somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অদূর ভবিষ্যতের ১০টি প্রযুক্তি (২য় পর্ব)

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পূর্বের পর্বঃ অদূর ভবিষ্যতের ১০টি প্রযুক্তি (১ম পর্ব)

ভবিষ্যত প্রযুক্তি কেমন হবে তা নিয়ে যেমন অতীতেও মানুষ অনেক কিছু তেমনি বর্তমানেও মানুষ অনেক কিছু চিন্তা করছে এবং তা বাস্তবায়নের জন্য কাজও করে চলেছে। অতীতে মানুষ ভবিষ্যত নিয়ে কি চিন্তা করত তা "অতীতের ভবিষ্যত" লেখায় তুলে ধরে ছিলাম। আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরব এমন ১০টি প্রযুক্তির কথা যে গুলি মানুষ অদূর ভবিষ্যতেই দেখতে পাবে। তাহলে চলুন পরিচিত হয়ে নেওয়া যাক সেই ১০টি অদূর ভবিষ্যতের প্রযুক্তির সাথে।

০৫) হলোগ্রাফিক টেলিভিশনঃ



হলিউডের সাইফাই সিনেমা যারা দেখেন তারা সব থেকে বেশি পরিচিত এই হলোগ্রাফিকের সাথে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে ভিডিও চিত্র কিন্তু তা টেলিভিশনের মত বাক্স বন্দি না হয়ে উন্মুক্ত অবস্থায়। মনে হয় যেন সামনেই রয়েছে এমন এক বস্তু যা হাত দিয়েই স্পর্শ করা যাবে। অনেকের কাছে এটা অবাস্তব মনে হলেও এই হলোগ্রাফিক টেলিভিশন যে খুব শীঘ্রই LCD, Plasma বা HD টেলিভিশনকে প্রতিস্থাপন করবে তা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। তখন টেলিভিশন কত ইঞ্চি পর্দা থাকবে তার উপর নির্ভর করবে না বরং আপনি কত বড় জায়গা নিয়ে টেলিভিশন দেখতে চান তার উপর নির্ভর করবে। আমেরিকার "Massachusetts Institute of Technology" সংক্ষেপে "MIT" ইতি মধ্যে এমন এক চিপ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে যা দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে ৫০ গিগাপিক্সেলের হলোগ্রাফিক চিত্র প্রযেক্ট করা সম্ভব, অর্থাৎ তা বাস্তব চিত্রের মতই হবে। কিন্তু বর্তমানে এই হলোগ্রাফিক টেলিভিশন বাজারে ছাড়া সম্ভব হচ্ছে না কেননা এর দাম অত্যাধিক বেশি। এ কারনে কোন কম্পানিই বাণিজ্যিক ভাবে এই টেলিভিশন বাজারজাত করার সাহস দেখাচ্ছে না। তবে খুশির সংবাদ হচ্ছে এর দাম কমাবার জন্য MIT ইতিমধ্যেই কাজ শুরু করে দিয়েছে। তাদের মতে আগামী ১০ বছরের মধ্যে তারা এই প্রযুক্তিকে আরো সস্তা উপায়ে বানাবার পদ্ধতি আবিস্কার করে ফেলবেন, আর তখন তা জনসাধারনের জন্য বাজারজাত করা সম্ভব হবে।

০৪) গুগল Earth এ সরাসরি সম্প্রচারঃ



বর্তমান সময়ে গুগলের জনপ্রিয় সেবা গুলির মধ্যে একটি হচ্ছে গুগল ম্যাপ। আর যারা গুগল ম্যাপ ব্যাবহার করেন তারাতো অবশ্যই "গুগল Earth" এর সাথে পরিচিত। গুগল Earth এ আপনি চাইলেই মহাশুন্য থেকে Zoom In করে নিজের বাড়ির ছাদ পর্যন্ত দেখতে পাবেন। আর যদি আপনি Live ক্রিকেট খেলার মত গুগল Earth এর সাহায্যে পৃথিবীর যেকোন স্থান আপনি Live দেখতে পারেন তাহলে ব্যাপারটা কেমন হবে বলুনতো? ভাবছেন এটা অসম্ভব? না মোটেও না অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের "Rutherford Appleton Laboratory" সংক্ষেপে "RAL" যারা কিনা এমন এক ক্যামেরা তৈরি করার ঘোষন দিয়েছে যা কিনা এই অবাস্তব কল্পনাকে বাস্তব রূপ দিবে। তাদের তৈরি এই ক্যামেরা মূলত ১ মিটার লম্বা পাইপ আকৃতির হবে যা মহাশূন্যে স্যাটেলাইটের সাথে সংযুক্ত থাকবে। আর সেই স্যাটেলাইটে অবস্থিত শক্তিশালী আয়নার প্রতিফলনকে যে এতটাই Zoom করতে পারবে যে রাস্তার উপর দিয়ে কোন লোক হেঁটে গেলে তার চেহারা পর্যন্ত সনাক্ত করা সম্ভব হবে। এবার বোঝেন তাহলে কেমন ক্ষমতা এই ক্যামেরার। আর এই ক্যামেরা সংযুক্ত থাকবে গুগল Earth অথবা এর মত কোন সাইটের সাথে। তবে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এটি আপাতত গাড়ি ট্রাকিং এর জন্য জনসাধারনের জন্য বাজারে ছাড়া হবে সবার আগে। পরবর্তিতে হয়ত তা গুগল ম্যাপের মুক্ত উন্মুক্ত হবে। কেননা এত বড় প্রজেক্টের আর্থিক ব্যায়ের কথাটাও মাথায় রাখতে হবে। আর এতে আপনি 2D সহ 3D ট্রাকিং ব্যাবস্থা পাবেন।

এবার চলুন দেখে নেই এই বিষয়ে বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন,


ভিডিও লিংকঃ Click This Link

০৩) তারবিহীন বিদ্যুৎ পরিবহনঃ



আচ্ছা যদি এমন হয় ঘরের মধ্যে ফ্যান লাইট সহ সব ইলেক্ট্রনিক জিনিষ চলবে কিন্তু কোন তার ছাড়া তাহলে কেমন হবে? দারুন তাই না? যেখানে খুশি লাইট রেখে জ্বালানো আর সব থেকে সুবিধা হবে ফোন চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে। কথা বলতে বলতে চার্জ ফুরাবার কোন চিন্তাই থাকবে না আবার ল্যাপ্টপের চার্জও শেষ হবে না কোন দিন। ভাবছেন এটা শুধু স্বপ্নেই সম্ভব!! না মোটেও না, আমেরিকার "Massachusetts Institute of Technology" সংক্ষেপে "MIT" এর গবেষক "Marin Soljacic" কিন্তু ইতিমধ্যেই এমন একটি রাউটার বা হাব (Hub) তৈরি করে ফেলেছেন যার মাধ্যমে সকল ইলেক্ট্রনিক জিনিষ চলবে কিন্তু তার ছাড়া। কি এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না। তাহলে চলুন CNN এর বানানো একটি ভিডিও প্রতিবেদন দেখে নেই।


ভিডিও লিংকঃ Click This Link

কি এবার বিশ্বাস হলতো? বর্তমান সময়ে যেমন তারযুক্ত ফোন মনে হয় কোন এক মান্দাতার আমলের ফোন ঠিক হয়ত আজ থেকে কয়েক বছর পরে মনে হবে যে ঘরের মধ্যে তার এটাও কি সম্ভব?? সেই দিন কিন্তু আর বেশি দূরে নেই।

০২) আল্ট্রা হাই স্পিড টিউব ট্রেনঃ



যোগাযোগ ব্যাবস্থায় রেলপথের পরিপূরক থাকলেও এর প্রতিদন্ধি যে কেউ নেই তা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। আচ্ছা বর্তমানে ট্রেনের সর্বোচ্চ গতি কত? জাপানের তৈরি সম্পূর্ন চৌম্বক ক্ষেত্রের উপর ভাসমান "ম্যাগলেভ" (Maglev) প্রজাতির ট্রেন গুলি ঘন্টায় সর্বোচ্চ ৩৬১ মাইল গতিতে ছুটতে সক্ষম। আর এটিই কিন্তু বর্তমানে বিশ্বের সব থেকে দ্রুত গতির ট্রেন। আচ্ছা আমি যদি বলি অদূর ভবিষ্যতে এমন ট্রেন আসছে যা প্রতি ঘন্টায় ৪,০০০ মাইল বেগে ছুটতে পারবে। নিশ্চই অবাক হচ্ছেন? অবাক হওয়ার মতই ঘোষনা দিয়েছেন টেকনোলজি প্রস্তুতকারক কম্পানি আর এই ট্রেনের নাম করন করা হয়েছে "ET3"। এটি এমন এক ট্রেন যা কাগজ কলমে হিসাব করলে প্রতি ঘন্টায় ৪,০০০ মাইল বেগে ছুটতে পারবে। মূলত এটি তৈরি হবে অনেকটা ম্যাগলেভের যান্ত্রিক ব্যাবস্থার উপর নির্ভর করে, আর এই ট্রেন কোন রেল লাইনের উপর দিয়ে নয় বরং চলবে বায়ু প্রেসার নিয়ন্ত্রিত নলের (Tube) মধ্য দিয়ে। ইতি মধ্যে এই ট্রেন তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। আশা করা যায় আগামি ১০ বছরের মধ্যেই এই ট্রেন যাত্রী সেবায় নিয়জিত হতে পারবে। আর এই ট্রেন যদি বাংলাদেশে চালু হয় তাহলে বলতেই হয় প্রতিদিন সকালে গ্রামের বাড়ি থেকে ঢাকায় এসে চাকুরি করা বা স্কুল কলেজ করা কোন ব্যাপারই না।



০১) নিরন্তর ফিউশন চুল্লীঃ
বর্তমানে নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাবস্থা সব থেকে পরিবেশ বান্ধব উপায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য। কিন্তু এই নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র গুলির নিউক্লিয়ার ফিউশনের ফলে উৎপাদিত বর্জ পদার্থ যেমন তেজস্ক্রিয় পূর্ন হয় তেমনি এটি পরিশোধন করাও ব্যায় সাপেক্ষ এবং বিপদজনক কাজ। বর্তমানে এই নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিশ্বের সব ক'টি উন্নয়নশীল বা উন্নত দেশে ব্যাবহৃত হচ্ছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের মাধ্যম হিসেবে। আচ্ছা যদি এমন হয় যে যে পরিমান কাঁচা মাল দরকার হয় একটা ফিউশন চুল্লিকে সচল রাখতে সেই পরিমান কাঁচা মান দিয়েই একই ফিউশন চুল্লি চালু রাখা যাবে আরো চার গুন সময় ব্যাপি তাহলে নিউক্লিয়ার বর্জ উৎপাদন কমে যাবে চার গুন পরিমান এমন কি বিদ্যুৎ খরচ পর্যন্ত কমে যাবে ৪ গুন পরিমান। তাহলে তা যেমন পরিবেশের জন্য আরো উপকারি হবে তেমনি ভোক্তাদের জন্যও হবে শান্তির সংবাদ। ঠিক এই কাজের জন্য আমেরিকা, ইউরোপিয় ইউনিয়ন, রাশিয়া, চীন, জাপান এবং ইন্ডিয়ার নিউক্লিয়ার বিজ্ঞানিরা মিলে এমন একটি প্রোজেক্ট হাতে নিয়েছে। এই প্রযেক্টের নাম "International Thermonuclear Experimental Reactor" সংক্ষেপে "ITER"। আর এই প্রযেক্ট যদি সত্যিকার অর্থেই আলোর মুখ দেখে তবে তা মানব সভ্যতায় নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে। তবে এই প্রযেক্টের বাস্তব রূপ দেখতে হয়ত আপনাকে অপেক্ষা করতে হবে কয়েক যুগ। কেননা এটা নিয়ে কেবল তত্ত্ব ভিত্তিক গবেষনা শুরু হয়েছে। অপেক্ষায় থাকুন হয়ত আপনার জীবন দশায় দেখে যেতে পারবেন পৃথিবীর নতুন এক অধ্যায়ে নব্য সূচনা।

নিউক্লিয়ার বিদ্যুৎ কেন্দ্র কি ভাবে কাজ করে তা "পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র" লেখাটি পড়লে বিস্তারি জানতে পারবেন।

এবার চলুন দেখে নেই এই গবেষনা নিয়ে American Security Project এর বিশেষজ্ঞদের আয়োজনে করা সংবাদ সম্মেলনের ভিডিওটি,



লেখাটি প্রথম লিখেছিলামঃ মঙ্গলবার, ২৭ মে, ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:৫৮
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

(রম্য রচনা -৩০কিলো/ঘন্টা মোটরসাইকেলের গতি )

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫০



একজন খুব পরিশ্রম করে খাঁটি শুকনো সবজি( দুষ্টু লোকে যাকে গাঁ*জা বলে ডাকে) খেয়ে পড়াশোনা করে হঠাৎ করে বিসিএস হয়ে গেলো। যথারীতি কষ্ট করে সফলতার গল্প হলো। সবাই খুশি। ক্যাডারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোথাও ছিলো না কেউ ....

লিখেছেন আহমেদ জী এস, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:১৯




কখনো কোথাও ছিলো না কেউ
না ছিলো উত্তরে, না দক্ষিনে
শুধু তুমি নক্ষত্র হয়ে ছিলে উর্দ্ধাকাশে।

আকাশে আর কোন নক্ষত্র ছিলো না
খাল-বিল-পুকুরে আকাশের ছবি ছিলো না
বাতাসে কারো গন্ধ ছিলোনা
ছিলোনা... ...বাকিটুকু পড়ুন

#প্রিয়তম কী লিখি তোমায়

লিখেছেন নীল মনি, ২১ শে মে, ২০২৪ সকাল ৭:৫১


আমাদের শহর ছিল।
সে শহর ঘিরে গড়ে উঠেছিল অলৌকিক সংসার।
তুমি রোজ তাঁকে যে গল্প শোনাতে সেখানে ভিড় জমাতো বেলা বোস, বনলতা কিংবা রোদ্দুর নামের সেই মেয়েটি!
সে কেবল অভিমানে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×