somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি কাল্পনিক মাজার প্রতিষ্ঠা বা মিথ্যা পীরের সত্য কাহিনী পর্ব ২

১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শেষ পর্ব.......

বিভিন্ন চায়ের দোকানে, মজলিসে, বাজারে, মসজিদে, 'শায়খ বরকতের' নানান বরকতের কথা, তার মাথার চুল কতটা দীর্ঘ ছিলো, পাগড়ী কতটা লম্বা ছিলো,
অসংখ্য-অগণিত কারামতির কথা- আযানের সময় হওয়ার সাথে সাথে মিনার নীচে নেমে আসত.....ইত্যাদি....ইত্যাদি।

স্কুলের শিক্ষকদের মাঝেও বিষয়টি বাদ-প্রতিবাদের সাথে আলোচিত হতে লাগল।
যখন সীমা ছাড়িয়ে গেল, তখন শিক্ষক সাঈদ ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে চিৎকার করে উঠল,
'ওহে বিবেকবানের দল! আপনারা ছাড়ুন এ সমস্ত কুসংস্কার ও অমুলক বিশ্বাসের কথা!'
শিক্ষকগণ সমস্বরে বলে উঠল, কুসংস্কার... তুমি কি বলতে চাও এখানে শায়ক বরকত নেই?

সাঈদঃ অবশ্যই নেই। এ ধরনের কোন খবর এখানে নেই।
এটি একটি অপ্রচার।
চৌরাস্তার মোড়ে শুধু মাটি আর মাটি, না কোন শায়খ আছে না কোন ওলী বা দরবার ছিল বা না আদৌ আছে।

শিক্ষকগণ যেন কেঁপে উঠলেন।
এক যোগে বললেন, কি বল তুমি? 'শায়খ বরকত' সম্পর্কে এমন কথা বলার স্পর্ধা তোমার হল কিভাবে?
'শায়খ বরকতের' বরকতে গ্রামের পশ্চিমের নদীটি ভরাট হয়েছে।
তিনি....।
তাদের চেঁচামেচীতে সাঈদ পেরেশান হয়ে উঠল। তারপরও সে তাদের লক্ষ্য করে বলল, আপনারা নিজের বিবেক বিক্রয় করে দিবেন না।
আপনারা শিক্ষিত ও বিবেকবান মানুষ। কোন কবর বা মাজার সম্পর্কে একজন এসে কিছু বলল বা স্বপ্নে শয়তান কিছু দেখাল আর তাই বিশ্বাস করে দিবেন?

এতক্ষণ স্কুলের প্রধান শিক্ষক নীরব ছিলেন।
তিনি আলোচনায় যোগ দিলেন। বললেন, 'শায়খ বরকতের; গুণাগুণ আছে এবং তা নিশ্চিত। তুমি কি গতকালের পত্রিকা পড়নি?

সাঈদ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করল, পত্রিকাতেও! কি লেখা হয়েছে তাতে?

প্রধান শিক্ষকঃ পত্রিকা বের করে সকলের সামনে পাঠ করছেন।
পত্রিকার সবচেয়ে বড় শিরোনাম হচ্ছে ' শায়খ বরকতের দরবার আবিষ্কার'। লেখা হয়েছে: 'শায়খ বরকত (দামাত বারাকাতুহু) ১১০০ হি: সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি খালেদ বিন ওয়ালীদের (রাঃ) ৩৩তম অধঃস্তান সন্তান।
অনেক উলামায়ে কেরামের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করছেন।
যেমন উমুক...উমুক...উমুক।
তিনি তুর্কী সৈন্য বাহিনীর সাথে খৃষ্টানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে শরীক হয়েছেন। যুদ্ধ যখন ভীষণ আকার ধারণ করে, তিনি খৃষ্টান বাহিনী লক্ষ্য করে একটি ফুঁ মারেন।
সাথে সাথে ঘূর্ণিঝড় খৃষ্টান বাহিনীর উপর প্রচন্ড আঘাত হানে।
সবাই আর্তচিৎকার করতে করতে রক্তাক্ত অবস্থায় ধুলায় লুটিয়ে পড়ে...।

সাঈদঃ মাশাআল্লাহ! শায়খ বরকত সম্পর্কে সাংবাদিক সাহেব এত সুক্ষ্ণ বিবরণ পেলেন কোথায়?

প্রধান শিক্ষকঃ এগুলো সত্য কথা। তুমি কি মনে কর এ সবাই তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়ে এসেছে? এগুলো ইতিহাস...।

সাঈদঃ কিন্তু এসব দাবীর পক্ষে দলীল থাকা জরুরী, যেকোন দাবী এলেই তার বিশুদ্ধতা যাচাই করা আপনার উপর আবশ্যক।
অন্যথা যে কেউ যা ইচ্ছা দাবী করতে পারে... কবর....ওলী-আউলিয়া, কারামত...।

তারপর সাঈদ চিৎকার করে উঠল। আপনারা আমার সুস্পষ্ট কথা শুনুন, শায়খ বরকত নামের এ দরবার বা মাজার একটি মিথ্যা ও অপপ্রচার মাত্র।
আমি এবং স্যার আদেল মিলে এটি উদ্ভাবন করেছি।
প্রকৃতপক্ষে এখানে কিছুই নেই। আমাদের উদ্দেশ্য হল, মানুষের মূর্খতা এবং ভ্রষ্টতা যাচাই করে দেখা। স্যার আদেল আপনাদের সামনে আছেন তাকে জিজ্ঞেস করে দেখুন!

শিক্ষকগণ আদলের দিকে দৃষ্টি ফিরিয়ে বললেন, এ লোক তো তোমার মত বিতর্ক পছন্দ করে; সব বিষয়ে দলীল চায়। সে তো ওলী-আউলিয়ার দুশমন।
তুমি আর আদেল যা-ই বলনা কেন, আমরা বিশ্বাস করি শায়খ বরকত (দামাত বারাকাতুহু) যুগ যুগ ধরে এখানে রয়েছেন।
দুনিয়ার কোন স্থান ওলী-আউলিয়া, পীর-দরবেশ, গাউছ-কুতুব থেকে খালি নয়।
তোমার বিভ্রান্তিকর কথাবার্তা থেকে আমরা আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করি।
সাঈদ ও আদেল নিশ্চুপ হয়ে গেলেন, ক্লাশের বেল বেজে উঠল। সবাই নিজ নিজ শ্রেণী কক্ষে চলে গেলেন।

ওস্তাদ সাঈদ যা দেখছেন এবং শুনছেন তাতে অস্থির হয়ে উঠলেন। চিন্তা করছেন শায়খ বরকত... কারামতি...সম্ভব...অসম্ভব? এটা কি সম্ভব এত লোক সবাই ভুলের মধ্যে রয়েছে? পত্রিকার রিপোর্ট মিথ্যা?
আশ্চর্যের বিষয়, এলাকার বুযুর্গ, আলেম-ওলামাগণ তো কিছু দিন আগে চৌরাস্তার মোড়ে শায়খ বরকতের নামে উরুস মোবারকও উদযাপন করলেন? কিন্তু শায়খ বরকত তো ওস্তাদ আদেলের পক্ষ থেকে বানোয়াট একটি নাম... কিন্তু এটা কি করে সম্ভব যে, এত লোক সবাই প্রলাপ বকছে? অসম্ভব...অসম্ভব...।

ধীরে ধীরে সাঈদের মগজে নতুন চিন্তা প্রবেশ করতে লাগল।
হয়তো শায়খ বরকত আছেনই, ওস্তাদ আদেল হয়তো আগে থেকেই ব্যাপারটা জানতেন।
কিন্তু মানুষকে সন্দেহে ফেলার জন্য এখন হয়তো বলছেন, আমি নিজে 'শায়খ বরকতের' নামে নতুুন কিছু আবিষ্কার করেছি।
সাঈদ স্যার বিষয়টি নিয়ে খুব চিন্তা-গবেষণা করলেন।
এ থেকে বের হওয়ার জন্য শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করলেন, কিন্তু কোন কাজ হল না।
তার মগজে যেন বিষয়টি ভালোভাবেই স্থান পেয়েছে।
পরবর্তী দিন...পরের দিন... বিষয়টি নিয়ে স্কুলে আলোচনা -পর্যালোচনা হতে থাকল।
তখন ছিল শিক্ষাবর্ষের শেষর দিক। বাৎসরিক ছুটি হল। শিক্ষকগন নিজ নিজ এলাকায় ছুটি কাটাতে চলে গেলেন।
নতুন শিক্ষাবর্ষে শুরু হল।
শিক্ষাকগণ দীর্ঘ ছুটি কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরে এসেছেন।
আদেল ও সাঈদ আগের মতই বাসে চড়ে গ্রামের স্কুলে যাচ্ছেন। আদেল স্যার 'শায়খ বরকতের' বিষয়টি বেমালুম ভুলেই গিয়েছেন। অথচ তিনিই এ ঘটনার জন্মদাতা।
কিন্তু বাস যখন গ্রামের প্রবেশ পথে সেই চৌরাস্তায় পৌঁছেছে, তখন আদেল লক্ষ্য করলেন, স্যার সাঈদ যেন গুণ গুণ করে কি কি দু'আ-যিকির পাঠ করছেন।

ওদিকে স্যার আদেল বিস্ময়ে হা হয়ে গেলেন।
তিনি একি দেখছেন?
চৌরাস্তার মোড়ে কত সুন্দর মাজার বানানো হয়েছে!
মাজারের উপর আকাশচুম্বী বিশাল গম্বুজ ঝলমল করছে, পাশে তুর্কী স্টাইলে বানানো সুবিশাল মসজিদ।
আদেল মুচকি হেসে মনে মনে বলল মানুষ কত নির্বোধ!
শয়তান তাদেরকে শির্কে লিপ্ত করার ক্ষেত্রে কতই না কামিয়াব হয়েছে!
তিনি স্যার সাঈদকে হাসিতে শরীক করার উদ্দেশ্যে তার দিকে নজর দিলেন, কিন্তু একি তিনি তো দু'আর জগতে ডুবে আছেন...!
এক সময় স্যার সাঈদ চিৎকার করে বাস চালককে অনুরোধ করছেন, এখানে একটু থাম।
তারপর তিনি দু'হাত উঠিয়ে শায়খ বরকতের রুহের উপর ফাতিহাখানি পাঠ করলেন।


সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই এপ্রিল, ২০২০ বিকাল ৫:২৫
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×