somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বদলে যাওয়া চাঁদ আর চরকা বুড়ির গল্প

১৪ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিউজিল্যান্ডের মাউন্ট এডেনে অতিকায় চাঁদের দিকে তাকিয়ে এক পর্যটক। ছবি: রেক্স ফিচারস১৭ শতকে ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও গ্যালিলির হাতে ওলন্দাজদের তৈরি টেলিস্কোপ আসার পর ‘চাঁদের বুড়ির চরকা কাটা’র গল্পটা দ্রুতই পাল্টে যেতে শুরু করেছিল। আর আজকের দুনিয়ায় আলোকচিত্রশিল্পের ব্যাপক প্রসারের ফলে বিশালাকার চাঁদের অসাধারণ সব ছবি দেখতে পাচ্ছি আমরা। সংবাদমাধ্যমসহ অনলাইন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতেও সেসব ছবি ছড়িয়ে পড়ার কল্যাণে ইদানীং দারুণ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে ‘সুপারমুন’ বা ‘অতিকায় চাঁদ’ দেখা। কিন্তু একালের অতিকায় চাঁদে ‘চরকা বুড়ি’র বদলে আমরা কী দেখতে পাই, যা সেকালের মানুষ দেখতে পেত না?
সুপারমুন বা অতিকায় চাঁদ বলতে বোঝানো হয় সাধারণ পূর্ণিমার চাঁদের চেয়ে অনেকটা বড় আকারের অর্থাত্ পৃথিবীর কাছে চলে আসা পূর্ণ চাঁদকে। চাঁদের আবর্তনের হিসাবে প্রতি ১৪টি পূর্ণিমা পর একটি সুপারমুন বা অতিকায় চাঁদ দেখা যাওয়ার কথা। যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার হিসাব অনুসারে অতিকায় চাঁদ সাধারণ পূর্ণিমার চেয়ে ১৪ শতাংশ বড় এবং ৩০ শতাংশ উজ্জ্বল দেখাতে পারে। ১২ জুলাই শনিবারও দুনিয়াজুড়ে সুপারমুন দেখা নিয়ে ছিল অনেক উত্তেজনা।
কিন্তু একসময় লোকায়ত ও ধর্ম বিশ্বাসে চাঁদ সম্পর্কে মানুষের যে ধারণা ছিল আজকের দুনিয়া সেখান থেকে লক্ষ যোজন দূরে। সম্প্রতি সুপারমুন বা অতিকায় চাঁদ দেখা প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে চাঁদ সম্পর্কে মানুষের ধারণার বিবর্তন এবং আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যার প্রথম দিককার আখ্যান ব্যাখ্যা করেছেন দ্য গার্ডিয়ানের শিল্পকলাবিষয়ক লেখক জোনাথান জোনস—
অতিকায় চাঁদের সামনে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোর ক্রাইস্ট ডি রিডিমার ভাস্কর্য। ছবি: রয়টার্সমধ্যযুগের ইউরোপে মনে করা হতো আকাশ একটা বহিরাবরণের মতো পৃথিবীর ওপর স্থির থেকে পৃথিবীকে ঢেকে রেখেছে এবং স্বর্গের চাঁদ ও সূর্য পৃথিবীকে আলো দেওয়ার জন্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে।রেনেসাঁ যুগের চিত্রশিল্পী রাফায়েলের ‘মণ্ড ক্রুসিফিকেশন’ নামের চিত্রকর্মে পৃথিবীর এমন ধারণা চিত্রিত হয়েছে। মহাজগত্ সম্পর্কে শিশুতোষ ধারণার খুব মিষ্টি চিত্রায়ণ বলা যেতে পারে একে। ছবিতে ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মাথার ওপরে একপাশে চাঁদের হাসিমুখ আরেক পাশে সূর্যের হাসিমুখ দেখতে পাই আমরা। কয়েক বছর পর আরেক চিত্রকর্মে ‘সমতল পৃথিবীর’ ধারণাকেও চিত্রিত করেন রাফায়েল। কিন্তু ১৬ শতকের শুরুর দিকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানী কোপারনিকাস এই ধারণায় পৌঁছেছিলেন যে, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘুরছে, সূর্য পৃথিবীর চারদিকে নয়।
কোপারনিকাসের তত্ত্বটি বিমূর্ত ছিল। একে প্রমাণ করার জন্য চাক্ষুষ সাক্ষ্যের প্রয়োজন ছিল। ১৭ শতকে ইতালীয় বিজ্ঞানী গ্যালিলিও টেলিস্কোপের আরও উন্নতি ঘটাতে সক্ষম হন। টেলিস্কোপ দিয়ে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর নিকটতম প্রতিবেশী চাঁদকে বিশদভাবে পর্যবেক্ষণ করেন গ্যালিলিও। ‘দ্য স্টারি মেসেঞ্জার’ নামের বইয়ে নিজের সেই পর্যবেক্ষণ লিপিবদ্ধ করেন গ্যালিলিও। টেলিস্কোপে দেখা চাঁদকে মানুষের সামনে তুলে ধরতে চিত্রকলার আশ্রয় নিয়েছিলেন এই বিজ্ঞানী। পাহাড়ি ভূমি আর সাগরের মতো দেখতে খানাখন্দে ভরা চাঁদের অসাধারণ ছবি এঁকেছিলেন গ্যালিলিও। বইটিতে সেসব ড্রয়িং ও ছাপচিত্র মুদ্রিত হয়েছিল।
গ্যালিলিও এভাবেই কোপারনিকাসের বিমূর্ত তত্ত্বটিকে প্রমাণের পথে এগিয়ে যান। চাঁদ সম্পর্কে জানার মধ্য দিয়েই জ্যোতির্বিদ্যায় অগ্রগতির নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হয়। সেই উষালগ্নে বিজ্ঞান ও শিল্পকলা হাতে হাত রেখে এগিয়েছিল। টেলিস্কোপের মাধ্যমে দেখা চাঁদের ভূ-প্রকৃতি, চাঁদের গোলাকার অবয়ব সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার মধ্য দিয়ে আসলে মানুষ নিজের গ্রহ পৃথিবীকেই চিনতে শুরু করে। মানুষ চাঁদ-সূর্যসহ সৌরজগেক ধীরে ধীরে জানতে শুরু করে। চিত্রশিল্পীরা সেই যুগে বিজ্ঞানীদের নতুন ধ্যান-ধারণাগুলোকে মানুষের সামনে হাজির করায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
জর্ডানের আম্মানে একটা মসজিদের মিনারের পেছনে জেগে উঠছে অতিকায় চাঁদ। ছবি: রয়টার্সএ আখ্যান বর্ণনার পর জোনাথান জোনস একটি প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন। জোনস বলেন, যদি সুপারমুন বা অতিকায় চাঁদের দিকে দেখি, তাহলে দেখা যাবে যে, খালি চোখেই আমরা চাঁদের ভূ-প্রকৃতি অনেকটা স্পষ্টভাবেই দেখতে পাচ্ছি। খালি চোখেই চাঁদের পাহাড়-খানাখন্দ দেখা গেলে একে একটা অলৌকিক বা স্বর্গীয় আলো হিসেবে ভাবা সেকালের মানুষের পক্ষে কীভাবে সম্ভব হতো? এটার কারণ সম্ভবত এই যে, দেখতে পারতে হলে আপনাকে জানতে হবে আপনি কী দেখতে চান। কেবল চোখের সাক্ষ্যই যথেষ্ট নয়।
জোনসের প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যেতে পারে ব্রিটিশ শিল্পী এবং তাত্ত্বিক জন বার্জারের কাছ থেকে। বার্জার ১৯৭২ সালে প্রকাশিত তাঁর ‘ওয়েজ অব সিয়িং’ বইয়ে প্রায় একইরকম প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি বলছেন, ‘আমরা যা দেখি এবং যা বিশ্বাস করি, তাতে সব সময়ই একটা ফারাক থাকে।’ বিষয়টিকে আরও ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বার্জার আমাদের নিত্যনৈমিত্তিক চর্চায় থাকা একটা চরম দৃষ্টান্ত হাজির করেন।
তিনি বলেন, প্রতি সন্ধ্যায় আমরা ‘সূর্য অস্ত যেতে’ দেখি এবং সকালে ‘সূর্য উদয় হতে’ দেখি। কিন্তু আমরা কয়েক শতক ধরেই বৈজ্ঞানিকভাবেই জানি যে, সূর্য ‘অস্ত’ যায় না কিংবা ‘উদিত’ হয় না। অর্থাত্ সূর্য আপাত অর্থে স্থির এবং পৃথিবীই সূর্যের চারদিকে ঘুরছে। কিন্তু তবুও দুনিয়ার প্রায় সব ভাষাতেই আমরা এখনো বলি, ‘সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিম দিকে অস্ত যায়।’ সূত্র : প্রথমআলো।
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×