somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সেই কান্না (পর্ব ৬)

০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই কান্না (ভৌতিক গল্প)
সেই কান্না (ভৌতিক) ২য় পর্ব
সেই কান্না (পর্ব ৩)
সেই কান্না (পর্ব ৪)
সেই কান্না (৫ম পর্ব)

এগারো

বাবা মারা যাবার পর থেকেই আমি ও আমার মা শহীদের বাড়িতে থাকছিলাম। আমাদের গ্রামের বাড়িতে থাকতে একেবারেই সাহস পাচ্ছিলাম না। গ্রামের অন্যান্য লোকজন প্রকাশ্যে আমদের সাহায্যে আসছিলনা আমার চাচাদের ভয়ে। এখানে থেকেও মা সস্তি পাচ্ছিলেন না।আমারও ঢাকায় চলে যেতে ইচ্ছে করছিল। আমাদের গ্রামের লোকজনের সাহায্যের আশায় এখানে আছি। জমির দাবি দাওয়ার ব্যপারে গ্রামের কিছু লোক আমাদের সাহায্য করতে চেয়েছিল।
ঢাকা ফিরে আসার আগের দিন সন্ধ্যার পরে বেশ কিছুক্ষণ মাঠের ধারে শহীদের বন্ধুদের সাথে গল্প গুজব করলাম। শহীদের আসার কথা ছিল। কেন আসেনি তা জানিনা। সকাল থেকেই কেমন মন মরা হয়ে বসেছিল। ওর বাবার সাথে একেবারেই কথা বলছিলনা। আমাকেও কিছু বলছিলনা। কি ভেবে গল্পের আসর থেকে উঠে গিয়ে শহীদের বাড়ির দিকে গেলাম। ওদের বাড়ির সামনে আসতেই শহীদের চিৎকার চেচামাচির আওয়াজ পেলাম। আমি দৌড়ে বাড়ির ভেতরে যেয়ে দেখলাম শহীদকে ওর মা জাপটে ধরে আছে আর ওর হাতে বেশ বড় একটা রামদা উঁচিয়ে ধরা ছিল। আমকে দেখে শহীদের মা হাতের বাধন শিথিল করতেই শহীদ ঠিক উলটো দিকের দরজা দিয়ে ভোঁ দৌড় দিল। আমিও কিছু না বুঝেই ওর পিছুপিছু দৌড় দিলাম, পেছন থেকে শুধু ওর মায়ের চিৎকার শুনলাম “বাবা ওরে ঠেকাও”। আমি ওর পায়ের আওয়াজের আন্দাজে দৌড়চ্ছিলাম আর চিন্তা করছিলাম আমার মা ঘরে থাকার পরেও কেন শহীদকে ঠেকানোর চেষ্টা করছিলোনা কিংবা শহীদের মাকে সাহায্য করছিলোনা।। হাতে রামদা নিয়ে রাগের মাথায় ঘর থেকে বের হওয়াটা সবসময়ে বিপদের কারণ হতে পারে।
আমি পেছন থেকে চিৎকার চেঁচামেচি করেও শহীদকে থামাতে পারলামনা, দৌড়েও ওর সাথে পেড়ে উঠলাম না। ওকে হাড়িয়ে ফেলার পরেও মিনিট খানেক দৌড়লাম। আর তাতেই রাস্তা হাড়িয়ে ফেললাম। চারদিকে শুধু বাঁশ ঝাড় দেখতে পাচ্ছিলাম। মোবাইলের আলোতেও এখানকার অন্ধকার কাট ছিলনা। আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম। চিৎকার দিয়ে শহীদকে ডাকতে যাব ঠিক তখনই আমার পাশ দিয়ে কিছু একটা ছুটে গেল। আমার বুকটা ধক্ করে উঠল। আমি একটা বাঁশকে শক্ত করে ধরলাম। তারপর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলাম।
মিনিট খানেক এভাবে দাঁড়িয়ে থাকার পর কিছু লোকের কথার আওয়াজ পেলাম। আমি তাদেরকে ডাকতে যেয়েও থেমে গেলাম। যারা আমার এই দিকে আসছিল তাদের মধ্যে থেকে আমার বড় চাচার গলার আওয়াজ পেলাম। তিনি কাউকে বলছিলেন, ‘আরিফ্যা শয়তানটারে দেখছসনিরে’। পাশ থেকে কেউ বলল ‘না চাচা, তয় এইদিকে আসার আওয়াজ আমি পাইছি’। আবছা আলোয় দেখলাম তাদের তিনজনের হাতেই দেশী অস্ত্র। আমার আর বুঝতে বাকি রইল না, ওরা সন্ধ্যার পর থেকেই আমাকে মেরে ফেলার জন্য ফলো করছিল। আমি নিজেই একা হয়ে ওদের কাজটা সহজ করে দিলাম। মনে মনে ভাবছিলাম তারা যেন এইদিকে না আসে। কিন্তু আমার চিন্তার বিপরীত হতে লাগল। ওরা আমার দিকে আসতে লাগল।আমি দৌড়ানোর কোন চেষ্টা করলামনা। কারণ তাতে লাভ নেই, চারদিকে বাঁশের শুকনো পাতা পরে আছে। একটু নড়াচড়া করলেই টের পেয়ে যাবে, আর ওরা সংখ্যায় কতজন তাও আমি জানিনা। আমার কাছ থেকে প্রায় বিশ হাত দুরে তারা, আস্তে আস্তে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। শুকনো পাতার মচ মচ শব্দ আরও গভীর থেকে গভীরতর হচ্ছে। এখনো তারা আমায় দেখতে পায়নি, কিন্তু খুব কাছে আর খুব অল্প সময়ের মধ্যে হয়তবা ওরা আমাকে পেয়ে যাবে। ঠিক তখনি ওদের মাঝ থেকে কেউ কোন কিছুর সাথে পা বেধে গিয়ে ধপাস করে পরে গেল। আঘাত পেয়ে সাথে সাথে ‘মাগো’ বলে মাঝারি ধরনের চিৎকার দিল। চিৎকারের সাথে সাথেই চারদিকে যেন হুলুস্থুল বেধে গেল। কি যেন এদিক ওদিক দৌড়াতে আরম্ভ করল। মাথার উপরের বাঁশ গুলো থেকে অনেকগুলো পাখি একসাথে উড়ে গেল। আমিও সুযোগ বুঝে চুপচাপ একটা গর্তের মত জায়গায় কাত হয়ে শুয়ে পড়লাম।

বার

তীব্র শীত আর মাটির ঠাণ্ডায় শরীর বরফ হবার যোগার, তার সাথে মৃত্যু আতঙ্ক ত আছেই। সে আতঙ্কে কখনো কখনো সারা শরীর দিয়ে ঘাম ঝরছে। তা আবার ঠাণ্ডা বাতাসে শরীরকে আরও শীতল করে তুলছে।
কিছুক্ষণ আগেও আমি ভেবেছিলাম হয়তবা আমার চাচার লোকজন চলে গেছে। কিন্তু আমার ভুল ভাঙ্গল, ওরা আবার ফিরে এসেছে। ভাগ্যিস আমার গাছের উপর থেকে পাখিগুলো চলে যাবার সময় বাঁশের অনেকগুলো শুকনো পাতা ফেলে দিয়ে গেছে। তাতে আমার শরীরটা প্রায় ঢাকা পরেছে। তাতেও যথেষ্ট ছিলনা, যেভাবে আমাকে খোজা হচ্ছে তাতে ধরা পরে যাবার আশংকা ছিল। ভাগ্য ভাল পাখিগুলো আবার ফিরে এসে বাঁশের উপরে বসেছে, তাতে আমার উপরে আরও কিছু পাতা পরেছে।
লোকগুলো হতাশ হয়ে চলেই যাচ্ছিল। হঠাৎ করেই আমার পায়ে একটা পিপড়া কামড়ে বসল। আমি সহ্য করতে না পেরে হাত দিয়ে ওটাকে সরাতেই শুকনো পাতার কড়মড় আওয়াজ হল। তাতেই একজন লোক পেছন ফিরে তাকিয়ে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আবার চলে গেল, কিন্তু আমি আগের মতই চুপচাপ শুয়ে থাকলাম। এভাবে বেশ কিছুক্ষণ কেটে গেল। আমি রাস্তা হারিয়ে বসেছি, আবার শহীদ কোথায় গেল কিংবা আমার মায়ের উপরেও ওরা হামলা করবে কিনা তাও চিন্তা করছিলাম। হঠাৎ করেই আমার চিন্তায় ছেদ পরল। মনে হল কেউ যেন আমাকে ‘আরিফ’ ‘আরিফ’ বলে ফিস ফিসিয়ে ডাকছে। আমার দৃষ্টি যতদূর গেছে তাতে আমি কাউকে খুঁজে পেলামনা। ভয় হল, এবার আবার কোন বিপদে পরলাম কে যানে।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৬ রাত ৮:২৫
৫টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×