somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি পাবলিক পরীক্ষার অনিশ্চিতি কেমন আর্থিক ও সময়ের ক্ষতি?

০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ড. মঞ্জুরে খোদা
গতকাল এসএসসি পরীক্ষার্থী অভিভাবকদের একটি প্রতিনিধি দল বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে স্মারক লিপি প্রদান করেন যাতে শিক্ষার্থীরা নির্বিঘ্নে পরীক্ষা দিতে পারে। একই সাথে অভিভাবক দলের পক্ষ থেকে উভয় নেত্রীকে এই বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহনের অনুরোধ করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে এই মৌলিক মানবাধিকার রক্ষা ও আদায়ে কেন অভিভাবকদের আকুল আকুতি নিয়ে নেতা-নেত্রীদের দ্বারে দ্বারে ধর্ণা দিতে হচ্ছে? যে দায়িত্ব রাজনীতিকদেরই পালন করার কথা! কিন্তু সেই স্থানটি আজ অনেকটা আশ্রয় না হয়ে পরিনত হয়েছে আতঙ্কে!

রাজনৈতিক দলগুলি দেশের প্রচলিত গণতান্ত্রিক অধিকারের আওতায় তাদের দাবি আদায় ও জনমত গঠনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক বিভিন্ন কর্মসূচী দেবে এটা স্বাভাবিক। তবে তাদের কর্মকান্ড/কর্মসূচী সাংবিধানিক ভাবে স্বীকৃত এবং নাগরিক অধিকারের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে বলার কিছু নেই। কর্মসূচী পালন করতে যেয়ে যেন নাগরিকের অধিকার ক্ষতিগ্রস্থ না হয় সেই বিষয় সচেতন ও দায়িত্বশীল থাকা। একই সাথে সময় ও বাস্তবতা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ বছর ফেব্রুয়ারী ও মার্চ মাস বাংলাদেশের এসএসসি শিক্ষার্থীদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সময়। এই সময় তাদের চুড়ান্ত পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। যে প্রস্ততি শিক্ষার্থীরা বেশ আগে থেকেই জোড়ের সাথে নিতে থাকে। সঙ্গতই এই সময় তাদের জন্য অবশ্যই একটি শান্তিপূর্ণ ও স্থিতিশীল পরিবেশ থাকটা জরুরী। তাদের এই বিষয় ও প্রয়োজনটি নিশ্চিত করতে অভিভাবকরা যেমন প্রানান্ত চেষ্টা করেন, এমনকি প্রতিবেশিরাও যথাসাধ্য সাহায্য করতে চেষ্টা করেন। রাজনীতিকরাও তো কোন পরিবারের অভিভাবক একই সাথে দেশ ও সমাজেরও অভিভাবক কিন্তু আমাদের রাজনীতিকরা কি সেই দায়িত্ব পালন করছেন? এর জন্য কে কতটা দায়ী ও অভিযুক্ত তা নিয়ে অনেক বিতর্ক হতে পারে কিন্তু এ কথা কোন ভাবেই কেউ অস্বীকার করবেন না যে এর জন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া দারুণ ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ও হবে।

এর ফলে প্রধানত শিক্ষার্থীদের এক. পরীক্ষার প্রস্ততি ও ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে দুই. তাদের জীবন থেকে কিছু মূল্যবান সময় হারিয়ে যাবে তিন. এই পরিস্থিতির মনস্তাত্তিক চাপ তাদের দীর্ঘদিন বয়ে বেড়াতে হবে চার. দেশের নেতা-নেত্রী ও রাজনীতির প্রতি বিতশ্রদ্ধ করবে পাঁচ. আর্থিক ভাবেও তাদের পরিবারক ক্ষতিগ্রস্থ করবে। শুভ তাই নয়, এমন একটা অসাস্থ্যকর ও অনিশ্চিত পরিবেশে এই শিক্ষার্থীদের কঁচিমন নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে যার সূদুরপ্রসারী পরিণতি ভয়াবহ এবং জাতি গঠন ও উন্নয়নে এর প্রভাব হবে নিঃসন্দেহে নেতিবাচক। এই বিষয় গুলো যদি যুক্তিসঙ্গত বিবেচেনা হয় তাহলে কেন এই রাজনৈতিক দল ও নেতা-নেত্রীরা দেশের, নিজেদের ও এই ভবিষ্যৎ নাগরিকদের এত বড় ক্ষতি করছেন?

এ বছর প্রায় ১৫ লাখ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। ফেব্রুয়ারীর ২ তারিখে শুরু হয়ে তা শেষ হওয়ার কথা মার্চের ১৬ তারিখে। হরতাল বা অবরোধের কারণে একজন শিক্ষার্থীর একটি পরীক্ষা পিছানো মানে তাদের জীবন থেকে একটি করে দিন হারিয়ে যাওয়া। তাহলে জাতীয় ও সমষ্টিগত ভাবে ১৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে একদিন করে হারানো মানে ১৫ লক্ষ দিন হারায় যা বছরের হিসেবে দাড়ায় প্রায় ৪ হাজার শিক্ষাবছরের উপরে! এরকম ৫ থেকে ১০টি পরীক্ষা অনিশ্চিত হলে শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে জাতীয় ভাবে হারাবে ২০ থেকে ৪০ হাজার শিক্ষাবছর! কে নেবে এর দায়? কে দেবে এর জবাব?

একটি পরীক্ষা স্থগিত বা অনিশ্চিত হওয়ায় শিক্ষার্থীর শিক্ষার ব্যায় নানা দিক থেকে বেড়ে যায়। এক্ষেত্রে যেমন সরকারী ব্যায় বাড়ে তেমনি বেসরকারি বিনিয়োগ্ও বৃদ্ধি পায়। এই আর্থিক ক্ষতির সুনির্দিষ্ট হিসেব তাৎক্ষনিক বলা না গেলেও এর একটি সাধারণ ধারণা পাওয়া যায় এই ভাবে। একটি পরীক্ষার জন্য একজন অভিভাবকের যদি ৫০০ টাকা বাড়তি খরচ হয় তাহলে ১৫ লক্ষ অভিভাবকের খরচ হবে ৭৫ কোটি টাকা! এইভাবে যদি ১০টি পরীক্ষা অনিশ্চিত হয়- তাহলে আরও বাড়তি খরচ হবে ৭৫০ কোটি টাকা। এর সাথে সরকারের বাড়তি ব্যায় যুক্ত করলে যুক্ত এই ব্যায় হবে আরও অনেক বেশি। যে অংককে বলা যায় এই খাতে সরকারী বরাদ্দের কাছাকছি! যেখানে আমাদের শিক্ষাখাতের সীমিত বরাদ্দের সাথে যুক্ত ছিল দূর্ণীতি আর এর সাথে আরেকটি বাড়তি উপসর্গ যুক্ত হয়েছে অপব্যায় বা অপচয়। যেটি আমাদের উন্নয়নাকাঙ্খী অনেকটা স্বতস্ফুর্ত ও অপরিকল্পিত (যথাযথ না) বিকাশমান সমাজ ও অর্থনীতির জন্য একটি বড় চাপ ও বাঁধা।

দীর্ঘদিন ধরে আলোচিত হচ্ছে ‘পাবলিক পরীক্ষা’কে হরতালের আওতামুক্ত করার কিন্তু সংশ্লিষ্টরা সে কথা কোনভাবেই বিবেচনা করার প্রয়োজন মনে করেন নি। ২০১৩ সালে একজন আইনজীবী হাইকোর্টে মামলা করেছেন-, কেন পাবলিক পরীক্ষাকে হরতালের আওতা মুক্ত রাখা হবেনা তা নিয়ে হাইকোর্টের রুল চেয়েছেন, যা এখন নিস্পত্তির অপেক্ষায় আছে!

১৫ লক্ষ শিক্ষার্থীর অভিভাবক ও স্বজনরা সবাই ভোটার। সেই সংখ্যাও কম নয়, তাও হবে কোটির উপরে। কিন্তু এই সকল অবিভাবকরা কি পারবেন, মুখ ফিরাতে.. এই নীতিহীন, দায়িত্ব জ্ঞানহীন রাজনীতি ও রাজনীতিকদের থেকে? যাদের কারণে তাদের পার করতে হচ্ছে আজ দুশ্চিন্তার নির্ঘূম রাত। এর সবটুকু দায় কেবল কোন একটি দলের একার নয়, কম বেশি দায় প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের কেউই এড়াতে পারেন না। দেশে যখন জাতীয় দূর্যোগ, জরুরী পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন জরুরী অবস্থা জারি করার বিধান আছে। বাংলাদেশ একটি উদিয়মান অর্থনীতির দেশ। বিশ্বের শিল্পোন্নত দেশের সংগঠন জি ২৫ এর পরে যে সম্ভাব্য ১১ টি দেশের কথা বলা হয় বাংলাদেশ তার একটি। আর জাতি গঠনের এই সন্ধিক্ষনে শিক্ষা একটা অতি গুরূত্বপূর্ণ বিষয়, যাকে আমার একটি জরুরী বিষয় বলে মনে হয়।

দেশের পাবলিক পরীক্ষা গুলো যখন হয়, তখন তাকে জরুরী পরিস্থিতির মত বিবেচনায় নেয়াটাকে সমীচীন মনে করি। কারণ একজন শিক্ষার্থীর মান ও স্তর নির্ধারণের জন্য পরীক্ষা অতি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষণ। যে সময় তারজন্য প্রয়োজন একটি সুস্থ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। একজন চিকিৎসক রুগী অপারেশনের ক্ষেত্রে যেমন সতর্কতা অবলম্বন করে থাকেন। পাবলিক পরীক্ষার বিবেচনাওতো সেরকমই হওয়া উচিত। হরতালের মধ্যে ক্লিনিক, হাসপাতাল, ওষুধ ও খাবারের দোকান যদি খোলা থাকে তাহলে কেন পাবলিক পরীক্ষার বিষয়টিকে সেই ভাবে বিবেচনা করা হবে না। বাংলাদেশের যে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাতে কোন দ্বৈব না ঘটলে, এই অবস্থার আশু পরিবর্তনের সুযোগ দেখছি না। পাবলিক পরীক্ষা যদি কখনও হরতালের আওতা মুক্ত হয় তার মানে এই নয় আর কোন সমস্যা থাকবে না। আমি স্বীকার করছি এর সাথে যুক্ত আছে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও পরিবেশের বিষয়। সেটি নিশ্চিত করা আরও কঠিন কাজ। এর মাধ্যমে অন্তত পাবলিক পরীক্ষার একাডেমিক ক্যালেন্ডারের বিষয়টি নিশ্চিত হতে পারে। এমনিতে শিক্ষার মান, ধারা, নীতি, পদ্ধতি ইত্যাদি নিয়ে অনেক প্রশ্ন ও বিতর্ক আছে, তারপরও যা আছে তাও আজ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে হুমকির মুখে।

এই মুহুর্তে এটি প্রায় ১৫ লক্ষ পরিবার ও কোটি মানুষের উদ্বেগের বিষয়। বর্তমানে বাংলাদেশে ছাত্রসংখ্যা প্রায় সারে ৪ কোটি যা প্রায় দেশের সমগ্র জনসংখ্যার ৪ ভাগরে এক ভাগ। জাতি গঠন ও নির্মানের এই মূল কারিগরদের পথকে কন্টকিত করে দেশকে নিরাপদ ও উন্নয়নের বক্তব্য কেবল স্ববিরোধীই নয় আত্মঘ্যাতিও। সঙ্গতই তাদের স্বার্থে ও প্রয়োজনে সংসদের আইন পাশ করতে হবে। প্রয়োজনে সময় ও পরিস্থিতির বিবেচনায় নতুন করে সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে হবে এবং পাবলিক পরীক্ষাকে তথাকথিত ক্ষমতাকেন্দ্রীক রাজনৈতিক কর্মসূচীর আওতা মুক্ত করার।

লেখক: মঞ্জুরে খোদা টরিক, গবেষক ও সাবেক ছাত্রনেতা।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৫ রাত ১:০৫
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×