somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অগোছালো ভাবনা-কথা

০৮ ই জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে আমি কিছু মানুষের কথা মনে পড়লে স্তব্ধ হয়ে যাই। প্রচণ্ড বেগে ভবিষ্যৎ আমার উপর দিয়ে বয়ে অতীতে চলে যায়। সবকিছু ঝাপসা হয়ে যায় আমার সামনে।
স্কুল জীবনের বন্ধু রাতুলের কথা প্রায়ই মনে পরে। ছেলেটা প্রতিদিন এসে বলতো ওর আম্মু ওর জন্য কত কি যে রান্না করে। শুনে লোভ লাগতো, হিংসে হতো। আর আমার মায়ের উপর রাগ লাগতো। কেন আমার আম্মু আমার জন্য এসব করে না?? আমি কেন ওর সামনে টিকতে পারিনা?? কিন্তু পাগলটা কোনদিন তার বাসায় নিয়ে যায়নি। ওর মাকেও কখনো দেখিনি। একদিন ঈদের বিকেলে ওর বাসায় হাজির হই। কত স্বপ্ন, ওর আম্মুর হাতের সেই লোভনীয় খাবার খাব। কিন্তু বাসা খুঁজে ভিতরে গিয়ে দেখি, রাতুল রান্নাঘরে হাড়ি কুরে খাবার নিচ্ছে প্লেটে। অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। আর ওর দৃষ্টি আমাকে বিচলিত করে দেয়। দৌড়ে চলে আসি। আসার সময় ওর এলাকার একজন বলে, রাতুলের মা নেই। অনেক আগেই মারা গিয়েছেন, বাসায় ওর সৎ-মা। এর পর রাতুল আমার সাথে কোনদিন কথা বলেনি। না বলেছিল। আমি ঢাকায় চলে আসার বেশ কিছুদিন পরে রাতুল হঠাৎ ফোন দিয়ে কেন জানি মাফ চাইল, কান্না করছিল পাগলটা। এরপর ছুটিতে চট্টগ্রামে এসে শুনি রাতুল আর নেই। জানাজা ছাড়া ওকে গোর দেয়া হয়েছিলো। আমি আজো কিছু টং এড়িয়ে চলি। ভুলেও ওইসব টং দোকানে যাইনা।
নানাবাড়িতে ছোটবেলায় ছুটিতে বেড়াতে যেতাম। সেখানে এক খালা ছিল। আমার চেয়ে বছর দুয়েকের বড়। নাম ঊর্মি। ঊর্মিখালা ডাকতাম। পুরো ছুটি তার সাথেই কাটাতাম। সারাদিন ঘুরতাম এখানে-সেখানে। আমি উনাকে শিখাতাম কিভাবে আমার ভিডিভাইসে গেম খেলতা হয়, আর উনি শিখাতেন গোল্লাছুট, দারিয়া-বান্ধা, অথবা ওপেন্টি-বায়স্কোপ। হঠাৎ একদিন বাসায় আম্মু বলে ঊর্মি খালার নাকি বিয়ে হয়ে যাচ্ছে। এর বছর কয়েক পর নানাবাড়ি যাই। বয়স ৯ কি ১০!! গিয়েই শুনি, ঊর্মি খালা মারা যাচ্ছেন। পরদিন তার শ্বশুরবাড়ি গিয়ে আর উনাকে দেখতে পাইনি। অপরিপক্ব ভ্রুন জন্ম দিতে গিয়ে ১২ বছরের একটা মেয়ে মারা গিয়েছে। উনাকে দেখে আমি চিনতে পারিনি যে উনি আমার ঊর্মি খালা, দেখে মনে হয়েছিলো, সোমালিয়া থেকে কাউকে এনে আমাদের দেখাচ্ছে। বিশ্বাস করিনি, যেই ঊর্মি খালা গাছের ডাল ভেঙে পানিতে পরে যায়, সে কিভাবে এত পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারেন??
তখন বুঝতে না পারলেও এখন জানি ও বুঝি, সমাজ, তার মা-বাবা বৈধ ধর্ষণের অনুমতি দিয়েছিল তার জন্য। অবশ্যই সেটা ধর্ষণ ছিল, আর তা বৈধ ছিল।
আমি রাষ্ট্র-যন্ত্র, রাজনীতি, বাজেট, আইনব্যাবস্থা, নগর পরিকল্পনা, বিচারবিভাগ, স্বায়ত্তশাসন, নির্বাচন, শিক্ষানীতি বুঝিনা। এগুলো উচ্চ-পর্যায়ের মানুষের কাজ। রাজনীতির মারপ্যাঁচ, কূটনৈতিক ব্যাবহার, রাষ্ট্রযন্ত্র এইরূপ কঠিন বস্তু আমি আবির বুঝিনা, কেননা, সাধারণ মানুষের তুলনায় আমার বুদ্ধিমত্তা কয়েকস্তর নিচে।
আমি বুঝি আমার বন্ধু রাতুল মাত্র ১৭ বছর বয়সে পৃথিবীর সবচাইতে বড় সিদ্ধান্তটা নিয়েছে। সবাই তাকে দোষ দিলো। গালিও দিলো, কিন্তু কেউ তার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়নি।
আমি বুঝি, কতিপয় ভণ্ড, অমানুষ আমার ঊর্মি খালাকে ধর্ষণ করার জন্য বৈধতা দিয়েছিল।
কিন্তু এগুলো বুঝে আমি কি করি??? টং দোকানে একটার পর একটা সিগারেট নিঃশেষ করি, কিন্তু কোন মানুষ হাত বাড়ালে তার দিকে না তাকিয়েই আমি দার্শনিকের মতো বুলি আওরাই, " কাজ করে খেতে পারনা ?? "
একবারও তাকিয়ে দেখিনা, সে কে?? যদি দেখতাম তাহলে জানতাম, সে আমার দাদার মতই কোন বৃদ্ধ, যে কিনা ক্ষুধার জ্বালায় হাত বাড়িয়েছে। অথবা দেখতাম কোন কিশোর, রাতুলের মতই কষ্ট নিয়ে হাত বাড়িয়েছে। নাহয় দেখতাম, ঊর্মি খালার মতো কোন মেয়ে ধর্ষণের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে পালিয়ে ভিক্ষা করছে।
এই কিশোররা ক্ষুধার জ্বালায় অস্থির হয়ে অল্প সময়ে অর্থ উপার্জনের জন্য মাদকের বিকিকিনি করলে আমরা সমাজপতিরা তাদের বেদম প্রহার করি, ঊর্মি খালার মতো পরিস্থিতির শিকার মেয়েরা পালিয়ে ক্ষুধার জ্বালায় দেহ বিক্রি করলে আমরা হ্যাঁয় হ্যাঁয় করে উঠি। তাদের সমাজচ্যুত করি, কিন্তু সময় আর সুযোগ অনুকুলে থাকলে তাদের সামনে ঘৃণ্য সাপ হয়ে উপস্থিত হই।
হয়তো বলবেন, এরা তো নিজেরাই ইচ্ছা করে এসব করে। আমি বলবো, "হ্যালো ব্রাদার, ভালো করে জেনে কথা বলুন, দেখে আসুন তারা কতটুকু নিরুপায় হলে মাদক আর দেহকে নিয়ে বাণিজ্য করে।" আর জেনে রাখুন " ব্যাতিক্রম কখনো উদাহরণ হতে পারেনা"
মাঝে মাঝে ভাবি, কত কর্মশালাই তো হয়, কত কিছু শিখায় কর্মশালায়, এমন একটা স্কুল বা কর্মশালা কি করা যায়না যেখানে মানুষের বিবেক জাগ্রত করা যায়?? কিছু বিবেকবান, সৎ ও ভালো মানুষ এই স্কুলের পরিচালক হবেন। সেখানে শিক্ষা দেয়া হবেনা, দেয়া হবে নীতিজ্ঞান, দেয়া হবে মানবিকতাবোধ। আর কারো কথা জানিনা, আজ আমার এই জিনিসটার অভাব প্রচণ্ড অনুভব হচ্ছে নিজের মাঝে। যদি এমন একটা স্কুল থাকতো তবে আমি নিজেই হতাম সেই স্কুলের প্রথম ছাত্র।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×