somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবী ধ্বংসের ৬টি ব্যার্থ ভবিষ্যত বাণী

০৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ দুপুর ১২:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে, এই কথাটার সাথে পরিচিত না কে? অনেক সময় অনেক প্রমান দিয়ে আমাদের বিশ্বাস করতে বাধ্য করে যে আসলেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। যে যত যুক্তি দিক আর না দিক সত্যি কিন্তু পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবে, এ কথা বিশ্বাস করে না এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। কি ভাবছেন আমি পৃথিবী ধ্বংস নিয়ে এত কথা বলছি কেন? কেননা আজ আপনাদের অতীতে করা পৃথিবী ধ্বংসের এমন ৬টি ভবিষ্যতবানীর কথা শুনাবো যে গুলি তৎকালীন আমলে ছিল সব থেকে জনপ্রিয় এবং সবার মুখে মুখে এ নিয়ে আলোচনা হত। তাহলে চলুন শুরু করা যাক,



০৬) অপ্রামাণ্য রচনাঃ

অপ্রামাণ্য রচনা (The Apocrypha), এই ভবিষ্যত বানীটি করা হয় ১০০০ সালে। ইঞ্জিল শরীফের কয়েকটা লাইনের উৎস ধরে সকলের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পরে যে ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুর এক প্রজন্ম (Generation) পরে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। ইঞ্জিল শরীফের লাইনটি ছিল, "Christ would be back in generation and that the generation shall not pass" যার বাংলা মানে দাঁড়ায়, "যিশু আবার ফিরে আসবেন (আগামী) প্রজন্মে এবং সেই প্রজন্ম পরিত্রান পাবে না"। তৎকালীন সময়ে প্রচলিত প্রথা অনুসারে মানুষের চার্চ থেকে অর্থের বিনিময়ে নিজেদের জন্য স্বর্গ কিনতে পারতেন আর চার্চে অর্থ দানের মাধ্যমে নিজেদের পাপ থেকে মুক্তি পেতেন। যেহেতু পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে তাই অনেকেই তাদের সর্বোস্ব বিক্রি করে দিয়ে চার্চে অনুদান হিসেবে দিয়ে ছিলেন যাতে মৃত্যুর পরে তারা ভাল থাকতে পারেন। এ সময় চার্চের আর্থিক আয় কেমন হয়ে ছিল তা আর বলে বুঝানো লাগবে বলে মনে হয় না। যেহেতু তখনকার সময়ে ঘড়ি বা ক্যালেন্ডারের তেমন কোন প্রচলন ছিল না তাই সাধারন লোকজন এই ধ্বংসের দিনের হিসাবের জন্য সম্পূর্ন ভাবে নির্ভর করত মহান চার্চের উপর। কিন্তু অনেক বছর কেটে গেলেও পৃথিবী কিন্তু ধ্বংস হয়নি। ইতিহাসবিদেরা এই ঘটনাকে পাদ্রীদের অর্থ কামাবার পন্থা বলেই দেখেন। আর যারা সব কিছু বিক্রি করে চার্চে দিয়েছিল তারা কোন ভাবেই যে খুশি হয়নি তা নিশ্চয় বলার প্রয়োজন নেই।



০৫) The Watchtower Society:
এই The Watchtower Society এক অদ্ভুদ সোসাইটি, এরা পৃথিবী ধ্বংসের তারিখ অনেক বার নির্ধারন করছে, অনেক বার বলতে অনেক বার। এরা বলে, "যিশু ফিরে আসবে, আর ফিরে এসে সকলের বিচার করবে।" আচ্ছা এদের ভবিষ্যত বাণী এতবার মিথ্যা প্রমানিত হবার পরেও কিন্তু এরা থেমে নেই, এখন পর্যন্ত টিকে আছে এই সোসাইটি। তার থেকেও অবাক লাগে যে অনেক মানুষ আবার এদের কথা বিশ্বাস করে আবার ওদের কথা মত চলে। এরা প্রথমে বলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে ১৮৭৪, কিন্তু কি জানি কি গননা করে বলল যে না তাদের ভুল হইছে আসলে ১৯৪১ সালে। এই ঘোষনা দেবার আগেই কিন্তু প্রথম বিশ্ব যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল। এরপরেও কিন্তু তারা পৃথিবী ধ্বংসের ভবিষ্যত বাণী করা বন্ধো করেনি। তবে বর্তমানে একটু সুর পাল্টে কোন নির্দিষ্ট দিনের কথা উল্লেখ না করে শুধু বলতে থাকে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে।



০৪) নষ্টাডামাসঃ
নষ্টাডামাস (Nostradamus) ছিলেন এক জন বিখ্যাত গনক। যিনি তার জীবনে অনেক ভবিষ্যত বাণী করেছেন। তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠান কিংবা কোন বড় ঘটনার ভবিষ্যত বাণী আগেই করে দিতেন। যার লেখা এই সকল ভবিষ্যত বাণী পড়লে খুব সহজেই বোঝা যায় যে এগুলি আসলে কোন অলৌকিক ঘটনা না বরং কয়েকটি ঘটনার ফলাফলের হিসাব মাত্র। এনার মতে পৃথিবী ১৯৯৯ সালে ধ্বংস হয়ে যাবে। কিন্তু না এখন সালটা ২০১৪, তাই বলতেই পারি পৃথিবী ধ্বংস হয়নি আর নষ্টাডামাসের ভবিষ্যত বাণী মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে।



০৩) স্বর্গের দরজাঃ
স্বর্গের দরজা (Heavens Gate) নামের এই সংস্থার লোকেরা আসলে এমন একটি গোষ্টি ছিল যারা ধর্ম কর্মের নামে বিশাল আগুন জ্বালিয়ে পুজা করত। এদের মধ্যে বদ্ধ মূল ধারনা ছিল যে সম্পুর্ন পৃথিবী ভীন গ্রহের বাসিন্দা (Alien) দ্বারা প্রায় পরিপূর্ন হয়ে গেছে। এমন কি সরকারের বেশির ভাগ লোক আসলে এলিয়েন। আর ১৯৯৭ সালে এক উল্কাকে অনুসরন করে এলিয়েনরা পৃথিবীতে আসবে আর সব মানুষদের দাষে পরিনত করবে। আর এই দাষত্ব থেকে নিজেদের রক্ষা করার এক মাত্র উপায় হল আত্মহত্যা করা। বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না, কিন্তু এই তত্বের উপর বিশ্বাস করে শতাধিক মানুষ আত্মহত্যা করেছিল। কিন্তু দুঃখের বিষ্য ১৯৯৭ সাল চলে গেলেও এলিয়েন আর আসে নাই, আর যারা আত্মহত্যা করেছে তাদের প্রতি সমবেদনা জানানো বাদের আর কিছুই করার নাই।



০২) Y2K:
Y2K এর কথা নিশ্চই সকলের কম বেশি জানা আছে। মূলত ২০০০ সালে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে এই ধারনা নিয়েই জন্ম Y2K এর। আর সূত্রপাত কি ভাবে হয়েছিল জানেন? মজার বিষয় পড়ে ভীষন মজা পাবেন। আসলে তৎকালীন সময়ে কম্পিউটারে ৯৯ সালের পরের সাল অর্থাৎ ২০০০ উল্লেখ করা করা ছিল ০০ দিয়ে। এ নিয়েই সকলের মাথা ব্যাথা শুরু। অনেকে ধরে নেন যে ২০০০ সালে পৃথিবীর সব কম্পিউটার আপনা আপনি অচল হয়ে যাবে, নিউক্লিয়ার বোমা গুলি এই বিগরে যাওয়া কম্পিউটারের জন্য নিক্ষেপিত হবে। বোঝেন ঠেলা। আর এর প্রভাব এত বেশি ছিল যে সাধারন মানুষ সহ খোদ আমেরিকার সরকার খাদ্য মজুদকরন, অস্ত্র মজুদ, বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা, নিউক্লিয়ার বোমা হামলার পরবর্তি পরিস্থিতি মোকাবেলা এবং অর্থ জমিয়ে রাখা যাতে পরবর্তিতে দেশের অর্থনীতি পুনঃরুদ্ধার করা যায়; এসব ব্যাবস্থা গ্রহন করেছিল। কিন্তু ২০০০ সালেও কিছু হল না। এত শ্রম সব পণ্ড শ্রমেই পরিনত হল।



০১) মায়ান পঞ্জিকাঃ
এইতো বেশি দিন না, ২০১২ সালের ৩১শে ডিসেম্বর পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে বলে কত কিছু যে হল তা আর মনে করতে চাই না। ফেসবুকের কল্যানে এমন কেউ নাই যে জানে নাই যে এই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। সে যে কি তুলকালাম ব্যাপার তা কল্পনা করলেও এখন মারাত্মক হাসি পায়। এ নিয়ে আবার অনেকে কুরআন শরীফের সাথে সংখ্যার গুন ভাগ করে কত কিছু বানিয়ে ফেলেছিল। এ নিয়ে "২০১২ এবং ইসলাম তথা ১৪৩৩ আরো কিছু অজানা তথ্য" লেখায় বিস্তর আলোচনা করা হয়েছিল। সব দোষ এই মায়ানদের, কেন ভাই ২০১২ এর পরে ২০১৩ এর পঞ্জিকা বানালে কি এমন ক্ষতি হত? তা না ২০১২ তে শেষ করবে, আবার বলে পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। এই মায়ান সভ্যতা কিন্তু আসলেই মারাত্মক ছিল। অবশ্য মায়ানদের ভবিষ্যত বাণী নিয়ে কিন্তু অনেকের সন্দেহ ছিল। "সুমেরীয়দের কাল্পনিক গ্রহ নিবিরু, কিয়ামত আর অন্যান্য বিতর্ক" লেখাটি পড়লে বুঝে যাবেন কেন ছিল এই সন্দেহ। এদের ভবিষ্যত বানীও মিথ্যা প্রমানিত হল ২০১৩ সালেই।

পৃথিবী একদিন ধ্বংস হবেই, এনিয়ে কোন সন্দেহ নেই। আমি এই লেখায় শুধু মাত্র পৃথিবী ধ্বংসের ব্যার্থ ৬টি ভবিষ্যত বাণীর কথা উল্লেখ করেছি মাত্র।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৮
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×