আচ্ছা, একজন 'কসাইয়ের' দৈনন্দিন জীবন কেমন হয় কখনও ভেবেছেন? বা পাশে থেকে দেখেছেন ডিউটির সময়টায় তাদের কী রকম পরিশ্রম করতে হয়? মানসিক চাপ সামলাতে হয়? সেই শারীরিক-মানসিক চাপ সহ্য করে কাজ করে যাওয়াই হচ্ছে একজন চিকিৎসকের পবিত্রতম দায়িত্ব। আসুন একটু দেখে নিই কেমন হয় তাদের জীবন। পল কালানিথি নামের একজন নিউরোসার্জনের জীবনের খণ্ডাংশ এটিঃ
মাঝে মাঝে একজন রেসিডেন্ট চিকিৎসকের কাজের চাপ অনেক বেশি পড়ে যায়। রেসিডেন্ট হিসেবে সপ্তাহে প্রায় একশো ঘন্টা কাজ করতে হয়। যদিও নিয়মানুযায়ী আমাদের কাজের সময় ৮৮ ঘন্টায় সীমাবদ্ধ ছিল, সবসময়ই কিছু না কিছু বাড়তি কাজ থাকে। চোখ দিয়ে পানি পড়ত, মাথাব্যথা করত। রাত দু’টোয় এনার্জি ড্রিংক গিলতাম। তবে কাজের সময় নিজেকে ঠিকই খুঁজে পাই। তবে হাসপাতাল থেকে বেরুবার সাথে সাথে ক্লান্তি জেঁকে ধরত। টলতে টলতে পার্কিং লটে যেতাম, অনেক সময় ড্রাইভ করার আগে গাড়িতেই ঘুমিয়ে নিতাম। তবে সব রেসিডেন্টরা এই চাপের সাথে মানিয়ে নিতে পারত না।
রেসিডেন্সি চলাকালীন আমি আরেকটা জিনিস ধীরে ধীরে বুঝতে পারছিলাম। প্রতিদিন অসংখ্য মস্তিষ্কে আঘাত প্রাপ্ত রোগীর সাক্ষাৎ পেতাম। আমার সন্দেহ হতে লাগল আমি আহতদের দুর্ভোগের মাত্রা বুঝতে পারছিলাম না, স্রেফ আন্দাজ করতে পারছিলাম। আমি রোগীদের চরমতম সঙ্কটকালে সহায় হয়ে উঠতে পারিনি, স্রেফ পাশে ছিলাম। এরচেয়ে খারাপ ব্যাপার হচ্ছে, আমি রোগীদের আহাজারির সাথে অভ্যস্ত হয়ে উঠছিলাম। মনে হতো রক্তের সমুদ্রে ডুবে যেতে যেতে সাঁতার কাটতে শিখে গেছি, এমনকি জীবনকেও উপভোগ করতে শিখে গেছি।
ব্যর্থতা আর বিয়োগান্তক নাটকের ভিড়ে, আমি মানব সম্পর্কের গুরুত্ব হারিয়ে ফেলছিলাম কিনা ভেবে ভয় পাচ্ছিলাম। শুধু রোগী আর তাদের পরিবারের মাঝের সম্পর্ক না, বরং ডাক্তার-রোগীর মাঝে যে সম্পর্ক, তার গুরুত্ব আমি আস্তে আস্তে খুইয়ে ফেলছিলাম ভেবে আতঙ্কিত হতাম। প্রাযুক্তিক জ্ঞান আর দক্ষতাই শেষ কথা না। রেসিডেন্ট হিসেবে আমার সর্বোচ্চ লক্ষ্য জীবন বাঁচানো ছিল না, কারণ মরতে সবাইকেই হয়। আমার লক্ষ্য ছিল রোগী কিংবা তার পরিবারের কাছে মৃত্যু আর অসুস্থতার পূর্ণ চিত্রটা তুলে ধরা। যখন কোনো রোগী রক্তাক্ত অবস্থায় আমার কাছে আসে, তখন একজন নিউরোসার্জনের সাথে তার প্রথম কথোপকথনটা ছাপ ফেলে যায় পরিবারটির মনে। তারা কীভাবে মৃত্যুটাকে মনে রাখবে সেটা নির্ধারিত হয়ে যায় আলাপচারিতার পরই- রোগীর বিদায়কে শান্তভাবে গ্রহণ করবে নাকি হতাশ হয়ে ডাক্তারদের অভিযুক্ত করে শাপশাপান্ত করবে। স্ক্যালপেল দিয়ে যখন জীবন বাঁচানো যায় না, তখন একমাত্র কথাই হয়ে উঠে একজন সার্জনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার।
হোয়েন ব্রেথ বিকামস এয়ার
পল কালানিথি
অনুবাদঃ আশিকুর রহমান
আসছে বইমেলা ২০২০-এ
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২০ দুপুর ১:২৪