somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পৃথিবীর সব থেকে পুরাতন আকাশচুম্বী শহর

০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



অনলাইন হোক আর অফলাইন হোক আমার লেখা অনেকেই নিজের নামে চালাইছেন এমন কি পত্রিকাতেও ছাপাইছেন... X(
এই বার এই আবাইল্লা আকাম যে করবে তার খবর আছে... ব্লগে তারে নেংটা করুম আর কোন অনলাইন বা অফলাইন পত্রিকা হলে সরাসরি সম্পাদকের সাথে কথা বলব... সহ্যের সীমা ছাড়ায় গেছে...
X((

এবার তাহলে মূল লেখায় ফেরা যাক... :D:D



বর্তমান সময়ে অনেকেই মনে করেন যে সুউচ্চ অট্টালিকা সমৃদ্ধ শহর বহন করে আধুনিকতার প্রতীক। অনেক ক্ষেত্রেই এই ধারনা কিন্তু বাস্তব। কিন্তু এই সুউচ্চ অট্টালিকা বানাবার প্রথা কি চালু হয়েছে আমাদের এই আধুনিক যুগেই? যদি ভাবেন হ্যাঁ; তাহলে বলব না, আপনার ধারনা একদম ভুল। কেননা সুউচ্চ অট্টালিকা বানানো কিন্তু মোটেও আধুনিক যুগেই শুর হয়নি। আজ আপনাদের মরুভুমির এমন এক শহরের সাথে পরিচয় করিয়ে দিব যে শহরকে বলা হয় "Manhattan Of The Desert", আপনারাতো জানেনই যে বিশ্বের সব থেকে বেশি সংখ্যক উচু বিল্ডিং আছে আমেরিকার ম্যানহাটান শহরে। চলুন তাহলে আজ আপনাদের পরিচয় করিয়ে দেই পৃথিবীর সব থেকে পুরাতন আকাশচুম্বী শহরের সাথে।



সারা বিশ্বের কাছে "Manhattan Of The Desert" নামে খ্যাত "ওয়াদি হ্যাড্রামউত" (Wadi Hadramout) নামে মাটির দেওয়াল দিয়ে ঘেরা এই এলাকাটি "ইয়েমেন" (Yemen) দেশটির "সিবাম" (Shibam) শহরে অবস্থিত। শহরটির সব থেকে বড় বৈশিষ্ট্য হল এই শহরটি পুরাটাই মাটির দেওয়াল দিয়ে গড়া। যেমন শহরকে ঘিরে রয়েছে মাটির দেওয়াল তেমনি এর ভিতরে গড়ে ওঠা সম্পূর্ন শহরটাই মাটির বাড়ি দিয়ে তৈরি করা। ১৯৮২ সালে, এই শহরকে "World Heritage" হিসেবে চিহ্নিত করে UNESCO। এই শহরটি গড়ে ওঠে ১৬শ শতকের দিকে, যা কিনা বিশ্বের সব থেকে পুরাতন শহর যাখানে রয়েছে মাটি দিয়ে তৈরি উচু টাওয়ারের মত বিল্ডিং। প্রায় ৪০০ বছর আগে এই শহর ছিল ব্যাবসা বানিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু।



এই শহরটি মূলত সকলের দৃষ্টিকারে এর বাড়ি গুলির জন্য। এই শহরে মোট বাড়ির সংখ্যা ৫০০টি, আর বাড়ি গুলি ৫ থেকে ১১ তলা পর্যন্ত। প্রতিটি তলা একটি পরিবারের জন্য বানানো। বর্তমান যুগের অনেকটাই ফ্লাটের পূর্বরূপ এই বাড়ি গুলি। শহরটিকে মাটির দেওয়াল দিয়ে ঘিরে দেবার মূল কারন ছিল তৎকালীন সময়ে বেদুইন দস্যুদের হাত থেকে শহরবাসীকে রক্ষা করা। আগেই বলেছি ৪০০ বছর আগে এটি ছিল ব্যাবসা বানিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু। আর সে কারনেই এখানে যে দস্যুদের প্রাদুর্ভাব বেশি ছিল তা বলার অপেক্ষা রাখে না। যদিও এই শহরটি মূলত স্থাপিত হওয়া শুরু হয় প্রায় ২৫০০ বছর আগে তারপরেও পরবর্তিতে শতাব্দি গুলিতে এর বাড়ির সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

এ পর্যন্ত মাটির তৈরি শহর গুলির মধ্যে এই "ওয়াদি হ্যাড্রামউত" (Wadi Hadramout) শহরটির বাড়ি গুলিই সব থেকে উঁচু। বাড়ি গুলির বেশির ভাগ ৩০ মিটার পর্যন্ত উঁচু।



এই শহরটিতে বর্তমানে প্রায় ৭,০০০ এর মত লোক বসবাস করে। আর তারা সকলেই এই বাড়িগুলির প্রতিটি তলা পেয়েছেন পারিবারিক সম্পত্তি হিসেবে। প্রতিটি বাড়ি মূলত তৈরি করা হয়েছিল ১০০ জন লোকের ধারন ক্ষমতা হিসাব করে। বাড়ি গুলির প্রতিটি তলা আবার তৈরি করা হয়েছে বিভিন্ন কাজে। নিচ তলা তৈরি করা হয় মূলত পোষা গৃহপালিত প্রানি রাখার জন্য, ২য় তলা বানানো হয়েছে ব্যাবসা বানিজ্যের দোকান বা লেনদেন করার অফিসের জন্য আর তৃতীয় তলা থেকে শুরু হয় মানুষের বসবাসের জন্য। ৩য় তলা থেকে আবার শুরু হত ভিন্ন নিয়ম। ৩য় তলা তৈরি হত অতিথিদের বসবাসের ব্যাবস্থার অনুসারে, ৪র্থ এবং ৫ম তলা তৈরি করা হত স্ত্রী এবং বাচ্চাদের থাকার ব্যাবস্থা অনুসারে আর ৬ষ্ঠ তলা তৈরি হত সাধারন রুম হিসেবে। ১ম এবং ২য় তলায় সাধারনত কোন জানালা রাখা হত না। এখানে বলে রাখি সেই সময়ে বাড়ি বানাবার এই নিয়ম মূলত ব্যাবহৃত হত একক মালিকাধীন বাড়ির ক্ষেত্রে। বর্তমানে এই ব্যাবস্থা আর নেই কেননা বংশ অনুসারে ভবিষ্যত বংশধররা প্রতিটি তলা নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নিয়েছে। আর বর্তমানে ব্যাবসা বানিজ্য তেমন না থাকায় এই শহরকে আর বাণিজ্যিক কেন্দ্রও বলা যায় না।



এই বাড়ির গুলির নকশা কিন্তু খুব আধুনিক ছিল, মানে বর্তমান যুগের বাড়ি গুলির নকশা গুলির সাথে অনেকটাই মিলে যায়। এই বাড়ি গুলির মধ্যে সব বাড়ি কিন্তু বসবাসের জন্য ব্যাবহৃত হত না। এর মধ্যে ছিল কিছু বাড়ি যেগুলি ব্যাবহৃত হত মসজিদ হিসেবে, এমনকি কিছু কিছু বাড়ি ব্যাবহৃত হত শিক্ষা কেন্দ্র হিসেবে।




প্রতিটি বাড়ি তৈরি হয়েছে মাটির ইট দিয়ে। তবে এই ইট গুলি কিন্তু বর্তমান সময়ের ইটের মত আগুনে পোড়ানো হত না। এই মাটির তৈরি ইট তৈরি করার পূর্বে এর মাটির সাথে খড়কুটা এবং পানির সংমিশ্রন করা হত, এরপরে এই ইট গুলিকে নির্দিষ্ট আকৃতি দিয়ে রোদে শুকানো হত প্রায় তিন দিন। আর মরুভুমির রোদ কেমন উত্তপ্ত তা আশা করি আর বলে বুঝাতে হবে না। ব্যাস তিনদিন পরেই এই ইট গুলি তৈরি হয়ে যেত বাড়ি তৈরির জন্য।



প্রতি বছর বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির হাত থেকে বাড়ি গুলিকে বাঁচাতে এই বাড়ি গুলির বাইরের দেওয়ালে শুধু মাত্র চুনকাম করে দেওয়া হয়। ব্যাস এতটুকুই যথেষ্ট বৃষ্টির পানি থেকে বাড়ি গুলিকে বাঁচাতে। তা না হলে শত বছরের বেশি সময় ধরেও এই বাড়ি গুলি টিকিয়ে রাখা সম্ভব হত না।



সিবাম (Shibam) শহরটি ১৬০ কিঃমিঃ লম্বা এবং ২ কিঃমিঃ চওড়া। শহরটি যেহেতু মরুভুমির মধ্যে অবস্থিত তাই এখানে বৃষ্টি হলেও তা খুব কম হয় আর বন্যা হওয়াটা অনেকটাই অসম্ভব। তারপরেও ১২৯৮ সালে এবং ১৫৩২ সালে এই সিবাম শহরে ভয়াবহ বন্যা হয়। যার ফলে এই শহর পুরাটাই প্রায় ধ্বংস হয়ে যায়। মূলত বর্তমানে যে বাড়ি গুলি রয়েছে সে বাড়ি গুলি তৈরি করা হয়েছে ৪০০ বছর আগে।







এবার চলুন গুগল ম্যাপে দেখে নেই পুরাতন আকাশচুম্বী এই শহর,


গুগলি ম্যাপের লিংকঃ Click This Link

লেখকঃ জানা অজানার পথিক
(আবার ভাইবেন না আমি অন্যের লেখা নিজের নামে চালাইতেছি, আমি উপরে দেওয়া নামেই লিখি)

লেখাটি প্রথম প্রকাশ করিঃ শনিবার, ৩১ মে, ২০১৪
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ২:২৬
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×