দাদির এই সাজবাক্সটা এক অদ্ভুত সুন্দর আর মজার জিনিস। বেশ বড়, একটা ছোট স্যুটকেসের মাপের, ডালাটা পেছনে কব্জা দিয়ে লাগানো। এই বাক্সে কোন হাতল নেই আর কোন তালা চাবিরও ব্যবস্থা নেই। ভেতরে ছোট-বড় সব খোপ কাটা। ভেতরে একের উপরে এক দুটো ভাগ। খোপগুলোয় ধরে উপরের দিকে টানলে আরেকটা ডালা উঠে আসে আর তার নিচে আরও বেশ কিছু খোপ। এই দ্বিতীয় ডালাটি আলগা, পুরো উঠে হাতে চলে আসে। প্রথম ডালায় থাকে দাদির প্রসাধনী সামগ্রী, যেমন- রকমারী সুগন্ধী আতর, চন্দনের টুকরো, টুকরো সুর্মা, (যেগুলো দাদি হামানদিস্তায় গুড়ো করে সুর্মাদানীতে ভরে রাখে ) আর থাকত ছোট ছোট সব কৌটোয় ভরা ক্রীম। দাদির ভাষায় বিলিতি ক্রীম! আর ঐ যে নিচের ঐ গোপন চেম্বার, তাতে দাদির সব গয়না। গলার তক্তি, মাদুলিছড়া, মাথার সিতাপাটি ( টায়রা ) বিনুনিছড়া, খোঁপার কাটা আর আরও সব হাবিজাবি। ঈদের দিনে দাদি তার এই সাজের বাক্স খুলে বসত, আর এক এক ঈদে এক এক নাতনি সুজোগ পেত দাদির ঐ গয়না পরার। সে এক অদ্ভুত সুন্দর। বাচ্চা একটা মেয়ে, আধুনিক সব জামা-জুতোর সাথে পরে আছে তার দাদির যুবতী বয়েসের গয়না। মাথায় সিতাপাটি, হাতে বাজু, গলায় তক্তি আর পায়ে তোড়া। দাদির এই তোড়াটা শুধুই গয়না ছিলো, নুপুর ছিলো না কারণ এতে ঘুঙরু ছিল না। ছম ছম শব্দে বাড়ির বৌ ঘুরে বেড়াবে সেটা নাকি দাদির দাদি শাশুড়ির পছন্দ ছিল না, তাই ঘুঙরু ছাড়া তোড়া! এক বছর আমি পরলাম দাদির গয়না সব। আর মায়ের সে কি চিন্তা! কোথায় কোনটা আমি খুলে ফেলে দিয়ে আসব! আর আমি? সোনায়, রুপোয় নিজেকে জড়িয়ে ফোঁকলা দাঁত সব বের করে দাদির চেয়ারের পাশে আরেক চেয়ার পেতে দুপুর অব্দি বসা!
আমার মা আর চাচি? ঈদ তো তাদেরও ! যেখানে বাড়ির পুরুষেরা সক্কাল বেলাতেই দু প্রস্ত নাশতা সেরে ঈদগাহ থেকে ঘুরে চলে এলেন, আমরা , সব পোলাপানেরা স্নান সেরে জামা কাপড় পরে দাদির হাতে প্রসাধন সেরে পরীটি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, মা আর চাচি তখনও রান্নাঘরে। কাজের বুয়াদের সাথে নিয়ে কাঠের আগুনে রেঁধে চলেছেন একের পর এক সুস্বাদু সব খাবার। খাসির রেজালা, মুর্গীর রোষ্ট, শামি কাবাব আর পোলাও। একফাঁকে বেরিয়ে এসে যাঁর যাঁর ছানা-পোনাকে স্নানও করিয়ে দিয়ে গেছেন। দুপুর গড়িয়ে যায় মায়েদের স্নান সারতে। দাদি মাঝে মাঝেই এসে বলে যাচ্ছেন, তুমরা গোসলডা কইরা তারপরে বাকি কাম সারো না! মা আর চাচি বলে, এইতো আম্মা, হইয়া গেসে, যাইতেসি! কিন্তু তখনও বাকি কাবাব ভাজা, স্যালাড কাটা। স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে আবার রান্নাঘরে যাবেন? তাই একেবারে কাজ সেরে বেরুবেন সব !

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


