somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নবালক সন্তানের শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবকত্ব নিয়ে আইনের বিধান/মামলা করার নিয়ম

১০ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৩০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিবাহ বিচ্ছেদ হয়ে গেলে কিংবা স্বামী/স্ত্রী কোন একজনের মৃত্যুর পর সন্তানেরা কার কাছে থাকবে বা কে হবে তাদের অভিভাবক/তত্ত্বাবধায়ক হবে তা নিয়ে প্রায়ই সমস্যা দেখা দেয়। নাবালক সন্তানের ত্বত্তাবধান, অভিভাবকত্ব ও ভরনপোষণের বিষয়গুলি পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ ও গার্ডিয়ানস এন্ড ওয়ার্ডস অ্যাক্ট ১৮৯০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। আইন অনুযায়ী, নাবালকের স্বাভাবিক ও আইনগত অভিভাবক হলেন বাবা। তার অনুপস্থিতিতে বা অভিভাবক হিসেবে তার অযোগ্যতায় মা, অথবা আদালতে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নিয়োজিত ব্যক্তি নাবালকের ‘শরীর ও সম্পত্তির অভিভাবক’ হতে পারেন। তবে নাবালকের সার্বিক কল্যাণের গুরুত্বের ওপরে নির্ভর করে দেশে প্রচলিত মুসলিম আইন অনুযায়ী, মাকে নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সন্তানের জিম্মাদারিত্বের অধিকার দেয়া হয়েছে।

পারিবারিক আদালত অধ্যাদেশ ১৯৮৫ অনুসারে, সাধারনত একজন শিশু সন্তানের ত্বত্তাবধানের অধিকার বা দায়িত্ব একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পেয়ে থাকে ঐ শিশু সন্তানটির মাতা। শিশুসন্তানের দেখাশোনার বিষয়ে (জিম্মাদারির ক্ষেত্রে )সবচেয়ে বড় অধিকারী হলেন মাতা। তিনি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সন্তানের জিম্মাদার হয়ে থাকেন; কিন্তু তিনি কখনও অভিভাবক হতে পারেন না।
নিম্নোল্লিখিত নির্দিষ্ট সময়ের জন্য একজন মাতা তার শিশু সন্তানের ত্বত্তাবধানের দায়িত্ব বা অধিকার পেয়ে থাকেন
ছেলে সন্তানের ক্ষেত্রে ৭ বছর আর মেয়ে সন্তানের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত। অর্থাৎ স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটলে বা স্বামী মারা গেলে ছেলেসন্তান ৭ বছর পর্যন্ত এবং মেয়েসন্তান বয়ঃসন্ধিকাল পর্যন্ত মায়ের হেফাজতে থাকবে, এটাই আইন । এক্ষেত্রে মায়ের অধিকার সর্বাগ্রে স্বীকৃত। এ সময়ের মধ্যে মায়ের অগোচরে যদি বাবা জোরপূর্বক সন্তানকে নিজের হেফাজতে গ্রহণ করেন, সেক্ষেত্রে পিতার বিরুদ্ধে মামলা করা দেয়া যাবে।

জিম্মাদারিত্বের নির্দিষ্ট বয়স পার হলে সন্তান যে বাবার জিম্মায় যেতে বাধ্য হবে, তা নয়। নির্দিষ্ট বয়সের পরও তার সার্বিক কল্যাণের বিষয়টি বিবেচনা করে সন্তানের জিম্মাদারিত্বের দায় ফের মায়ের কাছে ন্যস্ত হতে পারে। ‘সার্বিক কল্যাণ’ বলতে আইন অনুযায়ী সন্তানের পার্থিব, নৈতিক এবং আধ্যাত্মিক কল্যাণকে বোঝানো হয়ে থাকে। তা শিশুটির নিরাপত্তার পাশাপাশি সুন্দর ও উত্তমরূপে তাকে প্রতিপালনের বিষয়ও অন্তর্ভুক্ত করে।

অভিভাবকত্ব এবং নাবালক সন্তানের জিম্মাদারিত্বের জন্য পারিবারিক আদালতের মাধ্যমে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা যায়।

কীভাবে আইনের আশ্রয় নেবেন

উভয় পক্ষ যেখানে বসবাস করে বা সর্বশেষ বসবাস করেছে এবং যে পারিবারিক আদালতের স্থানীয় সীমার মধ্যে সমস্যা উদ্ভূত হয়েছে, সেই আদালতে মামলা করতে হবে। পারিবারিক আদালতে আইন চর্চা করেন এমন একজন অভিজ্ঞ আইনজীবীর মাধ্যমে আদালতে আবেদন করতে হবে। পারিবারিক আদালতের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে এখানে নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসার মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তির সুযোগ রয়েছে। একবার মামলার বিচার শুরু হওয়ার আগে এক দফা এবং পরবর্তী সময়ে রায় ঘোষণার আগে দ্বিতীয় দফায় আপোসের সুযোগ রয়েছে। তাই পারিবারিক বিষয়ে আদালতে গেলেও নিজেদের মধ্যে আপস মীমাংসা করে নেওয়াই উচিত। আবার আপসমূলে আদালতের ডিক্রি নেওয়ার সুযোগও রয়েছে।

পারিবারিক আদালত অভিভাবকত্ব ছাড়াও নিম্নোক্ত চারটি বিষয়ের সবগুলোর বা যে কোনটির সাথে সর্ম্পকিত বা উদ্ভূত যে কোন মামলা গ্রহণ,বিচার ও নিস্পত্তি করতে পারে৷

১. বিবাহ বিচ্ছেদ

২. দাম্পত্য সর্ম্পক পুনরুদ্ধার

৩. মোহরানা

৪. ভরণপোষণ

এমন কোন একটি বিষয়ে পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছে? তাহলে আপনি পারিবারিক আদালতের আশ্রয় নিতে পারেন। পারিবারিক কোনো বিরোধ নিষ্পত্তির জন্যই দেশে পারিবারিক আদালত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় সহকারী জজ আদালত পারিবারিক আদালত হিসেবে গণ্য হয়। আবার কিছু এলাকায় সহকারী জজ আদালতকে পারিবারিক আদালত হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে।


- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৫:৫২
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×