somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলার ঈদ-8

৩০ শে অক্টোবর, ২০০৬ রাত ১০:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ঈদের জন্যে যে এতগুলো জামা-জুতো হল তা একদিন মানে ঐ শুধু ঈদের দিনে পরে তো শেষ করা যায় না! আমরা, এই পোলাপানেরা তাই ঈদের দু দিন আগে থেকেই নতুন জামা পরতে শুরু করি! আর পরীটি হয়ে এবাড়ি ওবাড়ি ঘুরে বেড়াই। কার ক'টা নতুন জামা হল সেই খোঁজও নিই, কিন্তু কেউই সহজে বলতে চাইতো না যে তার ক'টা জামা হল আর কে কে দিলো! আমি নিজেও অবশ্য কাওকে বলতাম না! তখন বন্ধু-সমবয়েসীদের উপর খুব রাগ হত, আমি দেখাচ্ছি না সে ঠিক আছে, কিন্তু ওরা কেন দেখাবে না? মাকে এসে বললে মা উল্টে বকে দিত, বলতেন, তুই দেখিয়েছিস? অগত্যা আমি চুপ! সকালে ঈদগাহ থেকে নামাজীরা ফেরার আগেই সবর স্নান সারা হয়ে নতুন জামা-জুতো ফিতে চুড়ি পরা সারা। দাদি তার রূপোর সুর্মাদানী থেকে চোখে সুর্মা টেনে দিতেন। সুর্মাদানী হাতে নিয়েই দাদি তার চেয়ারে বসে থাকতেন, সব নাতি নাতনিদের চোখে সুর্মা পরিয়ে দেবেন বলে। আর পাশেই রাখা থাকত বেশ কয়েক রকম আতরের শিশি(দাদির ভাষায় এগুলো সব বিলিতী আতর!)। যেগুলো বেরিয়েছে তাঁর কাঠের সাজবাক্স থেকে। সব্বার গায়ে একটু করে আতর ছড়িয়ে দিতেন দাদি।

দাদির এই সাজবাক্সটা এক অদ্ভুত সুন্দর আর মজার জিনিস। বেশ বড়, একটা ছোট স্যুটকেসের মাপের, ডালাটা পেছনে কব্জা দিয়ে লাগানো। এই বাক্সে কোন হাতল নেই আর কোন তালা চাবিরও ব্যবস্থা নেই। ভেতরে ছোট-বড় সব খোপ কাটা। ভেতরে একের উপরে এক দুটো ভাগ। খোপগুলোয় ধরে উপরের দিকে টানলে আরেকটা ডালা উঠে আসে আর তার নিচে আরও বেশ কিছু খোপ। এই দ্বিতীয় ডালাটি আলগা, পুরো উঠে হাতে চলে আসে। প্রথম ডালায় থাকে দাদির প্রসাধনী সামগ্রী, যেমন- রকমারী সুগন্ধী আতর, চন্দনের টুকরো, টুকরো সুর্মা, (যেগুলো দাদি হামানদিস্তায় গুড়ো করে সুর্মাদানীতে ভরে রাখে ) আর থাকত ছোট ছোট সব কৌটোয় ভরা ক্রীম। দাদির ভাষায় বিলিতি ক্রীম! আর ঐ যে নিচের ঐ গোপন চেম্বার, তাতে দাদির সব গয়না। গলার তক্তি, মাদুলিছড়া, মাথার সিতাপাটি ( টায়রা ) বিনুনিছড়া, খোঁপার কাটা আর আরও সব হাবিজাবি। ঈদের দিনে দাদি তার এই সাজের বাক্স খুলে বসত, আর এক এক ঈদে এক এক নাতনি সুজোগ পেত দাদির ঐ গয়না পরার। সে এক অদ্ভুত সুন্দর। বাচ্চা একটা মেয়ে, আধুনিক সব জামা-জুতোর সাথে পরে আছে তার দাদির যুবতী বয়েসের গয়না। মাথায় সিতাপাটি, হাতে বাজু, গলায় তক্তি আর পায়ে তোড়া। দাদির এই তোড়াটা শুধুই গয়না ছিলো, নুপুর ছিলো না কারণ এতে ঘুঙরু ছিল না। ছম ছম শব্দে বাড়ির বৌ ঘুরে বেড়াবে সেটা নাকি দাদির দাদি শাশুড়ির পছন্দ ছিল না, তাই ঘুঙরু ছাড়া তোড়া! এক বছর আমি পরলাম দাদির গয়না সব। আর মায়ের সে কি চিন্তা! কোথায় কোনটা আমি খুলে ফেলে দিয়ে আসব! আর আমি? সোনায়, রুপোয় নিজেকে জড়িয়ে ফোঁকলা দাঁত সব বের করে দাদির চেয়ারের পাশে আরেক চেয়ার পেতে দুপুর অব্দি বসা!

আমার মা আর চাচি? ঈদ তো তাদেরও ! যেখানে বাড়ির পুরুষেরা সক্কাল বেলাতেই দু প্রস্ত নাশতা সেরে ঈদগাহ থেকে ঘুরে চলে এলেন, আমরা , সব পোলাপানেরা স্নান সেরে জামা কাপড় পরে দাদির হাতে প্রসাধন সেরে পরীটি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি, মা আর চাচি তখনও রান্নাঘরে। কাজের বুয়াদের সাথে নিয়ে কাঠের আগুনে রেঁধে চলেছেন একের পর এক সুস্বাদু সব খাবার। খাসির রেজালা, মুর্গীর রোষ্ট, শামি কাবাব আর পোলাও। একফাঁকে বেরিয়ে এসে যাঁর যাঁর ছানা-পোনাকে স্নানও করিয়ে দিয়ে গেছেন। দুপুর গড়িয়ে যায় মায়েদের স্নান সারতে। দাদি মাঝে মাঝেই এসে বলে যাচ্ছেন, তুমরা গোসলডা কইরা তারপরে বাকি কাম সারো না! মা আর চাচি বলে, এইতো আম্মা, হইয়া গেসে, যাইতেসি! কিন্তু তখনও বাকি কাবাব ভাজা, স্যালাড কাটা। স্নান সেরে নতুন শাড়ি পরে আবার রান্নাঘরে যাবেন? তাই একেবারে কাজ সেরে বেরুবেন সব !
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিশ্চিত থাকেন জামায়েত ইসলাম এবার সরকার গঠন করবে

লিখেছেন সূচরিতা সেন, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৪২


আমাদের বুঝ হওয়ার পর থেকেই শুনে এসেছি জামায়েত ইসলাম,রাজাকার আলবদর ছিল,এবং সেই সূত্র ধরে বিগত সরকারদের আমলে
জামায়েত ইসলামের উপরে নানান ধরনের বিচার কার্য এমন কি জামায়েতের অনেক নেতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রকৌশলী এবং অসততা

লিখেছেন ফাহমিদা বারী, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৭


যখন নব্বইয়ের দশকে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার সিদ্ধান্ত নিলাম এবং পছন্দ করলাম পুরকৌশল, তখন পরিচিত অপরিচিত অনেকেই অনেকরকম জ্ঞান দিলেন। জানেন তো, বাঙালির ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ডাক্তারিতে পিএইচডি করা আছে। জেনারেল পিএইচডি। সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×