একঃ
তানিয়া দেখতে খুব সুন্দর না হলেও স্মার্ট, কথা বলে গুছিয়ে, উচ্চতা ভাল।
সহজেই যে কোন ছেলের নজরে পড়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে কয়েক মাস হয়েছে। সবকিছু নতুন তাই সব কিছুই ভাল লাগে যেন। কেমন জানি হাওয়ায় উড়ে। এর মাঝে অনেকে ছেলের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছে। অনেক ক্লাসমেটের সাথে আলাপ পরিচয় হয়েছে। সবকিছুতেই ভাল লাগা জড়িয়ে আছে।
তবে তানিয়া একটু হিসেবি। ভাল বন্ধুত্ব করতে গেলে বুঝে-শুনে করে। এটা ঠিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে নয়। অনেক আগে থেকেই। তাই তার বন্ধু সংখ্যা খুব বেশি না হলেও সবার সাথে ভাল সম্পর্ক থাকে।
ক’দিন আগে এক ক্লাসমেটের মাধ্যমে প্রেমের প্রস্তাব পেয়েছে। নিজের জীবনের প্রেম নিয়ে সেভাবে ভাবেনি তানিয়া। এমন নয় এমন প্রেমের প্রস্তাব জীবনে প্রথম। তানিয়া সেই প্রস্তাব ভেবেও দেখেনি। কেনো জানি দেখতে ইচ্ছাও হয়নি।
ক্লাসের অনেককেই ওর ভাল লাগে বন্ধু হিসেবে। কিন্তু তাই বলে প্রেমে পড়েনি কারো।
যাক সেসব কথা।
রাসেল ওর ক্লাসের সব থেকে ভাল বন্ধু। ভাল ছেলে, মন ভাল। প্রথম দিন যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে আসে সেদিন থেকেই ওর সাথে পরিচয়। ওর মাধ্যমে অনেকের সাথেই আলাপ হয়েছে, বন্ধুত্ব হয়েছে।
অনেকের রাসেলকে ইর্ষাও হয়। কিন্তু কিছু বলে না। রাসেল মনে হয় একটু একটু ভাবতে শুরু করেছে তানিয়াকে নিয়ে। কিন্তু সে ভাবনা কতটুকু কার্যকরী ভাবনা জানে না সে। রাসেল আসলে তানিয়ার সাথে বন্ধুত্ব নষ্ট করতেও চায় না। দেখা যাক কি হয় পরে।
এভাবেই চলছিল সব ঠিকঠাক। একদিন ক্লাসের এক কোনে নজর গেলো তানিয়ার। সেখানে চুপচাপ বসে আছে ফাহিম। এমন নয় ফাহিমকে আগে কখনো দেখেনি তানিয়া। দেখেছে এবং ভাল করেই চেনে। ফাহিমের সাথে তেমন ভাল বন্ধুত্ব নেই তানিয়ার। তবে ফাহিমকে রাসেলের সাথে মাঝে সাজে দেখা যায়।
কিন্তু আজ যে কি হলো তানিয়ার। ওকে ভাল করে খেয়াল করছে একমনে। ওর মনে হচ্ছে ছেলেটা অনেক বুদ্ধিদীপ্ত, চঞ্চলও হতে পারে। কিন্তু একটু যেন লুকিয়ে রাখে নিজেকে।
দুইঃ
আজকে ক্লাসের সব ছাত্র-ছাত্রী মিলে একটা সেমিনারে যাচ্ছে। আসলে ঠিক সেই অর্থে সেমিনার নয়। তানিয়াদের বোটানী স্যার ‘আন্তর্জাতিক পাট গবেষনা ইন্সটিটিউট’ পরিদর্শনে নিয়ে যাচ্ছেন। আর সবার সাথে ফাহিমও যাচ্ছে। আজও সে খুব চুপচাপ। অন্যরা বাসে বসে গান গাচ্ছে-স্যার থামাতে পারছেন না। বেশী সময়ের ব্যাপার নয়। কিন্তু তাও সবাই আনন্দটা নষ্ট করতে চায় না। আজকের ছেলেমেয়েরাতো এমনি।
সেমিনার শুরু হয়েছে। পরিচালক বক্তৃতা দিচ্ছেন আর বিভিন্ন বিষয় বুঝাচ্ছেন পাওয়ার পয়েন্ট স্লাইডের মাধ্যমে। কিন্তু তিনি এমন করে দাঁড়িয়েছেন যে অনেকেই পিপিটি দেখতে পাচ্ছে না। পরিচালক স্যারের সেদিকে খেয়াল নেই। অনেক ছাত্র-ছাত্রীই বিরক্তি নিয়ে বসে বসে লেকচার দেখছে। কেউ বলার সাহস করছে না।
ফাহিম উঠে দাঁড়াল। ডায়াসের কাছে গেলো।
‘স্যার একটু যদি সময় দিতেন’। এই বলে পরিচালক স্যারকে থামালেন।
স্যার আমরা পিছন থেকে ঠিক দেখতে পাচ্ছি না। স্ক্রিনটা একটু ঘুরিয়ে দেই।
পরিচালক স্যার একটু লজ্জা পেলেন যেন। না না ঠিক আছে-আমি একটু সেরে দাঁড়াই তাহলে দেখতে পাবে আশা করছি। আমিতো এতক্ষন খেয়াল করিনি তোমরা দেখতে পাচ্ছ না।
ফাহিম তার সিটে ফিরে এলো।
এতো খুব সাধারন ব্যাপার। কিন্তু তানিয়ার কেনো জানি মনে হলো ছেলেটার নেতৃত্ব গুন আছে। তা না হলে এমন করে কেউ এগিয়ে যায় না।
তিনঃ
ভার্সিটিতে ঘোষনা হলো ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন ইয়ারের ছেলেদের মাঝে বিতর্ক প্রতিযোগিতা হবে, হবে সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা। তানিয়ার তেমন করে কোন যোগ্যতা নেই যে নাম দেবে। একটু আধটু গান শিখেছিল ছোট বেলায়। কিন্তু সেটা দিয়ে জনসমক্ষে গান গাওয়া চলে না। অনুষ্ঠানের দিনক্ষন এলো। তানিয়া বাসায় থাকে। হলে থাকতে হয়নি। খুব দরকার না পড়লে হলে থাকে না সে। যে কারনে অনেক বিষয়েই আপডেটেড না।
অনুষ্ঠানের দিন ফাহিমর বিতর্ক শুনে মুগ্ধ হয়েছিল অন্য সবার মতো তানিয়াও। তাদের দল সেমিফাইনালে হারলেও ফাহিম বেশ ভাল করে। সেদিনটা মনে হয় ফাহিমের ছিল। মজার মজার জোক শুনিয়ে হাসিয়েছে সেদিন। কিন্তু নিজে হাসেনি তেমন। দিনশেষে আবারো খুব অচেনা ফাহিম।
সেদিনের পর তানিয়া একদিন ক্লাসে ধরে ফাহিমকে-তুই এমন চুপা রুস্তম কেন? দেখেতো মনে হয় ভাজা মাছটা উলটে খেতে পারিস না। অথচ কত কি পারিস!!
ধুর!! কি আর পারলাম। এই একটু করি আর কি। আর আমিতো এমনি। মানুষের সাথে ঠিক মিশে উঠতে পারি না। কিন্তু জানিস স্কুল থেকে আমার অনেক অনেক বন্ধু। আমি বন্ধু ভালবাসি।
সেই থেকে ফাহিমর সাথে তানিয়ার কথা বেঁড়ে চলে।
চলবে---------
আলোচিত ব্লগ
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
অভিনেতা
বলতে, আমি নাকি পাক্কা অভিনেতা ,
অভিনয়ে সেরা,খুব ভালো করবো অভিনয় করলে।
আমিও বলতাম, যেদিন হবো সেদিন তুমি দেখবে তো ?
এক গাল হেসে দিয়ে বলতে, সে সময় হলে দেখা যাবে।... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন
তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?
আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন