ক্কুল ইয়া আইউহাল ক্কাফিরুন ।
লা আ'বুদু মা তা'বুদুন ।
ওয়ালা আনতুম আবিদু না মা আ'বুদ ।
ওয়ালা আনা আ'বিদুম মা আ'বাদতুম ।
লাকুম দী নুকুম ওয়ালিয়া দীন। (সূরা কাফিরুন)।
আব্বাকে ভীষণ ভালবাসি আমি । আব্বা আমায় নানা কাহিনী শোনায় । হজরত খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি (র
তাব্বাতিয়াদা আবি লাহাবিওঁ ওয়াতাব্ব।
মা আগনা আনহু মা লুহু ওয়ামা ক্কাসাব্ব।
সাইয়াসলা নারান যাতা লাহাবিউঁ (সুরা লাহাব । আয়াত 1,2,3)
আমি ভয় পেয়েছিলাম । জাহানারা আপা ক্লাসে ছিলেন, ইসলামিয়াত পড়াচ্ছিলেন । জাহানারা আপাকে মেয়েরা কেউ ভয় করতো না । তিনি ক্লাসে আসতেন সবাইকে মাথায় কাপড় দিয়ে বই খুলে সামনে রাখতে বলতেন আর নিজে পড়ানো শুরু করতেন। কলেমা পড়াতেন আর তার অর্থ বলে দিতেন । পৃথিবী কি করে সৃষ্টি হল, মানুষ কবে দুনিয়াতে এলো, মৃত্যুর পরে কি হবে এই সব পড়াতেন। নিজেই জোরে জোরে পড়ে যেতেন। কে শুনছে কে শুনছে না তা নিয়ে মাথা ঘামাতেন না । আমি সেই সময়টায় রাম শ্যাম যদু মধু খেলার কাগজ টুকরো করে রাখতাম । কখনো পরের ক্লাশের পড়া একটু দেখে নিতাম । ইসলামিয়াত ক্লাসের পরেই ইতিহাসের ক্লাস আর ইতিহাসের আঙ্গুরী আপা ক্লাসে ঢুকেই সবার আগে পড়া ধরতেন । সেই ইসলামিয়াত ক্লাসে একদিন রিনি বলল, এদিকে তাকা, তোকে একটা জিনিস দেখাই কিন্তু খবরদার কাওকে বলবি না । মিশু পাশেই ছিল, সে বলল আমিও দেখেছি আর কাওকে বলিনি তুই ও বলিস না কাওকে । বই আড়াল করে রিনি তার বুক দেখাল । আমি চমকে উঠেছিলাম সেদিন । রিনি আমাকে শরীর চিনিয়ে দিয়ে গিয়েছিল । মেয়েদের শরীর । রিনি বোধ হয় আমার থেকে বছর তিন চারের বড় ছিল । স্কুলে দেরিতে ভর্তি হওয়া আর তারপরে এক ক্লাসে দুবছর পড়ার দরুন রিনি আমার ক্লাসে ছিল । রিনির শরীরে বড় হওয়ার লক্ষণ আসছিল, ওর বুকে কুঁড়ি একটু একটু করে পাপড়ি মেলছিল । ক্লাসে বসেই বই আড়াল করে রিনি তার বুক খুলে দেখিয়েছিল প্রথমবার । রিনি আরও বলল তুই এখনও অনেক ছোট আর কিছুদিন পরে তোরও হবে এরকম । আর তারপর আরেকটু বড় হওয়ার কথা বলল । কি করে মেয়েরা বড় হয় তার বিস্তারিত বিবরন দিয়ে । আমার ইতিহাসের পড়া মাথায় উঠলো । আমার খুব ভয় করছিল । আমার শরীর থেকে রক্ত বেরোবে? আর তা কয়েক দিন ধরে বেরুতেই থাকবে? আর সেটাই নাকি স্বাভাবিক । রিনি আমাকে বারবার করে বারণ করে দিল কাওকে যেন না বলি । বাড়ি ফিরে সেদিন আর খেলাতে মন লাগলো না । সন্ধ্যেবেলায় না খেয়েই শুয়ে পড়লাম । রাতে আধোঘুম আধো জাগরণের মধ্যে পাশে শুয়ে থাকা ছোটফুফুকে সব বলে দিলাম । আর তারপর ঘুমিয়ে পড়লাম । সকালে কেউ আমাকে কিছু বললো না, আমি খুব ভয়ে ভয়ে ছিলাম । স্কুল থেকে ফেরার পর সেদিন ছোটফুফু আমাকে নিয়ে বাগানে গেল। জিজ্ঞেস করলো আজ কি হয়েছে ? আমি বললাম আজ তো ইসলামিয়াত ক্লাস ছিলো না ! তখন ছোটফুফু আমার শরীরের কিছু বিশেষ বিশেষ অংশ দেখিয়ে আমাকে বললো, এগুলো তোমার একান্তই নিজের। এ কাওকে দেখানোর জন্যে নয়। কাওকে হাত দিতে দেবে না কক্ষণো। অন্য কেউ নিজেরটা দেখাতে চাইলে দেখবে না সে ছেলে হোক আর মেয়ে হোক । কিছু জানতে চাইলে আমাকে জিজ্ঞেস করবে, আম্মু কে জিজ্ঞেস করবে স্কুলের বন্ধুদের নয়। আমি সেদিন জানলাম বড় হওয়া মানে শুধু মাথায় লম্বা হওয়া নয়। আমি তখন অব্দি বাড়িতে শুধু প্যান্টি আর সেমিজ পরে ঘুরে বেড়াতাম কিন্তু সেদিনের পরে আর কোনদিন সেমিজ পরে ঘুরে বেড়াইনি ।
এলাটিং বেলাটিং সই লো ।
কি খবর আইলো?
রাজায় একটা মাইয়া চাইলো ।
কোন মাইয়া চাইলো?
আমি বড় হচ্ছি বুঝতে পারি, একে একে এটা মানা ওটা মানা, সব নিষেধ শুরু হয়ে যায়। একা একা মাজারে যাওয়া মানা । কিন্তু আমার ভীষণ ভালো লাগে জায়গাটা । আব্বার কাছে ততদিনে শুনে ফেলেছি এই দরগাহের কথা । শাহজালাল ছিলেন হজরত খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তির ভাগ্নে । হজরতের কাছে আদেশ পেয়ে দিল্লি থেকে হাজির হলেন শ্রীহট্টে। সংগে কেবল দুটো সুর্মা রঙা কবুতর । শ্রীহট্টে তখন হিন্দু রাজাদের শাসন । রাজা গৌর গোবিন্দের অত্যাচারে মুসলমানেরা কোনঠাসা । শাহজালাল আসার খবর পেয়ে রাজা করলেন কি সুর্মা নদী থেকে সমস্ত নৌকো তুলে নিলেন, যারা রাজী হল না তাদের নৌকো ছ্যাঁদা করে দিতে নির্দেশ দিলেন। শাহ্জালাল নদীর পারে এসে দেখলেন কোনো নৌকো নেই । কথিত আছে তিনি জায়নামাজটা প্রথমে নদীর ওপর পাতলেন, তার ওপর ভেলার মত চেপে নদী পার হয়ে গেলেন। এই দৈবি ক্ষমতা প্রকাশ পেতেই রাজার শক্তি অর্ধেক হয়ে গেল। যুদ্ধ হল বটে কিন্তু প্রতিরোধ টিকলও না । শাহ্জালাল সেখানেই থেকে গেলেন ধর্ম প্রচারের উদ্দেশ্যে, দুটো সূর্মা পায়রা ক্রমশ হাজার হাজার হয়ে ছেয়ে ফেলল সারা সিলেট, ততদিনে শ্রীহট্ট হয়ছে সিলেট আর শাহজালালের মৃত্যুর পর সেখানেই তৈরী হয়েছে মাজার। লোকে সেই মাজারে মানত চড়াতে লাগলো। আমি অবশ্য এমনিই যাই। ভালো লাগে। তবে আজকাল একা যাওয়ার যো নেই। কাকা-কাকিমার সাথে আসি।
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই নভেম্বর, ২০০৬ রাত ২:৪০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



