অযোধ্যার বাবরী মসজিদ কেইসঃ সেই ১৮৮৫ সালে থেকে যার শুরু।
বাবরী মসজিদ, মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থান মিলে জমির পরিমান প্রায় ৬.৮ একর । যার মালিকানার দাবীতে আছে, নির্মোহ আখড়া, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, আর স্বয়ং রামের হয়ে তার একজন পূজারী।
এই বাবরী মসজিদের জমির মালিকানা নিয়ে করা চারটি সিভিল মামলার উপর ভিত্তি করে ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর এলাহাবাদ হাইকোর্ট বাবরী মসজিদের জমিকে তিন গ্রুপের মাঝে ভাগা করার রায় দেয়।
এই চারটি মামলা হলোঃ
মামলা ১ঃ ১৯৪৯ সালে হিন্দুরা মসজিদের ভিতর রামের মূর্তি স্থাপন করে পুজা করার অনুমতি চেয়ে ১৯৫০ সালে গোপাল সিং বিশারদ প্রথম মামলা করে। এরপর থেকে এই মসজিদে মুসলমানেরা নামাজ পড়া বন্ধ করে দেয় কিন্তু মসজিদ থেকে মূর্তি অপসারন করা হয় নাই।
অর্থাৎ, ১৯৫০ সাল থেকে বাবরী মসজিদ ধ্বংস হওয়া পর্যন্ত মুসলমানেরা এই মসজিদে আর কখনও নামাজ পড়ে নাই বা পড়ার অনুমতি পায় নাই। কিন্তু ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি নিয়ে মাঝে মঝে হিন্দু পুরহিতেরা মসজিদে ঢুকে রামের মূর্তিকে পুজা করে আসছে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করে আসছে শহরের মিউনিসিপাল বোর্ড, আর মামলাটি ঝুলে থাকে বহুদিন।
্মামলা ২ঃ ১৯৫৯ সালে 'নির্মোহ আখড়া' মসজিদের পুরা মালিকানা দায়ের করে মামলা করে। এর আগে নির্মোহ আখড়ার মহান্ত রঘুবির দাস ১৮৮৫ সালে এখানে মসজিদের পাশে মন্দির বানানোর অনুমতি চেয়ে মামলা করেছিল, কিন্তু তাতে তাদের দাবী নাকচ করে দেয়া হয়েছিল।
মামলা ৩ঃ ১৯৬১ সালে মুসলিম সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড পুরা প্রপার্টির মালিকানা দাবী করে মসজিদ থেকে মূর্তি সরিয়ে ফেলার আর মসজিদের কাস্টোডিয়ানশিপ ওয়াকফ বোর্ডের কাছে হস্তান্তর করার দাবী নিয়ে মামলা করে। কোন রায় ছাড়া সেই মামলাও ঝুলে থাকে।
এরপরের মামলাটি হলো
৪ঃ ১৯৮৯ সালে হিন্দু দেবতা রামের পক্ষ হয়ে আর রামের জন্ম স্থানের পক্ষ হয়ে পুরা জায়গার মালিকানা দাবী করে মামলা দায়ের করে হিন্দু আরাধক জি এস বিশারদ।
এর প্রায় তিন বছর পর ১৯৯২ সালে উগ্রপন্থি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের হিন্দুরা ১৬শ শতাব্দীতে নির্মিত বাবরী মসজিদ ধ্বংস করে ফেলে, এই মসজিদ ধ্বংসের জন্য আলটিমেটলি যেই ৬৮ জনকে দায়ী করা হয় তারা সকলেই বিজেপি আর বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতা আর সদস্য। এই ডেমলিশানকে কেন্দ্র করে কয়েক মাস ব্যাপি হিন্দু মুসলমানদের দাঙ্গা চলে যাতে নিহত হয় প্রায় ২০০০ মানুষ, যাদের প্রায় সকলেই ছিল মুসলমান।
কিন্তু এই চার মামলাকে এক সাথে করে এলাহাবাদের হাইকোর্ট ২০১০ সালে রায় প্রদান করে। হাইকোর্টের যে তিনজন বিচারপতি এই মামলার রায় দেন তাদের একজন ছিলেন মুসলমান, আর বাকি দুইজন হিন্দু।
২০১০ সালে এই তিন বিচারপতির ২ঃ১ রায়ে পুরো জায়গার ১/৩ অংশ দেয়া হয় রাম মন্দিরের জন্য, ১/৩ অংশ দেয়া হয় ওয়াকফ বোর্ডকে, আর শেষ ১/৩ দেয়া হয় নির্মোহ আখড়াকে। অর্থাৎ মামলাকারীরা সবাই সমান সমান ভাগ পেয়ে যায়।
এরপর মামলাটি চলে যায় ভারতের সুপ্রিম কোর্টে, যার শুনানি শেষ হয়েছে আর রায় বের হবে আজ শনিবার। ভারতে এই মামলার রায় নিয়ে প্রচুর সাবধানতা অবলম্বন করা হয়েছে।
আজ ভারতের সুপ্রিম কোর্টের ৫ বেঞ্চের বিচারকগন ভারতের অযোধ্যাতে যে বিতর্কিত ধর্মীয় স্থানটি নিয়ে বহু বছর ধরে সংঘাত, সেখানে একটি হিন্দু মন্দির বানানোর পক্ষেই রায় দিয়েছে।
এর পাশাপাশি মুসলিমদের মসজিদ বানানোর জন্য বরাদ্দ করা হচ্ছে অযোধ্যাতেই অন্য কোনও 'বিকল্প' স্থান।
বলা হয়েছে, মসজিদ বানানোর জন্য অযোধ্যারই কোনও উল্লেখযোগ্য স্থানে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দিতে হবে।
এই মন্দির ও মসজিদ বানানোর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে একটি ট্রাস্ট গঠনেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই নভেম্বর, ২০১৯ বিকাল ৪:৩৯