somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভারতীয় চলচিত্র ও টিভি চ্যানেলের আগ্রাসনঃযে ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে আমাদের মিডিয়া

২৭ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রায় সবাই ইদানিং মুভি ইন্ডাষ্ট্রি তে ভারতীয় মুভির সম্ভাব্য আগ্রাসন নিয়ে চিন্তিত । অবশ্যই এই আগ্রাসন নিয়ে উদ্ভিগ্ন হবার যথেষ্ট কারণ আছে । তবে এই ফাক তালে একটা জিনিস আমাদের চোখ এড়িয়ে যাচ্ছে ।টিভি বিজ্ঞাপন এবং নাটক কে কেন্দ্র করে আমাদের এখানে যে শিল্প টা গড়ে উঠার চেষ্টা করছে তাও কিন্তু এক প্রকার হুমকির সম্মুখীন!

বুঝিয়ে বলি । আপনি আপনার পণ্যের বিজ্ঞাপন টিভিতে কেন দিবেন? কারণ একটা নির্দিষ্ট শ্রেণীর জনগোষ্ঠীর কাছে আপনার পণ্য দ্রব্য সম্পর্কে একটা মেসেজ পৌছানো দরকার । অর্থাৎ আপনার টার্গেট পপুলেশন ঐ টিভি চ্যানেলের দর্শক হলেই আপনি বিজ্ঞাপন দেবার কথা চিন্তা করবেন । এখন ধরুন আপনি যদি একটি নির্দিষ্ট চ্যানেলে বিজ্ঞাপন দেবার মাধ্যমে আপনার টার্গেট কৃত পটেনশিয়াল কাষ্টমার দের কাছে আপনার মেসেজ পৌছাতে পারেন তাহলে আর অন্য চ্যানেলে যাবেন?সোজা বাংলায় উত্তর হলো না! সেটাই ঘটতে যাচ্ছে আমাদের ক্ষেত্রে! আমাদের বিশাল টিভি দর্শকদের বড় একটা অংশ এখন ষ্টার জলসা এবং জি বাংলা নামক দুটি চ্যানেলের সস্তা , নিম্ন মানের এবং অরুচিকর অনুষ্ঠানে আসক্ত ।(বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে যে গুলো বউ শাশুড়ি এর যুদ্ধ , পরকীয়া ইত্যাদি প্রমোট করে থাকে) এখন যদি লাক্সের মতো মাল্টি ন্যাশনাল কোম্পানি গুলো ষ্টার জলসায় বিজ্ঞাপন দিয়ে বাংলাদেশের এবং ভারতের , এই দুই দেশেরই পটেন শিয়াল কাষ্টমারদের কাছে তাদের মেসেজ পৌছে দিতে পারে তাহলে তারা কেন বাংলাদেশী চ্যানেল গুলো তে বিজ্ঞাপন দিবে? দিবে না! ফলে চ্যানেল গুলো বিজ্ঞাপনের রেট কমাতে বাধ্য হবে । ফলে অনুষ্ঠানের মান ও কমবে । নিম্ন মানের অনুষ্ঠানের আউট কাম হিসেবে আরো বেশী মাত্রায় দর্শক ওই চ্যানেল গুলোর অনুষ্ঠান দেখবে । ফলে একটা চক্রের মাঝে পরে আমাদের টিভি চ্যানেল গুলো বিপর্যস্ত হয়ে যাবে । আর বিজ্ঞাপন শিল্প?আরে ভাই যেখানে বিজ্ঞাপনই নাই সেখানে বিজ্ঞাপন শিল্প থাকবে কি করে? আমাদের বিজ্ঞাপন শিল্পতেও দাদা দের আগমন শুরু হয়েছে । একটি মোবাইল কোম্পানির রিসেন্ট বেশ কয়েক টি বিজ্ঞাপন ভারতীয় নির্মাতাদের দিয়ে তৈরী করা হয়েছে (যে গুলো আক্ষরিক অর্থেই অখাদ্য ছিলো) আর টিভি নাটকের কথা বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না ।এটা এমনিতেই "Gone" একটা কেস হয়ে যাবে । আমি জানি না এই বিষয় টা মিডিয়ার সাথে যারা জড়িত তারা উপলব্ধি করতে পারছেন কিনা! কিংবা হয় তো উপলব্ধি করতে পারছেন কিন্তু যে কারণে ভারতীয় চল চিত্র আমদানি করাকে অনেকেই জায়েজ করার চেষ্টা করছেন সে একই কারণে তারাও চুপ আছেন!

এবার আসি মুভি ইন্ডাস্ট্রি নিয়ে । এবিষয়ে আগেও আলোচনা করছি ।তবে প্রাসঙ্গিক হওয়াতে কিছু বিষয় নিয়ে আবার কথা বলি ।টালিউডের বাংলা মুভি তাদের প্রোডাক্ট হিসেবে তাদের গ্রোথ এর স্টেজ পার করে এসেছে ।এখন তাদের ডিক্লেনিং শুরু হবে। তাদের নিজেদের মার্কেট থেকেই তাদের প্রডাকশন কষ্ট উঠানো কঠিন হয়ে যাচ্ছে । তামিল মুভির রিমেক , সুন্দরী নায়িকা আর ঝক ঝকে প্রিন্ট দিয়ে আর দর্শক টানা যাচ্ছে না । মার্কেট থেকে পাওয়া প্রফিট এর সাথে ছবি তৈরীর খরচ খাপ খাচ্ছে না । ফলে একটা বাজে অবস্থা তাদের সামনে আসতে যাচ্ছে । ফলাফল সরূপ বাধ্য হয়ে তাদের মার্কেট এক্সপানশন করতে হবে । কোন নতুন মার্কেট এ প্রোডাক্ট এন্ট্রি করানোর সময় যে জিনিস গুলো কে সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হয় সে গুলোর মাঝে উল্লেখ যোগ্য হলো ১ মার্কেটে পটেনশিয়াল কাষ্টমার (মার্কেটে কি পরিমাণ কাস্টমার আছে) এবং ২ পসিবল কম্পিটিশন ( প্রোডাক্টটা মার্কেটে কি ধরণের কম্পিটিশন ফেস করতে পারে) ।সোজা কথায় বলি আমাদের বাংলাদেশে এই মুহুর্তে ভারতীয় বাংলা মুভির একটা বিশাল পটেনশিয়াল মার্কেট আছে ।আর এই মুহুর্তে বাংলাদেশের বাংলা মুভি ভারতীয় বাংলা মুভির সাথে কম্পিটিশন করার মতো অবস্থায় নাই! কেন নাই?এই প্রশ্ন মুভি সংশ্লিষ্ট লোকদের করার আগে সরকার কে করেন! কেন কোন সরকারই (আই রিপিট কোন সরকারই) বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত এক টা ফিল্ম ইন্সটিটিউট করার উদ্যোগ নিতে পারলো না? বাংলাদেশের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে সরকারের অনুদান কতো? ব্যাংক গুলা কি ধরণের সাহায্য দেয়? সিনেমা হল গুলোর আধুনিকায়নে সরকারের কোন ভুমিকা ছিলো কি না?সবগুলো প্রশ্নের নেতি বাচক জবাব পাবেন!এতো গুলো নেতি বাচক জবাব নিয়ে কেমনে আশা করেন আমাদের চলচিত্র ভারতীয় চলচিত্রের সাথে পাল্লা দিবে? যাই হোক !আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি খুব বাজে একটা সময় পার করছিলো যার মূল কারণ কোন সরকারই (আই রিপিট কোন সরকার ই) এই খাতে মনোযোগ দেবার প্রয়োজন বোধ করে নি ! আমার কেন এন মনে হয় আমরা সেই বাজে সময়টা আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠতেছি । বাজে সময় কাটিয়ে উঠার উদাহারণ হিসেবে আমি ভালোবাসা আজকাল বা নিঃসার্থ ভালোবাসার ব্যবসা সফল হবার কথা বলবো না ।আমি বলবো যে চেঞ্জ টা শুরু হয়েছে সেটার কথা । ইনভেস্টমেন্ট আসছে ।রেদোয়ান রনির মতো ছেলে পেলে মুভি পরিচালনায় আসছে । আরেফিন শুভ এর মতো ছেলে পেলে যখন রেগুলার মুভি করার ইচ্ছা জানায় ভাবতে ভালোই লাগে ।একটা চেঞ্জ শুরু হয়েছে ।আমাদের শুধু একটু সময় দরকার ।এই এক-দুই বছর!আমরা ঠিক ঘুড়ে দাড়াতে পারবো!

তো এই চেঞ্জের মাঝে ভারতের সাথে চলচিত্র বিনিময় চুক্তি করা( যার আওতায় শুধু কলকাতা না বলিউডের মুভি ও আসবে সরি আসবেনা চলে এসেছে) আমাদের জন্য আক্ষরিক অর্থেই বাংলা বাশ (পার ডন মাই ল্যাংগুয়েজ) বলে আমি মনে করি ।এই মুহুর্তে আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ভারতীয় চলচিত্রের সাথে প্রতিযোগিতা করার অবস্থায় নাই ।আমাদের ইন্ডস্ট্রি কেবল একটা শেপ পেতে শুরু করেছে , কেবলই কিছু ইনভেষ্টমেন্ট আসতে শুরু করেছে এই অবস্থায় এই ধরণের সিদ্ধান্ত পুরাই আত্মঘাতী । আমাদের চলচিত্রের জন্য বরাদ্দ হওয়া ৫৯ কোটই টাকা কোন খাতে ব্যবহার না হয়ে ফেরত যাবার পিছনেও এই দাদা দের হাত আছে কি না আমি জানি না । আমি শুধু জানি এটা একটা আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত এবং এটা বন্ধ হওয়া উচিত অবশ্য এখন আশার কথা বেসরকারী ভাবে অনেকেই এগিয়ে আসছেন আস্তে আস্তে ।একটু সময় দিলেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রি দাড়িয়ে যাবে । কিন্তু এই সময় টুকু আমরা কি করবো? ভারত বন্ধু প্রতীম রাষ্ট্র হিসেবে ( :v ) যে সাহায্য এর হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা কি আমরা গ্রহণ করবো না? অবশ্যই ! অবশ্যই !তারা তাদের ফিল্ম ইন্সটিটিউটে আমাদের তরুণ নির্মাতা আর কলা-কুশলী দের জন্য স্কলারশিপের ব্যবস্থা করতে পারে ।তারা আমাদের ফিল্ম ইন্সটিটিউট খুলতে সাহায্য করতে পারে । কেমন করে সিনেমা হল গুলোর পরিবেশের উন্নয়ন ঘটানো যায় সে ব্যপারে সাহায্য করতে পারে । আর আমাদের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি তে তাদের কন্ট্রোবিউট করার এতো আগ্রহ থাকলে যৌথ প্রযোজনার ছবি বানানোর উদ্যোগ নেওয়া হোক । বন্ধু যখন সাহায্য করতে আসছে তখন তো তার কাছ থেকে সাহায্য না নেওয়া তাকে অপমান করার শামিল!

সব শেষ প্রশ্ন ।"ভাই এভাবে আর কতো দিন? আমাদের দেশে না হয় এই মুহুর্তে ভারতীয় চলচিত্র আর চ্যানেল ঢুকা বন্ধ করলেন ।কিন্তু এভাবে কত দিন অফ রাখবেন ?" উত্তর হলো ৩ বছর ভারতীয় টিভি চ্যানেল আর চলচিত্র এ দেশে বন্ধ রেখে এই খাত গুলোতে স র কারী সাহায্য বাড়ানো হোক ।তিন বছর পর এই আমাদের চলচিত্র ভারতের সাথে পাল্লা দেবার পর্যায়ে পৌছাবে । ইন শাল্লাহ! কিন্তু তার আগ পর্যন্ত কোন বিনিময় চুক্তি নয়!(সেটা টিভি চ্যানেল হোক আর চলচিত্র হোক) ।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৯:৩৪
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজনীতির পন্ডিত, ব্লগার তানভীর জুমারের পোষ্টটি পড়েন, জল্লাদ আসিফ মাহমুদ কি কি জানে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:৪৯



সামুর রাজনীতির ডোডো পন্ডিত, ব্লগার তানভীর ১ খানা পোষ্ট প্রসব করেছেন; পোষ্টে বলছেন, ইউনুস ও পাকিসতানীদের জল্লাদ আসিফ মাহমুদ ধরণা করছে, "সেনাবাহিনী ও ব্যুরোক্রেটরা বিএনপি'কে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নীল নকশার অন্ধকার রাত

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:১৬


কায়রোর রাস্তায় তখন শীতের হিম হাওয়া বইছিল। রাত প্রায় সাড়ে এগারোটা। দুইটা বড় সংবাদপত্র অফিস: আল-আহরাম এবং আল-মাসরি আল-ইয়াউম—হঠাৎ করেই আগুনে জ্বলে উঠলো। কিন্তু এই আগুন কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদি ভাই, ইনসাফ এবং একটা অসমাপ্ত বিপ্লবের গল্প

লিখেছেন গ্রু, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৮



ইদানিং একটা কথা খুব মনে পড়ে। হাদি ভাই।

মানুষটা নেই, কিন্তু তার কথাগুলো? ওগুলো যেন আগের চেয়েও বেশি করে কানে বাজে। মাঝেমধ্যে ভাবি, আমরা আসলে কীসের পেছনে ছুটছি? ক্ষমতা? গদি? নাকি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×