somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কি লিখি আমি

২৮ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ১১:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হামানদিস্তায় রশুন থেতো করতে গিয়ে হামানদিস্তার ঠুক ঠাক আওয়াজের মাঝে কানে আসে বাবার গলা, বলছেন, আম্মা'র হামানদিস্তাটা কই আছে কে জানে, থাকলে ওটা দিয়ে পান ছেচে খেতে পারতাম। মাঝে মাঝে বড় ইচ্ছা করে!
: পান আপনি হামানদিস্তাতেই কেন ছেচে খাবেন? ইচ্ছা করলে এমনিই তো খেতে পারেন! দাদুর তো চাপার দাঁত ছিল না তাই ছেচে খেত, আপনি কেন ছেচতে যাবেন?
: নাহ.. এমনি খেতে ইচ্ছা করে না। আম্মা যেরকম হামানদিস্তায় ছেচে খেতো , ঐর'ম খেতে ইচ্ছা করে।
: তাইলে একটা হামানদিস্তা কিনে আনলেই তো পারেন।
: তা পারি কিন্তু ইচ্ছা করে না। তোমার দাদুর হামানদিস্তাটা কই আছে কার কাছে আছে কে জানে!

৬৮বছর বয়েসের বাবা আমার এখনো আকুল হন মায়ের হামানদিস্তার জন্য। সেটায় করে মায়েরই মতন করে পান ছেচে খাওয়ার জন্য। আমার গলা বুজে আসে। কথা সরে না। বাবাকে বলি,পরেরবার আমি হামানদিস্তা নিয়ে আসব আপনার জন্য, আপনি সেটায় দাদুর মতন করে পান ছেচে খাবেন।

হাসি তবুও ম্লান। মনে মনে তখনও খোঁজ সেই হামানদিস্তার।

ঝটিতি ঘুরে আসা এবাড়ি, ওবাড়ি। টেবিলভর্তি খাবারে ইলিশ হাজির এবেলা ওবেলা। তবু কে জানে কেন লাগে শূণ্য শূণ্য। মন পড়ে থাকে ভাপ ওড়া চিতই আর হাসের ভুনা গোশতে।

পতেঙ্গার সমুদ্রে আমি আমার কৈশোরকে খুঁজে পাই না। যদিও প্রতিবার চট্টগ্রামে গিয়ে আমি একবার পতেঙ্গায় অবশ্যই যাই। প্রতিবারই দেখি একটু একটু করে বদলে যাওয়া এই ছোট্ট সমুদ্রতট। জোয়ারে যার সৈকত বলে কিছু থাকে না। জল এসে আছড়ায় বাধানো পারে, ফেলে রাখা বোল্ডারে। খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে হুটোপাটি করে তৈরী হয়ে চলে যাই পতেঙ্গায়। ভোরবেলাকার সূর্য ওঠা দেখি বোল্ডারের উপরে বসে থেকে। ভাটা থাকলে হাঁটি সৈকতের এমাথা ওমাথা। অনেকক্ষণ থাকি। বেলা মাথার উপরে ওঠা পর্যন্ত। এবারে অনেকদিন পরে বিকেলে পতেঙ্গা গেলাম। বহুবছর পরে। এই বিকেলবেলার পতেঙ্গা যে এত বদলেছে ধারণা ছিল না। সমুদ্রের ধার ধরে বোল্ডারের এপারে যেন বাজার বসেছে। অনেকটা মেলার মতন কিন্তু মেলা নয়। আবার ঠিক বাজারও নয়। ঠান্ডা পানীয় বিক্রেতা বালতিতে করে রকমারী সব বোতল নিয়ে ঘুরে ঘুরে বেড়াচ্ছে এই না বাজার না মেলাময়। রকমারী সব পানীয়ের নামের শেষে আসে বীয়ার এমনকি বাংলা মদেরও নাম। তবে এই নামগুলো এরা উচ্চারন করে আস্তে। অন্য লোকের কান বাঁচিয়ে।

এই পতেঙ্গা আমার চেনা নয়। এর সাথে আমার আলাপ হয়নি কখনও। সারাদিনের টিপটিপ বর্ষণের পরে এই বিকেলে বৃষ্টি থামলেও আকাশে মেঘের ঘনঘটা। ভরা জোয়ারের সমুদ্র যেন ফুঁসছে। সোঁ সোঁ গর্জনে আছড়ে আছড়ে ঢেউ এসে ভাঙছে বোল্ডারে। কয়েকটি ছেলে হাত ধরাধরি করে বোল্ডারের উপর দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই স্নানের চেষ্টায় মগ্ন। জোয়ারের সময় সৈকত বলে কিছু থাকে না এখানে কিন্তু তাই বলে কী স্নান হবে না! হাত ধরাধরি করে বোল্ডারে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়েই সমুদ্রস্নান করে ওরা। দুলে দুলে গান গায়। সাবধানী নজর রাখে ঢেউএর দিকে। জোরে ঢেউ এলেই শক্ত করে ধরে একে অন্যের হাত। সমুদ্র দেখতে আসা মানুষেরা ভিড় করে দাঁড়িয়ে ওদের স্নান করা দেখে। উচ্ছাস বাড়ে ওদের। গান গায় দুলে দুলে। যদিও সমুদ্রের গর্জন ভেদ করে বেশিদূর যেতে পারে না ওদের আওয়াজ। মেঘলা আকাশের বুক চিরে সাঁ করে উড়ে যায় ফাইটার প্লেন। নিমেষেই হারায় দিগন্তে। ফাইটার প্লেনের ছেড়ে যাওয়া ধোঁয়াও মিলায় ধীরে ধীরে।

কর্ণফুলীকে তবু খানিকটা চেনা যায়। যদিও তার চেহারাও অনেক বদলেছে। একধারের পার বাধানো আগেও ছিল তবে এমন ঝা চকচকে ভাবটা ছিল না। এই জায়গাটা আমার বেশ লাগে। জলের ধারে গেলে এমনিতেও আমার কথা বলতে ভালো লাগে না। চুপ করে বসে থাকতেই বেশি পছন্দ করি। এই নদীর একটা গল্প আছে না? মনে করার চেষ্টা করি। রাজার মেয়ে সম্ভবত কানফুল হারিয়েছিল এখানে, যার থেকে নদীর নাম কর্ণফুলী। এরকমই কিছু একটা গল্প শুনেছিলাম ছোটবেলায়। কি নাম ছিল সেই রাজার মেয়ের? রাজার নামই বা কি ছিল? মনে পড়ছে না। এখন এই নদীর ধারে দাঁড়িয়ে সেই গল্পটাও আর কিছুতেই মনে করতে পারছি না। কাওকে প্রশ্ন করে জেনে নেব ভেবেও হয়ে ওঠে না। খানিক পরেই ভুলে যাই। মনে মনে ঢেউ গুনি। এক, দুই, তিন। খানিক পরেই আর ঢেউ গোনার ইচ্ছেটাও থাকে না। বসে থাকি রেলিং এর পরে। ঘোলা জলে কোন রঙের ছায়া নেই। ঘন, জলভরা ধূসর মেঘে ঢাকা আকাশের কোথাও কোথাও উঁকি দেয় হালকা নীল। নদীর ওপারে যাওয়ার সুপ্ত ইচ্ছে মাথাচাড়া দেয়।কিন্তু আকাশের দিকে তাকিয়ে , বেলার দিকে তাকিয়ে জেগে ওঠা ইচ্ছে আবার ঘুমিয়ে পড়ে।

এবারে আমার আর গ্রামের বাড়ি যাওয়া হলো না। দেশে যাওয়া তাই অনেকটাই অপূর্ণ থেকে গেল। একটু ঘুরে তাকালেই দেখতে পাই বর্ষার জল থইথই করছে পুকুরের পার ধরে। ভোরবেলাতে মাছওয়ালাদের হেঁকে যাওয়া, কৃষকবধুর হাতে বিক্রী করতে নিয়ে আসা ডিমপাড়া মুর্গীটি। কান পাতলেই শুনতে পাই, পনিইইইইর নিবেন, অষ্টগ্রামের পনির। বাঁশের ঝাঁকায় লাল কাপড়ে মুড়ে রাখা ঘিয়ে রঙের পনির এসে হাজির হয় টক টক গন্ধ নিয়ে। জানলা ধরে দাঁড়িয়ে থাকা ছোট্ট এক মেয়ে একছুটে বাড়ির বাইরে বেরিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল পনিরওয়ালার কাছে গিয়ে। চিতইয়ের মাঝে ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে দেওয়া পনির যে তার খুব পছন্দ!

ঘুরে ঘুরে সিডি, ডিভিডি কিনি সারা দিনমান। এ দোকান ও দোকান। এই মার্কেট ঐ মার্কেট। পাগলের মত ঘুরে ঘুরে লিষ্ট মিলিয়ে ডিভিডি খুঁজতে খুঁজতে একসময় সব অর্থহীন হয়ে যায়। বসে থাকি চুপচাপ। দোকানীর দেওয়া মগভর্তি কফি খেতে থাকি যতক্ষণ পর্যন্ত সবটুকু কফি শেষ না হয়। বিস্বাদ লাগে তবুও খাই। ব্যস্ত হই ঘরে ফেরার তরে।

চলমান দূরভাষের ওধারে মা। খানিক কথা বলেন, অনেকক্ষণ চুপ করে থাকেন। আমি বুঝতে পারি নীরব কান্নায় হাতের ফোন ভেজাচ্ছেন মা। আমার মা। থেমে থেমে কথা বলেন, অনেকক্ষণ কথা বলে আবারও চুপ করেন মা। নাড়ী ছেঁড়ার তীব্র ব্যথায় নি:শব্দে কাঁদি আমি। একটুও শব্দ করি না। কোথাও যেতে দিই না কোন শব্দকে। বাইরে অঝোর বৃষ্টি । রক্তক্ষরণে ক্ষয়ে যেতে যেতে প্রবল শীতে আক্রান্ত হই আমি।






সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০০৭ বিকাল ৫:১২
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×