somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সময়ঃ ৩১ ডিসেম্বর, বিকাল পাচঁটা স্থানঃ নিউমার্কেট মসজিদের সামনে

০২ রা আগস্ট, ২০১২ রাত ১০:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

“৫মিনিটের ভিতর বসুন্ধরা সিটিতে আসো, আমি রওনা হলাম”

-মুঠোফোনে সায়েমার এসএমএস টা দেখেই রাশেদ চমকে উঠলো।

এই অসময়ে বের হতে হবে!!আকাশটা মেঘলা, ঠিক যেন, অভিমানী মেয়ে মুখ ভারী করে বসে আছে, একটু পরেই যেন মেয়েটার গাল বেয়ে ঝরে পড়বে জলধারা ।ফিফা নিয়ে বসেছিলো রাশেদ। এই GAME টা শুরু করলেই রাশেদ সব-ই যেন ভুলে যায়।কিন্তু এখন সায়েমা আবার আবদার ধরেছে, এই মেঘলা আকাশে ঘুরতে যাবে।দেখো, পাগলি মেয়েটার কান্ড। সায়েমার কোন কথাই রাশেদ ফেলতে পারেনা। পড়িমরি করে বের হলো রাশেদ। আকাশটা কেমন যেন হুঙ্কার দিচ্ছে, হয়তো কিছুক্ষণের ভিতর-ই শুরু হতে পারে বৃষ্টি। ভুল করে ছাতা টাও ফেলে এসছে রাশেদ।

“সায়েমা, কোথায় তুমি? আমি পৌছলাম…” – রাশেদের এসএমএস…

আধঘন্টা হতে চলেছে, খোঁজ নেই সায়েমার। ফোন-টাও ধরছেনা। বেশ রাগ হচ্ছে রাশেদের, কিন্তু সায়েমা তো এমন-ই, সবসময় দেরি করেই আসবে আর এসেই রাশেদের হাতটা ধরে বলবে, “SORRY-গো আসলে রাস্তায় জ্যাম আর, মা র সাথে টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, আর বলোনা…” রাশেদ কিছুই বলেনা, শুধু সায়েমার দিকেই তাকিয়ে থাকে, আর একটু হাসে, সায়েমার এভাবে রাগ ভাঙ্গানোটা রাশেদের খুব-ই ভাল লাগে।

এক গোছা কদম ফুল রাশেদের দিকে এগিয়ে দিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দেয় সায়েমা।

--“SORRY, রাস্তায় আসতে গিয়ে দেখলাম কদম ফুল, খুব কিনতে ইচ্ছে করলো…তাই একটু LATE হলো, তোমার জন্য নিয়ে এলাম, রাগ করোনা-গো”

-“হুমম…”

--“চলো…”

-“কোথায়?

--ICE CREAM খাবো…বৃষ্টিতে ভিঁজে, TSC-তে ডাচ-এ যাবো, রিক্সায়…”

-“কি বলছো, বৃষ্টিতে ভিঁজবে? জ্বর আসবে তো…”

--“আমি চললাম…”

কিছু না শুনেই হাটা শুরু করে সায়েমা।

-“সায়েমা!! দাঁড়াও ড়াও…আসছি আমি…”

অঝোরে বৃষ্টি শুরু হয়েছে, রিক্সাতে গুটিশুটি হয়ে বসে আছে রাশেদ-সায়েমা।রাশেদের হাতটা ধরে সায়েমার অনেক ভালো লাগে, ইচ্ছে হয় রাশেদের হাত-টা ধরেই আজীবন বসে থাকতে।কিছু বুঝে উঠার আগেই রাশেদ একটা চুমু বসিয়ে দিলো সায়েমার গালে।শ্যামলা গাল-টা লজ্জায়ে যেন নীল হয়ে গেলো।

--“আই, কি করছো, কেউ দেখে ফেলবে তো…”

সায়েমা কিছু বলতে না বলতেই আর একটা চুমু বসিয়ে দেয় রাশেদ, কিছুই বলতে পারেনা সায়েমা, সব কিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হয়। সায়েমাকে জোরে আকড়ে রাখে রাশেদ, কানে কানে বলে,

-“সায়েমা, আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, অনেক বেশী ভালোবাসি, আমকে ছেড়ে কখনো কোন্ দিন যেওনা, আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা।”

সায়েমার চোখ পানিতে ভরে যায়, রাশেদকে আকড়ে বলে,

--“রাশেদ, এ পৃথিবীতে আমি তোমাকে সবচেয়ে বেশী ভালোবাসি, আজীবন বাসবো, আমার জীবনে কাউকে এতোটা ভালোবাসিনি কাউকে কোন দিন, তুমি আমার স্বামী, আমার পৃথিবী…”

~~”ভাই, কোইন দিক যাইমু, ডাইন দিন না বাইম দিক…”

চমকে উঠে তারা, স্বপ্নের স্বর্গ থেকে নেমে আসে পৃথিবীতে…

-“ডান দিকে যান ভাই”

সায়েমা, রাশেদ দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে থাকে, সময় কিভাবে কেটে যায়, বিন্দু মাত্র ধারণা পায়না তারা। বৃষ্টির পানিতে দু’জনের পা ভিজে যায় দু’জন-ই…

-“কি ICE CREAM খাবে? বলো…”

গাছের নিচে বসে রাশেদ আচমকাই গান গাওয়া শুরু করে,

-“যদি ভোরের শিশির হয়ে, যদি কোন দিন হারিয়ে যাই…”

মুখে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় সায়েমা, “কি গান শুরু করলে? মনটাই খারাপ হয়ে গেলো, এখন চল, বাসায়ে যাবো…”

-“SORRY!! ভুল হয়ে গিয়েছে, আসলে আমি আসলে…”

--“হয়েছে, আর SORRY! বলতে হবেনা, বুঝেছি আমি, মরনে খুব শখ তোমার, তোমার যা ইচ্ছে করো, আমি বাসায়ে যাবো…”

-“ইসসস! আসলে আমি বুঝিনি…আচ্ছা ICE CREAM টা খাও তারপর…”

সায়েমার নীরবতাও যেন বৃষ্টির ছন্দময় সুরকে ছাপিয়ে যায়…

-“সায়েমা! কাঁদছো!!”

কিছু না বলেই সায়েমা জড়িয়ে ধরে রাশেদকে…

--“আমি তোমাকে ছাড়া বাচঁবোনা, এভাবে কেন বলো তুমি? আমার খুব বেশী কষ্ট হয়, এভাবে কোন্ দিন হারিয়ে যেওনা গো…”

-“সায়েমা, আমিও তোমাকে ছাড়া বাঁচবোনা…”

-“সোনা ময়না আমার, এবার চোখটা মুছো, দেখো, ICE CREAM টাও গলে গিয়েছে, এবার বলো কি ICE CREAM খাবে…”

--“আরে, বাদ দাও তো, আর খরচ করতে হবেনা…”

-“আচ্ছা…ঠিক আছে!!………সায়েমা, ধরো কোন কারনে আমকে খুজে পাচ্ছোনা, ধরো কোন কারনে আমার হদিস পাচ্ছোনা, ধর ভূমিকম্প হয়েছে তাহলে কি করবে?”

--“হুম…ম…ম”

-“শুনো, ৩১ ডিসেম্বর, বিকাল পাচঁটা, নিউমার্কেট মসজিদের সামনে আমরা দেখা করবো আচ্ছা? ভুলবেনা কিন্তু, আচ্ছা…”

--“আবার শুরু করলে এসব কথা…বাদ দাও তো…”



*******************************************************************

ব্রেকিং নিউজঃ ঢাকা সহ পার্শ্ববর্তী এলাকাতে ভারী ধরনের ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে, রিখটার স্কেলে এর মাত্রা ছিলো, ৬.৭। সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পুরানো ঢাকা। হতাহতের সংখ্যা ৫০ আহত পাচঁ শতাধিক।

*******************************************************************



নিউজ-টা শুনে কিছুক্ষনের জন্য চমকে উঠলো রাশেদ, অফিসের একটা Training-এ মালয়শিয়া গিয়েছে রাশেদ। কিছুক্ষণ আগেই কথা হয়েছে সবার সাথে, আর এই মাঝেই…

মা বাবা-র সাথে কথা বলেছে রাশেদ, সবাই ভালো আছেন, আর সায়েমা? সায়েমার ফোন বন্ধ!! রাশেদ তার ছোট ভাইকে বলে খোঁজ নিতে, কিন্তু, অবস্থা খারাপ, রাস্থা ঘাট বিপর্যস্ত… পরের FLIGHT—এই ফিরে আসে রাশেদ, মা বাবা র সাথে দেখা করেই ছুটে যায় পুরান ঢাকাতে…সায়েমাদের বাসা রাশেদ চিনেনা কিন্তু সায়েমাকে রিক্সা ঠিক করে দিতো, শহীদ নগর…কিন্তু, কোথায়ে শহীদ নগর? চারিদিকে খালি ধ্বংস-স্তুপ…পাগলের মতো খুজঁছে রাশেদ, কোথাও কুল কিনারাই পাচ্ছেনা, হাসপাতাল গুলোতে খোঁজ শুরু করে রাশেদ…কোথাও নেই সায়েমা…নামাজের পাটিতে রাশেদের আর্তনাদ, “আল্লাহ, আমার সায়েমাকে ফিরিয়ে দিন…” কান্নায়ে ভেঙ্গে পরে রাশেদ…

দেখতে দেখতে কয়েক মাস কেটে যায়…



৩১শে ডিসেম্বর,

রাশেদ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছে আজকের দিনের জন্যে…



৩১শে ডিসেম্বর, বিকাল ৪.৩০মিনিট,

এক বুক আশা নিয়ে নিউমার্কেটে মসজিদের সামনে হাজির হয় রাশেদ। মসজিদ-টার দেওয়ালে ফাটল ধরেছে…আসরের নামাজ পড়ে রাশেদ দাঁড়িয়ে থাকে ঠায়…



৩১শে ডিসেম্বর, বিকাল ৪.৫৫মিনিট,

আর মাত্র পাচঁ মিনিট, এর পর–ই দেখা হবে সায়েমার সাথে…সায়েমা কথা দিয়েছিল, রাশেদকে ছেড়ে কখনো কোথাও যাবেনা…কিন্তু, সায়েমা কোথায়?



৩১শে ডিসেম্বর, বিকাল ৫টা,

সায়েমার দেরি করার অভ্যাস-টা আর গেল না…মনের মাঝের দুঃশ্চিন্তা-টাকে আর আটকে রাখতে পারছেনা রাশেদ…কোথায়ে যেন একটা ভয় কাজ করছে, বুকের ভিতর কেমন যেন ব্যথা করছে রাশেদের…চোখের জমে থাকা পানি বান ভেঙ্গে গড়িয়ে পড়ে…নির্বাক রাশেদ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকে…মাগরিবের আজানে চারিদিকে যেন রাশেদের আর্তনাদ-ই পড়ছে…নিজেকে অনেক বুঝায় নিজেকে, কিন্তু, কিছুতেই চোখের পানিটা থামছেনা…সায়েমার সাথে কি আর কোন দিন দেখা হবেনা রাশেদের? মোনাজাত শেষে বের হতে-ই দূরে দেখতে পায় wheel chair এ বসে থাকা একটা মেয়েকে, মোটা চশমার কাচঁটা ভালো করে মুছে সামনে এগিয়ে যায় রাশেদ…



-“সায়েমা…”

নিজেকে সামলে দৌড়ে আকড়ে ধরে সায়েমাকে…



চোখ মুছতে মুছতে রাশেদ বলে, “সায়েমা! দেরি করার পুরানো অভ্যাস-টা আর গেলোনা তোমার?”



--“SORRY-গো আসলে রাস্তায় জ্যাম আর, মা র সাথে টাকা নিয়ে ঝামেলা হয়েছে, আর বলোনা…”



মুচকি হেসে রাশেদ, “ICE CREAM খাবেনা? চলো..."
৭টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×