somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদিত লাল দাস'এর গান শোনা

১১ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৪:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

একত্রিশে জুলাই সকালবেলায় খবরের কাগজের 'কোথায় কী' কলাম দেখতে গিয়ে চোখে পড়ল 'মধুসুদন মঞ্চ'এ 'নির্মলেন্দু চৌধুরী'র স্মরণ সভায় গান গাইবেন 'বিদিত লাল দাস'। খবরটা পড়ে সঙ্গে সঙ্গে যে প্রশ্নটি মাথায় এলো এই 'বিদিত লাল দাস' কী আমাদের সিলেটের গায়ক? কোথাও আর কিছু লেখা না থাকায় নিজে নিজেই ভেবে নিলাম, এখানে কোন বিদিত লাল দাস আছেন বলে তো জানি না, কাজেই ইনি আমাদের সিলেটের গায়কই হবেন।

ঢাকা থেকে সদ্য সদ্য কিনে আনা বিদিত লাল দাসের সিডি চালিয়ে সুমেরুকে গানও শুনিয়ে দিলাম আর ঠিক করলাম যাব গান শুনতে! সুমেরুর সেদিন শ্যুট ছিল, বললো, তাড়াতাড়ি শেষ করে পৌঁছে যাবে হল'এ। আমি আগে থাকতে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানলাম, টিকিট দিয়ে নয়, অনুষ্ঠানটি সকলের জন্যে অবারিত দ্বার। অপেক্ষার সময়টুকু হলের বাইরের সিঁড়িতে বসে ঝাল ঝাল 'ঘটিগরম' (গরম গরম মশলা চানাচুর) খেয়ে কাটিয়ে দিলাম। অপেক্ষা অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার, অপেক্ষা সুমেরুর শ্যুট সেরে হলে আসার।

ঢাকায় গীতালীতে যখন পুরনো লোকসংগীতের সংগ্রহ দেখছিলাম তখন হঠাৎই চোখ পড়ে 'বিদিত লাল দাস' নামটির উপর। এক বিস্মৃত নাম। নামটি দেখামাত্রই একসাথে ভিড় করে এলো অনেক স্মৃতি। এক পিচ্চি টেলিভিশনের সামনে বসে আছে বিশেষ করে লোকসংগীতের অনুষ্ঠানের সময় ধরে। টিবি রুমে আর কেউ নেই। প্রতিদিন একই সময়ে একই চিত্র। তখন ভাল মন্দ বুঝতাম না, গানের কথাও খুব একটা বুঝতাম না শুধু গান শুনতাম। ভাল লাগত সুর। লোকসংগীতের সুর। সিডিতে ঐ নামটি দেখামাত্র কিনে ফেললাম, গান কেমন হবে, ভাল কী মন্দ কোন চিন্তা না করেই। এমনকি ওখানে সিডি চালিয়ে গান শুনিওনি যেমন অন্য সব সিডি শুনে তারপরে কিনেছি।

২৯শে জুলাই সিলেটের আরেক কৃতী সন্তান, প্রয়াত লোকসংগীত শিল্পী নির্মলেন্দু চৌধুরীর জন্মতিথি। সেই উপলক্ষ্যে ৩১শে জুলাই মধুসুদন মঞ্চে লোকভারতী ও পশচিমবঙ্গ সরকারের যৌথ উদ্যোগে এই অনুষ্ঠান। 'লোকভারতী' নির্মলেন্দু চৌধুরী'র নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান যা এখন চালাচ্ছেন উৎপলেন্দু চৌধুরী। উৎপলেন্দু চৌধুরী নির্মলেন্দু চৌধুরীর সুপুত্র। বিদিত লাল দাস আর নির্মলেন্দু চৌধুরী প্রায় সমসাময়িক ছিলেন, উৎপলেন্দু বিদিত লাল দাসকে নিজের গুরু বলে অভিহিত করলেন। তো নির্মলেন্দু চৌধুরীর এই স্মরণ সভায় লোকভারতী নিয়ে আসে বিদিত লাল দাস'কে। তাঁকে সম্বর্ধনা দেয় লোকভারতী ও পশ্চিমবঙ্গ সরকার। পশ্চিমবঙ্গের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী হাজির ছিলেন বিদিত লাল দাস'কে সন্মান জানাবেন বলে। ফুলের তোড়া, মানপত্র আর একটি স্মারক দেন সুভাষবাবু। বিদিত লাল বাবুর গায়ে শাল জড়িয়ে দেন উৎপলেন্দু চৌধুরী।

অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার বেশ আগে পৌঁছে গেছিলাম বলে জায়গা পেয়ে যাই একেবারে সামনে, দ্বিতীয় সারিতে। প্রথম সারিতে বসে বেশ কয়েকজন নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতায় মগ্ন সিলেটি ভাষায়। এঁরা সব সিলেট থেকে এসেছেন বিদিত লালবাবুর সঙ্গে। সে এক অদ্ভুত অনুভব। সেই কোনকালে ছেড়ে চলে আসা সিলেটের মানুষ আর সিলেটি ভাষা তাও এই খোদ কলকাতায় বসে! সেই অনুভূতির কথা বলে বোঝানো যায় না।

গাঢ় নীল পাঞ্জাবী আর সাদা পাজামা পরা বিদিত লাল দাস এলেন অনুষ্ঠান শুরুর ঠিক আগে, সামনের সারিতে এসে বসলেন। যথেষ্ট বয়েস হয়েছে, কথা বলতে গেলে গলা কাঁপে, হাত দিয়ে কিছু ধরতে গেলে কাঁপে হাত। শুধু যখন গান গাইতে শুরু করেন তখন উদাত্ত গলার আওয়াজে গমগম করে হলঘর। আর নাগাড়ে গেয়ে যান আটখানি গান। তাঁর গানের সাথে তবলা বাজাবেন বলে সিলেট থেকে সঙ্গে এসেছেন তাঁরই গানের স্কুলের তবলা শিক্ষক টিংকু। হৃদরোগী বিদিত লাল দাস একা গান গাইতে পারেন না বলে মঞ্চে তাঁর সাথে থাকেন গানের সঙ্গী ( নামটি ভুলে গেছি), যদিও বিদিত লাল দাসের গলা ছাপিয়ে তার গলা একবারও শোনা যায় না, আলাদা করে বোঝা যায় না।

বন্দনা গান দিয়ে শুরু করেন তিনি,
পরথমে মে বন্দনা করি আল্লা রসুল
হজরত ওয়ালীরে দিলাম .....
মাই ফাতেমা হযরত আলী হাসান আর হুসেন
মাতার উপর তুইলা রইলাম...
তার বাদে বন্দনা করি বাবা শাজলাআআআআআআআআআললললললললললল
তিনশ ষাইট আউলিয়া বন্দি...
(কথাগুলো মনে পড়ছে না বলে ডট ডট দিয়ে দিলাম, ক্ষমা করবেন)
এই 'বাবা শাজলাল' বলে তিনি গলা যে উচ্চতায় নিয়ে যান এখনো, সেটা না শুনলে বলে বোঝানো যাবে না। একে একে গেয়ে যান আটখানি গান। প্রতিটি গানের পরে করতালিতে ফেটে পড়ে হল। মঙ্গলবারের সন্ধ্যায়ও সেই হল পুরো ভর্তি ছিল। চরম মুগ্ধতায় শুনে যাচ্ছিলাম একের পর এক গান। মনে হচ্ছিল, এই গান যদি এভাবেই চলতে থাকত! পরক্ষণেই নিজেই লজ্জা পাচ্ছিলাম নিজের এই স্বার্থপর চিন্তায়। অসুস্থ শিল্পী এতদূর থেকে এসেছেন আটখানি গান শুনিয়েছেন, এই কী যথেষ্ট নয়! সেই কোন ছেলেবেলায় যাঁর গান টেলিভিশনে দেখেছি-শুনেছি আজ সামনে বসে তাঁর গান শুনছি-দেখছি তাও কলকাতায় বসে এর চেয়ে বড় পাওয়া আর কী কিছু হতে পারে!



(আরও কয়েকজন সেই অনুষ্ঠানে গান গেয়েছেন, মুগ্ধ করেছেন আগরতলার এক কিশোরী শিল্পী। তার কথা পরে অন্য কোনদিন, অন্য কোন সময়ে।)


সর্বশেষ এডিট : ১১ ই আগস্ট, ২০০৭ বিকাল ৫:১০
১৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×