somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বীকারোক্তি

১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভালবাসা যে এত সহজ নয় তা কি আর এত দিনে জানতে বাকি আছে? ভালবাসা মানুষকে ছিবড়ে বানিয়ে দেয়। ও দিয়ে আগুন ছাড়া আর কিছুই হয়না, এমনি ফালতু হয় লোক। সবার এ হাল হয়না, শুধু যে ভালবাসে তার। আর ভাল তো ছেলেরাই বাসে, মেয়েরা শুধু অভিনয় করে আর যাচাই করে দেখে কার পকেট কত ভারী। যার পকেট যত ভারী প্রিয় মানুষটিকে পাওয়ার সম্ভাবনা তার তত বেশি প্রবল। আর তাই পৃথিবীর সব সুন্দরী মেয়েদের বর এক রকম, মাথায় টাক, আতেল, বেশ বড় একটা ভুরি, আর অনেক বেশী টাকার মালিক। আর গায়ের রঙ এর কথা নাহয় নাই বললাম! একটি সুন্দরী মেয়ে একটি টেকো মাথার ছেলেকে বিয়ে করতেই পারে, তাতে দোষের কিছুই নেই, তবে যদি বিয়ের কিছুদিন পরেই বিচ্ছেদ হয়ে যায়, আর গুজব রটে যে বিচ্ছেদের কারণ হল স্ত্রীর পরপুরুষে আসক্তি তবে বুঝতেই হবে ব্যাপার কিছু অন্য। আমার খুব মনে আছে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে, বাংলাদেশের টেলিভিশন দুনিয়ার তখনকার খুব বড় একজন অভিনেত্রীর বিয়ের পরে তাদের স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে খুব হইচই হয়েছিল। কারণ ছিল তাদের দুজনের গায়ের রঙ, একজনের রঙ ছিল ভরা পূর্ণিমার আলো অন্যজন যেন ভরা অমবস্যার অন্ধকার। নিন্দুকরা তখন এই অসম বর্ণের বিয়ের একটাই কারণ বের করেছিল, তা হল ওই ভদ্র লোকের খুব বেশি পরিমাণ টাকা, যা একজন সুন্দরীকে আকৃষ্ট করার জন্য অবশ্যই যথেষ্ট। ক্রিস্টাল হ্যারিস, হলি ম্যাডিসন, ব্রিজিট মারকুয়ারডট, এরা সবাই উৎকৃষ্ট উদাহরণ হতে পারে যারা তাদের স্বামী কিংবা পার্টনার মার্স্টন হফনারের অর্ধেক বয়সী অথবা তার তিন ভাগের একভাগ বয়সী। হফনারের অগাধ সম্পদ এর কারণ হতেই পারে।
আমি প্রবলভাবে পুরুষবাদী নই, পুরুষদের প্রতি আমার খুব পক্ষপাতীত্ব নেই, আবার মেয়েদেরকে আমি হিংসাও করিনা, আমি শুধু যা সত্য তাই বলে আসছি। হয়ত বার বার আঘাত পেয়েছি বলেই মেয়েদেরকে আমি আর ভালও বাসিনা, কিন্তু তাদেরকে আঘাত করে ও আমি কখনো আনন্দ পাইনি। পত্রিকার পাতায় যখন দেখি যে কোন স্বামী তার স্ত্রীকে যৌতুকের জন্য মারধর করেছে, কিংবা ধর্ষণের মত চূড়ান্ত অমানবিক কিছু যখন পড়ি তখন অন্য সব বিবেকবান মানুষের মতই আমার খুব কষ্ট হয়। মনে মনে আমি এইসব অমানুষদের খুব ঘৃণা করি। আমি সব ধর্ষকের ফাঁসি চাই, তবে শুধুই প্রকৃত ধর্ষকের।
আমি সব জানি এখন। আমি আর সেই ছোট্টটি নেই, বুড়ো হয়েছি, অনেক অভিজ্ঞতা জমা হয়েছে হৃদয়ের ব্যাংকে। চাইলেই সেই অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারি, পারি নতুন কাউকে রাণী করতে, হৃদয়ের কৃষ্ণচূড়া ফুল তো যাকে তাকে দেওয়া যায়না, খুঁজেও পাওয়া যায়না, তবে নিশোর চেয়ে হাযার গুণে সুন্দরী কাউকে নিশ্চয় পেতে পারি, কিন্তু মুশকিল হল নিশোর পরে আর কারো জন্য হৃৎপিণ্ডের গতি বেড়ে যায়নি। কারো জন্য ভালবাসা তৈরি হয়নি হৃদয়ে। একেই বলে ভালবাসা, কেউ সেধে দিলেও নেওয়া যায়না, হাযার কান্না করে মিনতি করলেও দেওয়া যায়না, আর এই অমূল্য ধনই অন্য কারো পায়ে শত অযত্ন অবহেলায় ধূলায় লুটায়, তার ফিরে তাকিয়ে দেখারও সময় হয়না। আর দাতা চিরজীবন এই ভেবেই নিদ্রা যার আর সকালে জেগে উঠে যে, এই বুঝি ধূলোর ভালবাসা বুকে ঠাই পেল, কিন্তু সে আশায় ছাই। কথায় আছে “তোমার সাথে আমার ভাব নাই, হাসলে কি হবে”।
আমি এমন একটা মেয়ে সারাজীবন চেয়ে এসেছি যে সবদিক দিয়ে আমার যোগ্য সঙ্গী হয়ে উঠবে, আমি শুধু আমার কাপড় ধুয়ে দেওয়ার জন্য কিংবা রান্না করা কিংবা আমার সন্তানের মা হওয়ার জন্য কোন মেয়ে চাইনি, কিংবা শুধু আমাকে রূপ দিয়ে ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য। আমি চেয়েছিলাম এমন একজনকে যে আমাকে সাহায্য করবে হৃদয় দিয়ে, যাকে ভরসা করতে পারব। যে আমাকে শান্তিতে ঘুমাতে দিবে। যার সাথে আমি ক্রিকেট, শরৎচন্দ্র কিংবা রবীন্দ্রনাথ অথবা লিওনেল মেসিকে নিয়ে কথা বলতে পারব, যার দৃষ্টি শুধুমাত্র জুয়েলারির দোকানেই থাকবে না, বরং আমি যখন বাসায় থাকবনা তখন সেই সময়টা সে কাজে লাগাবে বই পড়ে। আমি নিশোকে ভেবেচিলাম তেমন, বলেছিলাম অনেক বই কিনে দিব। আলাদা একটা রুম করে দিব শুধুমাত্র বই পড়ার জন্য। সেখানে একটা ল্যাপটপ থাকবে, নিশো অবসরে পছন্দের মুভি আর নাটক দেখবে, আমির খান ওর খুব প্রিয়, আমি ভেবেছিলাম আমির খানের সব মুভি সংগ্রহ করে দিব। ও অনেক বই পড়ত, কিন্তু বই আর আমার চেয়ে ওর কাছে অন্য একজনকেই বেশী ভাল লেগে গেল। আমার তখন টাকা ছিল না, বাবা-মা হারা এক ছেলে যার কোন ভবিষ্যৎ নাই। আর সে চিরাচরিত মেয়েলী মনের কথাই শুনল, আর মেয়েদের মন তো শুধু নগদ লাভ মানে টাকাই চিনে, এ ছাড়া আর কিছু নয়। নিশো এতদিনে হয়ত বুঝে গিয়েছ, টাকা আর সমাজের সম্মান ছাড়াও আরো অনেক কিছু নিয়েই ভাল থাকা যায়। আত্মসম্মান আর ভালবাসা দিয়ে শান্তির একটা ঘর বানানো খুব সহজ, সে ঘর হয়ত ইটের হবে না, সেখানে হয়ত সেগুন কাঠের খাট থাকবেনা কিন্তু শান্তি থাকবে তা নিশ্চত ভাবেই বলা যায়। সে ঘরের ভিত্তি হবে বিশ্বাস, ভালবাসা আর আত্মসম্মান। আর টাকা সম্মান দেয় হয়ত, কিন্তু মানুষের মনে শান্তি দিতে পারেনা। আমি এটা মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি।
নিশোকে আমি ভালবাসা দিতে পারতাম অফুরন্ত। কোন কমতি হত না। আমাদের ঘর হয়ত খুব দামী হত না, কিন্তু আমাদের সম্পর্কটা হত খুব দামী। কথার অভাব দেখা দিত না। আমি সব কষ্ট সয়েও হাসতে পারতাম নিশোর মুখের এক টুকরা হাসির জন্য। নিশো তুমি জানোনা, তোমাকে বলার সু্যোগ কখনো হয়নি, তোমার হাসিটা খুব সুন্দর, তোমার স্বামী খুব ভাগ্যবান, প্রতিদিন তোমার হাসিমুখ দেখার দুর্লভ সৌভাগ্য তার হয়। কিন্তু আমি নিশ্চিত যে, অমূল্য হাসিটার সম্মান আমার মত দিতে পারেনা কারণ টাকা দিয়েতো এ হাসির মূল্য পরিশোধ করা যাবেনা। এ হাসি যে পেয়েছে আর চিনতে পেরেছে তার জীবন ধন্য, একজীবনে আর কি প্রয়োজন হতে পারে? তবে মানব মন বড়ই অদ্ভূত, আমি পাইনি বলেই হয়ত স্বরণ রেখেছি, আর যে পেয়েছে সে হয়ত এটাকে বড় কোন পাওয়া মনেই করেনা। নিশোকে আমি মাঝে মাঝে এটা বলতাম, যে তুমি আমায় ভালবাসনি বলেই হয়ত তোমাকে এত করে চাই, পেয়ে গেলে হয়ত এর উল্টোটাও হতে পারত। তবে এখন মনে হয় নিশোকে আমি ভুল বলতাম, কারণ আমি যে আজো ভুলতে পারিনি নিশোকে, পেলেও হয়ত এমন ভাবেই শ্রদ্ধা করতাম আর ভালবাসতাম। কি অদ্ভূত, তাই না?
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুন, ২০১৬ রাত ৩:৪০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×