somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমির নামজারি বৃত্তান্ত

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জমির মালিক হওয়ার পর মিউটেশন বা নামজারি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। জমির মালিকানা দাবি করা, মালিকানা করা জমি ক্রয় বা বিক্রয়ের ক্ষেত্রে জমির `নামজারি` গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনি যদি একটু সচেতন হোন ও সতের্কতা অবলম্বন করেন, তাহলে নামজারি খুব কঠিন কিছু নয়।

জমির নামজারির জন্য সহকারী কমিশনার (ভূমি) বরাবর আবেদন করতে হয়। সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে মিউটেশন সহকারি পদের একজন দায়িত্বে থাকে। নাজির পদের একজন ফি জমা নেন। তহশিলদাররা তদন্তের দায়িত্বে থাকেন।

কোনো আবেদন করা হলে এ নামজারি করা জমির ওপর তদন্ত করার নিয়ম আছে। অনেকে বিভ্রান্ত হয়ে তহশিলদারের অফিসে নামজারির আবেদন করে থাকে। এটা ঠিক নয়। সব সময় মিউটেশন বা নামজারির জন্য আবেদন করতে হবে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে।

**নামজারি করা কখন প্রয়োজন হয়:

• ভূমি মালিকের মৃত্যুর কারণে উত্তরাধিকারদের নাম সরকারি রেকর্ডে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;

• জমি বিক্রি, দান, হেবা, ওয়াকফ, অধিগ্রহণ, নিলাম ক্রম, বন্দোবস্ত ইত্যাদি সূত্রে হস্তান্তর হলে নতুন ভূমি মালিকের নামে রেকর্ডভুক্ত করতে হয়;

• দেওয়ানী বা সিভিল কোর্টের রায় বা ডিক্রীমূলে মালিকানা লাভ করলে সে রায় মোতাবেক নামজারির আবেদন করা যায়।


**নামজারি আবেদনে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:

প্রথমেই জেনে রাখা প্রয়োজন, একটি পূর্ণাঙ্গ নামজারি আবেদনের জন্য আপনার নিচের কাগজপত্রগুলি থাকতে হবে:

• মূল আবেদন ফরম্ (এটি বাধ্যতামূলক)

• ১ কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি (একাধিক ব্যক্তির ক্ষেত্রে প্রত্যেকের জন্যও প্রযোজ্য) (বাধ্যতামূলক)

• সর্বশেষ খতিয়ান (যাঁর নিকট হতে জমি ক্রয় করেছেন বা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছেন তাঁর খতিয়ান) (এটি বাধ্যতামূলক)

• ২০ টাকা মূল্যের কোর্ট ফি (বাধ্যতামূলক)

• ওয়ারিশসূত্রে মালিকানা লাভ করলে অনধিক তিন মাসের মধ্যে ইস্যুকৃত মূল ওয়ারিশন সনদ (শুধুমাত্র ওয়ারিশগনদের জন্য বাধ্যতামূলক)। এর সাথে মনে রাখতে হবে যে, রাষ্ট্রীয় অধিগ্রহণ ও প্রজাস্বত্ব আইনের ১৪৩B ধারা মোতাবেক কোন রেকর্ডিয় মালিক মৃত্যুবরণ করলে তার ওয়ারিশগণ নিজেদের মধ্যে একটি বন্টননামা সম্পাদন করে রেজিস্ট্রি করবেন। উক্ত রেজিস্টার্ড বন্টননামাসহ নামজারির জন্য আবেদন জানাবেন। তবে দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য-বেশিরভাগ ওয়ারিশগণ এই নিয়মটি প্রতিপালন করেন না এবং ভবিষ্যতে সমস্যার মুখোমুখি হন।

• জাতীয় পরিচয়পত্র/পাসপোর্ট/জাতীয়তা সনদ (ওয়ার্ড কাউন্সিলর কর্তৃক ইস্যুকৃত) (বাধ্যতামূলক)

• ক্রয়সূত্রে মালিক হলে দলিলের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (ক্রয়সুত্রে মালিক হলে বাধ্যতামূলক)

• বায়া/পিট দলিলের ফটোকপি (একাধিকবার উক্ত জমি ক্রয়-বিক্রয় হয়ে থাকলে সর্বশেষ যার নামে খতিয়ান হয়েছে তার পর থেকে সকল দলিলের কপি প্রয়োজন হবে, অর্থাৎ বাধ্যতামূলক)

• চলতি বঙ্গাব্দ (বাংলা সনের) ধার্যকৃত ভূমি উন্নয়ন কর (এলডি ট্যাক্স) বা খাজনার রশিদ (বাধ্যতামূলক)

• আদালতের রায়ের ডিক্রির মাধ্যমে জমির মালিকানা লাভ করলে উক্ত রায়ের সার্টিফায়েড/ফটোকপি (বাধ্যতামূলক)



উল্লেখ্য, উপরোক্ত কাগজপত্রের সবগুলিই যে আপনার জন্য প্রয়োজন হবে, তা নাও হতে পারে। কোনভাবে আপনি মালিকানা লাভ করেছেন তার উপর নির্ভর করবে কোন্ কোন্ সংযুক্তি আপনার প্রয়োজন হবে।


বিশেষ দ্রষ্টব্য
• কোন কোন নামজারি মামলা প্রক্রিয়াধীন অবস্থায় কোন সুনির্দিষ্ট অভিযোগ/আপত্তি/দখল/দলিল/ওয়ারিশগণদের মধ্যে বন্টন সংক্রান্ত সমস্যা ইত্যাদির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নামজারি সম্পন্ন সম্ভব না-ও হতে পারে। এসব জটিলতার কারণে নির্ধারিত প্রক্রিয়ার বাইরে এসি (ল্যান্ড) এর নির্দেশনা অনুযায়ী সম্পন্ন হয়ে থাকে।
• একটি নামজারি প্রক্রিয়া নিষ্পত্তি হওয়ার জন্য মহানগরের ক্ষেত্রে ৬০ (ষাট) কার্যদিবস সরকার কর্তৃক নির্ধারিত রয়েছে।
• নামজারির ক্ষেত্রে সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের হেল্পডেস্ক (সেবাকেন্দ্র) হতে সর্বমোট 50 টাকায় সকল ফর্ম (কোর্ট ফি সহ) পাওয়া যায়। কাজেই এজন্য বাইরে অন্যদের নিকট হতে বেশি দামে ফর্ম বা কোর্ট ফি না কিনে এসি ল্যান্ড অফিস হতে নেয়াটাই বেশি সুবিধাজনক।
• নামজারি অনুমোদন হয়ে গেলে খতিয়ান গ্রহনের জন্য সরকার নির্ধারিত ফি হল সর্বমোট ১১৫০/- টাকা।
• কোন প্রকার দালাল/ব্রোকার/মুন্সী ব্যতিত আপনি নিজেই নামজারির আবেদন করুন কিংবা আইনজীবীর সহায়তা নিন।

- এম টি উল্যাহ
আইনজীবী
০১৭৩৩৫৯৪২৭০

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২০ রাত ১২:৩৬
৯টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পিরিতের সংস্কৃতিওয়ালা তুমি মুলা’র দিনে আইলা না

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৬


---- আমাদের দেশে ভাষা, সংস্কৃতি এবং সামাজিক সমুন্নয়ন তলানিতে। তেমন কোন সংস্কৃতিবান নেই, শিরদাঁড়া সোজা তেমন মানুষ নেই। সংস্কৃতির বড় দান হলো ভয়শূন্য ও বিশুদ্ধ আত্মা। যিনি মানবের স্খলনে, যেকোন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসরায়েল

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮

ইসরায়েল
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

এ মাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বাবাকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
নিরীহ শিশুদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এই বৃ্দ্ধ-বৃদ্ধাদের হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ ভাইক হত্যা করেছে ইসরায়েল
এ বোনকে হত্যা করেছে ইসরায়েল
তারা মানুষ, এরাও মানুষ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

গ্রামের রঙিন চাঁদ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১২


গ্রামের ছায়া মায়া আদর সোহাগ
এক কুয়া জল বির্সজন দিয়ে আবার
ফিরলাম ইট পাথর শহরে কিন্তু দূরত্বের
চাঁদটা সঙ্গেই রইল- যত স্মৃতি অমলিন;
সোনালি সূর্যের সাথে শুধু কথাকোপন
গ্রাম আর শহরের ধূলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১৭



পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ধ্বংসাবশেষঃ
পালবংশের দ্বিতীয় রাজা শ্রী ধর্মপালদেব অষ্টম শতকের শেষের দিকে বা নবম শতকে এই বিহার তৈরি করছিলেন।১৮৭৯ সালে স্যার কানিংহাম এই বিশাল কীর্তি আবিষ্কার করেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরবাসী ঈদ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৬ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:২৩

আমার বাচ্চারা সকাল থেকেই আনন্দে আত্মহারা। আজ "ঈদ!" ঈদের আনন্দের চাইতে বড় আনন্দ হচ্ছে ওদেরকে স্কুলে যেতে হচ্ছে না। সপ্তাহের মাঝে ঈদ হলে এই একটা সুবিধা ওরা পায়, বাড়তি ছুটি!... ...বাকিটুকু পড়ুন

×