রুদ্রের লাল স্যান্ডেলের একটা পাটি ছিড়ে গেছে। স্রস্টার দেয়া হাত-পা সব সহি-সালামতে, কিন্তু একটা দেড়শ টাকার জুতা তাকে ল্যাংড়াতে বাধ্য করল।
স্যান্ডেলটা ফেলার ইচ্ছে রুদ্রের নেই। শতহোক, নিজের স্বাধীনতা উপলক্ষে সবুজাভ চাদর আর লাল জুতা কিনেছে সে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে রাস্তায় হাঁটছে আর নিজের স্বাধীনতা বনাম বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে ভাবছে!!!
বাঙালি স্বাধীন হল ৯ মাসে, আর সে ৫ বছরে। কিন্তু বাঙালি অর্জন করেছে অনেক, সে করেছে কচু!!!
বাঙালি এগিয়েছে, সে পিছিয়েছে।
চায়ের তৃষ্ণা আর এক বুক ধোঁয়ার জন্য হাহাকার নিয়ে সে টং দোকানে গিয়ে চা সিগারেট নিয়ে পাশের দেয়ালে উঠে বসে। আয়েশ করে চা-সিগারেট উপভোগ করতে থাকে।
সামনেই একটা খাবারের দোকান, আসলে খাবারের দোকান না, এগুলোকে বলে "ফাস্ট ফুড শপ"। খাবারের দোকান বললে মানহানির মামলা নিশ্চিত!!!
এপারে দেয়ালে বসে রুদ্র ওপারে দামী কাঁচে ঘেরা গদি-আটা জায়গাটা দেখছে। আজ পর্যন্ত তার সাহস আর সামর্থ্য, একটাতেও কুলায়নি এসব দোকানে খাবার খাওয়ার।
ভেতরে দামী গদিতে একটা ছেলে, একটা মেয়ে।হাত ধরে কথা বলছে।
কাঁচের বাইরে রুদ্র, ভেতরে ভালোবাসা।
বাইরে ময়লার গাড়ি, ডাস্টবিন, রাস্তায় কফ, থুথু, বসে থাকা দেয়ালের গায়ে প্রস্রাবের দেয়ালিকা, রুদ্রের বসে থাকা দেয়ালের উপর কিছু ভাঙ্গা কাঁচ, কখনো এগুলো ধারালো ছিল, কিন্তু রুদ্র বা তার মতো হাজার মানুষের পাছার ঘসায় সেগুলো অর্ধ মসৃণ হয়ে গেছে। এখন মাঝে মাঝে ভোতা মাথার গুতা লাগে!!!
আর কাঁচের ভেতরে ভালোবাসা, সুরক্ষিত। ভালোবাসা, মান-অভিমান, আদর, জন্মদিনে কেক কাঁটা, বিভিন্ন দিন বের করে উৎসব করা, আলতো করে স্পর্শ, সুযোগ পেলে চুপটি করে চুমু খাওয়া, আর সেই সাথে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করা, স্ট্যাটাসে লেখা, having fun with “অমুক” at “তমুক”……
ভালোবাসা, তোমার মারে সালাম, বলে রুদ্র উঠে দাঁড়ায়। বাসায় যাওয়ার পয়সা নেই পকেটে, কিন্তু জুতা সেলাই করানোর পয়সা আছে। জুতা সেলাই করিয়েই সে হাঁটা ধরে বাসার পথে। মাসে যা কামায় রুদ্র, তার ফিরিস্তি দিলে বিষ্ণুও লজ্জায় লক্ষ্মীদান করতে পারেন করুণায়।
বাসায় ফিরেই বাথরুমে ধুঁকে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে নিজের বীভৎস কালো ফেটে যাওয়া ঠোঁটগুলো দেখে। কে বলবে, এককালে ভালোবাসা হৃদয়ে ছিল??? কে বলবে এককালে ভালোবাসা ছিল বিশ্বাসে??? কে বলবে, কোন এককালে কেউ একজন তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে বলেছিল, আজীবন বাঁচতে চায় এই স্পর্শের জন্য???
আচ্ছা, ভালোবাসা আজকাল ওই কাঁচের ঘরে থাকে কেন???
রুদ্র দৌড়ে সেই কাঁচ ঘেরা ভালোবাসার নতুন ঘরে যায়। এক আধলা ইট নিয়ে মারতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
ভালোবাসা পরাধীন থাকতে চায় বলেই তো সে কাঁচের ভেতরে। তার কি অধিকার বা যোগ্যতা, ভালোবাসার ব্যাপারে নাক গলানোর?? তার স্থান পথে, ধুলার সাথে, রাস্তায়, কফ আর থুথুর পাশে, প্রস্রাবের দেয়ালের উপরে।
ভালোবাসা মনে হয় কাঁচ-ঘেরা দেয়ালে নরম গদিতে শীতল পরিবেশে কফির করা ঘ্রানে আর বিদেশি খাবারের দাতভাঙ্গা নামে নিজেকে বিকাশিত করতে চায়!!!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে রুদ্র ভাবে, স্বাধীন কুত্তা সুখী, নাকি পোষা ডগি???
অবশ্যই পোষা ডগি। অন্তত সিটি-কর্পোরেশন মারতে তো আসেনা!!!