somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একাকীত্ব-৪

১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানো, এই পৃথিবীতে মানুষ শুধুই একজনের অপরাধ দেখে, তাকে ঘৃণা করে, তাকে শাস্তি দেয়। খুব কম মানুষ আছে যারা অপরাধীর অপরাধের কারণ জানতে চায়, তাকে এই অন্ধকারের রাজত্ব থেকে ফিরিয়ে আনতে চায়। সব মানুষ ভালবাসা চায়, আপনজনের মাঝে থাকতে চায়, নিজের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করতে চায় প্রিয় মানুষের সাথে, কিন্তু সবাই কি পারে?
আমিও কখনোই ভালবাসা পাইনি, জ্ঞ্যান হওয়ার পরে থেকেই হাজারো লাখো মুখ দেখেছি, কিন্তু সেই কিশোর বয়সেই বুঝেছিলাম এরা কেউ আমার আপন নয়, আমার আপন শুধুই আমি, আমিই আমার, আর কেউ নয়। আর জীবনের চলার পথে এতগুলো বছর কাটিয়ে দিয়ে এখন আমি বুঝতে পেরেছি পর আর আপনের মাঝে পার্থক্য। বুঝেছি অর্থ সব করতে পারে কিন্তু কারো অন্তরের ভালবাসা কিনতে পারেনা। এই সত্যটি বুঝেছি মামুন ভাইয়ের বিয়ের পরে, শুনবে নাকি সে গল্প?
মামুন ভাই, আমাদের মতই অন্ধকারের বাসিন্দা এখন, রাতের পাখি! উত্তরার ৯ নং সেক্টরে পৈত্রিক বাড়ি, বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। মামুন ভাইয়ের বাবা মান্নান কাকা আবাসন ব্যবসায়ী ছিলেন, সমগ্র দেশ জুড়ে অসংখ্য দৃষ্টিনন্দন এপার্টমেন্ট নির্মান করেছে তাদের প্রতিষ্ঠান। মামুন ভাই রাজউকের ছাত্র ছিলেন, পরবর্তিতে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে রাস্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনা করেছেন। আমার ৩ ব্যাচ সিনিয়র। উচ্চ-মাধ্যমিকেই তার সাথে আমার সুসম্পর্ক তৈরি হয়েছিল। খুব অল্প বয়স থেকেই বাবার ব্যবসায়ে হাত লাগিয়েছিলেন, আর অনার্স শেষ করার আগেই ঝানু ব্যবসায়ী রুপে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন।
আমি তখন সবে অন্ধকারে পা বাড়িয়েছি, দু-একটি কিলিং মিশনে সহযোগী ছিলাম কিন্তু তখনো হাতে পিস্তল নেওয়ার অনুমতি পাইনি। তখন অনেক অনেক সন্ধ্যা কাটিয়েছি মামুন ভাইয়ের উত্তরার অফিসে। আমাদের যে গ্রুপটি ছিল তাদের মধ্যে একমাত্র ব্যতিক্রম ছিল মামুন ভাই। অনেক ভাল স্টুডেন্ট ছিলেন, আর সুদর্শন তো ছিলেনই। অনেক অনেক মেয়ে তার প্রতি আগ্রহ দেখালেও কেন জানিনা তিনি এদেরকে এড়িয়েই চলতেন। হয়ত স্থায়ী ভালবাসার খুঁজে চলার পথের পাশের ফুলগুলোর ঘ্রাণ নিতে অপারগ ছিলেন!
সে যাই হোক, অনার্স শেষ করার পরেই মামুন ভাই পুরোপুরি ব্যবসায় সময় দেওয়া শুরু করেন অনেকটা বাধ্য হয়ে। তিনি ছিলেন তার বাবা মায়ের অনেক বেশি বয়সের সন্তান, সঙ্গত কারণেই তখন মান্নান কাকার বয়স অনেক, আর এত বড় ব্যবসায় দেখাশুনা করা তখন তার পক্ষে বেশ কঠিন হয়ে পরেছিল। ব্যস মামুন ভাই ফুলটাইম অফিসে। তখনি তার বাবা মা সিদ্ধান্ত নিলেন ছেলের বউ আনবেন ঘরে, পাত্রি বেশ কয়েকটা দেখা হয়ে যাওয়ার পরে উত্তরখানেএ এক মেয়েকে পছন্দ হলো তাদের। ফাহিমা, রাজউকের উচ্চ-মাধ্যমিকের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। বেশ সুন্দরী, মামুন ভাইয়ের ও খুব পছন্দ হয়েছিল। মান্নান কাকা তার একমাত্র ছেলের বিয়েতে ব্যয়ের কোন সীমা রাখেননি। নতুন বউকে ৪৮ লাখ টাকা দিয়ে হীরার নেকলেস কিনে দিয়েছিলেন শুনে আমরা তাজ্জব হয়ে গিয়েছিলাম। শুধু তাই নয়, ১৫ ভরি স্বর্ণের অলংকার আর ব্রান্ড নিউ নিশান গাড়ী ছিল উপহার।
১১ মে তাদের বিয়ে হয়েছিল, ১২ তারিখ রাতে বাসর। ১৫ তারিখ বিকেলে বউ উধাও! ১৬ তারিখ ভোরবেলা আমার বাসায় এসে হাজির মামুন ভাই, চেহারা দেখে ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম স্বীকার করতে লজ্জ্বা নেই। যে চার দিন বউ ছিল, তখন তার চেহারায় যে আনন্দের ছাপ দেখেছিলাম এখন তার বিপরীত। বললেন ফাহিমা আগের দিন বিকাল থেকে বাসায় নেই, বাপের বাড়িতেও নেই। জীবন সম্পর্কে তখনি আমার এত তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল যে, শুনার পরেই আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে এই মেয়ে নির্ঘাত কারো হাত ধরে পালিয়ে গিয়েছে। কিন্তু সামনে বসা মামুন ভাইকে কি করে বলি যেখানে তিনি বলছেন কেউ টাকার জন্য তার বউকে কিডন্যাপ করেছে। কিন্তু আমার বিশ্বাস হচ্ছিল না, কেউ যদি টাকার জন্যই কিডন্যাপ করবে তাহলে মামুন ভাই সবচেয়ে সহজ এবং যুক্তিসংগত টার্গেট।
মামুন ভাই বেশ কিছু টাকা আর তার একটা ডেবিট কার্ড আমার দিকে বাড়িয়ে দিলেন, যেন আমি কিছু করি। আমি তার হাত ভর্তি টাকা আর কার্ড ফিরিয়ে দিলাম এবং তখনি আমার অন্ধকারের বন্ধুদের জানিয়ে দিলাম সব। ভাইকে নিয়ে সকালে নাস্তা করলাম, বাসায় পৌঁছে দিয়ে আমিও বের হলাম। উত্তরায় যারা সম্ভাব্য অপহরণকারী তাদের অনেকের সাথে সশরীরে যোগাযোগ করলাম। কিন্তু কেউ কিছু জানে না, সকাল গড়িয়ে বিকেল হল, তার পরে এল রাত। এভাবেই উদ্বেগের ভিতরে কেটে গেল কয়েক দিন, ২১ তারিখ সকালে আমার বাসার টেলিফোন বেজে উঠলো। কক্সবাজার থেকে আমার এক কলিগের ফোন, কাংখিত মানুষকে পাওয়া গিয়েছে, সাথে এক নাগর!

(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৪৭
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

নারী একা কেন হবে চরিত্রহীন।পুরুষ তুমি কেন নিবি না এই বোজার ঋন।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১২:৫৪



আমাদের সমাজে সারাজীবন ধরে মেয়েদেরকেই কেনও ভালো মেয়ে হিসাবে প্রমান করতে হবে! মেয়ে বোলে কি ? নাকি মেয়েরা এই সমাজে অন্য কোন গ্রহ থেকে ভাড়া এসেছে । সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুসলিম কি সাহাবায়ে কেরামের (রা.) অনুরূপ মতভেদে লিপ্ত হয়ে পরস্পর যুদ্ধ করবে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৯




সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৫। তোমরা তাদের মত হবে না যারা তাদের নিকট সুস্পষ্ট প্রমাণ আসার পর বিচ্ছিন্ন হয়েছে ও নিজেদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করেছে।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদে মসজিদে মোল্লা,ও কমিটি নতুন আইনে চালাচ্ছে সমাজ.

লিখেছেন এম ডি মুসা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

গত সপ্তাহে ভোলার জাহানপুর ইউনিয়নের চরফ্যাশন ওমরাবাজ গ্রামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। লোকটি নিয়মিত মসজিদে যেত না, মসজিদে গিয়ে নামাজ পড়েনি, জানা গেল সে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী ছিল, স্বীকারোক্তিতে সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=সকল বিষাদ পিছনে রেখে হাঁটো পথ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৮



©কাজী ফাতেমা ছবি

বিতৃষ্ণায় যদি মন ছেয়ে যায় তোমার কখনো
অথবা রোদ্দুর পুড়া সময়ের আক্রমণে তুমি নাজেহাল
বিষাদ মনে পুষো কখনো অথবা,
বাস্তবতার পেরেশানী মাথায় নিয়ে কখনো পথ চলো,
কিংবা বিরহ ব্যথায় কাতর তুমি, চুপসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×