চলার পথে হাঁটতে গিয়ে কত কি যে দেখি, কখনো দেখি রূপসী কোন উর্বশী, কখনোবা বাতাস কেটে চলা কোন বিএমডব্লিউ বা মার্সিডিজ।
রাস্তায় তো আমি ঘুরি খুবই সস্তায়। খাবার খাই সেই রাস্তাতেই।
এককাপ চা, কয়েকটা পেঁয়াজু, ফিল্টার পানি(!!!) আর পকেটের অবস্থা বুঝে কখনো গোল্ডলিফ, কখনো বা ডার্বি.........
আমি কিছু কষ্ট দেখে সেখানে হাসি খুঁজেছি, দুঃখ দেখে সেখানে সুখ খুঁজেছি।
এবং আমি সেগুলো পেয়েছি।
ছবি আর অল্প কিছু শব্দে বলছি গল্প....................
মঞ্জু, চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ারিং ইন্সিটিউটের পাশে রেলওয়ে কলোনি বস্তিতে থাকেন এই জনাব। এককালে তরুণী সমাজের আতঙ্ক ছিলেন, কেননা তার সামনে পড়লেই তিনি মোহনীয় হাসিতে পকেট খসাতে দেরী করতেন না। কর্মস্থল ছিল সিআরবি এলাকা।
মঞ্জু খুবই সুন্দর করে হাসে, কিন্তু মঞ্জু জানেনা, তার বাবা কে, কিংবা জানে না, যে ঘুমের ওষুধ খেয়ে সে ভিক্ষাবৃত্তির চালিকা হয়েছিল, সেগুলর ক্ষতিকর দিকগুলো সে কিভাবে বন্ধ করবে।
জিজ্ঞেস করবেন না মঞ্জু কি করে এখন, কেননা আমার জানা নেই মঞ্জু কোথায় আছে।
সুজন ও শান্তা, কিশোরগঞ্জের ইলুইচ্চা নামের এক থানায় কুনকুনী হাওর এলাকায় এদের বাস, প্রচণ্ড ঠাণ্ডায় জমে যাওয়ার দশা হয়েছিল। সাড়া গায়ে কাপড়ের দোকান বসিয়েও আমি যখন কাঁপছিলাম, এরা তখন একটা মাত্র পাতলা চাঁদরে জড়াজড়ি করে শীতের সাথে যুদ্ধ করে হারিয়ে দিয়েছে। ছবি তুলতে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, "শীত লাগেনা?
উত্তর আসে, "শান্তারে বেড়ায় ধইরা রাখলে হের শইল্লের গরম আমার শইল্লে আইবো, আর আমারডা হের কাছে যাইব, জার আইবো কইত্তে"
সেই একই স্থান, কিশোরগঞ্জ, কুনকুনী হাওরেই, সকাল বেলা শরীর গরম রাখার এর চাইতে ভালো উপায় আমার অন্তত জানা নেই।
চট্টগ্রাম রেল-স্টেশন, বটতলী। এই দুই হরিহর শীত-বস্ত্র বিতরণে কাপড় নিতে এসেছিল। আর আমি গিয়েছিলাম আয়োজকদের ফেসবুকের লাইক আর সেলেব্রেটিশিপ বাড়াতে........ ছবি তুলে দেবো, গরীব মানুষের পাশে উমুক ভাই, তুমুক বোন..........
দিন শেষে শেষ হাসিটা এরাই হেসেছে, ছেড়া-ফাটা কাপড়গুলো আয়োজকদের মুখে মেরে ভেগেছে।
আসুন একটা অঙ্ক শিখি। একজন শ্রমিক, সপ্তাহে ৫০০ টাকা বেতনে কাজ করে, সকাল ৬ টা থেকে রাত ৮ টা। মাসে তার বেতন ২০০০ টাকা। এবার আসি খরচে, খাওয়া, থাকা, চিকিৎসা, কাপড় সব মিলিয়ে কত খরচ হয়??
কত হয় জানিনা, কিন্তু টিপু প্রতিমাসে রংপুরে তার বাবাকে ৯৮০ টাকা পাঠায়। ২০ টাকা বিকাশ করতে খরচ হয় কিনা।
টিপু নরসিংদীর রায়পুরায় একটি ইটভাটায় কাজ করে। একা থাকে, আর দেশের বাড়ি রংপুরে।
রাজু, চট্টগ্রামে ষোলশহর রেলস্টেশনে একটা নাস্তার দোকানে কাজ করে। সারাদিনের কাজ শেষে সন্ধ্যায় তার কাছে থাকে মিষ্টি বিকালের নরম আলো, যা সে বুঝে ওঠার আগেই হারিয়ে যায়, আর থাকে খুচরা কিছু পয়সা, যা তার নিত্য চাহিদা মেটানোর আগেই ফুরিয়ে যায়।
তাও আমি দিনশেষে স্বপ্ন দেখি, এই হাসিগুলো যেমন নিস্পাপ এখন, তখনো তেমনই থাকবে যখন তারা বড় হবে।
একদিন, জানিনা কতদিন। হয়তো অনেক দূরে, কিন্তু এই হাসি একদিন সব অপবিত্র আত্মাদের স্থান দখল করে নেবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৩:৪৩