এবছরের জানুয়ারির ২৯ তারিখের ঘটনা। সাত সকালে জার্মানির সমুদ্র সৈকতে প্রাতঃভ্রমণে আসা মানুষের চোখে পড়ে অদ্ভুত এক ঘটনার। সমুদ্রের বালির উপর মরে পড়ে আছে একজোড়া স্পার্ম তিমি।
তাৎক্ষণিকভাবে এর কারণ জানা না গেলেও তখন ধারণা করা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে বড় দাঁতাল প্রাণী দুটি সম্ভবত আত্মহত্যা করেছে।
প্রাণীজগতের যেসব প্রাণীর মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা পাওয়া যায় তিমি তাদের মধ্যে অন্যতম। প্রায়ই ঝাক বেঁধে আত্মহত্যা তিমির জন্য নতুন কোন ঘটনা নয়। এজন্য তারা নিজেদেরকে সমুদ্র থেকে তুলে এনে সৈকতে আছড়ে ফেলে। এরপর সেখানে তাদের মৃত্যু হয়। প্রাণীবিজ্ঞানীরা একে বলেন 'বিচিং'। কিন্তু জার্মানীর এই তিমি দুটোর ক্ষেত্রে বিচিং এর কোন লক্ষণই ছিল না, কারণ এরা ছিল স্পার্ম তিমি। অন্য তিমিদের মতো এরা সামাজিক নয়, দলবেঁধে ঘোরাফেরা করে না এমনকি এদের খাবার গ্রহণের পদ্ধতিও আলাদা। সবচেয়ে বড় কথা হলো অন্য তিমিরা যখন খাদ্যের সন্ধানে সমুদ্রের ৮০০-৯০০ ফুঁটের মধ্যে ঘোরাফেরা করে তখন এই স্পার্ম তিমিরা খাদ্যের সন্ধানে চলে যায় সমুদ্রের একেবারে সাত হাজার ফুট গভীর পর্যন্ত।
আর তাই রহস্যের সমাধান খুঁজতে উদ্যোগী হয় অনেেই। সরকারিভাবে এই ঘটনার অনুসন্ধানের দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়াডেন সি ন্যাশনাল পার্ককে। গতকাল সেই ওয়াডেন সি'র প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে বেরিয়ে আসে তিমি দুটোর মৃত্যুর কারণ।
ওয়াডেন সি কতৃপক্ষের সেই প্রতিবেদনে দখা যায় তিমি দুটোরই পেট ভর্তি ছিল বিষাক্ত প্লাস্টিক এবং গাড়ীর যন্ত্রপাতি দিয়ে। তিমি দুটোর পেট থেকে উদ্ধার করা হয় মাছ ধরার জাল, প্লাস্টিক বর্জ্য, গৃহস্থালী কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন প্লাস্টিকের পণ্য, এমনকি গাড়ির ভাঙ্গা যন্ত্রাংশও। তদন্তকারীরা মনে করছেন, স্কুইড মনে করে গাড়ীর যন্ত্রপাতি ও প্লাস্টিকের সামগ্রী খাওয়ার করার পর তাদের পাকযন্ত্রের পুরো প্রক্রিয়া নষ্ট হয়ে পড়ে। বিষাক্ত প্লাস্টিক ও লোহালক্কড়ের জঞ্জাল থেকে ইনফেকশন ঘটে পাকস্থলিতে। ব্যাথায় কাতর হয়ে এই তিমি দুটো অবশেষে বেছে নেয় আত্মহত্যার পথ।
আজ সকাল থেকেই ফেসবুক এবং গুগল বারবার মনে করিয়ে দিচ্ছে আজ "বিশ্ব ধরিত্রী দিবস", কিন্তু গতকাল থেকেই আমার মাথায় সাঁতরে বেড়াচ্ছে অসহায় এই তিমি দুটোর ছবি। সমুদ্রের সাত হাজার ফুট গভীরের এই তিমি দুটোই যেখানে পরিবেশ দূষণের প্রভাবে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হচ্ছে সেখানে সারা দুনিয়াটাকে বিঁষিয়ে দিয়ে আমরা আর কতোদিন বেঁচে থাকতে পারি সেটাই এখন দেখার বিষয়।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:০৭