ধানের শীষে নাকি শিশির বিন্দু দেখা হয়না অনেকের জীবনে, কিন্তু বিলাত ঘুরে রঙ-বেরঙের খানা-খাদ্য আর হাজারটা গল্প অনেকেই তো বলেন। আমি নাহয় আজ কিছু দেশের গল্পই বলি?
ইংল্যান্ডের ট্রেনে চেপে এমন দৃশ্য দেখা যায় কিনা জানি না, কিন্তু এটা জানি, বাংলাদেশ রেলওয়ের লস্কর-ঝস্কর মার্কা ট্রেনে চড়ে এমন মেঘ শুধু দেখাই যায় না, মেঘ থেকে ঝরে পরা মুক্তাবিন্দুও স্পর্শ করা যায়, আর তখন একাকী কাউকে প্রচণ্ড অনুভব করা যায়।
মনের কোন কোণে চিনচিনে ব্যাথায় একটা উদাসী রাখাল জন্ম নেয়। সত্যি বলছি, সেই রাখালের চোখে মুক্তো জাগে।
কখনো এমন করে কোন মানবী মেঘের মাঝে মুক্তো খুঁজতে হাত বাড়ায়, যেভাবে সে হাত বাড়ায় সে তার মনের মানুষের পানে।
হয়তো ভেনিসের সেই আলিশান ভাবটুকু বাংলার ছোট্ট ডিঙির নেই, কিন্তু এখানে আকাশের বুকে হাজারটা আলোর খেলা দেখে মাঝি বাড়ি ফেরে রুপালী ইলিশে ডালা ভর্তি করে, আর রাতে একসাথে খেতে বসে মোটা চালের ভাতের সাথে সর্ষে ইলিশ দিয়ে।
এভাবেই হয়তো হাজার বছর আগে বাংলার সমুদ্রের তীরে হেঁটে বেড়াতো শুঁটকী-শ্রমিকরা। হয়তো কারো নাকে ফ্রেঞ্চ ফ্রাই আর পিৎজার গন্ধ বেশি লোভনীয় কিন্তু এখনো আমার মা'র হাতের ভর্তা আমাকে বেশি শান্তি দেয়। পাঁটা-পুতায় শুঁটকীর ভর্তা বানানোর পর রয়ে যাওয়া অল্প ভর্তার সাথে ভাত পাঁটায় দিয়ে নরম করে মাখিয়ে খাইয়ে দেয়াটা ক'জনের জানা আছে???
হয়তো বাংলায় পিরামিড নেই, কিন্তু এখনো এদেশে এমন অনেক পোড়া-বাড়ি রয়ে গেছে যেখানে বন্ধুদের সাথে জম্পেশ থ্রিলার-মার্কা অ্যাডভেঞ্চার করা যায়। হয়তো মমির ভয় বাংলায় পাওয়া যায়না, কিন্তু শাঁকচুন্নি, চোরাচুন্নি, ব্রহ্মদৈত্য, স্কন্ধকাটা কিংবা কানাখোলারা এসব স্থানে রাতে কি আসে?? তা খুঁজতে কি যাওয়া যায়না???
নায়াগ্রা জলপ্রপাতের নিচে গিয়ে দেখার সাহস আর যোগ্যতা আমার নেই, কিন্তু ক্ষইয়াছড়া ঝর্নার নিচে পানির স্রোতে বিদ্যুৎ অনুভব করা কিংবা সেই ঝর্নার ভেতরের গর্তে বসে শব্দহীন পৃথিবী বুঝতে পারা কম কিসে???
ডিজনিল্যান্ডে রোলার-কোস্টারে চড়িনি তো কি হয়েছে??? খাগড়াছড়ি তেরাংতৈ কালাই/রিছাং ঝর্নাতে নেমে সব বন্ধুরা মিলে এমন তো করেছি??? উঠতে বা নামতে নাহয় সময় একটু লাগে, তাতে কি???
শেষ বিকেলে বুদ্ধ-মূর্তির সোনালী গায়ে সোনালী রোদ কি কোন অংশে কম পাওয়া???
ময়মনসিংহের মাটির ঘরগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, গরমে ঠাণ্ডা, ঠাণ্ডায় গরম, এমন সুলভ শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা কি আছে হে???
বাংলার রূপ এমন চোখ ছাড়া কি দেখা যায়?? কি মুগ্ধ বিস্ময়।
কর্ণফুলী ব্রিজটা কি রাত ২ টায় দেখার চেষ্টা কেউ করেছেন??? আলোর খেলা চলে নদীর উপরে।
নিজস্ব দ্বীপ না থাকতে পারে হাওয়াই দীপপুঞ্জের মাঝে কিন্তু এমন একটা ঘরের স্বপ্ন রাঙ্গামাটিতে দেখা তো যেতেই পারে।
চোখের ডাক্তার সবুজ দেখতে বললে আমার উপদেশ হবে, সোজা বিলাইছড়ি যাও হে, চোখ তো চোখ, অন্তরটাও ভালো হয়ে যাবে।
দিনশেষে, জীবন শেষে বাংলার বুকে সূর্যের মতো অস্ত যেতে পারাটাই কি সবচাইতে বড় পাওয়া নয়???
প্রতুল বলেছিলেন, "বন্ধু তোমার লাল টুকটুকে স্বপ্ন বেঁচো না"
আমি বলবো, দুইটা "চিকেন ঠ্যাং খাইয়া মাছ- ভাত ভুইলো না বাহে..............."
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৫ বিকাল ৫:৩২