মা,
আশা করি আল্লাহর অশেষ মেহেরবানিতে আপনি ভাল আছেন।আমার সাস্থ্য ও ভাল মা,কিন্তু মনটা একটুও ভাল না।কিভাবে ভাল থাকে মা,এত দীঘ সময় যে আমরা কেউই কারও চোখের আড়াল ছিলাম না।আমি জানি,এই রমজানের প্রতিটি সেহরিএবং ইফতারিতে আপনি আমাকে খুব বেশি মিস করেন,হয়তবা কাঁদেন ও।আমিও কাঁদি মা কিন্তু সেটা বোবা কান্না।সে কান্নার আওয়াজ কেবিন আর ইঞ্জিন রুমের বাইরে বের হয় না! এই রমজানে সবাই যখন সেহরি আর ইফতারি নিয়ে ব্যস্ত,আমি তখন ইঞ্জিনের চাপ আর তাপ নিয়ে ব্যস্ত।অবশ্য সেহরি এবং ইফতারি আমিও খাই।কিন্তু একা একা! তারপরও আপনাকে মিস করার সময় পাইনা মা।কি সাথপর আমি!আমি জানি এই কথা আপনি কখনো ভাববেন না।অবশ্য নীল সাগেরর মানুষরা নাকি একটু সাথপরই হয়।আমি যে জাহাজে ইন্টার্নী করতেছি মা,সেটা ৩৫ বছরের পুরনো জাহাজ!জাহাজের মানুষ গুলোও কেমন সেকেলে!হয়তবা জাহাজি বলেই,আমি জানি না।জাহাজিদের সম্পরকে আমার এইরকম ধারণা ছিল না।মনে হয় এই জাহাজের জাহাজিরাই এই রকম।এত পুরনো জাহাজে কাজ একটু বেশি হবে এটাই সাভাবিক,কিন্তু অসাভাবিক হচ্ছে এই জাহাজের কাজের পরিবেশ।এই জাহাজে মনে হয় কাজ বেশি কিন্তু সময় কম!এখানে দিন রাতের ফারাক বুঝা কঠিন।বাড়িতে বাইরের হাল্কা শব্দেই ঘুম ভেংগে যেত কিন্তু আজ তীব্র আওয়াজেও দিব্যি ঘুমাই।এইখানে যে অভিযোগ শোনার কেউ নেই মা।আমি যার সাথে থাকি সেই ইঞ্জিনের কি আর আত্তা আছে মা,এই কথাতো আপনি জানেন।তার সাথে থাকতে থাকতে আমার আত্তাও যে শুকিয়ে আসছে।মাঝে মাঝে বিশাল সাগরও কেমন হিংস্র হয়ে যায়।সাগর কি আর আকাশের মত উদার।সাগরের এই আচরণ কোন জাহাজিই পছন্দ করে না মা।তাতে কি,প্রকৃতি তার আপন নিয়মেই চলবে।মানুষের মত নিয়ম ভঙ্গের নিয়ম তার নেই।জাহাজ যখন দুলতে থাকে তখন দায়িত্ত পালন করতে অনেক কষ্ট হয় মা।তারপরও অনাগত আগামীর কথা ভেবে সবই মেনে নিয়েছি।
নিজেকে আজ সত্যিই খুব বেশি অসহায় মনে হয়!
অনেক বেশি ভালবাসি মা তোমায়।
তোমার
আদর.....