ফুড়ুৎ শুনে প্রথমেই যে ছবিটি চোখের সামনে ভেসে ওঠে তা হল, এক গাছভর্তি টুনটুনি পাখি, যার একটা একটা করে উড়ছে, আর যতবার উড়ছে ততবার শব্দ হচ্ছে 'ফুড়ুৎ'! ছেলেবেলায় বাবার বলা ঐ গল্পটা কখনো শেষ হয়নি, ঐ অব্দি বলে বাবা ঘুমিয়ে পড়তেন, গল্পের শেষটুকু শোনার বায়না ধরলে বলতেন, গাছভর্তি পাখি যতক্ষণ সব উড়ে না যাচ্ছে ততক্ষণ গল্প কি করে শেষ হবে? তো গল্পটি কখনোই শেষ হয়নি!
সেদিন চলমান দূরভাষে এক বন্ধু যখন নাটক দেখার আমন্ত্রণ জানালেন আর নাটকের নাম জানালেন 'ফুড়ুৎ' তখন হঠাৎ সেই কখনো শেষ না হওয়া গল্পের কথা মনে পড়ে গেল, পলকের তরে ভাবলাম, এ বুঝি সেই ফুড়ুৎ!
ভীষণ আগ্রহ নিয়ে গেলাম নাটক দেখতে, যথা সময়ে নাটক শুরুও হল, প্রথম দৃশ্য দেখেই মনে হল, এ তো বাবার বলা সেই ফুড়ুৎ নয় তবে এও যেন খুব চেনা কোন গল্প! দম প্রায় আটকে এল যখন দেখলাম রাজার ধনভান্ডার থেকে একটি স্বর্নমুদ্্রা চুরি গেছে! খোঁজ খোঁজ খোঁজ ! দেখা গেল চোর একটি টুনটুনি! বিদ্যুৎবেগে মনে পড়ল, আরে!
এ তো আমার সেই টুনটুনি আড় রাজার গল্প! রোজ রাতে ভাত খাওয়াতে বসে মা যে রাজা আর টুনটুনির গল্পটা বলত এ যে সেই!! একশ দশ মিনিট ধরে নি:শ্বাস প্রায় আটকে বসে দেখলাম রাজা আর টুনটুনির নাটক।
না। এ মায়ের বলা সেই টুনটুনির গল্পের হুবহু নট্যরূপ নয়। নাট্যকার বেশ অনেক কিছু বদল করেছেন, সিষ্টেমকে প্রচুর বিদ্্রুপ করেছেন, রাজনিতীকে তুলোধুনা করেছেন, হবু রাজা আর গবু মন্ত্রির কান্ড কারখানা দেখিয়ে দর্শকের পেটে খিল ধরিয়ে দিয়েছেন হাসিয়ে কিন্তু মূল গল্পটা একই রেখেছেন। ফাঁকে ফাঁকে সেই রাজাকে তামাশা করে টুনটুনির গাওয়া ছড়াগান দর্শককে নিয়ে গেছে তাঁদের ছেলেবেলায় ( আমাকে অন্তত)। সাত রাণীর নাক কাটানো আর সবশেষে রাজার নাক কাটাদিয়ে হল ফাটানো করতালির মধ্যে দিয়ে নাটকের সমাপ্তি।
কানে তখনো গুনজন করছে টুনটুনির সেই গান,
কি মজা কি মজা
রাজা খায় ব্যাঙভাজা!
এক টুনি টুনটুনাইল
সাত রাণীর নাক কাটাইল।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


