somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৮ জন ব্যাক্তি যাদের বসবাদ মৃত আত্মীয়দের সাথে (১ম পর্ব)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রকৃতির নিয়মেই মানুষ জন্মগ্রহন করে আর যে জন্মে তার জন্য মৃত্যু অবধারিত। মৃত্যু আমাদের জীবনের এমন এক নির্মম সত্য। যা আমাদের আলাদা করে দেয় বহু বছরের চির চেনা মানুষদের কাছ থেকে। মৃত মানুষের দেহ ধর্ম ও জাতী বিশেষে আমরা বিভিন্ন উপায়ে অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকি। অন্তষ্টিক্রিয়ার বিভিন্ন পদ্ধতি নিয়ে এর আগে "১০টি উদ্ভট অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া (১ম পর্ব এবং ২য় পর্ব)" লেখায় বিস্তর আলোচনা করেছিলাম।

আজ আপনাদের এমন ৮ জন ব্যাক্তির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যারা তাদের আপন জনদের এতটাই বেশি ভালবাসতেন যে মৃত্যুর পরেও তাদের মৃতদেহকে নিজের থেকে দূরে চলে যেতে দেননি। বরং তারা বসবাস করা শুরু করেছিল তাদের আত্মীয়দের মৃত দেহর সাথে। চলুন তাহলে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই তাদের সাথে।



আমৃত্যু মৃত স্ত্রীর পাশেঃ
নাম তার Rocky Abalsamo, বসবাস করেন পশ্চিম রক্সবেরি অঞ্চলে। ভালবেসে বিয়ে করেছিলেন তিন। কিন্তু সংসার জীবনের শুরুর ১৬ বছরের মাথায় ১৯৯৩ সালে তার স্ত্রীর মৃত্যু হয়। এ যেন তার জীবনের সব থেকে বড় ধাক্কা। সমাজিক নিয়মেই তার স্ত্রীর অন্তষ্টিক্রিয়া সম্পন্ন করে St. Joseph Cemetery তে। এখানেই চির নিদ্রার শুইয়ে দেন প্রিয়তমা স্ত্রীকে।

কিন্তু স্ত্রীর মৃত্যুর পরেও যেন তার ভালবাসায় কোন ঘার্তি হয়নি। সব কিছু ছেড়ে সারা দিন রাত বসে থাকতেন প্রিয়তমা স্ত্রির কবরের পাশে। এভাবেই কাটিয়ে দিলেন দীর্ঘ ৪টি বছর। কি রোদ, কি বৃষ্টি, কি তুষারপাত কোন কিছুই তাকে দূরে সরাতে পারেনি তার প্রিয়তমার কাছ থেকে। নিয়মিত খাবার না খাবার জন্য তার স্বাস্থের অবনতি হতে থাকে। যার ফলে ১৯৯৭ সালের প্রথম দিকেই তাকে ভর্তি করা হয় Stonehedge Health Care Center এ আর এখানেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ২২শে জানুয়ারি।



মৃত স্ত্রীর সাথে ঘুমানোঃ
২০০৯ সাল, ভিয়েনামের অদিবাসি "লুভান" (Le Van) তৎকালীন সময়ে ভিয়েতনামের প্রায় প্রতিটি দৈনিক পত্রিকা গুলির মূল সংবাদে পরিনত হন। কেননা, তিনি বিগত ৫ বছর ধরে তার মৃত স্ত্রীর সাথে ঘুমাচ্ছেন। এই সংবাদ প্রচারিত হবার দু'বছর পরে Nguoi Lao Dong পত্রিকার সাংবাদিক পুনঃরায় খবর নিয়ে জানতে পারেন যে তিনি এখনও তার মৃত স্ত্রীর সাথেই সংসার করছেন। দেশের আইনে এ নিয়ে কোন ব্যাবস্থা না থাকায় দেশটির প্রশাসন এর বিরুদ্ধে কার্যকর কোন পদোক্ষেপ নিতে ব্যার্থ হন।

ভিয়েতনামের সংবাদপত্র লুভানের একটি ছবি প্রকাশ করেন যেখানে দেখা যায় বিশেষ ধরনের খনিজ পদার্থ যা থেকে প্ল্যাস্টার অব প্যারিস তৈরি হয় তা দিয়ে আবৃত একটি মানব আকৃতির মুর্তি, যার মধ্যে রয়েছে লুভিয়ানের স্ত্রীর মৃত দেহ।

তিনি হয়ত তার জীবন সঙ্গীকে হাড়াবার ব্যাপারটি মেনে নিতে পারেন নাই, একারনেই কবর খুড়ে প্রিয়তমা স্ত্রীর মৃত দেহ উঠিয়ে নিজেই সংরক্ষন করে রেখেছেন।

৫৭ বছর বয়স্ক (২০০৯) লুভানের মতে, তিনি প্রতিদিন তার মৃত স্ত্রীর সাথে ঘুমান যাতে স্ত্রীর পুনঃজন্ম হলে যেন আবার তার কাছেই ফিরে আসতে পারেন, এই প্রশিক্ষন তিনি দিচ্ছেন তাকে।



দীর্ঘ ১৮ বছর সন্তানের সাথেঃ
মাত্র ২২ বছর বয়সে মারা যান Joni Bakaradze। কিন্তু মারা যাবার পরে তার পরিবার সিদ্ধান্ত নেয় তাকে কবর দিবেন না। বরং তারা নিজেরাই সন্তানের দেখা শুনা করবেন। এটি করার পিছে যুক্তি ছিল, Joni Bakaradze এর দু'বছর বয়স্ক শিশু সন্তান। যে হয়ত কোন দিন ঠিক মত বাবার চেহারা দেখতে পাবে না। তার জন্যই মুলত তারা এই উদ্যোগ নেন। আর এভাবেই কেটে যায় দীর্ঘ ১৮টি বছর।

Joni Bakaradze মৃত্যুর প্রথম চার বছর তার মৃত দেহে এমব্যালমিং পদ্ধতিতে প্রথমে সংগ্রহ করা হয়। কিন্তু একদিন Tsiuri Kvaratskhelia স্বপ্নে দেখেন যে কেউ তাকে উপদেশ দিচ্ছেন যে তার ছেলের দেহ ভদকাতে সংগ্রহ করতে। এর পর থেকে জর্জিয়ার বাসি নামক গ্রামে বসবাসরত Tsiuri Kvaratskhelia প্রতিদিন তার ছেলের দেহ ভদকা দিয়ে ধুইয়ে দিত যাতে তার দেহ কাল না হয়ে যায়।

দীর্ঘ দশ বছর Tsiuri Kvaratskhelia তার মৃত সন্তানের দেহের পরিচর্চা করেন এবং সন্তানের প্রতি জন্মদিনে তাকে নতুন পোশাক পরিয়ে দেন। কিন্তু বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে আগের মত ছেলের যত্নো অতটা করতে পারেন না। তার কারনে Joni Bakaradze এর মৃত দেহ আগের তুলনায় অনেকটাই কালো হয়ে গিয়েছে, তবে ভদকা দিয়ে ভাল মত পুরা শরীর ধুয়ে দিলে পূর্বের মত আবার সাদা রঙ ধারন করে।

Joni Bakaradze এর দেহ সংরক্ষন করা হয়েছে একটি কাঠের তৈরি কফিনের মধ্যে, ভিতরে দেখার জন্য রাখা হয়েছে কাঁচের জানালা। বর্তমানে Joni Bakaradze এর ছেলের বয়স ২০ বছর আর Tsiuri Kvaratskhelia মতে তার নাতি এ বিষয়ে খুবই খুশি যে তার পিতার দেহ তার পরিবার এখনও সংরক্ষন করে রেখেছে।



মৃত স্বামীর সমাধি কক্ষে জীবন যাপনঃ
৪৩ বছর বয়স্কা আর্জেন্টেনিয়ান বিধবা Adriana Villarreal ২০১২ সালে সংবাদ মাধ্যমের বেজ আলোচিত ব্যাক্তি হয়ে ওঠেন। কেননা তিনি বসবাস করছেন তার মৃত স্বামীর সমাধি কক্ষে।

Dos de Mayo শহরের পুলিশ কমিশনারের ভাষ্য মতে, তিনি এবং আরো কয়েকজন পুলিশ অফিসার San Lazaro Cemetery তে একটি অভিযোগের তদন্ত করতে যান। তাদের কাছে অভিযোগ আসে যে কেউ একজন এই গোরস্থানের মধ্যে নিয়মিত বসবাস করছেন এবং প্রতিদিন রাতে উচ্চ শব্দে গান শুনেন। এসময় তারা শব্দের উৎস ধরে হাজির হন Sergio Yede এর সমাধি কক্ষের সামনে। তারপর তারা দরজায় নক করলে Adriana Villarreal তাদের ভিতরে স্বাগতম জানান।

তারা ভিতরে যেয়ে দেখতে পান যে Adriana Villarreal সেখানে বেশ জমকালো ভাবেই বসবাস করছেন, ঠিক তার স্বামির কফিনের পাশে। এখানে তিনি এনেছেন একটি নতুন বিছানা, একটি রেডিও এবং কম্পিউটার ইন্টারনেট সংযোগ সহ।

Adriana Villarreal এর স্বামী Sergio Yede ২০১০ সালে ২৮ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন। পরবর্তিতে Adriana Villarreal তার স্বামীর সমাধি কক্ষকে অনেকটা বাসার মত করেই সাজিয়েছেন আর এর জন্য অর্থ পেয়েছে তার এবং তার স্বামীর সঞ্চয় করা নতুন বাড়ির অর্থ থেকে। জীবিত অবস্থায় নতুন বাড়ি না হোক স্বামীর মৃত্যুর পরে তার সাথে নতুন বাড়িতে স্বাদ ঠিকইতো পাচ্ছেন।

=====>>>>

২য় পর্ব কি পড়তে ইচ্ছা করছে??? B-) B-) B-)
তাইলে আর কি নেন পড়েন... :P :P :P :P :P

৮ জন ব্যাক্তি যাদের বসবাদ মৃত আত্মীয়দের সাথে (শেষ পর্ব)
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৫:৫০
৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×