কিছুই করিনি জীবনে, না চাকরী না অন্যকিছু। সোনার হরিণ-কে তো তিনবার পেয়েও ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু লেখাপড়া তো ছাড়া যায় না। পড়াশানা করতে যেয়ে স্বাভাবিকভাবেই অনেকের সাথেই মিশতে হয়। কিন্তু আমি হলাম এক অদ্ভূত প্রজাতি। কারো সাথে ঠিক মিশে চলতে পারিনা। কিছুদিন আগে কিছু !বন্ধুর ! সাথে দাড়িয়ে আছি। একজন হিন্দু মহিলা পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছে। বয়স না হলেও ৪০ এর উপরে। অদ্ভূত ব্যাপার হলো এই চল্লিশার্ধ্য মহিলাটা আমার সেই !বন্ধু!দের ইভটিজিং এর হাত থেকে রক্ষা পেলনা। নোংরা কিছু মন্তব্য শুনে, ব্যাথিত চোখে কিছু ছেলের বয়সী ছেলের দিকে তাকিয়ে তিনি চলে গেলেন। ঘেন্না হয় নিজের প্রতি, সেই ছেলেগুলোর একজন আমিও। যদিও আমি কোন টিজ করিনি, মায়ের বয়সী একজন মহিলাকে মায়ের মতোই দেখি, তবু। তবু ওদের সাথেই তো ছিলাম আমি। সেদিনই ওদের সাথে আড্ডাবাজি বন্ধ করে দিলাম। দরকার নাই আমার ওমন বন্ধুত্ব।
শুধু একদিনের কথা না। দিনে পর দিন, মানুষের মধ্যে এ ধরনের নোংরা মানসিকতা দেখে হাফিয়ে উঠেছি আমি। মজার ব্যাপার হলো, দশজন খারাপ মানুষের মধ্যে, তাদের অন্যায় কাজের বিরূদ্ধে আপনি যদি তাদের খারাপ কাজটার প্রতিবাদ করেন, তাহলে খারাপ কিন্তু আপনাকেই হতে হবে। তাদের অন্যায় কাজ, তাদের নোংরা মন্তব্যই হলো তাদের আদর্শ। সেই আদর্শের বিরূদ্ধে আপনি কিভাবে যাবেন? গেলে, আপনাকেই সবার সামনে অপরাধী হতে হবে।
আমি নিজের একটা কথা বলি। ফেসবুকে একটা গ্রুপে ছিলাম আমি। দশ থেকে বারোজনের একটা গ্রুপ। সবার মধ্যে অসাধারন বন্ধুত্ব। খুব গর্ব হলো যখন নিজেকে ওই গ্রুপের একজন মেম্বার হিসেবে দেখলাম। বিশ্বাস করেন, গ্রুপের প্রত্যেকটা মেম্বারকে প্রচন্ড ভালো বাসতাম আমি, এখনও বাসি। ওই গ্রুপের একজন মেয়ে মেম্বারকে ইয়ারকির ছলে ফান হিসেবেই একটা কথা বলে বসেছিলাম। খুবই সামান্য একটা কথা। কথাটা বলার সময় আমার খেয়াল ছিল না, যাকে কথাটা বলছি- সে ছেলে না মেয়ে। অন্যান্নদের সাথে ওধরনের কথা বলতাম, মুখ ফসকে মেয়েটার সাথেও ভুল করে ফান করে ফেললাম। হয়ত কেউ খেয়ালও করতোনা ব্যপারটা। কিন্তু আমি নিজেই যে খেয়াল করেছি। অন্যের কাছে জবাব দেওয়ার চেয়ে নিজেকে জবাব দেওয়া অনেক কঠিন। সেদিনই গ্রুপ থেকে লিভ করলাম আমি। আমার ভালোবাসার গ্রুপটাকে চিরদিনের মতো ছেড়ে দিলাম। পরে মেয়েটার সাথে আমার বহুবার কথা হয়েছে, এখনও হয়। আমার সৌভাগ্য, সে আমার সেই ফানটার জন্য আমার উপর রাগ করেনি এবং আমাকে কখনই খারাপ চোখে দেখেনি। হয়ত আমি আসার পরে আমার নিয়ে অন্যরা আলোচনা করেছে, করতেই পারে। ভালো কিছু বলার কোন কারন নাই, হয়ত খারাপই বলেছে। বলাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু কি করে বোঝাবো আমি, আমার মনে কোনই কপটতা ছিলনা। ওর চেয়ে হাজার গুন খারাপ কথা এই ব্লগে, ফেসবুকে অনেকেই অহরহ বলছে। অদ্ভুত ব্যাপার হলো, এরা বিবেকের কাছে কোনদিনও লজ্জিত হয় না।
যখনই, যে আড্ডাতেই যাইনা কেন, সবখানেই দেখি শুধু নোংরামীর ছড়াছড়ি। ভালো কথা, ভালো কিছুর কোথাওই কোন দাম নাই। আপনার গলা যত বড়, আপনার অন্যকে অপমান করার শক্তি যত বেশী, আপনার গুন্ডামী পাওয়ার যত বেশী- আপনি ততই মানুষের কাছে জনপ্রিয়। সবখানেই দেখি একে অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হতে চায়। ওদের কি এতটুকু সেন্স নাই, অন্যকে ছোট করে নিজে বড় হওয়া যায়না? আজ হোক-কাল হোক সেও একদিন ছোট হতে পারে?
মানুষের সাপোর্ট পেতে হলে, বন্ধুদের সাথে সম্পর্ক বজায় রাখতে হলে, তাদের নোংরামীর সাথে আমাকেও তাল দিতে হবে। দিলাম না আমি তাল, দরকার নাই আমার কোন নোংরা বন্ধু। প্রয়োজনে আমি বন্ধু ছাড়াই চলবো, ওয়ান ম্যান আর্মি। মানুষের চোখে হিরো হতে গেলে আজ গুন্ডা হতে হবে, গলার নোংরা জোর থাকতে হবে। দরকার নাই আমার হিরো হওয়ার।
আমি হিরো হতে চাই না, আমি এ্যান্টিহিরোই থাকবো।