somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাহাস, বিতর্ক, ঝগড়া বনাম গবেষণা

১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বাহাস বা ‘বহস’ শব্দটি আমাদের অতি পরিচিত একটি শব্দ। সাধারণভাবে আমাদের দেশের কাউকে এ শব্দের অর্থ জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলবেন, এর অর্থ ‘ধর্মীয় বিতর্ক’ বা ধার্মিকদের ঝগড়া। তবে মূল আরবীতে ‘বাহাস’ অর্থ ঝগড়া নয়, এর অর্থ ‘অনুসন্ধান’ বা গবেষণা। গবেষণা ও বিতর্কের মধ্যে পার্থক্য খুবই সুস্পষ্ট। গবেষণা অর্থ কোনো বিষয়ে সত্য বা সঠিক তথ্য জানার জন্য অনুসন্ধান করা। এক্ষেত্রে গবেষক, অনুসন্ধানকারী বা ‘বাহিস’-এর নিজস্ব কোনো মত বা সিদ্ধান্ত থাকে না। মত বা সিদ্ধান্ত থাকলে তো আর তিনি অনুসন্ধান করতেন না। বরং প্রত্যেক বাহিস বা অনুসন্ধানকারী সত্যকে অনুসন্ধান করতে সচেষ্ট থাকেন ও সত্য জানতে পারলে গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে বিতর্কের ক্ষেত্রে প্রত্যেক তার্কিক, ‘বাহিস’ বা বিতর্ককারীর নিজের একটি মত বা সিদ্ধান্ত থাকে। তিনি যুক্তি, তর্ক বা প্রমাণাদির মাধ্যমে নিজের মতটিকে জয়ী করার চেষ্টা করেন।

কুরআন ও সুন্নাহের আলোকে বাহাস
আমরা দেখলাম, বাংলাদেশে বা ভারতীয় উপমহাদেশে বাংলা, উর্দু ইত্যাদি ভাষায় ‘বাহাস’ শব্দটির অর্থ বিতর্ক। এ অর্থে কুরআন ও হাদীসে এ শব্দটির কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি বর্তমানে প্রচলিত আরবী ভাষাতেও এ অর্থে ‘বাহাস’ শব্দটির ব্যবহার নেই। বিতর্ক বুঝাতে আরবীতে দুটি শব্দ প্রচলিত মজাদালা ও মুনাযারা। বিতর্ক বা কথা কাটাকাটি অর্থে কুরআন ও হাদীসে মুজাদালা বা জিদাল শব্দটিই মূলত ব্যবহার করা হয়েছে। বর্তমান যুগে আরবীতে বিতর্ক অর্থে মুনাযারা শব্দটিই প্রচলিত। প্রাচীন যুগেও শব্দটি এ অর্থে ব্যবহৃত হতো।

কুরআন ও সুন্নাহ থেকে আমরা দেখি যে, ইসলাম জ্ঞান চর্চা, জ্ঞান অনুসন্ধান ও গবেষণায় উৎসাহ প্রদান করে এবং বিতর্ক ও ঝগড়া করতে নিষেধ করে। মুসলিমের সাথে মুসলিমের বহস বা বিতর্কের কোনো উৎসাহ বা নির্দেশনা তো নেই; উপরন্তু তা কঠিন ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। তবে অমুসলিমদের সাথে বিতর্ক করতে অনুমতি দেওয়া হয়েছে উত্তম আচরণের সাথে। আল্লাহ বলেন:
وَلَا تُجَادِلُوا أَهْلَ الْكِتَابِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ إِلَّا الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ
আর তোমরা ঝগড়া-বিতর্ক কোরো না ইহূদী-নাসারাদের সাথে কেবলমাত্র উত্তম পদ্ধতিতে ছাড়া; তবে তাদের মধ্যে যারা জুলুম করেছে তাদের কথা ব্যতিক্রম।” (সূরা আনকাবুত ৪৬ আয়াত)

আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
ادْعُ إِلَى سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ وَجَادِلْهُمْ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ
আহ্বান কর তোমার রবের পথে প্রজ্ঞা দ্বারা এবং সুন্দর উপদেশ দ্বারা; এবং ঝগড়া-বিতর্ক কর তুমি তাদের সাথে উত্তম আচরণ দ্বারা। (সূরা নাহল: ১২৫)

মুমিনদেরকে বিতর্কে থেকে নিষেধ করে রাসূলুল্লাহ  বলেন,
مَنْ تَرَكَ المِراءَ وَهُوَ مُبْطِلٌ بُنِيَ لَهُ بَيْتٌ فِيْ رَبَضِ الْجَنَّةِ، وَمَنْ تَرَكَهُ وَهُوَ مُحِقٌّ، بُنِيَ لَهُ فِيْ وَسَطَهِا، وَمَنْ حَسُنَ خُلُقُهُ بُنِيَ لَهُ فِيْ أَعْلاَهَا
“নিজের মত বাতিল হওয়ার কারণে যে ব্যক্তি বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের পাদদেশে বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যে ব্যক্তি নিজের মত সঠিক হওয়া সত্ত্বেও বিতর্ক পরিত্যাগ করে তার জন্য জান্নাতের মধ্যবর্তী স্থানে বাড়ি নির্মাণ করা হবে। আর যার আচরণ সুন্দর তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে বাড়ি নির্মাণ করা হবে।” (মুনযিরী, আত-তারগীব ১/৭৭; আলবানী, সহীহুত তারগীব ১/১৩২। হাদীসটি সহীহ)

বস্তুত বিতর্ক ও ঝগড়া মুমিনের ঈমান ও ঈমানী ভ্রাতৃত্ববোধের সাথে সাংঘর্ষিক। একান্তই বাধ্য হলে আমরা আলোচনায় লিপ্ত হব, কিন্তু ঝগড়ায় লিপ্ত হব না। তথ্যভিত্তিক আলোচনা বা মত-বিনিময় জ্ঞান বৃদ্ধি করে। আর ঝগড়া-তর্ক জ্ঞান গ্রহণের পথ রুদ্ধ করে দেয়। আলোচনার ক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজের জানা তথ্যাদি উপস্থাপন করেন এবং অন্যের কাছে নতুন কিছু পেলে বা নিজের ভুল ধরতে পারলে তা আনন্দিতচিত্তে গ্রহণ করেন। পক্ষান্তরে ঝগড়-তর্কে উভয়পক্ষই নিজের জ্ঞানকে চূড়ান্ত বলে মনে করেন এবং যে কোনো ভাবে নিজের মতের সঠিকতা ও অন্য মতের ভুল প্রমাণ করতে চেষ্টা করেন। নিজের জ্ঞানের ভুল স্বীকার করাকে ব্যক্তিগত পরাজয় বলে মনে করেন। এ কারণে ইসলামে ঝগড়া-তর্ক নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আব্দুল্লাহ ইবনু আমর (রা) বলেন:

إنَّ نَفَرًا كَانُوا جُلُوسًا بِبَابِ النَّبِيِّ  فَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ كَذَا وَكَذَا وَقَالَ بَعْضُهُمْ أَلَمْ يَقُلْ اللَّهُ كَذَا وَكَذَا فَسَمِعَ ذَلِكَ رَسُولُ اللَّهِ  فَخَرَجَ كَأَنَّمَا فُقِئَ فِي وَجْهِهِ حَبُّ الرُّمَّانِ فَقَالَ بِهَذَا أُمِرْتُمْ أَنْ تَضْرِبُوا كِتَابَ اللَّهِ بَعْضَهُ بِبَعْضٍ إِنَّمَا ضَلَّتْ الأُمَمُ قَبْلَكُمْ فِي مِثْلِ هَذَا إِنَّكُمْ لَسْتُمْ مِمَّا هَاهُنَا فِي شَيْءٍ انْظُرُوا الَّذِي أُمِرْتُمْ بِهِ فَاعْمَلُوا بِهِ وَالَّذِي نُهِيتُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا

“কিছু মানুষ রাসূলুল্লাহ সা.-এর দরজায় বসে ছিলেন। তাদের কেউ বলেন, আল্লাহ কি একথা বলেন নি? আবার কেউ বলেন: আল্লাহ কি একথা বলেন নি? রাসূলুল্লাহ সা. একথা শুনতে পান। তিনি বেরিয়ে আসেন। তাঁর পবিত্র মুখমণ্ডল ক্রোধে লাল হয়ে যায়, যেন তাঁর মুখমণ্ডলে বেদানার রস ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, তোমাদের কি এরূপ করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে আল্লাহর কিতাবের এক অংশকে অন্য অংশের বিপরীতে দাঁড় করাবে? তোমাদের পূর্ববর্তী উম্মাতগুলি এরূপ করার কারণেই বিভ্রান্ত হয়েছে। তোমাদের কাজ এটি নয়। তোমাদেরকে কি করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে তা দেখ এবং তা পালন কর। যা তোমাদের নিষেধ করা হয়েছে তা বর্জন কর।” (আহমদ, আল-মুসনাদ ২/১৯৫। আলবানী, শুআইব আরনাউত প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন)
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ ( সা.) বিতর্ক বা ঝগড়াকে হেদায়াতপ্রাপ্তদের বিভ্রান্ত হওয়ার মূল কারণ বলে উল্লেখ করেছেন। আবূ উমামা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:

مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلاَّ أُوتُوا الْجَدَلَ

“কোনো সম্প্রদায়ের সুপথপ্রাপ্ত হওয়ার পরে বিভ্রান্ত হওয়ার একটিই কারণ যে, তারা ঝগড়া-বিতর্কে লিপ্ত হয়ে পড়ে।” (তিরমিযী ৫/৩৫৩ হাদীসটি হাসান সহীহ।)
এভাবে আমরা দেখছি যে, বাহাস, বিতর্ক বা ঝগড়াকে রাসূলুল্লাহ ( সা.) কঠিনভাবে নিষেধ করেছেন এবং উম্মাতের বিভ্রান্তির মূল কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বাহ্যত এর অন্যতম কারণ, বিতর্ক ও ঝগড়ার মাধ্যমে ইসলামী ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্য বিনষ্ট হয়। ভ্রাতৃত্ব, ভালবাসা ও ঐক্য ইসলাম নির্দেশিত অন্যতম ফরয ইবাদত। এর বিপরীতে বিভক্তি, শত্রুতা ও বিদ্বেষ ইসলাম নিষিদ্ধ অন্যতম হারাম কর্ম। মহান আল্লাহ বলেন:

وَاعْتَصِمُوا بِحَبْلِ اللَّهِ جَمِيعًا وَلَا تَفَرَّقُوا وَاذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ إِذْ كُنْتُمْ أَعْدَاءً فَأَلَّفَ بَيْنَ قُلُوبِكُمْ فَأَصْبَحْتُمْ بِنِعْمَتِهِ إِخْوَانًا وَكُنْتُمْ عَلَى شَفَا حُفْرَةٍ مِنَ النَّارِ فَأَنْقَذَكُمْ مِنْهَا

“তোমরা আল্লাহ্র রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর ঐক্যবদ্ধভাবে এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহ্র অনুগ্রহ স্মরণ কর: তোমরা ছিলে পরস্পর শত্র“ এবং তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করেন, ফলে তাঁর অনুগ্রহে তোমরা পরস্পর ভাই হয়ে গেলে। তোমরা অগ্নিকুন্ডের প্রান্তে ছিলে, আল্লাহ্ তা থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করেছেন। (আল-ইমরান: ১০৩)

এ আয়াতে জামাআত (ঐক্যবদ্ধতা)-কে ‘তার্ফারুক’ (বিভক্তি বা দলাদলি)-র বিপরীতে ব্যবহার করা হয়েছে। এ থেকে জানা যায় যে, বিভক্তিমুক্ত ঐক্যের অবস্থাই জামাআত। এ আয়াত থেকে আরো জানা যায় যে, জামাআত বা ঐক্যের অবস্থাই উখুওয়াত বা ভ্রাতৃত্ব এবং পরস্পর সম্প্রীতির অবস্থা এবং ‘পরস্পর শত্রুতা’-র অবস্থাই তার্ফারুক বা দলাদলির অবস্থা। আরো জানা যায় যে, শত্রুতা ও দলাদলি জাহান্নামের প্রান্তে নিয়ে যায় এবং ঐক্য, পারস্পরিক ভালবাসা ও ভ্রাতৃত্ব তা থেকে রক্ষা করে।

অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন:
وَلا تَكُونُوا كَالَّذِينَ تَفَرَّقُوا وَاخْتَلَفُوا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَأُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ عَظِيمٌ
“তোমরা তাদের মত হয়ো না, যারা তাদের নিকট স্পষ্ট নিদর্শন আসার পরে বিচ্ছিন্ন হয়েছে এবং মতভেদ করেছে, এদের জন্য রয়েছে মহা শাস্তি।” (সূরা আল-ইমরান: ১০৫ আয়াত)

অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেন:
وَلا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ
“এবং অন্তর্ভুক্ত হয়ো না মুশরিকদের, যারা নিজেদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উৎফুল্ল।” (সূরা রূম: ৩০-৩২ আয়াত)

অন্য আয়াতে আল্লাহ সুবহানাহু বলেন:

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
“যারা তাদের দীনকে বিভক্ত করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোনো দায়িত্ব তোমার নয়; তাদের বিষয় আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে অবহিত করবেন।” (সূরা আন‘আম: ১৫৯ আয়াত)
এ সকল আয়াত নিশ্চিত করছে যে, বিভক্তি, দলাদলি বা ফিরকাবাজি ইসলাম নিষিদ্ধ ভয়ঙ্কর পাপ এবং তা মুশরিকদের কর্ম। আর এরূপ বিভক্তির মূল কারণ পারস্পরিক ‘বাগাওয়াত’ বা প্রাধান্য অর্জনের প্রবল আকাঙ্খা। পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মতভেদ ও বিভক্তি প্রসঙ্গে কুরআন কারীমে বারবারই বলা হয়েছে যে, জ্ঞানের আগমনের পরেও তারা ‘বাগাওয়াত’ অর্থাৎ সীমালঙ্ঘন বা পারস্পরিক প্রাধান্য লাভের ইচ্ছার কারণে বিভক্ত হয়েছে। আল্লাহ বলেন:

وَمَا تَفَرَّقُوا إِلَّا مِنْ بَعْدِ مَا جَاءَهُمُ الْعِلْمُ بَغْيًا بَيْنَهُمْ

“তাদের নিকট ইলম আগমনের পরে পারস্পরিক বাড়াবাড়ি করেই শুধু তারা দলাদলি করেছে।” (সূরা শূরা ১৪ আয়াত)
যুবাইর ইবনুল আওয়াম (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ সা. বলেন:

دَبَّ إِلَيْكُمْ دَاءُ الْأُمَمِ قَبْلَكُمْ الْحَسَدُ وَالْبَغْضَاءُ هِيَ الْحَالِقَةُ لَا أَقُولُ تَحْلِقُ الشَّعَرَ وَلَكِنْ تَحْلِقُ الدِّينَ وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا تَدْخُلُوا الْجَنَّةَ حَتَّى تُؤْمِنُوا وَلَا تُؤْمِنُوا حَتَّى تَحَابُّوا أَفَلَا أُنَبِّئُكُمْ بِمَا يُثَبِّتُ ذَاكُمْ لَكُمْ أَفْشُوا السَّلَامَ بَيْنَكُمْ

“পূর্ববর্তী উম্মাতগণের ব্যাধি তোমাদের মধ্যে ধীরে ধীরে প্রবেশ করছে, সে ব্যাধি হলো হিংসা ও বিদ্বেষ। বিদ্বেষ মুণ্ডনকারী। আমি বলি না যে, তা মাথার চুল মুণ্ডন করে, বরং তা দীন মুণ্ডন করে। যারা হাতে আমার জীবন তার শপথ! ঈমানদার না হলে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করবে না। আর তোমরা পরস্পরকে ভাল না বাসলে ঈমানদার হবে না। আমি কি তোমাদেরকে সে বিষয়ের কথা বলব না যা তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক ভালবাসা প্রতিষ্ঠিতি করবে। তোমাদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।” (তিরমিযী, আস-সুনান ৪/৬৬৪। আলবানী হাদীসটিকে হাসান বলেছেন)

ঝগড়া বিতর্ক বাগাওয়াত বা একে অপরের উপর প্রাধান্য লাভের অন্যতম মাধ্যম। আর ঝগড়া বিতর্কের মাধ্যমেই হৃদয়ের ভ্রাতৃত্ব ও সম্প্রীতি নষ্ট হয়। এজন্য কুরআন অধ্যয়নের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ক্ষেত্রে মনের সম্প্রীতির ঘাটতি অনুভব করলে তা বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছেন রাসূলুল্লাহ ( সা.)। তিনি বলেন

اقْرَءُوا الْقُرْآنَ مَا ائْتَلَفَتْ قُلُوبُكُمْ ، فَإِذَا اخْتَلَفْتُمْ فَقُومُوا عَنْهُ

“তোমরা কুরআন পাঠ কর যতক্ষণ তোমাদের অন্তরগুলো মিল-মহব্বতে থাকবে। যখন তোমরা মতভেদ করবে তখন উঠে যাবে।” (বুখারী (৬৯-কিতাব ফাযয়িলিল কুরআন, ৩৭- ইকরাউল কুরআন..) ৪/১৯২৯; মুসলিম (৪৭-কিতাবুল ইলম, ১-বাবুন নাহয়ি আন ইত্তিবায়ি…) ৪/২০৫৩)

এ হাদীস থেকে আমরা বুঝতে পারি, কুরআন অধ্যয়নের মাজলিস বা ইলম শিক্ষা, গবেষণা, অনুসন্ধান, ইলমী আলোচনা ইত্যাদির মাজলিসেও যদি বিতর্কের সূত্রপাত হয় বা পারস্পরিক সম্প্রীতির ঘাটতির ভয় দেখা যায় তবে তা তৎক্ষণাৎ বন্ধ করতে হবে। কারণ এ সকল মাজলিসের ফযীলত বা বরকত অর্জনের চেয়ে মুমিনদের হৃদয়ের সম্প্রীতি রক্ষা করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত।
ইসলামের প্রথম যুগগুলো দিকে তাঁকালে আমরা দেখি যে, সাহাবী-তাবিয়ীগণের যুগে কখনোই তাঁরা পরস্পরে ‘বিতর্ক’ বা ‘বাহাসে’ লিপ্ত হন নি। বিভিন্ন সময়ে মতভেদের ক্ষেত্রে পরস্পরে একে অপরের দলিল জানার চেষ্টা করেছেন বা নিজের দলিলটি ব্যাখ্যা করেছেন। আব্বাসী যুগে মুতাযিলীগণের প্রাদুর্ভাবের মাধ্যমেই ধর্মীয় বাহাস বা বিতর্কের প্রসার ঘটতে থাকে। প্রথম পর্যায়ে এটি ছিল মুতাযিলী ও অন্যান্য বিদআতী ফিরকার মূল কর্ম। ক্রমান্বয়ে তা মূলধারার মুসলিমদের মধ্যেও প্রবেশ করে।

মহান আল্লাহই ভাল জানেন। সালাত ও সালাম তাঁর খালীল মুহাম্মাদ সা., তাঁর পরিজন ও সহচরদের উপর, প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর নিমিত্ত।

মুল লেখাঃ ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই নভেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১২:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মামুনুলের মুক্তির খবরে কাল বৃষ্টি নেমেছিল

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৯


হেফাজত নেতা মামুনুল হক কারামুক্ত হওয়ায় তার অনুসারীদের মধ্যে খুশির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ তো বলল, তার মুক্তির খবরে কাল রাতে বৃষ্টি নেমেছিল। কিন্তু পিছিয়ে যাওয়ায় আজ গাজীপুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×