আজ মঙ্গলবার পহেলা ডিসেম্বর। সময়ের ভেলায় চড়ে আবারও এলো মহান বিজয়ের মাসটি। আমাদের লাল-সবুজ পতাকা, নিজস্ব মানচিত্র, নিজস্ব সত্তা-পরিচয় ও বিকাশের বীজ এ মাসেই পূর্ণরূপ অংকুরিত হয়েছিল। ১৯৭০ সাল পর্যন্ত ইংরেজি বছরের শেষ মাসটির তেমন আবেদন ছিল না। পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭১ সাল থেকেই এর সাথে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে যায় বাংলাদেশের নামটি।
এই বদ্বীপ রাষ্ট্রের নিজস্ব ভূখন্ড, নিজস্ব মানচিত্র, নিজস্ব প্রশাসন, স্বশাসিত রাষ্ট্রযন্ত্র-- সবকিছুই যেন ডিসেম্বরের বদৌলতে। হয়তো ডিসেম্বর না হলে আমাদের স্বপ্ন কেবলই ফানুস হয়ে উড়তো। তাই তো এ মাস এলেই দেশ-প্রেমিক জনতাসহ জাতীয় জীবনের সর্বত্র লাগে উদ্দীপিত আবেগের ঢেউ। এ দিনের সূর্যটাও অন্য দিনের চেয়ে একটু ভিন্ন আবেশ মাখা, নবজাগৃতির আলোক মালা। আটত্রিশ বছরের ব্যবধানেও স্বকীয় বৈশিষ্ট্য সমুজ্জ্বল চরম আকাঙ্ক্ষা ও পরম প্রাপ্তির প্রতীক মাসটি। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, এই ডিসেম্বরেই লাল-সবুজ ক্যানভাসের বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও অসংখ্য শহীদের তাজা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয় এ দেশের স্বাধীনতা। বাংলার দামাল ছেলেরা পরাধীনতার শিকল ছিঁড়ে এ স্বাধীনতা ছিনিয়ে আনে। ১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তানের একটি প্রদেশ পূর্ব পাকিস্তানের আঞ্চলিক স্বায়ত্ত শাসনের দাবিতে পর্যায়ক্রমিক সংগ্রামের চূড়ান্ত পর্যায় ছিল স্বাধীনতা সংগ্রাম। ১৯৭০ সালের ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করলেও সুকৌশলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণকে বঞ্চিত করার ফন্দি অাঁটে। পূর্ব পাকিস্তানের ওপর পশ্চিম পাকিস্তানীদের অত্যাচার, নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রবল আন্দোলনের চরম পর্যায়ে স্বাধীনতার আওয়াজ ওঠে। দাবি আদায়ের আন্দোলনে বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ রাজপথে নেমে আসে। বিজয়ের জন্য লড়াকু জনতা শরীরের শেষ রক্তবিন্দু থাকা পর্যন্ত সংগ্রামের প্রস্তুতি নেয়।
পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। আলোচনার নামে কথিত অগ্রগতির সংবাদ দিয়ে বিভ্রান্তির ধূম্রজাল সৃষ্টি করা হয়। এ অবস্থায় ২৫ মার্চ কালো রাতে নিরীহ জনগোষ্ঠীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একাধারে চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক নিধন শুরু হয়। এ সময় শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেফতার হন। এমন এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ২৬ মার্চ শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা পেয়ে দিকভ্রান্ত জাতি মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ে। তাদের অপরিমেয় ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। এভাবেই পরাজিত পাক বাহিনীর রাহু থেকে বাংলাদেশ পৃথক দেশ হিসেবে বিশ্ব-মানচিত্রে ঠাঁই করে নেয়।
প্রতি বছর ডিসেম্বর এলেই রাষ্ট্রের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষার দুর্জয় শপথের চেতনা শাণিত হয়। এবারও তার ব্যত্যয় ঘটবে না-- এমনকি সকলেরই প্রত্যাশা। অদ্ভূত জরুরি সরকারের পর মহাচমক লাগানো মহাজোট সরকারের আমলে গণতন্ত্র প্রাতিষ্ঠানিকীকরণসহ দেশকে এগিয়ে নিতে সম্মিলিত প্রয়াসে ডিসেম্বরের চেতনাই হতে পারে উদ্দীপক, অনুঘটক।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



