somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

১৪ ফেব্রুয়ারী এবং আমরা

১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ২:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১৪ ফেব্রুয়ারী এলেই যেন আমরা বাঙ্গালীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাই, একদল খোঁজে ভালবাসার জন্য একটি নিরাপদ আশ্রয় আর একদল ব্যস্ত ভালবাসার নিন্দায়! প্রথম দল সঙ্গী-সঙ্গীনিদের ভালবাসায় সিক্ত আর দ্বিতীয় দল ভালবাসা বঞ্চিত, কি অদ্ভুত তাই না?
আমাদের আচরণ সত্যিই খুব অদ্ভুতুড়ে। আমরা অন্তরে ভালবাসার কাঙ্গাল আর বাইরে প্রকাশ করি যেন জগতের সবচেয়ে বিশুদ্ধবাদী আমি। ভালবাসা, সে তো চিরকালীন এক আক্ষেপের নাম, তাই বলে কি যে বঞ্চিত সে সব সময় সুবিধাপ্রাপ্তদের বিরোধীতা করেই যাবে?
গত কয়েকদিন ধরে ফেইসবুক কিংবা অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে লিটনের ফ্ল্যাট, লিটনের ফ্ল্যাট বলে যুগলগুলোকে যেভাবে ব্যাঙ্গ করা হচ্ছে তা সত্যিই অগ্রহণযোগ্য। যেন কেউ তার প্রেমিক-প্রেমিকাকে নিয়ে কোন বন্ধু বান্ধবীর ফ্ল্যাটে গেলেই পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে কিংবা যারা সমালোচনা করে তারা সু্যোগ পেলেও এসব করবে না!
ঐতিহ্যগত ভাবেই আমাদের সমাজ অতিরক্ষণশীল। আমাদের সমাজপতিরা কোন পরিবর্তনের পক্ষপাতী নয়, যে নিয়ম যে নীতি চলমান তা ধরে রাখতেই তারা বেশী আগ্রহী। কিন্ত গত কয়েক বছর জুড়েই ভালবাসা দিবস নিয়ে আপত্তিটা মূলত করে আসছে তথাকথিত শিক্ষিত, যুবক বিশুদ্ধবাদীরা, যার একদা তাদের পছন্দের মানুষদের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত বা প্রতারিত হয়েছিল। কখনো ধর্মের নামে কখনো বা নৈতিকতার নামে এই প্রতিবাদ-প্রতিরোধ।
আমাদের দেশের সিঙ্গহভাগ মানুষ মুসলমান, আর ইসলামে পরনারী-পুরুষের মাঝে মিলন, দেখা-সাক্ষাত এমনকি অপ্রয়োজনে কথা বলাও নিষেধ। অত্যন্ত উত্তম কথা, কারণ ধর্ম কারো প্রতি বিরুপ নয় কিংবা কারো বিরোধীতা করার জন্য ধর্ম সৃষ্টি হয়নি। সমাজের মানুষ যাতে করে ভালো থাকতে পারে সেজন্যই ধর্মের উৎপত্তি।
ইসলামের একটি বিধান হলো, সন্তান উপযুক্ত হলে তাকে অবশ্যই বিয়ে দিতে হবে, বিয়ের কথা পাকা করার আগে অবশ্যই পাত্র-পাত্রীকে পরিস্থিতি বুঝিয়ে বলে তার মতামত আদায় করতে হবে। আর একাজটি পিতা-মাতার জন্য অত্যন্ত সম্মানের, পবিত্র এবং আনন্দের একই সাথে অত্যন্ত কঠিন । কারণ সব মাতা-পিতাই চান সন্তান উপযুক্ত মানুষটির সাথেই ঘর-সংসার করুক, ভাল থাকুক। কিন্তু আমাদের অভিভাবকরা বুঝতে ভান না যে ভাল থাকার জন্য সবচেয়ে প্রয়োজন ভালবাসার। এই জায়গাতেই আমাদের অভিভাবকরা ভুলগুলো করে ফেলেন, হয় তারা বিয়েতে সন্তানের মতামতের কোন পাত্তা দেন না, নয়ত ভালমানুষ খোঁজার জন্য শুধু ধন-দৌলতকেই প্রাধান্য দেন, ভালবাসাটি অধরাই রয়ে যায়। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই বিয়ের নামে যা হয় তা একধরণের ধর্ষণ, কারণ বিয়েটা সামাজিক, মানসিক এবং শারীরিক। বিয়ের ক্রমধারাটি হওয়া উচিৎ মানসিক-সামাজিক-শারীরিক, কিন্তু আমরা সরাসরি শরীরে পৌঁছাই। ভালবাসার জন্য সময় দরকার, মন থেকে কাউকে মেনে নেওয়ার জন্য পরস্পরকে বুঝতে পারা দরকার। কিন্তু কোন বিয়েতেই পাত্র-পাত্রী উপযুক্ত সময় পান না। আমরা বিয়ের নামে ধর্ষণ মেনে নিতে পারি কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারী নিয়ে খুব সমস্যা! আমি এমন বিয়েকে ধর্ষণই বলব কারণ কয়টা বিয়ে হয় পরস্পরের সম্মতিতে আর কয়টা বিয়েতে মেয়ে কিংবা ছেলে অভিভাবকের ভয়ে বিয়েতে রাজী হয় সে বিচারের ভার না হয় আপনাদেরই দিলাম, তার অচেনা-অজানা একজনকে মেনে নেয় শারীরিক ভাবে কিন্তু মন পরে থাকে সুদূর অতীতে! যেখানে অন্য একজন বিরহ ব্যাথায় কাতর।
হিন্দুরা তুলনামূলক ভাবে উদার মানসিকতাসম্পন্ন, কিন্তু ভালবাসার ব্যাপারে তারাও একচোখা! হিন্দুদের ঘরে ঘরে রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি দেখা যায়। তাদের যুগল মূর্তি রাখার কারণ তারা পরস্পরকে ভালবাসতেন। হিন্দুরা কৃষ্ণকে ভগবান হিসেবে পূজা করে কিন্তু তাকে ভালবেসে যে ফতুর হয়েছে সেই রাধাকে বলে কূলটা, কুলত্যাগিনী। কি অদ্ভুত বিচার! দোষ যদি কেউ করে থাকে সে তো কৃষ্ণ করেছে, সেই তো রাধাকে প্ররোচিত করেছিল পাপ পথে আসার জন্য, আর কার্য সিদ্ধির পরে বাদামের খোসার মত ফেলে চলে গিয়েছিল, তাই না? আমরা কৃষ্ণকে ভগবান হিসেবে মেনে নিয়েছি কিন্তু বর্তমানে যারা কাউকে ভালবাসে কিংবা আপনজনের আবদার মেটানোর জন্য কারো বাসায় যায় তাদেরকে করে দিচ্ছি অচ্ছুৎ! আমরা কত মহান!
উপরের দুটি উদাহরণ কোন ধর্মকে খাটো করার জন্য না, এর এগুলো ধর্মের দোষ-ত্রুটি ও না। এগুলো আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির বিষয়, ইসলাম কিংবা হিন্ধু ধর্ম বলে দেয়নি আমাদের এসব করতে!
আমি এখানে হিন্দু-মুসলিমদের ভুল-ত্রুটির সমালোচনা করার জন্য বসিনি, বসেছে ১৪ ফেব্রুয়ারীর নামে যাদের নাক কুঞ্চিত হয়ে তাদেরকে বলার জন্য যে, ভালবাসার জন্যে পরিবেশ তৈরি করুন, সমাজ থেকে বখাটে উৎখাত করুন, পাড়ার মোড়ে আড্ডা বন্ধ করুন, তাহলেই দেখবেন তথাকথিত লিটনের ফ্ল্যাটের খোঁজ কমে যাবে, আর কেউ যদি ভালবেসে তার ভালবাসার মানুষটিকে তার সবচেয়ে মূল্যবান সামগ্রীটি উপহার দেয়ই তাতে আপনার আমার কি সমস্যা? একজনের বিশ্বাসের কিংবা ভালবাসার কেউ হতে পারাওতো বিরাট যোগ্যতা, আপনার আমার সেই যোগ্যতা নেই বলেই কেউ ভালবাসেনা, আসুন চেষ্টা করি কারো ভালবাসার মানুষ হতে, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে!
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৩:৩৫
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×