somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মন থেকে বলি
আদ্যন্ত গৃহী। বইপোকা। লেখালিখিটা প্যাশন; তেমন বাছবিচার না থাকলেও থ্রিলার আর হরর জনরাতে স্বাচ্ছন্দ্য বেশি। অল্প বিস্তর ছবিয়ালও। ইন্সটাতে shajus shot হিসেবে পাবেন। মুভি দেখতে ভালো লাগে, ভালো লাগে খোলা আকাশ, সাগরের পাড়ে চুপ করে বসে থাকা আর নিস্তব্ধতা। প্রিয়

সিনেমার আয়নায় "জুলি অ্যান্ড জুলিয়া"

২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আপনি কি সফল? জীবন নিয়ে ভীষণরকম ইতিবাচক? উৎসাহে সারাক্ষণ টগবগ করে ফুটছেন?

গল্পটা তাহলে আপনার জন্য নয়। কারণ খুব সম্ভবত গল্পটা আপনি আগেই জানেন।

তাহলে এই গৌরচন্দ্রিকা কেনো? বলছি। তার আগে বলেন দেখি, আপনার কি নিচের যে কোনো একটা লাইনও মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে?

ক। কিচ্ছু করতে ভাল্লাগে না।
খ। ও কত কিছু পারে আর আমি কিছুই পারি না।
গ। I am finished.
ঘ। বয়স চলে গিয়েছে। আর কী করবো?
ঙ। ধুর! লোকে কী বলবে?
চ। যা-ই করি, হবে না; আমি বুঝে গিয়েছি।
ছ। বাব্বাহ! এটা পারার মতো মাথা আমার নেই।

কী বললেন? আপনারও মনে হয়।

বাহ…! তাহলে তো হয়েই গেলো। গল্পটা একদমই আপনার জন্য।

শুনবেন না-কি, গল্পটা?


দৃশ্যপট-এক। সময়টা ১৯৪৯ সাল। স্থান - প্যারিস। জুলিয়া চাইল্ড হঠাৎ আবিষ্কার করলো, জীবনটা বড্ড একঘেয়ে, বড্ড boring হয়ে গিয়েছে। একটা জীবন এভাবেই সাদামাটাভাবে হয়তো কাটানো যেতো কিন্তু জুলিয়া ঠিক করলো, সময়টা কাটানোর জন্য হলেও নিজেকে একটু বাজিয়ে দেখবে। তো কী করা যায়? প্রথমে গেলো হ্যাট বানানো শিখতে। ভাল্লাগলো না। গেলো ব্রিজ খেলা শিখতে। সেটাও পোষালো না। জুলিয়া বুঝতে পারছিলো ওর আসলে সেটাই করা দরকার যেটা করতে ওর সবচেয়ে ভালো লাগে - নিত্য নতুন রান্না। যে-ই ভাবা, সে-ই কাজ। জুলিয়া ভর্তি হয়ে গেলো একটা রান্নার স্কুলে। রান্না করতে করতেই আরেকটা স্বপ্ন মাথা উঁকি দিতে থাকে - আচ্ছা, একটা বই লিখলে কেমন হয়? ফরাসী রান্নার ভক্ত তো দুনিয়া জোড়া। তো জুলিয়া ঠিক করলো ফরাসী রান্নাটা যেমন শিখবে তেমনি একটা বই লিখবে যেটা দেখে typical american রা সহজে ফরাসী cuisine স্বাদ নিতে পারবে।


পর্দার জুলিয়া চাইল্ড এবং স্বামী পল চাইল্ড


পরের দৃশ্যপট এক লাফে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে ২০০২ সালের কুইন্সে। এই কাহিনীর নায়িকা জুলি পওয়েল। একটা সরকারী অফিসে দশটা-পাঁচটা আন্ডারপেইড চাকরি করে যেখানে যতসব frustratef লোকের ফোনকল receive করে ও নিজেও চরমভাবে হতাশ। স্বামী মার্ককে নিয়ে থাকে একটা পিৎজা শপের দোতলায় ছোট্ট দু কামরার ফ্ল্যাটে থাকে আর ভাবে - Am I finished? দুটো ব্যাপার ছিলো জুলির জন্য নিঃশ্বাস নেওয়ার জানালা - রান্না করা আর লেখক হওয়ার স্বপ্ন। তো একদিন একদিন মার্কের সামনে অদ্ভুত একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে; জুলিয়া চাইল্ডের ৫৩৪টা রেসিপি নিজে রান্না করবে। কিন্তু কতদিনে? এক বছরের মধ্যে; অর্থাৎ প্রতিদিন একটারও বেশি। মার্কই ওকে বুদ্ধি দেয়, 'তুমি ব্লগে তোমার এই জার্নিটা প্রতিদিন লিখে ফেলো ব্লগে।' জুলি তখন আকাশ পাতাল ভাবছে। এই যে পাগলামীর টার্গেটটা ও করলো, তাতে হয়তো চাকরিটা ছাড়তে হবে। পোষা বিড়ালটা পালাবে আর মার্কও হয়তো একদিন বিরক্ত ওকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু ঐ যে, প্যাশন আর স্বপ্ন একসাথে হয়ে গিয়েছে, রান্না আর লেখালিখি; জুলি কাজে নেমে পড়লো। যা থাকে কপালে। একলব্যের মতো সামনে শুধু একজনই গুরু - সেই জুলিয়া চাইল্ড।


পর্দার জুলি এবং মার্ক পওয়েল


এই হলো গল্প।

জুলিয়া আর জুলি কি পেরেছিলো নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে? প্যাশনকে আঁকড়ে ধরে থাকতে? নিজেদের প্রমাণ করতে? নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে?

সেটা জানতে হলে আপনাদের দেখতে হবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ২০০৯ সালে বানানো 'জুলি অ্যান্ড জুলিয়া' মুভিটি।


প্রিয় পাঠক, আমি মোটেও কোনো মুভি রিভিউ লিখতে বসিনি। আমি মুভি দেখি সেটাতে আকন্ঠ ডুবে গিয়ে রসাস্বাদনের জন্য। আর তারপর স্মৃতির ভান্ডার হাতড়াতে হাতড়াতে সেই হারানো স্বাদ আবার চাখবার জন্য। তো জুলি অ্যান্ড জুলিয়ায় ডুবে যেতে যেতে আমি কী শিখেছিলাম, জানেন? জাস্ট কয়েকটা কথা।

প্রথম শব্দটা হচ্ছে 'আত্মবিশ্বাস'। আপনাকে নিজের ওপরে শক্তভাবে বিশ্বাস করতে হবে। নভিস জুলিয়া যখন রান্না শিখতে যায়, তাকে পাঠানো হয় সেই Novice দের সাথেই। কিন্তু জুলিয়া নিজেকে Novice হিসেবে ভাবতে চায়নি। শুধু ভাবতোই না, সেটা সে কোর্সের ম্যানেজারকেও বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছিলো। advanced course এ গিয়ে দেখলো, ছুরি ধরাই শেখেনি ঠিক মতো। ইন্সট্রাকটরের বাঁকা হাসি, সহশিক্ষার্থীদের ঠাট্টা, কোনোকিছুকেই পাত্তা না দিয়ে দিন-রাত বাড়িতে প্র্যাকটিস করে গিয়েছে। দ্রুত সব্জি কাটা শেখার জন্য বাড়িতে পিয়াজের পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে। এই হলো বিশ্বাস। জাস্ট বিশ্বাস করুন - আপনি অ...নে...ক কিছু পারেন এবং ঠিক তখনই আবিষ্কার করবেন, আসলেই আপনি অনেক কিছু পারেন।


বাস্তবের জুলিয়া চাইল্ড

দ্বিতীয় শেখাটা হলো Passion, কোনোকিছুর প্রতি প্রবলতম ইচ্ছা। নিজের passion কে খুঁজে বের করতে হবে আর সেটার ওপর ভর করেই দাঁড় করাতে হবে নিজের স্বপ্ন। রান্না ছিলো জুলিয়ার প্যাশন আর স্বপ্ন ছিলো একটা বই লেখার। জুলিরও তাই। তাই তো জুলিয়া চাইল্ডের 'Mastering the art for French cooking' হয়ে উঠেছিলো legend।


তিন নম্বরে আছে 'নিজের ভালোলাগার জন্য করা'। জুলি ব্লগ লিখতো, তা সে কেউ পড়ুক আর না-ই পড়ুক। প্যাশনের কাজটা করতে হয় শুধুমাত্র নিজের জন্যই। এর অনেকগুলো খারাপ দিক আছে; আশপাশের মানুষদের আপনাকে পছন্দ করতে বা বুঝতে বা আপনাকে মেনে নিতে বাধ্য করতে পারবেন না। আর ভালো দিকটা হলো, It really doesn't matter। জুলির মা ওকে ফোনে তিরস্কার করেছে ওর ব্লগ দেখে, জুলি পাত্তা দেয় নি। বস বকাঝকা করেছে, জুলি পাত্তা দেয় নি। ওর ব্লগ কেউ পড়তো না, কমেন্ট করতো না, জুলি পাত্তা দেয় নি। ওই যে বললাম না, It really doesn't matter.


বাস্তবের জুলি পওয়েল তার স্বামী মার্ক পওয়েলের সাথে

আপনি যে টার্গেটই নেন না কেনো, সেটা যদি সীমারেখায় বেঁধে না ফেলেন, তাহলে কোনোদিনও সেটা শেষ হবে না, কাজেই, জুলি আমাকে চার নম্বর যে কথাটা শিখিয়েছিলো সেটা হলো 'Target আর Deadline'। নিজেই নিজেকে Target আর deadline দিন, জুলি পওয়েলের মতো। 'আমি ৫৩৪টা রেসিপি রান্না করবো' - এই ছিলো target আর সেটা করবো ৩৬৫ দিনের deadline এ। মন খারাপ ছিলো, শরীর খারাপ ছিলো, অফিসে ঝামেলা ছিলো, স্বামীর সাথে ঝগড়া ছিলো। কিন্তু জুলি তার target আর deadline থেকে সরেনি।


ইংরেজিতে একটা কথা আছে - Big Journey Starts with Small Steps আপনি যা-ই করতে চান না কেনো, সবার আগে আপনাকে 'শুরু'টা তো করতে হবে। একশ মাইল পেরোতে চাইলে প্রথমে একটা পদক্ষেপ তো ফেলতে হবে। এক হাজার পাতার উপন্যাস লিখতে গেলে প্রথম শব্দটা তো লিখতে হবে। রান্নায় ভীমসেন হতে গেলে চুলোটা তো জ্বালাতে হবে। কি, হবে না? কাজেই আমার পাঁচ নম্বর শেখাটা ছিলো - 'শুরু করুন'। জুলি শুরু করেছিলো এভাবেই; প্রথম রেসিপিটা চেষ্টা করা, প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা ব্লগে লেখা। একদিন সেটাই ৫৩৪ আর ৩৬৫'র ম্যাজিক নাম্বারগুলো ছুঁয়ে ফেললো। প্রথমেই যদি পুরোটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন, তাহলে শুরুটাই কিন্তু হবে না।


প্রধান চরিত্রদ্বয় - বাস্তবে এবং পর্দায়

"Don't ever let someone tell you that you can't do something. Not even me. You got a dream, you gotta protect it." আমার অতি, অতি, অতি (আরও ১০০টা অতি) প্রিয় মুভি 'The pursuit of the happyness' এর একটা ডায়ালগ, যেটা দিয়েছিলো আমার অতি, অতি, অতি প্রিয় অভিনেতা উইল স্মিথ। ঠিক এই কথাটাই জুলি অ্যান্ড জুলিয়ায় দেখলাম। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ, কক্ষোনো অন্যের জন্য, অন্যের কথায় আপনার স্বপ্নকে ছেঁটে ফেলবেন না। একদিন দেখবেন, আপনার স্বপ্নটাই দুনিয়া গ্রহন করেছে, ধারণ করছে। জুলিয়া চাইল্ড লিখতে চেয়েছিলো এমন একটা বই, যেটা কিনা অ্যামেরিক্যান গৃহিনীদের ফরাসী রান্না শেখাবে সহজে। সেটা করতে গিয়ে বইটা ৭০০ পাতা ছাড়িয়ে গেলো। যে একজন আগ্রহী প্রকাশক ছিলো, সে আঁতকে উঠে বলেছিলো, 'বই ছোট করো হে। এত বড় বই চলবে না।' বইটা আসলে জুলিয়ার স্বপ্ন ছিলো। তাই সে সেটাকে ছোট করেনি বরং অপেক্ষা করেছে। অবশেষে এক বিখ্যাত প্রকাশক যেচে পড়ে সেটা সেই সুবিশাল কলেবরেই ছাপায়।


মুভির পর্দায় জুলিয়া এবং পল চাইল্ড

শেষটা হচ্ছে 'Focus'। শুধুমাত্র নিজের কাজটা করে যান গন্ডারের মতো। ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। জুলির কাজ ছিলো প্রতিদিন রান্না করা আর রেসিপিটা ব্লগে লিখে রাখা। সেটাই সে করে গিয়েছে একনিষ্ঠভাবে। আর ফলাফল কী ছিলো, সেটা তো আপনি মুভিতেই দেখবেন।


নামের ধ্বনিগত মিল ছাড়াও আরেকটা দারুন মিল আছে জুলিয়া চাইল্ড আর জুলি পওয়েলের মধ্যে। জুলিয়ার স্বামী পল চাইল্ড আর জুলির স্বামী মার্ক পওয়েল, দুজনেই স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসতো এবং অন্ধভাবে সাপোর্ট করতো। দিনশেষে আপনার ক্লান্ত মাথাটা রাখবার জন্য একটা কাঁধ লাগবেই। সেটা হতে পারে আপনার স্বামী, হতে পারে স্ত্রী, হতে পারে solemate। Who ever is he/she be, there has to be someone. একমাত্র এরাই এক সেকেন্ডের জন্যও বিশ্বাস হারায় নি।


বাস্তবে জুলিয়া চাইল্ড স্বামী পল চাইল্ডের সাথে

'জুলি অ্যান্ড জুলিয়া' তাই কখনই Quit না করার গল্পও।


শেষটা অসম্ভব সুন্দর।

জুলিয়ার এককালীন রান্নাঘরটা আজ Museum। জুলি বেড়াতে গিয়েছে। ফিরে আসার সময় জুলিয়ার বড় একটা ছবির নিচে এক প্যাকেট butter রেখে আসে; গুরুদক্ষিণা। আর ঠিক এই মুহূর্তটাতেই আমি সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম জুলিয়া চাইল্ড আর জুলি পওয়েলের life motto:

With the Right Combination of Passion, Fearlessness and Butter, Anything is Possible.


বাস্তব এবং ছবির শেষ দৃশ্য
__________________
#সিনেমার_আয়নায়
#তওহিদ_নিকেতন
#জুলি_অ্যান্ড_জুলিয়াআপনি কি সফল? জীবন নিয়ে ভীষণরকম ইতিবাচক? উৎসাহে সারাক্ষণ টগবগ করে ফুটছেন?

গল্পটা তাহলে আপনার জন্য নয়। কারণ খুব সম্ভবত গল্পটা আপনি আগেই জানেন।

তাহলে এই গৌরচন্দ্রিকা কেনো? বলছি। তার আগে বলেন দেখি, আপনার কি নিচের যে কোনো একটা লাইনও মাঝেমধ্যে মনে হয়েছে?

ক। কিচ্ছু করতে ভাল্লাগে না।
খ। ও কত কিছু পারে আর আমি কিছুই পারি না।
গ। I am finished.
ঘ। বয়স চলে গিয়েছে। আর কী করবো?
ঙ। ধুর! লোকে কী বলবে?
চ। যা-ই করি, হবে না; আমি বুঝে গিয়েছি।
ছ। বাব্বাহ! এটা পারার মতো মাথা আমার নেই।

কী বললেন? আপনারও মনে হয়।

বাহ…! তাহলে তো হয়েই গেলো। গল্পটা একদমই আপনার জন্য।

শুনবেন না-কি, গল্পটা?


দৃশ্যপট-এক। সময়টা ১৯৪৯ সাল। স্থান - প্যারিস। জুলিয়া চাইল্ড হঠাৎ আবিষ্কার করলো, জীবনটা বড্ড একঘেয়ে, বড্ড boring হয়ে গিয়েছে। একটা জীবন এভাবেই সাদামাটাভাবে হয়তো কাটানো যেতো কিন্তু জুলিয়া ঠিক করলো, সময়টা কাটানোর জন্য হলেও নিজেকে একটু বাজিয়ে দেখবে। তো কী করা যায়? প্রথমে গেলো হ্যাট বানানো শিখতে। ভাল্লাগলো না। গেলো ব্রিজ খেলা শিখতে। সেটাও পোষালো না। জুলিয়া বুঝতে পারছিলো ওর আসলে সেটাই করা দরকার যেটা করতে ওর সবচেয়ে ভালো লাগে - নিত্য নতুন রান্না। যে-ই ভাবা, সে-ই কাজ। জুলিয়া ভর্তি হয়ে গেলো একটা রান্নার স্কুলে। রান্না করতে করতেই আরেকটা স্বপ্ন মাথা উঁকি দিতে থাকে - আচ্ছা, একটা বই লিখলে কেমন হয়? ফরাসী রান্নার ভক্ত তো দুনিয়া জোড়া। তো জুলিয়া ঠিক করলো ফরাসী রান্নাটা যেমন শিখবে তেমনি একটা বই লিখবে যেটা দেখে typical american রা সহজে ফরাসী cuisine স্বাদ নিতে পারবে।


পর্দার জুলিয়া চাইল্ড এবং স্বামী পল চাইল্ড


পরের দৃশ্যপট এক লাফে পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে ২০০২ সালের কুইন্সে। এই কাহিনীর নায়িকা জুলি পওয়েল। একটা সরকারী অফিসে দশটা-পাঁচটা আন্ডারপেইড চাকরি করে যেখানে যতসব frustratef লোকের ফোনকল receive করে ও নিজেও চরমভাবে হতাশ। স্বামী মার্ককে নিয়ে থাকে একটা পিৎজা শপের দোতলায় ছোট্ট দু কামরার ফ্ল্যাটে থাকে আর ভাবে - Am I finished? দুটো ব্যাপার ছিলো জুলির জন্য নিঃশ্বাস নেওয়ার জানালা - রান্না করা আর লেখক হওয়ার স্বপ্ন। তো একদিন একদিন মার্কের সামনে অদ্ভুত একটা প্রতিজ্ঞা করে বসে; জুলিয়া চাইল্ডের ৫৩৪টা রেসিপি নিজে রান্না করবে। কিন্তু কতদিনে? এক বছরের মধ্যে; অর্থাৎ প্রতিদিন একটারও বেশি। মার্কই ওকে বুদ্ধি দেয়, 'তুমি ব্লগে তোমার এই জার্নিটা প্রতিদিন লিখে ফেলো ব্লগে।' জুলি তখন আকাশ পাতাল ভাবছে। এই যে পাগলামীর টার্গেটটা ও করলো, তাতে হয়তো চাকরিটা ছাড়তে হবে। পোষা বিড়ালটা পালাবে আর মার্কও হয়তো একদিন বিরক্ত ওকে ছেড়ে চলে যাবে। কিন্তু ঐ যে, প্যাশন আর স্বপ্ন একসাথে হয়ে গিয়েছে, রান্না আর লেখালিখি; জুলি কাজে নেমে পড়লো। যা থাকে কপালে। একলব্যের মতো সামনে শুধু একজনই গুরু - সেই জুলিয়া চাইল্ড।


পর্দার জুলি এবং মার্ক পওয়েল


এই হলো গল্প।

জুলিয়া আর জুলি কি পেরেছিলো নিজেদের স্বপ্ন পূরণ করতে? প্যাশনকে আঁকড়ে ধরে থাকতে? নিজেদের প্রমাণ করতে? নিজেদের ছাড়িয়ে যেতে?

সেটা জানতে হলে আপনাদের দেখতে হবে সত্য ঘটনা অবলম্বনে ২০০৯ সালে বানানো 'জুলি অ্যান্ড জুলিয়া' মুভিটি।


প্রিয় পাঠক, আমি মোটেও কোনো মুভি রিভিউ লিখতে বসিনি। আমি মুভি দেখি সেটাতে আকন্ঠ ডুবে গিয়ে রসাস্বাদনের জন্য। আর তারপর স্মৃতির ভান্ডার হাতড়াতে হাতড়াতে সেই হারানো স্বাদ আবার চাখবার জন্য। তো জুলি অ্যান্ড জুলিয়ায় ডুবে যেতে যেতে আমি কী শিখেছিলাম, জানেন? জাস্ট কয়েকটা কথা।

প্রথম শব্দটা হচ্ছে 'আত্মবিশ্বাস'। আপনাকে নিজের ওপরে শক্তভাবে বিশ্বাস করতে হবে। নভিস জুলিয়া যখন রান্না শিখতে যায়, তাকে পাঠানো হয় সেই Novice দের সাথেই। কিন্তু জুলিয়া নিজেকে Novice হিসেবে ভাবতে চায়নি। শুধু ভাবতোই না, সেটা সে কোর্সের ম্যানেজারকেও বিশ্বাস করিয়ে ছেড়েছিলো। advanced course এ গিয়ে দেখলো, ছুরি ধরাই শেখেনি ঠিক মতো। ইন্সট্রাকটরের বাঁকা হাসি, সহশিক্ষার্থীদের ঠাট্টা, কোনোকিছুকেই পাত্তা না দিয়ে দিন-রাত বাড়িতে প্র্যাকটিস করে গিয়েছে। দ্রুত সব্জি কাটা শেখার জন্য বাড়িতে পিয়াজের পাহাড় বানিয়ে ফেলেছে। এই হলো বিশ্বাস। জাস্ট বিশ্বাস করুন - আপনি অ...নে...ক কিছু পারেন এবং ঠিক তখনই আবিষ্কার করবেন, আসলেই আপনি অনেক কিছু পারেন।


বাস্তবের জুলিয়া চাইল্ড

দ্বিতীয় শেখাটা হলো Passion, কোনোকিছুর প্রতি প্রবলতম ইচ্ছা। নিজের passion কে খুঁজে বের করতে হবে আর সেটার ওপর ভর করেই দাঁড় করাতে হবে নিজের স্বপ্ন। রান্না ছিলো জুলিয়ার প্যাশন আর স্বপ্ন ছিলো একটা বই লেখার। জুলিরও তাই। তাই তো জুলিয়া চাইল্ডের 'Mastering the art for French cooking' হয়ে উঠেছিলো legend।


তিন নম্বরে আছে 'নিজের ভালোলাগার জন্য করা'। জুলি ব্লগ লিখতো, তা সে কেউ পড়ুক আর না-ই পড়ুক। প্যাশনের কাজটা করতে হয় শুধুমাত্র নিজের জন্যই। এর অনেকগুলো খারাপ দিক আছে; আশপাশের মানুষদের আপনাকে পছন্দ করতে বা বুঝতে বা আপনাকে মেনে নিতে বাধ্য করতে পারবেন না। আর ভালো দিকটা হলো, It really doesn't matter। জুলির মা ওকে ফোনে তিরস্কার করেছে ওর ব্লগ দেখে, জুলি পাত্তা দেয় নি। বস বকাঝকা করেছে, জুলি পাত্তা দেয় নি। ওর ব্লগ কেউ পড়তো না, কমেন্ট করতো না, জুলি পাত্তা দেয় নি। ওই যে বললাম না, It really doesn't matter.


বাস্তবের জুলি পওয়েল তার স্বামী মার্ক পওয়েলের সাথে

আপনি যে টার্গেটই নেন না কেনো, সেটা যদি সীমারেখায় বেঁধে না ফেলেন, তাহলে কোনোদিনও সেটা শেষ হবে না, কাজেই, জুলি আমাকে চার নম্বর যে কথাটা শিখিয়েছিলো সেটা হলো 'Target আর Deadline'। নিজেই নিজেকে Target আর deadline দিন, জুলি পওয়েলের মতো। 'আমি ৫৩৪টা রেসিপি রান্না করবো' - এই ছিলো target আর সেটা করবো ৩৬৫ দিনের deadline এ। মন খারাপ ছিলো, শরীর খারাপ ছিলো, অফিসে ঝামেলা ছিলো, স্বামীর সাথে ঝগড়া ছিলো। কিন্তু জুলি তার target আর deadline থেকে সরেনি।


ইংরেজিতে একটা কথা আছে - Big Journey Starts with Small Steps আপনি যা-ই করতে চান না কেনো, সবার আগে আপনাকে 'শুরু'টা তো করতে হবে। একশ মাইল পেরোতে চাইলে প্রথমে একটা পদক্ষেপ তো ফেলতে হবে। এক হাজার পাতার উপন্যাস লিখতে গেলে প্রথম শব্দটা তো লিখতে হবে। রান্নায় ভীমসেন হতে গেলে চুলোটা তো জ্বালাতে হবে। কি, হবে না? কাজেই আমার পাঁচ নম্বর শেখাটা ছিলো - 'শুরু করুন'। জুলি শুরু করেছিলো এভাবেই; প্রথম রেসিপিটা চেষ্টা করা, প্রথমদিনের অভিজ্ঞতা ব্লগে লেখা। একদিন সেটাই ৫৩৪ আর ৩৬৫'র ম্যাজিক নাম্বারগুলো ছুঁয়ে ফেললো। প্রথমেই যদি পুরোটা নিয়ে ভাবতে শুরু করেন, তাহলে শুরুটাই কিন্তু হবে না।


প্রধান চরিত্রদ্বয় - বাস্তবে এবং পর্দায়

"Don't ever let someone tell you that you can't do something. Not even me. You got a dream, you gotta protect it." আমার অতি, অতি, অতি (আরও ১০০টা অতি) প্রিয় মুভি 'The pursuit of the happyness' এর একটা ডায়ালগ, যেটা দিয়েছিলো আমার অতি, অতি, অতি প্রিয় অভিনেতা উইল স্মিথ। ঠিক এই কথাটাই জুলি অ্যান্ড জুলিয়ায় দেখলাম। প্লিজ, প্লিজ, প্লিজ, কক্ষোনো অন্যের জন্য, অন্যের কথায় আপনার স্বপ্নকে ছেঁটে ফেলবেন না। একদিন দেখবেন, আপনার স্বপ্নটাই দুনিয়া গ্রহন করেছে, ধারণ করছে। জুলিয়া চাইল্ড লিখতে চেয়েছিলো এমন একটা বই, যেটা কিনা অ্যামেরিক্যান গৃহিনীদের ফরাসী রান্না শেখাবে সহজে। সেটা করতে গিয়ে বইটা ৭০০ পাতা ছাড়িয়ে গেলো। যে একজন আগ্রহী প্রকাশক ছিলো, সে আঁতকে উঠে বলেছিলো, 'বই ছোট করো হে। এত বড় বই চলবে না।' বইটা আসলে জুলিয়ার স্বপ্ন ছিলো। তাই সে সেটাকে ছোট করেনি বরং অপেক্ষা করেছে। অবশেষে এক বিখ্যাত প্রকাশক যেচে পড়ে সেটা সেই সুবিশাল কলেবরেই ছাপায়।


মুভির পর্দায় জুলিয়া এবং পল চাইল্ড

শেষটা হচ্ছে 'Focus'। শুধুমাত্র নিজের কাজটা করে যান গন্ডারের মতো। ফলাফল নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। জুলির কাজ ছিলো প্রতিদিন রান্না করা আর রেসিপিটা ব্লগে লিখে রাখা। সেটাই সে করে গিয়েছে একনিষ্ঠভাবে। আর ফলাফল কী ছিলো, সেটা তো আপনি মুভিতেই দেখবেন।


নামের ধ্বনিগত মিল ছাড়াও আরেকটা দারুন মিল আছে জুলিয়া চাইল্ড আর জুলি পওয়েলের মধ্যে। জুলিয়ার স্বামী পল চাইল্ড আর জুলির স্বামী মার্ক পওয়েল, দুজনেই স্ত্রীকে খুবই ভালোবাসতো এবং অন্ধভাবে সাপোর্ট করতো। দিনশেষে আপনার ক্লান্ত মাথাটা রাখবার জন্য একটা কাঁধ লাগবেই। সেটা হতে পারে আপনার স্বামী, হতে পারে স্ত্রী, হতে পারে solemate। Who ever is he/she be, there has to be someone. একমাত্র এরাই এক সেকেন্ডের জন্যও বিশ্বাস হারায় নি।


বাস্তবে জুলিয়া চাইল্ড স্বামী পল চাইল্ডের সাথে

'জুলি অ্যান্ড জুলিয়া' তাই কখনই Quit না করার গল্পও।


শেষটা অসম্ভব সুন্দর।

জুলিয়ার এককালীন রান্নাঘরটা আজ Museum। জুলি বেড়াতে গিয়েছে। ফিরে আসার সময় জুলিয়ার বড় একটা ছবির নিচে এক প্যাকেট butter রেখে আসে; গুরুদক্ষিণা। আর ঠিক এই মুহূর্তটাতেই আমি সত্যিকারভাবে উপলব্ধি করতে পারলাম জুলিয়া চাইল্ড আর জুলি পওয়েলের life motto:

With the Right Combination of Passion, Fearlessness and Butter, Anything is Possible.


বাস্তব এবং ছবির শেষ দৃশ্য
__________________
#সিনেমার_আয়নায়
#তওহিদ_নিকেতন
#জুলি_অ্যান্ড_জুলিয়া
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০২০ বিকাল ৩:৫২
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×