বিড়িতে একখান জব্বর শ্যাষ টান দিল বুড়া জব্বার মিঞা। বিড়ি খান পানিতে ফেইল্যা আসমান পানে চাইল একবার। বাদলার আজকাল আর সময় অসময় জ্ঞানগম্যি নাইকো মোটেও। এ্যাই শ্যাষ পোষেও মাঝ দুকুরে আসমানডা ঘোর কালো। দুইএক ঠোপ মাথায় পড়লও বুঝি। কাঁন্ধের গামছা খান মাথায় জড়াইয়া আবার হাল ধরল শক্ত হাতে। শীত আসতিছে তাই ঝিরঝিরে বাদলার সাথে আল্লার রহমতে ঝোড়ো হাওয়াডা নাই। নাইলে এই ঠাণ্ডায় আর দুগ্গতির শ্যাষ থাকতো নাকো। ছইয়ের ভিতর থিকা ছ্যামরা ছেমরির হাহা হিহি ভাইসা আসতিছে। ইছামতীর অকূল দরিয়ায় যহন নাও বাইত তহন মিঞার জোয়ান বয়স। তুমুল বাদলায় চুপচুপে ভিজেও ঠাণ্ডা ধরত নাকো। সন্ধে নামলে পর বাসায় ফিইরা পায়ের পাতায় আমিনার নরম হাতের গরম ত্যাল মালিশ। ঠাণ্ডা শরীলে গরম ফিরতিই আমিনার বুকের ওম।
আমিনার গোরে শ্যাষ মাটিটুকু দিয়াই হিঙ্গলগঞ্জের দিকে হেই যে পেছন দেখাইছিল আর অই মুখো হয় নাই জব্বার মিঞা। পেথ্থমে ইস্টিমার তারপর ম্যাটাডরে সিধা হাসনাবাদ। সিহান থিকাই জেবনে পেথ্থমবার রেলগাড়ি চইড়া সিধা শেলদা ইস্টিশন। তারপর একে একে ম্যাছুয়ায় কুলিগিরী, ট্রেনে লবঞ্চুস ফেরি আর শ্যাষম্যাষ এ্যাই বাবুঘাট। ইছামতীর পানির চোরাস্রোত টাইন্যা আনল হেই গঙ্গায়। হেই থিকাই রইয়্যা গেল বাবুঘাটের এ্যাই নাওয়ের মাঝি হইয়া। মনে মনে হিসাব কষে মিঞা। পঁচিশ তিরিশ বৎসর তো হইবই। মিঞার আর বোঝোনের বাকি নাই যে অই ছ্যামরা ছ্যামরিগুলান পেম-পিরিতির নামে শরীলের জ্বলুনি মিটাইতে আসে এহানে। ছইয়ের ভিতর গরম দুইখান শরীলে ঘষা খাইয়া যহন আগুন জ্বলে তাহার ভাপ মিঞার কাছেও চলকে আসে বৈকি। যহন আগুনে ঝলসানো শরীল ছেঁইচা ভাইসা আসে উত্তাল শীৎকার, জব্বার মিঞা দুই কানে গামছা খান বাঁইন্ধা চক্ষু বুজে। চক্ষু বুজলিই দেখতি পায় আমিনার ঢলঢল মুখখান। আহাঃ! যেন জব্বার মিঞার সোহাগে গাল দুইখান আর নাকের আগায় কেউ সিন্দূর নেইপ্যা দিছে। জব্বার মিঞা গলা ছাইড়া গান ধরে,
“আমায় ভাসাইলি রে, আমায় ডুবাইলি রে
অকুল দরিয়ার বুঝি কূল নাই রে….”