মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের মধ্যকার সংঘাত নিরসনের নামে ২৮ জানুয়ারি ট্রাম্প হোয়াইট হাউজে যে ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি (Deal Of The Century-শতাব্দী চুক্তি) প্রকাশ করেছেন তা শান্তি, উন্নতি এবং ইসরায়েলি ও ফিলিস্তিনিদের জন্য উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঘোষণা নাকি ইসরায়েলি স্বার্থের সুরক্ষায় হোয়াউট হাউসের নতুন এজেন্ডা তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। কারণ উভয় পক্ষের জন্য win-win সুযোগ উপস্থাপন করার কথা বলা হলেও প্রকৃত পক্ষে ট্রাম্পের এই চুক্তির মাধ্যমে পশ্চিম তীর, পূর্ব জেরুজালেম, জর্ডান উপত্যকায় ইসরাইলী দখলদারিত্ব ও অবৈধ বসতি স্থাপনের বৈধতা দেওয়ারই চেষ্টা চলছে মর্মে প্রতিয়মান।
কারণ ট্রাম্পের ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি চুক্তির দিকে নজর দিলে দেখা যায়:
** চুক্তিতে বলা হয়েছে, ফিলিস্তিনি স্বাধীনতাকামী সংগঠন পিএলও এবং হামাসের সঙ্গে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষর করবে ইসরায়েল।
** পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকা নিয়ে নতুন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে
** গাজার ক্ষমতাসীন সশস্ত্র সংগঠন হামাস ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের কাছে তাদের অস্ত্র জমা দেবে
** পশ্চিম তীরের বসতিগুলোর নিয়ন্ত্রণ থাকবে ইসরায়েলের হাতে
** জেরুজালেম হবে নতুন ফিলিস্তিন ও ইসরায়েলের যৌথ রাজধানী
** নতুন গঠিত ফিলিস্তিনের সামরিক বাহিনী থাকবে না। ইসরায়েলি নিরাপত্তা বাহিনী অর্থের বিনিময়ে নতুন ফিলিস্তিনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে
** নতুন ফিলিস্তিনের নাগরিকদের জন্য মিসরের দেয়া জমিতে গড়ে উঠবে বিভিন্ন কল-কারখানা
কিন্তু যাদের নিয়ে এই চুক্তি স্বয়ং সে পক্ষেরই সম্মতি অনুপস্থিত এই প্রস্তাবনায়। অপর পক্ষের তীব্র আপত্তি স্বত্বেও ট্রাম্প প্রশাসনের এমন অদ্ভুত প্রস্তাবনা শান্তি তো নয় বরং ফিলিস্তিনিদের সব অধিকার বঞ্চিত করার আনুষ্ঠানিকতারই নামান্তর বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। কিন্তু এই দখলদারিত্ব কায়েমের প্রস্তাবনার নিকট কি আরব বিশ্ব আত্মসমর্পণ করবে নাকি প্রকাশিত তথাকথিত শান্তি পরিকল্পনা প্রত্যাখ্যান করে ফিলিস্তিনের রক্ষায় সচেষ্ট হবে। আরব বিশ্বের আঞ্চলিক সংকটের পরিস্থিতিকে পুঁজি করে আরবদের মাধ্যমে ফিলিস্তিনিদের শতাব্দী চুক্তি মানতে বাধ্য করার চেষ্টা করা হবে! ।
এই প্রস্তাবনার ফলে মূলত বিভিন্ন দেশে যেসব ফিলিস্তিনি শরণার্থী রয়েছেন তারা আর তাদের ভিটেমাটিতে ফেরার সুযোগ পাবে না। গাজা আর পশ্চিম তীরের বাকি জায়গাটুকুই কেবল ফিলিস্তিনের অধিকারভুক্ত থাকবে এবং সমগ্র বায়তুল মুকাদ্দাস ইসরায়েলকে হস্তান্তর করা হবে যা সত্যিকার অর্থে বড় সংকটকেই ইঙ্গিত করে।
অন্যদিকে ট্রাম্প ও নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে স্ব স্ব দেশে দুর্নীতি, ক্ষমতা অপব্যাবহার ও ইম্পিচমেন্টের তৎপরতা চলছে। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিনেটে চলছে ইম্পিচমেন্টের প্রস্তুতি। আর নেতানিয়াহুর বিরুদ্ধে ঘুষ, প্রতারণা ও একগাদা দুর্নীতির সম্পৃক্ততার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার কৌশল কিনা এই প্রস্তাবনা তাও ভাবা হচ্ছে। তবে যাই হোক,ডিল অব দ্য সেঞ্চুরি (শতাব্দী চুক্তি) শান্তি তো নয় বরং প্রহসনের নতুন মাত্রা যোগ করতে চলছে বিশ্ব রাজনীতিতে।
[email protected]
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ রাত ১০:৩৯