somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাহবুব তালুকদার স্মরণে

২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"একটি ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়া ছিল আমার জীবনের এক স্বপ্ন। সম্ভবত এই স্বপ্নই আমাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতা থেকে আমলাতন্ত্রের পথে নিয়ে এসেছিল। ১৯৬৮ সালে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন একটি ফিয়াট ৬০০ গাড়ী কিনেছিলাম। বেশ কিছুকাল ওটা চালিয়েছি এবং কোন দুর্ঘটনা ব্যতিরেকেই। তবু অনেক সাধ্যসাধনা করে তখন একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স যোগাড় করতে পারিনি। চট্টগ্রাম কোর্ট হাউসে গিয়ে কয়েকবার ধরনা দেয়ার পরেও কোন লাভ হয়নি। শেষবার যখন গেলাম, ট্রাফিকের ডিএসপি সাহেব বললেন,পরীক্ষায় পাস করতে না পারলে আমি কি করব? আমাকে বসতে বলার সৌজন্যটুকু পর্যন্ত তিনি প্রকাশ করেননি। আমি যখন তাঁর অফিসে কথা বলছিলাম, তখন একজন কম বয়সী তরুণ এলেন। ডিএসপি সাহেব তাঁকে দেখে শশব্যস্ত হয়ে চেয়ার ছেড়ে লাফিয়ে উঠে বললেন, আপনি এখানে কেন স্যার?
আমার ড্রাইভিং লাইসেন্স দরকার।
আমাকে স্যার আপনি ডেকে পাঠালেই পারতেন। ঠিক আছে, আমি আজই আপনাকে লাইসেন্স পৌঁছে দিয়ে আসব।
শুনে ভদ্রলোক খুশি হয়ে চলে গেলেন। উনি চলে যাওয়ার পর আমি ডিএসপি অফিসার কে বললাম, উনাকে পরীক্ষা দিতে হবে না?
আরে সাহেব! প্রায় ধমকে উঠলেন ডিএসপি, উনি হলেন অ্যাসিসট্যান্ট কমিশনার। উনার আবার পরীক্ষা কি?
সেদিন মনে হয়েছিল, এদেশে আসলে মানুষের দুটো জাত। একটি সরকারি মানুষ, অন্যটি বেসরকারি মানুষ। ঐ সহকারী কমিশনার হয়ত আমার ছাত্রও হতে পারতেন। কিন্তু তিনি তিনিই, এবং আমি আমিই। সেদিনই মনে হয়েছিল, যদি কোনদিন সরকারী চাকরিতে ঢোকার সুযোগ পাই,তাহলে একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স বানিয়ে ফেলব। তা না হলে লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ী চালাব। কপালে যা ঘটে ঘটুক।
বঙ্গভবনে এসে প্রথমেই ঠিক করলাম, একটা ড্রাইভিং লাইসেন্স করা প্রয়োজন। গ্যারেজ সুপারভাইজার খুরশীদুল ইসলামকে জানাতেই তিনি বললেন, স্যার! বঙ্গভবনে এতজন ড্রাইভার থাকতে আপনার ড্রাইভিং লাইসেন্সের প্রয়োজন কি? ড্রাইভাররা কাজ না পেলে বরং ছাঁটাই হয়ে যেতে পারে।
বললাম, আমার ড্রাইভিং লাইসেন্সের সঙ্গে বঙ্গভবনের ড্রাইভারদের কোন সম্পর্ক নেই। চিরকাল এখানে থাকব না, সুতরাং ওটা করে নেয়াই ভাল।
খুরশীদ আর দ্বিরুক্তি করেন নি। আমার পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে চলে গিয়েছিলেন।
দিন কয়েক পরে ট্রাফিকের ডিএসপি এলেন অফিসে। ড্রাইভিং লাইসেন্স তুলে দিলেন আমার হাতে। বললেন, যে কোন প্রয়োজনে আমাকে বলবেন স্যার। আপনাদের খেদমত করার জন্য আছি।
তাঁকে বসিয়ে আপ্যায়ন করলাম। লাইসেন্সখানা পেয়ে মনে মনে আবেগে আপ্লুত হলাম। এটা পাওয়ার জন্য আমি কম চেষ্টা করিনি। আজ কত সহজে এটা হাতে এসে গেল! কোন পরীক্ষা দিতে হল না, টাকা পয়সাও না। তাঁক বিদায় দিয়ে আমার ব্যক্তিগত সহকারি আবদুল গণি হাওলাদারকে ডাকলাম। বললাম, একজন মানুষের কি কি লাইসেন্স সার্টিফিকেটের দরকার হয়?
গণি কথাটা প্রথমে বুঝতে পারেননি। পরে বললাম, পাসপোর্ট, বন্দুক-রিভলবারের লাইসেন্স, বার্থ সাটিফিকেট, ডেথ সার্টিফিকেট...
ডেথ সার্টিফিকেট স্যার? গণি প্রশ্ন করলেন।... আমি বললাম, যদিও ওটা জোগাড় করে রাখতে পারলেই ভাল হত।"- মাহবুব তালুকদার, 'বঙ্গভবনে পাঁচ বছর' নামক আত্মজৈবনিক গ্রন্থটিতে এমন অসংখ্য স্মৃতি অবলীলাক্রমে বর্ণনা করেছেন। পেশার পাশাপাশি লেখালেখিতে অবদান রেখে গিয়েছেন। আজীবন আপোষহীনভাবে আমলাতন্ত্রের সহিত সম্পৃক্ত ছিলেন। ২০১৭-২০২১ হুদা মার্কাদের বিপরীতে একমাত্র আপনিই জনগণের সেবক ছিলেন। বড় কঠিন সময়ে চলে গেলেন।
সৎ সাহস, সততা ও দেশপ্রেমের মাঝে আপনি ভালোবাসায় থাকবেন স্যার।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫৭
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×