somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা মানুষ

০২ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফেরদৌসকে আমার খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু বলা যাবে না, তবে ওর সাথে খাতির ভালই। গলায় গলায় না থাকলেও ভার্সিটিতে তথাকথিত সাপ-খোপের তুলনায় ওকে নির্বিবাদীই বলা যায়। তবে ছেলেটা একটু অদ্ভূত। কীরকম অদ্ভূত বললেই বুঝবে যে কেউ- ফেরদৌস মেসে থাকে জানি। কিন্তু কখনো বলে না কোন মেসে। একেকবার একেক এলাকার মেসের ঠিকানা বলে জিজ্ঞেস করলে। বন্ধুদের বাসায় আসা-যাওয়া ঠিকই করে, নিজে দাওয়াত দেয় না কখনো। দেখতে আহামরি কিছু না ও। গায়ের রঙ ময়লা, শুকনা-পাতলা, কাপড়চোপড় সাদামাটা থাকে সবসময়। সারাক্ষণ সিগারেট ফুঁকে; পড়ালেখায় অবশ্য দুর্দান্ত, বিব্রতকর রকমের বেশি সিজি। সবার আগে চোখে পড়বার মতো ব্যাপার হচ্ছে ওর ধবধবে সাদা বত্রিশ পাটি দাঁত। হাসলে অন্ধকারেও চকচক করে উঠে।
ফেরদৌসের একটা ব্যাপার ভীষণ হিংসা জাগায় ফ্রেন্ড সার্কেলের সবার মনে, সেই সাথে আমারও- ক’দিন পর পর কাইল্লাটাকে নতুন নতুন মেয়ে নিয়ে ঘুরতে দেখি। সেটা শুধু ভার্সিটির মধ্যেই সীমাবদ্ধ না। কখনো শুনি চট্টগ্রাম, কখনো সিলেট আবার কখনো খুলনা গেছে গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে। তবে কোনো রিলেশনেই ব্যাটা বেশিদিন থাকে না। প্রাক্তনদের নিয়েও মুখ খোলে না কোনোদিন, বর্তমানকে নিয়েও খুব বেশি কথা বলে না। যদি কখনো জিজ্ঞেস করি- “কী রে ব্যাটা? এত মাইয়া নিয়া ঘুরোস কেমনে? কাহিনী কী?” জবাবে বড় বড় দাঁত বের করে হাসি দিয়ে ফেরদৌস বলে, “খায়া দেই মামা! মজা লাগে…” উত্তর শুনে প্রথমে হাসাহাসি করলেও প্রত্যেকবার একই জবাব শুনে বিরক্ত লাগে বৈকি! শালা ফাকবয় কোথাকার!

সেমিস্টার শেষ। নতুন সেমিস্টারের প্যারা শুরু হতে দেরি আছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে নাশতা খেতে খেতে ফেরদৌসকে কল করলাম। বান্দরবান ট্যুরের প্ল্যান করছি বন্ধুরা মিলে। যাবে কিনা জিজ্ঞেস করে দেখি। ফোন বন্ধ। বেশি মাথা ঘামালাম না, ওর স্বভাবই এমন। কখনো করে ফোন বন্ধ করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ডুব দেয়, আবার কখনো সিমই বদলে ফেলে। মোবাইল রেখে পত্রিকাটা তুলে নিলাম। প্রথম পৃষ্ঠার নিচের দিকে চোখ পড়তেই বুকের ভেতর ছ্যাঁত করে উঠল। রঙিন ছবিতে হাতকড়া পরা অবস্থায় ফেরদৌসকে দেখতে পাচ্ছি! পাশে দু’জন র‍্যাব সদস্য কঠিন মুখে গার্ড দিচ্ছে রাইফেল হাতে। দ্রুতবেগে শিরোনাম পড়লাম- “মোহাম্মদপুরের মেস থেকে নরখাদক গ্রেফতার!” বুকটা ধক ধক করছে, মূল খবর পড়তে লাগলাম রুদ্ধশ্বাসে- “গোপন সূত্রে পাওয়া খবরে রাজধানীর মোহম্মদপুরের তাজমহল রোডের একটি মেস থেকে নরখাদক ফেরদৌস খন্দকার-কে (২৭) গ্রেফতার করে র‍্যাবের একটি টিম। দলনেতা মেজর মোঃ শাইখ সিদ্দিকী জানান তারা বেশ কিছুদিন ধরেই নিখোঁজ মেয়েদের তালিকা নিয়ে কাজ করছিলেন। সেখান থেকে তারা দেখতে পান নিখোঁজদের সবার সাথে একজন নির্দিষ্ট বর্ণনার তরুণের যোগাযোগ ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে তদন্ত করে সেই অজ্ঞাতনামা তরুণকে তারা খুঁজে বের করতে সক্ষম হন। তার রূমের ফ্রিজ থেকে উদ্ধার করা হয় পলিথিনে প্যাঁচানো প্রায় পনেরো কেজি মানুষের মাংস। অপহৃত নারীদের খুন করে টুকরো টুকরো করে কেটে ফ্রিজে ভরে সংরক্ষণ করে রাখার মতো বিকৃত মানসিকতার মধ্যেই তার নিষ্ঠুরতা থেমে থাকেনি। জেরার মুখে ফেরদৌস স্বীকার করে সে নরমাংস খেতে ভালোবাসে তাই প্রেমের ফাঁদে ফেলে মেয়েদের খুন করতো সুযোগ বুঝে।
কাঁপা কাঁপা হাতে পত্রিকাটা রেখে দিলাম। কার বন্ধু ছিলাম এতদিন! বুকে কে যেন প্রবল শক্তিতে হাতুড়ি পিটছে, মাথাটা ঝিম ঝিম করছে। ফেরদৌস তাহলে মিথ্যে বলতো না! কানে ওর কণ্ঠ ভাসছে স্পষ্ট। কল্পনায় দেখতে পাচ্ছি- ধবধবে সাদা দাঁত বের করে হাসতে হাসতে বলছে- “খায়া দেই মামা! মজা লাগে…”
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:০৭
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×