এলাটিং বেলাটিং সই লো।
কি খবর আইলো?
রাজায় একটা মাইয়া চাইলো ।
কোন মাইয়া চাইলো?
বড় হওয়া নিয়ে আমি খুব চিন্তিত। বড় হলে কতটা লম্বা হব আমি ? এই বিছানায় আর শুতে পারব? বড় হওয়া মানে তো অনেক লম্বা হওয়া? তাইলে কই দাদাজী তো অত লম্বা হয়নি? আব্বাও তো দিব্যি এই খাটেই ঘুমোয়! এই চিন্তায় আমি বেশ অস্থির হয়ে পড়ি। কিন্তু আম্মাকে জিজ্ঞেস করতে পারি না। আচ্ছা। আমি কেন আম্মাকে সব কথা বলতে পারি না? আমি চোখ বন্ধ করি। আবার ভাবনা আসে। চোখ বন্ধ করা মানেই তো রাত? তাইলে আম্মা কি করে কাজ করে আমি যখন চোখ বন্ধ করি? ঐ যে দেওয়ালের উপর বেড়ালটা চড়ে বসে আছে সে কি করে দেখতে পায়? আর ঐ যে কাকগুলো কা কা করে যাচ্ছে সমানে। তারাও কি ঘুমায় যখন আমি ঘুমাই? কোন উত্তর খুঁজে পাই না। ক্লান্ত লাগে। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করি। চোখ চলে যায় পাশের বাগানে। মেজকাকা বাগান করেছে। বিভিন্ন গাছের সাথে সেখানে লাগিয়েছে এক হাস্নুহেনার চারা। গাছটা খুব একটা বড় হয়নি কিন্তু বেশ ঝাঁকড়া হয়ে ডালপালা ছড়িয়েছে চারপাশে। আর ফুটিয়েছে ফুল। অজস্র ফুল। গন্ধে ম ম চারিদিক। শুনেছি হাস্নুহেনার গোড়ায় নাকি সাপ থাকে। যে কোন সুগন্ধী ফুলগাছের তলায়ই নাকি সাপ এসে বাসা বাঁধে। আমি বিছানায় বসে গাছের গোড়ার সাপের বাসা খোঁজার চেষ্টা করি। কিছু চোখে পড়ে না। দাদী বলে ফুলের গন্ধে রাতে পরীরা আসে। আমাকে তাই সন্ধ্যের পরে বাগানে যেতে বারণ করেছে দাদী। আমি পরীদেরও পায়ের ছাপ খোঁজার চেষ্টা করি। দেখতে পাই না। পরী এলেই কি তার পায়ের ছাপ মেজকাকা থাকতে দেবে? সক্কালবেলায় উঠেই তো সে বাগানে। কিছু না কিছু একটা খোড়াখুড়ি তার করা চাই ই চাই। পরীদের পায়ের ছাপ কিংবা সাপের বাসার খোঁজ না পেয়ে আমি খানিক নিশ্চিন্ত বোধ করি। কিন্তু সাপ প্রাণীটা খুব বাজে । মুখের ভেতরে বিষ নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার গায়ে কারও পা পড়লে কিংবা তার সামনে দিয়ে কেউ গেলেই সে ফোঁস করে ওঠে আর কামড়ে দেয়। কামড়ানো মানেই তো সবটুকু বিষ ঢেলে দেওয়া। সব সাপের বিষ অত মারাত্মক হয় না বটে কিন্তু সে তো জলের সাপ। জলে থেকে থেকে ওরাও মাছের মতই হয়ে গেছে, কামড়ালেও কিছু হয় না। আমাকেই তো কামড়েছে একবার, ডান পায়ের গোড়ালীর কাছে তার দুটো দাঁতের দাগ বহুদিন ছিল। পুকুরে আব্বা জল ফেলে মাছ ধরছিল, খানিক পর পরই জায়গা বদল করছিল, প্রতিবার জাল ফেলার পরই এগিয়ে যাচ্ছিল সুবিধেজনক জায়গার খোঁজে। আমি মাছের ঝাকড়ি হাতে পেছন পেছন যাচ্ছিলাম, মাটির দিকে চোখ ছিল না। পায়ে কিছু একটা কামড়েছে টের পেয়ে তাকিয়ে দেখি সড়সড় করে পুকুরের ঢালু পার বেয়ে জলে নেমে যাচ্ছে এক সাপ, সারাগায়ে হলুদ ছোপ। চেঁচিয়ে উঠতে আব্বা ও আর সকলে যারা মাছধরা দেখছিল সবাই ছুটে এল। সক্কলেই তাই বলল, এ পানির সাপ, কামড়ালে কিসসু হয় না। সামনের বাড়ির হাসিনা বলল খব্#378;আর গোবরে পা দিবি না। কেন জানতে চাইলে বলল, গোবরে পা দিলে সাপের বিষ জ্যান্ত হয়ে ওঠে! আমি তাই উঠোনের বাইরে পা রাখিনি বহুদিন। কিন্তু ডাঙার সাপে বিষও হয় আর সে কামড়ালে গোবরে পা ও দিতে হবে, না বিষ নিজে থেকেই জ্যান্ত হয়ে উঠবে !
ফুটপাথের ধার ঘেষে লাগানো হয়েছিল বোধ হয় কোন এককালে, সে বেড়ে উঠেছে সোজা কিন্তু নিজেকে মেলতে পারেনি পুরো। ফুটপাথ পেরিয়ে ঐ বিশাল সাদা পুলিশবাড়ির জাফরিকাটা দেওয়াল। সেই পুলিশবাড়িতে প্রচুর গাছ। বেশ বড় এক আঙিনা জুড়ে বিশাল বিশাল সব গাছ। দেখে বুঝতে পারি অনেক পুরনো গাছ এক একটা। দেওয়ালের ধার ঘেষে সব বড় বড় গাছ যারা তাদের ডালপালা ছড়িয়েছে চারপাশে। আর কদমগাছটা তাই জায়গা না পেয়ে নিজেকে ছড়িয়েছে রাস্তার উপরে। আধখানা চাঁদের মত কিংবা আধখানা তরমুজ। কদমের পাতাগুলো যেন একটু ছোট ? আমার সেই কদমের পাতাগুলো তো আরও বড় ছিল! নিজের মনেই হেসে ফেললাম ফিক করে। সচকিত হয়ে চারপাশে তাকাই, কেউ দেখছে না তো? নিশ্চিন্ত হই দেখে যে এই দুপুর রোদে খুব কম লোকই আছে আর তারা সবাই ভুঁরু কুচকে রাস্তার দিকেই দেখছে কাঙ্খিত বাসটি আসছে কি না। রোজ যেমন আমি দেখি। আমি যে ঘাড় উঁচিয়ে কদমগাছ দেখছি সেদিকে কারও চোখ নেই। ওমা! ঠিক কদমগাছটার পেছনে পুলিশবাড়ির দেওয়ালের ভেতর এক বিশাল কাঠালীচাঁপার গাছ! কাঠালীচাঁপার গাছ এত বড় হয়? আর তাতে ফুল ও ফুটে আছে। তবে কেন সবাই বলে শুধু বসন্তকালেই ফুল ফোটে?
(চলবে)
প্রথম প্রকাশ -- শারদীয়া আই পত্রিকা-2006

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


