somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তুমি এলে না বলে..

২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ আমাদের ঈদ নয়
----------------------


সেদিন ইদ ছিল। আগের দিন সন্ধেবেলায় ছাদের উপর থেকে চাঁদও দেখলাম। বহু বছর পরে। প্রতিবারেই তো সেই রাত এগারোটার পরে মসজিদ থেকে বলে দেওয়া হয়, অমুক জায়গায় চাঁদ দেখা গেছে, অতএব কাল ঈদ! মসজিদে মসজিদে তার বহু আগেই যদিও সারা হয়ে গিয়ে থাকে তারাবির নামাজ। কিন্তু সেদিন চাঁদ দেখা গেল আর আমিও দেখলাম। ঝকঝকে আকাশে একফালি চাঁদ। ঈদের চাঁদ। লোডশেডিংএর নীরবতায় দূরের মসজিদ থেকে মাইকের আওয়াজে ভেসে এল পরদিনের নামাজের সময়। বারে বারেই.. কোথাও কোনো শব্দ নেই.. এমন দিনে এমন নীরবতায় আধখানা শেষ হওয়া চারতলা বাড়িটিতে বাড়ির কারিগরেরা গান ধরল। কী আশ্চর্য, ওরা ঈদের গান গাইছে..কথাগুলো ঠিক বুঝতে পারি না, আঞ্চলিক টান, কিন্তু ইদের চাঁদ কথাটা বারে বারে ঘুরে ঘুরে আসে গানের মধ্যে। আহারে.. বছরকার দিনটিতেও ওরা বুঝি বাড়ি যেতে পারল না..

আজ আমাদের ঈদ নয়.. তুমি এলে না বলে.. তুমি বললে, আমাদের ঈদ পরে হবে, তুমি এলে তবে ঈদ হবে..বাবুটা তবু রেড রোডের জামাতে গেল আর ভিজে কাক হয়ে বাড়ি ফিরল। আমি তবু খানিকটা সেমুই রাঁধলাম ও নামাজ সেরে ফিরে খাবে বলে। কিন্তু সক্কলে তো আজ ঈদ করছে.. ভাইয়া তাই ফোন করে জানতে চায় কী রান্না করেছি.. আব্বা বলে, সকলেই আছে তুমি শুধু নেই.. এই সেদিন বাড়ি থেকে ঘুরে আসা সত্বেও আম্মা জানতে চায়, কবে বাড়ি যাব? আমি বিছানার দিকে তাকাই, ওতে পাতা আছে কালোর উপর কাঁথার ফোঁড়ের নকশী চাদরখানি, আমার মায়ের দেয়া। ওতে আমার মায়ের হাতের ছোঁয়া যেন এখনো লেগে.. প্রতি শাবান মাসের এক তারিখে ওটা আমার বিছানায় পাতি, আজও পেতেছি, আমার মা আজ ইদ করছে বলে.. আমার চোখ ভিজে আসে শুধু-মুদুই.. ফোনের ওপাশ থেকে শুনতে পাই পিচ্চিগুলোর কলকলানি। ছোট্ট অপুটার ও ও আমি এখান থেকেই শুনতে পাই। ফোনের ওধারে..

বেলা এগারোটা বাজতে বাজতেই মুখ ভার হয় আকাশের আর নামে অঝোর ধারা সাথে গুরু গুরু, দ্রিমি দ্রিমি.. এমন বৃষ্টিময় দুপুরে আমি বাথরুমের খুপরি জানালায়, কিচেন কাউন্টারে জল ঢেলে দিই ইচ্ছেমতন। এমনি দিনে ন্যাতা দিয়ে ঘষে ঘষে পরিষ্কার করতে হয়, জল ঢাললে সোজা গিয়ে পড়বে তিনতলা-দোতলার সব চৌখুপরিতে, আর একতলা থেকে তিনতলার সব নারীকন্ঠে একযোগে অভিশাপ বর্ষিত হতে থাকবে চারতলার বাসিন্দা মুসলমানটির উপরে। তুমুল বৃষ্টিতে আজ কারোর কোনো চেঁচামেচির সুযোগ নেই :) আহা কী আনন্দ আকাশে বাতাসে :)


কখন তোমার আসবে টেলিফোন..
-------------------------

ফোন। আমার ফোনটা বছরে দু'বার বাজে। সারাদিন ধরে বাজে। এসএমএসের পর এসএমএস আসে সারাদিন ধরে, বছরে দু'বার। এমনি সময়েও বাজে তবে সেগুলো বেশির ভাগই হয় কোনো বীমা কোম্পানীর নয় কোনো ক্রেডিট কার্ডের নয় এয়ারটেলের। আর এসএমএস গুলো এমনি দিনে পাঠায় এয়ারটেল বা পাড়ার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরের নানান অফার দিয়ে। কিন্তু বছরে দু'বার আমার ফোন বাজে আর সারাদিন ধরে বাজে। এসএমএস আসে আর সারাদিন ধরে আসে। আমার জন্মদিনে আর ঈদের দিনে। ভোর ভোর ফোনের ওধারের গলা শুনে চিনতে পারি না, ওটা রূপক'দার গলা। কখনো তো কথা হয় না, চিনব কী করে! সেই বাংলালাইভের বাংলা আড্ডার আলাপ। বছরে দু-একবার দেখা হয়ে যায় কোনো কমন বন্ধুর বাড়ির বৈঠকখানায়। তোর নাকি জ্বর হয়েছে? কী যে করিস, বছরকার দিনে অসুখ বাঁধিয়ে বসে! আমার বুকের ভেতরটায় কেমন চিনচিন করে ওঠে.. ফোনে একের পর এক উৎকন্ঠিত আওয়াজ সব.. শুভেচ্ছায় শুভেচ্ছায় ভরে ওঠে অর্কুটের পাতা, উপচে ওঠে মোবাইলের ইনবক্স.. বেশির ভাগ নম্বরই চিনতে পারি না, চুরি যাওয়া মোবাইল ফোনখানির সাথে চুরি গেছে সব নম্বরগুলিও। প্রতি ঈদের মত আজও এসএমএস আসে সিডনি থেকে, ইন্দ্রাণী, আমার আই-মশাই। যে কখনোই আমাকে শুভেচ্ছা জানাতে ভোলে না, ঈদে বা জন্মদিনে। আমার চোখ বুজে আসে। ঝুম মেরে বসে থাকি। নাহ.. আসে না সেই ফোনটি.. কতো কত্তো কাজ..



কন্টিনিউয়েশন অফ বিশ্বকর্মা পুজো
----------------------------

সেদিন হঠাৎ করেই হাজির হয়েছিলাম শাশ্বতদের বিশ্বকর্মা পুজোয়। খেয়াল ছিল না, যে ওদের পুজো আছে, খাওয়া-দাওয়ার ব্যপার আছে। শুভেন্দু'দা রিতিমত টেনে টুনে বসিয়ে দেন দুপুরের খাওয়ায়, বিকেল পাঁচটায়।ইলিশ মাছ, মুন্না'র দোকানের খাসি আর চাটনি। পুজোর আনন্দে লুকিয়ে পাঁইট গিলে নেওয়া প্রবীরবাবুর আতিথেয়তার আতিশয্যে খাসির ঝোলে আমার জামা-কাপড় একশা। পরদিন শুভেন্দু'দার ফোন, ইলিশের মাথাগুলোর তো একটা গতি করতে হবে, চলে আসুন দুপুরবেলা, সন্ধেটাও এখানেই কাটাবেন। ইলিশের মাথার গতি করতে গিয়ে চলে আসে আরো কয়েক পিস ইলিশ মাছ আর সাথে কচু শাক। উড়ে বামুন জানে না কী করে রাঁধতে হয় কচুর শাক। দশ আঁটি কচু শাক কোটা-বাছা আর রান্না করতে হয় শুভেন্দু'দাকেই। ইলিশের মাথা দিয়ে বিশ্বকর্মা পুজোর কন্টিনিউয়েশনে নেমন্তন্ন পায় আরো দশ-বারো জন। আবারো লাঞ্চ বিকেল পাঁচটায়। আধপচা লিভার পুরোটা না পচে যায় সেই ভয়ে এক হপ্তা শুভজিত সুরাবিহীন। এলজোলামের ঘুম। সন্ধ্যেয় স্বপন'দার ট্রিট, ব্লেন্ডার্স প্রাইড। একটা এসএমএস। কাল তোমাকে হলে দেখতে চাই..! অপরিচিত নম্বর। কে হতে পারে? আরে হ্যাঁ, কাল অনুশ্রীদির গান আছে না বিড়লা অ্যাকাডেমি মঞ্চে? সেখানকারই কেউ? মোবাইল হারিয়ে এই এক যন্ত্রণা হয়েছে, কে ফোন করছে, কে এসএমএস করছে কিস্যু বোঝা যায় না। আসে জোশি, সাথে কাটোয়া কলেজের ইতিহাসের অধ্যাপক নন্দিতা। বেচারী নন্দিতা, জোশি তার একটা ফিল্মে নন্দিতাকে অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে নিতে রাজী হয়েছে, নন্দিতা ধোঁয়া ফোকা ছেড়ে দেবে এই শর্তে! ব্লেন্ডার্স প্রাইড, শুভেন্দু'দা আর আর এক গোল টেবিল ভর্তি ধোঁয়ার মাঝখানে চুপচাপ বসে থাকে ব্লেন্ডার্সের গ্লাস হাতে নিয়ে।

কম্পিউটারে মৌসুমী ভৌমিক। আমি শুনেছি সেদিন নাকি তুমি তুমি তুমি তুমি মিলে তোমরা সদলবলে সভা করেছিলে.. প্রথমে গুনগুন পরে গলা ছেড়ে গেয়ে ওঠে শমীকও। আমাদের সভা শেষ হলে মঈন ভাইয়ের গাড়ি পাঁক খেতে খেতে লোক নামায়, মন্দিরতলা, উল্টোডাঙা, রুবী, নাকতলা। তারপর পার্ক সার্কাসের গ্যারাজ।

মাঝরাতে ফোনে শুভজিত। ক্লান্ত, বিষন্ন আওয়াজ। রিনিকে একটা ফোন করবে প্লিজ! রিনি আমার ফোন আজকাল আর ধরে না.. আমি চুপ করে থাকি লোডশেডিংএর অন্ধকারে.. শুভ'র হাতটা ধরে..কষ্টের রং নাকি নীল.. এখনও কী শুভ নীল হয়ে আছে..
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১২:১৯
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×