somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্বাধীন মানুষ, পরাধীন ভালোবাসা কিংবা এলোমেলো ভাবনা

১৩ ই জানুয়ারি, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রুদ্রের লাল স্যান্ডেলের একটা পাটি ছিড়ে গেছে। স্রস্টার দেয়া হাত-পা সব সহি-সালামতে, কিন্তু একটা দেড়শ টাকার জুতা তাকে ল্যাংড়াতে বাধ্য করল।
স্যান্ডেলটা ফেলার ইচ্ছে রুদ্রের নেই। শতহোক, নিজের স্বাধীনতা উপলক্ষে সবুজাভ চাদর আর লাল জুতা কিনেছে সে। খুড়িয়ে খুড়িয়ে রাস্তায় হাঁটছে আর নিজের স্বাধীনতা বনাম বাংলার স্বাধীনতা নিয়ে ভাবছে!!!
বাঙালি স্বাধীন হল ৯ মাসে, আর সে ৫ বছরে। কিন্তু বাঙালি অর্জন করেছে অনেক, সে করেছে কচু!!!
বাঙালি এগিয়েছে, সে পিছিয়েছে।
চায়ের তৃষ্ণা আর এক বুক ধোঁয়ার জন্য হাহাকার নিয়ে সে টং দোকানে গিয়ে চা সিগারেট নিয়ে পাশের দেয়ালে উঠে বসে। আয়েশ করে চা-সিগারেট উপভোগ করতে থাকে।
সামনেই একটা খাবারের দোকান, আসলে খাবারের দোকান না, এগুলোকে বলে "ফাস্ট ফুড শপ"। খাবারের দোকান বললে মানহানির মামলা নিশ্চিত!!!
এপারে দেয়ালে বসে রুদ্র ওপারে দামী কাঁচে ঘেরা গদি-আটা জায়গাটা দেখছে। আজ পর্যন্ত তার সাহস আর সামর্থ্য, একটাতেও কুলায়নি এসব দোকানে খাবার খাওয়ার।
ভেতরে দামী গদিতে একটা ছেলে, একটা মেয়ে।হাত ধরে কথা বলছে।
কাঁচের বাইরে রুদ্র, ভেতরে ভালোবাসা।
বাইরে ময়লার গাড়ি, ডাস্টবিন, রাস্তায় কফ, থুথু, বসে থাকা দেয়ালের গায়ে প্রস্রাবের দেয়ালিকা, রুদ্রের বসে থাকা দেয়ালের উপর কিছু ভাঙ্গা কাঁচ, কখনো এগুলো ধারালো ছিল, কিন্তু রুদ্র বা তার মতো হাজার মানুষের পাছার ঘসায় সেগুলো অর্ধ মসৃণ হয়ে গেছে। এখন মাঝে মাঝে ভোতা মাথার গুতা লাগে!!!
আর কাঁচের ভেতরে ভালোবাসা, সুরক্ষিত। ভালোবাসা, মান-অভিমান, আদর, জন্মদিনে কেক কাঁটা, বিভিন্ন দিন বের করে উৎসব করা, আলতো করে স্পর্শ, সুযোগ পেলে চুপটি করে চুমু খাওয়া, আর সেই সাথে মোবাইল দিয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে আপলোড করা, স্ট্যাটাসে লেখা, having fun with “অমুক” at “তমুক”……
ভালোবাসা, তোমার মারে সালাম, বলে রুদ্র উঠে দাঁড়ায়। বাসায় যাওয়ার পয়সা নেই পকেটে, কিন্তু জুতা সেলাই করানোর পয়সা আছে। জুতা সেলাই করিয়েই সে হাঁটা ধরে বাসার পথে। মাসে যা কামায় রুদ্র, তার ফিরিস্তি দিলে বিষ্ণুও লজ্জায় লক্ষ্মীদান করতে পারেন করুণায়।
বাসায় ফিরেই বাথরুমে ধুঁকে মুখে পানির ঝাঁপটা দিয়ে আয়নায় তাকিয়ে নিজের বীভৎস কালো ফেটে যাওয়া ঠোঁটগুলো দেখে। কে বলবে, এককালে ভালোবাসা হৃদয়ে ছিল??? কে বলবে এককালে ভালোবাসা ছিল বিশ্বাসে??? কে বলবে, কোন এককালে কেউ একজন তার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করিয়ে বলেছিল, আজীবন বাঁচতে চায় এই স্পর্শের জন্য???
আচ্ছা, ভালোবাসা আজকাল ওই কাঁচের ঘরে থাকে কেন???
রুদ্র দৌড়ে সেই কাঁচ ঘেরা ভালোবাসার নতুন ঘরে যায়। এক আধলা ইট নিয়ে মারতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়।
ভালোবাসা পরাধীন থাকতে চায় বলেই তো সে কাঁচের ভেতরে। তার কি অধিকার বা যোগ্যতা, ভালোবাসার ব্যাপারে নাক গলানোর?? তার স্থান পথে, ধুলার সাথে, রাস্তায়, কফ আর থুথুর পাশে, প্রস্রাবের দেয়ালের উপরে।
ভালোবাসা মনে হয় কাঁচ-ঘেরা দেয়ালে নরম গদিতে শীতল পরিবেশে কফির করা ঘ্রানে আর বিদেশি খাবারের দাতভাঙ্গা নামে নিজেকে বিকাশিত করতে চায়!!!
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে রুদ্র ভাবে, স্বাধীন কুত্তা সুখী, নাকি পোষা ডগি???
অবশ্যই পোষা ডগি। অন্তত সিটি-কর্পোরেশন মারতে তো আসেনা!!!
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×