somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আকাশের লাল জাঙিয়া (রম্য...সম্ভবত)

২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



বাসায় আকাশ আছে একটা; মানে ডিশ অ্যান্টেনা। রিমোটের নামও আকাশ। দু হপ্তা হলো কাজ করছে না।

ফোন করলাম আকাশ টিভির হটলাইনে। অত্যন্ত হতাশকন্ঠী একজন রিসিভ করলেন। মনে হলো হাই চাপার চেষ্টাও করলেন। আকাশের গ্রাহকরা যে (অ)কারণে অত্যন্ত জ্বালায় বোঝাই যাচ্ছে।

আগের দুবার রিমোট বিগড়ে যেতে এদেরই বলতে হয়েছিল। বাসায় এসে রিমোট বেচে গেছে। কিন্তু এবারে দেখি কথাবার্তার ভাব অন্যরকম।

স্যার, আপনি ঠিক কোন লোকেশনে থাকেন সেটি জানতে পারলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে আপনাকে সঠিক নির্দেশনা দেয়ার।

বাপ রে বাপ!

এই লাইন যে স্বাভাবিক কনভার্সেশনে চালাতে পারে তাকে নোবেল দেয়া উচিৎ। আমি লোকেশন জানালাম এবং নিজেও জানলাম যে রিমোট পাওয়া যাবে কেবলমাত্র তাদের অনুমোদিত ডিলারের কাছে। নিকটস্থ ডিলার বাস করেন শাহজাদপুরে ভুতের গলিতে।

আম্রিকি ইলেকশনের হাই ভোল্টেজ প্যাচাল না শুনলে ব্রাত্য হয়ে পড়তে হবে সমাজে। রিমোট ছাড়া আকাশ অচল। আকাশ ছাড়া টিভি। টিভিতে শেষবার দেখা চ্যানেলটা ফিক্সড হয়ে আছে। তাতে দেখা যায়: কোন সবজিকাটার মেশিনে মাটির তলায় থাকা অবস্থাতেই আলুর খোসা ছিলে ফেলা যায় অথবা কার ভাগ্য কোন উপগ্রহের খোঁদলে ঘাপটি মেরে আছে নয় তো কোন পাহাড়ি জড়িবুটি তেল জায়গামতো লাগালে কী সব তেলেসমাতি রূপান্তর ঘটবে।

ভয়াবহ এক চ্যানেল!

যে বাড়িতে পাকনা শিশু এবং পাকা মুরুব্বি আছে, সেখানে এই চ্যানেল খোলা আর নীলাভ দৃশ্য চালানোর প্রায় সমান প্রভাব। আমার বাড়িতে আমি ছাড়া কোন পাকনা মুরুব্বি নেই কিন্তু স্ত্রী আছেন। চ্যানেল তাই উভয়ার্থে বন্ধ।

শাহজাদপুরের ডিলার জানালেন তথ্য ঠিকই আছে তবে আকাশী রিমোট নেই। চলে যান গুলশান দুই-এর নজরুল ইলেকট্রিকে। গেলাম। এখানেও তথ্য এবং মালের মধ্যে সমন্বয়ের অভাব। টিভি দেখতেই হবে। রিমোট বিনা গৃহে পদার্পন করিব না - এই পণ করে আবার কল হটলাইনে। মাথা তখন ভয়াবহ হট। ও প্রান্তে এক হটার বামাকন্ঠ সম্বাষণ জানালেন। আমি হট থেকে হুট করে হটেস্ট হয়ে গেলাম।

মামনি, তিনশ টাকার তেল পুড়িয়ে দৌড়ে বেড়াচ্ছি দুশ টাকার রিমোটের খোঁজে। মালটা কোথায়?

সামনাসামনি হলে বলতাম, মালটাকে গাড়িতে তোল। আমার তখন সত্যিই সৌমিত্রভাব।

অশ্লীল শব্দ এমনিতে আসে না। বৌদি আমায় হোল্ডে রেখে দিলেন। দেড় মিনিট পর নতুন পথের দিশা পেলাম। কেশসংক্রান্ত আরেকটি শব্দোচ্চারণ করতে গিয়েও গিলে ফেলতে হলো। তার চে' ছাদে উঠে ডিশটাকে ডানে বাঁয়ে সরিয়ে চ্যানেল বদলানো অনেক সহজ।

ফোনটা কেটে দিয়ে বেরিয়ে আসছি, এক দোকানদার দেখি রহস্যময় হাতছানি দিচ্ছেন।

আকাশ লাগবে?

ফিসফিসে স্বর। যেন ড্রাগডিলার ট্যাবলেটের খবর দিচ্ছেন ওয়াক-ইন ক্লায়েন্টকে।

আছে? - আমার গলা উত্তেজনায় কেঁপে গেল।

লাস্যময়ী নায়িকার ভঙ্গিতে চোখের পাতা স্লো মোশনে একবার নামিয়ে উঠিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি মোটেও ড্রাগলর্ড নন বরং গার্ডিয়ান অ্যাঞ্জেল।

মাই গড! মিরাকল তাহলে সত্যিই ঘটে? কলিযুগেও? বটে, বটে।

কাউন্টারে একরাশ লম্বাটে 'আকাশ' ছড়িয়ে দিয়ে দু হাত প্রসারিত করে দিলেন অ্যাঞ্জেল - বেছে নিন মহারাজ। আমার তখন উদ্বাহু নৃত্য করার অবস্থা। এক জোড়া ব্যাটারি লাগিয়ে দিয়েছেন। তাতে চাইনিজ ভাষায় কী সব লেখা।

বাড়ি ফিরেই টিভি অন।

টিভি তো আগেই অন ছিল। আকাশ অফ হয়নি। আবার সেই জড়িবুটি তেল আর বাদশাহী মলম চ্যানেল। এক বুড়ো দেখি লেংটি পরে উল্টাসন করছে। পাওয়ারের সে এক অপূর্ব প্রদর্শনী। বজ্জাত গ্রাভিটি শুধু ঝুলন্ত সবকিছুই বেকায়দায় ফেলে দেয়।

নতুন রিমোটটা বাগিয়ে ধরলাম। এই স্টাইলে ডার্টি হ্যারিও ম্যাগনাম তাগ করতে পারত না।

বড় ছেলেটা আঠারো হবে। পাশে বসা। আমি রিমোট টিপে চ্যানেল বদলাতেই অপূর্ব দৃশ্য।

অমরেশ পুরি ডায়লগ দিচ্ছে। পাশেই তার এক চ্যালা। তার আবার কুচকুচে কালো গোঁপ। কোমর ছুঁইছুঁই বাঘঝাল ব্লেজার এবং একটা টুকটুকে লাল জাঙ্গিয়া পরে সুইমিংপুলের পাশে দাঁড়িয়ে আছে। অফসেটে একগাদা বিকিনিবান্ধবী। স্ক্রিন জোড়া চোখ জুড়িয়ে দেয়া সিন।

পুরীর ডায়লগ আর শেষ হয় না, জাঙ্গিয়াও কোমরে থেকে হাত সরায় না, এদিকে বিকিনি শুধু বাড়ছেই।

আজব!

সব মিটিংই পুলসাইড হতে হবে? নিশ্চয়ই বেশি কাজ হয় বলেই হয়। আহা! আমার অফিস যে কবে বুঝবে ব্যাপারটা?

'কোচিং আছে।' ছেলে উঠে পড়ল। মাত্রই কিন্তু ফিরেছে কোচিং থেকে। টিভিতে যে কোচিং চলছে সেই ক্লাস বাপ ব্যাটা একসাথে করা যায় না।

আমি দাঁতে দাঁত চেপে রিমোট চাপছি। নো চেঞ্জ। ব্যাটারি খতম। মিরাকল সমসময়েই ঘটে। কেবল কোনদিকে, সেটাই বুঝি না আমরা।

আবার ফোন।
এবার ড্রাইভারকে।
ব্যাটারি তো লাগবেই, একটা ব্যাকআপ আকাশী রিমোটও এনে রাখব।


*****
কাস্টমার রিভিউ দেয়ার ব্যবস্থা থাকলে বেশ হতো। রেইনকোট কিনব বকে দারাজ ঘাঁটছিলাম। দেখি এক সত্যবাদী বান্দা দুর্দান্ত রেইনকোটের রিভিউ দিয়েছে দাঁড়িকমাহীন। সে তো রিভিউ নয় বরং এক লাইনের অবিশ্বাস্য এক হাহাকারের গল্প:

'সামনে বুক ভেসে যায় নিজ (নিচ) দিয়ে পানি ঢুকে কি করব বলেন'।

সাথের ছবিটা দেখুন। রেইনকোট ফুঁড়ে পানিতে ভেজা পাছা। লাল জাঙ্গিয়া এজন্যই লাগে।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে অক্টোবর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×