশীতল আলাস্কার ছোট্ট একটি শহর নম। হঠাৎ করে শহরে ডিপথেরিয়া রোগের মহামারী হানা দেয়। কয়েকটা বাচ্চা মারা যায়, বাকিদের অবস্থাও কাহিল।শহরের একমাত্র হাসপাতালে ডিপথেরিয়া এন্টিটক্সিন মেয়াদোত্তীণ হয়ে গেছে।৬৭৪ মাইল (১০৮৫ কিমি) দূরের শহর নুলাতো থেকে আনতে হবে সেরাম। সভ্যতা থেকে অনেক দূরে অবস্থিত এই এলাকায় এক শহরের সাথে আরেক শহরের যোগাযোগের একমাত্র উপায় কুকুরচালিত স্লেজ। এমন সময় ধেয়ে আসে বিগত ২০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ তুষারঝড়।মাইনাসের নিচের তাপমাত্রা, সেই সাথে তুষারঝড়, এমন বিরুপ আবহাওয়ায় বরফঢাকা পাহাড়, সাগর ডিঙ্গিয়ে সেরাম নিয়ে ফেরত আসে সেপলারের স্লেজ, যার লিডে ছিলো ।পুরো জার্নিটা ভাগ করে মোট ২০টা রিলে দলকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। তবে বাকি উনিশ দলের গড় জার্নি ছিল ৩১ মাইল, সেখানে টোগো তার দল নিয়ে একাই দৌড়েছিল ২৬৪ মাইল ৩ দিনে, যেটা আবার ছিল সবচেয়ে ভয়ংকর রিস্কি রাস্তায় যেখানে আর্কটিক সাগরের জমে থাকা বরফের উপর দিয়ে পাড়ি দিতে হয়েছে!পাড়ি দিতে হয়েছে ৫০০০ ফুট উচ্চতার বরফ ঢাকা পাহাড়।।সেপলা্র পূর্বের রেকর্ড ছিল ৪ দিনে এই দূরত্ব অতিক্রম করা, সেখানে টোগোর বীরত্বে এবার প্রতিকূল আবহাওয়া সত্বেও ৩ দিনেই ফেরত আসতে পেরেছিল।
এই দুঃসাহসিক অভিযানের ফলে সেসময় নম শহরের অধিবাসীরা প্রাণে রক্ষা পায় বলে ঘটনাটি ইতিহাসে ১৯২৫ সালের সেরাম রান নামে খ্যাত হয়ে আছে। সেই সাথে বিখ্যাত হয়েছে এই অভিযানের নায়ক টোগো।এরপর যতদিন বেঁচেছিল টোগো, খ্যাতি নিয়েই বেঁচেছিল। মরার পরে তাকে স্টাফিং করে আলাস্কা মিউজিয়ামে রাখা হয়, বোনসগুলো আলাদাভাবে ইয়েল ইউনিভার্সিটির ন্যাচারাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামে স্থান পায়। ২০১১ সালে টাইম ম্যাগাজিন টোগোর এই অবদানকে স্বীকৃতি দেয় তাকে বিশ্বের সবচেয়ে হিরোইক এনিম্যাল নামে আখ্যায়িত করে।টোগো থেকে ব্রীডিং করে যে জাত উদ্ভাবিত হয় তার নামকরণ করা হয় সেপালা সাইবেরিয়ান স্লেজডগ নামে।
টোগোর এই বীরত্বপূর্ণ কীর্তির উপর ডিজনি সিনেমা তৈরি করেছে ২০১৯ সালে, একই নামে। মজার ব্যাপার হল সিনেমাটিতে টোগো চরিত্রে অভিনয় করেছে টোগোর ১৪ পুরুষ পরের কুকুর ডিজেল। সিনেমাটিতে ডিজেলের অভিনয় একদম নিঁখুত ছিল যে আপনি ধারণা করতে পারবেন টোগো কেমন ছিল রিয়েল লাইফে!
গত ২৬ আগস্ট ছিল বিশ্ব কুকুর দিবস। ইচ্ছে ছিল সেদিন পোস্টটি লেখার, কিন্তু সময় হয়ে উঠেনি । যাইহোক, দেরিতে হলেও লিখে ফেললাম
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা সেপ্টেম্বর, ২০২০ দুপুর ১২:১৫