somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পিশাচ উপন্যাসিকা 'বংশালের বনলতা' part1

১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ ভোর ৫:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বংশালের বনলতা
মুহম্মদ আলমগীর তৈমূর( https://­­m.facebook.com/­­muhammad.toimoor?ref­i­d=52 )

আমার জীবনের সবচেয়ে অদ্ভুত ঘটনাটি ঘটেছিল ১৯৭৪ সালের শ্রাবণ মাসের এক গুমোট দুপুরে। রাষ্ট্রপতি নিক্সন ‘পি এল ৪৮০’ চুক্তির অধীনে আমেরিকা থেকে পাঠানো এক জাহাজ গম চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছানোর আগেই ফিরিয়ে নিয়ে গেছেন ফ্লোরিডার মায়ামি পোর্টে। সারা দেশে দেখা দিয়েছে দুর্ভিক্ষ, তার ওপর বন্যা। খেতে না পেয়ে আর ডায়রিয়া-ম্যালেরিয়ায় দেশজুড়ে লোক মরছে কাতারে কাতারে। কমলাপুর, গুলিস্তান, সদরঘাটের আশে-পাশে দিনে-রাতে লাশের পর লাশ পড়ছে। বেওয়ারিশ মড়া দাফন করতে করতে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলামের দম বেরিয়ে যাওয়ার দশা। মুখে রংচঙ মেখে লাল-সবুজ ফিতে দিয়ে চুল বেঁধে মফস্বল থেকে আসা উঠতি মেয়েরা খদ্দেরের আশায় বকের ধৈর্য নিয়ে রাত-দিন দাঁড়িয়ে থাকে ওসমানী উদ্যান আর রেসকোর্স ময়দানে। র‌্যাবের বাবা রক্ষীবাহিনী সারা দেশে নকশাল, সর্বহারা, ডাকাতদের উকুন বাছা করে বাছছে।
দেশের এই যখন অবস্থা, আমি তখন মতিঝিলে ‘আইসিসি ট্রেডিং এজেন্সি’তে জুনিয়র অ্যাকাউন্ট্যান্টের চাকরি করি। থাকি বংশালের কাছাকাছি আলাউদ্দিন রোডের আর্মেনীয় ধাঁচে তৈরি দেড়শো বছরের পুরোনো এক বাড়িতে। জগন্নাথ কলেজে বিকম পড়ার সময় থেকেই আছি ওখানে। চাকরি পাওয়ার পর নতুন ভালো বাসায় উঠতে পারতাম, কিন্তু আমি তা করিনি। বাড়িটার মোটা মোটা নোনাধরা দেয়াল, লোহার বিমবর্গা দেওয়া উঁচু ছাদ, জাফরিকাটা রেলিংঘেরা লম্বা বারান্দা আর ছায়া ছায়া ঠান্ডা ঘরগুলো আমাকে কেমন একটা মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছিল। বংশালেরই এক ওয়ার্ড কমিশনার তখন ওই বাড়ির মালিক। এই বাড়িতেই শ্রাবণ মাসের এক রোববার (তখন সাপ্তাহিক ছুটির দিন ছিল রোববার) বেলা একটার দিকে ঘটনাটা ঘটল।

কিছুদিন থেকেই তেলাপোকার জ্বালায় তিতিবিরক্ত হয়ে পড়েছিলাম। এই প্রাণীটিকে আমি ঘৃণা করি। দেখতে পেলেই পিষে ফেলি পায়ের তলায়। যদিও এ কাজে সফল খুব কমই হই। রাতে শুয়ে পড়লে এগুলো মুখের ওপর হেঁটে বেড়ায়। নাকেমুখে লেগে যায় এদের শরীরের টকটক দুর্গন্ধ। সাবান দিয়ে হাতমুখ ধুলেও ঘিনঘিন করে গা। ফিনিস পাউডার, অ্যারোসল স্প্রেÑকোনোটাতেই কোনো কাজ হয়নি। তেলাপোকার গায়ে স্প্রে করলেই তবেই ওটা মরে। সমস্যা হলো, তেলাপোকার ভূতের স্বভাব। বের হয় শুধু রাতের বেলা, অন্ধকারে। দেখতে পেলে তবেই না স্প্রে করার প্রশ্ন ওঠে। এবার নিয়ে এসেছি ‘লক্ষণ রেখা’ নামের একধরনের চক। মেঝেতে ইচ্ছেমতো আঁকিবুঁকি কাটলেই আমার কাজ শেষ। বাকিটা করবে চকের দাগ।

দুপুর একটার দিকে গোসলের আগে মুকুলের মাকে সাথে নিয়ে ঘরে চকের দাগ দেওয়া শুরু করলাম। এখানে বলে রাখি, মুকুলের মা আমার রান্নাবান্না থেকে শুরু করে ঘর সাফ, কাপড় কাচা সবই করে। পান খাওয়া লাল ঠোঁট, পেটা শরীর আর ঝামা কালো গায়ের রঙে ছায়া ছায়া অন্ধকারে তাকে দেখলে মনে হয়, মা কালীর জীবন্ত মূর্তি। মুকুলের মাকে আমি দুই ঈদে কাপড় দিই, ভালো রান্না হলে তার কিছুটা দিই এবং চাল, ডাল, তেল, নুনের কোনো হিসাব কখনো নিই না। সে বলতে গেলে পুরোপুরি স্বাধীনভাবেই সংসার চালাচ্ছে। তার সাথে আমার কথা খুব কমই হয়। এ জন্যই হয়তো আমার যাবতীয় কর্মকাণ্ড জানার ব্যাপারে তার আগ্রহ অসীম। তাকে ঘরের একটি ডুপ্লিকেট চাবি দিয়েছি। আমি অফিসে গেলে সে ঘর পরিষ্কার, বিছানা ঠিকঠাক এসব কাজ করে।

ঘরে আসবাব সামান্যই। দেয়ালের স্কাটিংয়ের নিচ বরাবর দাগ দিয়েছি। দুদিকের দেয়ালে খড়খড়ি লাগানো জানালাগুলো লম্বায় প্রায় দরজার সমান। বাকি দেয়াল দুটোর একটির ঠিক মাঝখানে ক্লজিটের মতো একটি ফাঁকা জায়গা। আগে কাপড়চোপড়, জুতো-মোজা, হোল্ডঅলÑএসব ওখানে রাখা হলেও বহুদিন হলো ফাঁকা পড়ে আছে। ক্লজিটের দরজা খুলে দেখি, ভেতরটা বেশ স্যাঁতসেঁতে আর ধুলো-ঝুলকালিতে একাকার। আড়াআড়ি সেট করা একটি মোটা কাঠের লাঠিতে মাকড়সার জালে ঢাকা তিনটে আদ্যিকালের হ্যাঙার ঝুলছে। সম্ভবত মুকুলের মা ওটা পরিষ্কার করার কথা কোনো দিন ভেবেও দেখেনি। তেলাপোকার আদর্শ ব্রিডিং গ্রাউন্ড হিসেবে তুলনাহীন এর পরিবেশ। ভেবে দেখলাম, পোকাগুলোকে ঝাড়ে-বংশে শেষ করতে হলে ক্লজিটটা পরিষ্কার করা খুবই জরুরি। মুকুলের মাকে পানির বালতি, ঝাঁটা, ন্যাকড়াÑএসব আনতে বলে ক্লজিটের দরজাটা খুলে দিলাম। ভেতরটা দিনের আলোতেও অন্ধকার। কিছু একটা আলোর ব্যবস্থা না করলে পুরোটা দেখা যাচ্ছে না। তিন বছর ধরে এখানে আছি, অথচ ভেতরটা ভালো করে একবারও দেখা হয়নি ভেবে অবাকই হচ্ছি। কেননা, আমি হচ্ছি সেই দলের, যারা ‘যেখানে দেখিবে ছাই’-এই আপ্তবাক্যে বিশ্বাস করে জীবন কাটায়। মুকুলের মা ঝাঁটা, বালতি, ত্যানাÑএসব নিয়ে উপস্থিত হলো। তাকে পরিষ্কার করার কাজে লাগিয়ে আমি গেলাম বাসার সামনে নারায়ণের দোকান থেকে টর্চ লাইট কিনতে। পুরোনো ঢাকার এই এক সুবিধা। বাসা, বাজার, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, মসজিদ, গোরস্থানÑসব এক জায়গায়।
(চলবে)
[email protected]
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×