somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাকীত্ব-১

২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল একজন সঙ্গিনীর খুব অভাব বোধ হয়। এই ৫৫ বছরের শরীরটা যে আজকাল একটু উষ্ণতা চায়। রাতে ঘরে ফিরে সেই শুন্য, ঠান্ডা, এলোমেলো বিছানা, অন্ধকার ঘর, শুন্য রান্নাঘর, শুন্য ফ্রিজ, সুনসান নিরব কামরা আর যে সহ্য হয়না। শরীরটা চায় কোন একটি কোমল হাতের স্পর্শে ধন্য হতে, রাতের অন্ধকারে, ঘুমের মাঝে অচেতন মনে দুটি হাত যেন জড়িয়ে ধরে।
সারাটা জীবন আমি একাই রয়ে গেলাম, জন্মের পরপরই মা-বাবা এই স্বার্থপর দুনিয়াতে একা রেখে চোখ সেই যে বন্ধ করেছিলেন, এই চর্মচক্ষে আর তাদের দেখিনি। এর পরে শুধু হোঁচট খেয়ে গেলাম এই জীবনভর, কিন্তু একসময় রুখে দাঁড়ালাম, এই পৃথিবীকে নিজের করে নিলাম, নিজের রাজত্ব কায়েম করলাম।
আমি ভেবেছিলাম সব পেয়েছি। কিন্তু ভুলে গিয়েছিলাম দুনিয়া শুধু ত্রাস-ভয় দিয়ে জয় করা যায় কিন্তু তাতে নিজের কিছুই থাকেনা। আমিও একসময় এই সত্যটি বুঝতে পেরেছিলাম, কিন্তু পিছনে ফিরে দেখি আমি আর তোমাদের সেই ভদ্র সমাজের হিস্যা হতে পারব না, সেই রাস্তাটি অনেক পিছনে ফেলে এসেছি, আর যে ফিরে যাওয়া যায়না। তাই একাই রয়ে গেলাম। একদিক থেকে ভালোই হয়েছে, পৃথিবীতে এক এসেছি, একা রয়েছি, একাই চলে যাব একদিন সবার অগোচরে। এটাইতো আমি চেয়েছি সারাজীবন ধরে, সবার অলক্ষ্যে থাকা!
আমিও তোমাদের মতই ছিলাম, শান্ত আর সহজ সরল। কিন্তু এই পৃথিবীটা খুবই স্বার্থপর। বেঁচে থাকতে হলে অন্যকে মারতে হবে, প্রয়োজন না থাকলেও, তবেই শুধু বেঁচে থাকা যাবে নয়ত শক্তিশালী কেউ পিষে ফেলবে। আর আমি, অন্যের পিষে ফেলা রোধ করতে গিয়ে কতজনকে যে নিজে পিষে, গুড়ো করে দিয়েছি তা আর নাইবা বললাম!
জীবনের এই দীর্ঘ যাত্রাকালে অসংখ্য নারী শয্যা সঙ্গীনি হয়েছে, কেউ স্বেচ্ছায় টাকার বিনিময়ে আর কেউ হয়তোবা নিজে আমার রোষানল থেকে বাঁচতে কিংবা আপন কাউকে বাঁচাতে। আজ সবার নাম মনে নেই, সংখ্যাটিও নিশ্চিত করে বলে দিতে পারবো না। নিন্দুকেরা বলে সহস্র, আমি বিরোধীতা করিনি কখনোই। সবার স্মৃতি ভুলে গেলেও কোন কোন বারবণিতা আমার স্মৃতির মানসপটে এখনো অমলিন, এই যেমন উত্তরার নাফিসার সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা, বনানীর এক হোটেলে পরিচয় হওয়া মিতু, কামাল ভাইয়ের বাসার ভরাট বুকের সেই মেয়েটি কিংবা অনন্যা, আঁখি, আরো অনেকেই। ওরা হয়ত ভুলে গিয়েছে আমাকে, কিন্তু আমি ভুলতে পারিনি। ওরা সবাই আমাকে দেহ দিয়েছে, সময় দিয়েছে কিন্তু কারো মনের নাগাল কখনোই পাইনি, কেউ বুঝতে পারেনি যে আমার এই পাষাণ দেহেও একটি কোমল মনের বাসা রয়েছে। কিন্তু এখন, আজ দীর্ঘ রজনীর পরে, মনে হচ্ছে সব ভুল ছিল, নশ্বর দেহ হয়ত সাময়িক আনন্দ দেয় কিন্তু একসময় এই আনন্দময় স্মৃতিই চোখে আঙ্গুল দিয়ে নিজের অন্ধকার অতীত মনে করিয়ে দেয়।
যৌবনে কি ভেবেছিলাম যে আমার এই সারাটি জীবন শুধু শুন্যতার মাঝেই কেটে যাবে? একদম না। তখন মনের কোণে একটা সুপ্ত বাসনা ছিল, হয়ত কোন একরাতে লাল বেনারসি গায়ে জড়িয়ে, নিজেকে গুটিয়ে নিয়ে, ফুলে ফুলে সাজানো সারা বিছানা খালি রেখে এক কোণে আমার জন্য অপেক্ষা করবে অর্ধ প্রস্ফুটিত একটি গোলাপ। আমার বুকেই সে প্রথম তার সবগুলো পাপড়ি মেলে দিয়ে নিজেকে আমার পায়ে সঁপে দিবে, গোলাপের কাঁটার আঘাতে আমার পিঠ আর গলা ক্ষতবিক্ষত হবে, সদ্য প্রস্তুত বিছানা পরিত্যক্ত যুদ্ধক্ষেত্রের ন্যায় গোলাপের নির্যাসে রঞ্জিত হবে। আর সে গোলাপ, যদিও তার সবগুলো পাপড়িতে ভ্রমর বিচরণ করবে সেদিন, ব্যাথায় সারা শরীর রক্তাভ হবে কিন্তু তার প্রফুল্লতা হারিয়ে যাবে না। কিন্তু মানুষ ভাবে এক আর হয় এক, গোলাপ অনেক আমার এ পায়ে লুটিয়ে পরেছে, কিন্তু কখনোই বেনারসি ছিল না গায়ে, পাপড়ির ভাঁজ খোলার জন্য কাউকে সাধ্য-সাধনা করতে হয়নি, এমন তো আমি চাইনি


(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে এপ্রিল, ২০১৭ রাত ১১:৪৪
৫টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×