somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নিন

০২ রা নভেম্বর, ২০২২ বিকাল ৪:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রাষ্ট্রপতির মেয়াদ শেষে, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে পদ শূন্য হলে রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান রয়েছে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন, ১৯৯১ এর বর্ণিত পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের ১২৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য কি বলা হয়েছে তা হুবহু দেখা যাক;

১২৩। [(১) রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসানের কারণে উক্ত পদ শূন্য হইলে মেয়াদ-সমাপ্তির তারিখের পূর্ববর্তী নব্বই হইতে ষাট দিনের মধ্যে শূন্য পদ পূরণের জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে:
তবে শর্ত থাকে যে, যে সংসদের দ্বারা তিনি নির্বাচিত হইয়াছেন সেই সংসদের মেয়াদকালে রাষ্ট্রপতির কার্যকাল শেষ হইলে সংসদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ শন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না, এবং অনুরূপ সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন হইতে ত্রিশ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।
(২) মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইলে পদটি শূন্য হইবার পর নব্বই দিনের মধ্যে, তাহা পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।]

তার মানে এখানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ৩ টি উপলক্ষ্য ও পদ্ধতি বর্ণিত রয়েছে।

প্রথমত, রাষ্ট্রপতি-পদের মেয়াদ অবসান শেষ হলে মেয়াদ শেষ হওয়ার পূর্বের ৯০-৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।

দ্বিতীয়ত, রাষ্ট্রপতি যে সংসদ দ্বারা নির্বাচিত হয়েছেন সে সংসদের মেয়াদ শেষ কিন্তু রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হয় নি, সেক্ষেত্রে করণীয় কি? সেক্ষেত্রে করণীয় হলো, সংসদের পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত অনুরূপ শন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে না, এবং অনুরূপ সাধারণ নির্বাচনের পর সংসদের প্রথম বৈঠকের দিন হইতে ৩০ দিনের মধ্যে রাষ্ট্রপতির শূন্য পদ পূর্ণ করিবার জন্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে।

তৃতীয়ত, মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে করণীয় কি? করণীয় হলো, এমন ক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতি পদ শূন্য হলে শূন্য হইবার পর নব্বই দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হইবে। এটার সাথে মেয়াদ অবসান শেষ হওয়ার পার্থক্য হলো, মেয়াদ শেষ হলে শেষ হওয়ার পূর্বের ৯০-৬০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আর মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে পদটি শূন্য হইবার পর নব্বই দিনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হইবে। এবং মৃত্যু, পদত্যাগ বা অপসারণের ফলে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হলে পূর্ণ মেয়াদের জন্য নয় বরং অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য নির্বাচিত হবেন রাষ্ট্রপতি।

রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করার যোগ্যতা কি?

সংবিধান অনুযায়ী ৩৫ বছর তা তারও বেশি বসয়ী এবং সংসদ সদস্য নির্বাচনের যোগ্য যে কোনও ব্যক্তিই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন। তবে, তার মনোনয়নপত্রে প্রস্তাবক ও সমর্থক হিসেবে সংসদ সদস্য থাকতে হবে। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করার সময়ও তার সঙ্গে একজন সংসদ সদস্যকে উপস্থিত থাকতে হবে।

পদের মেয়াদঃ
বাংলাদেশের সংবিধানের ৫০ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী:
• রাষ্ট্রপতি তার পদে প্রবেশের তারিখ থেকে পাঁচ বছরের জন্য মেয়াদে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে শর্ত থাকে যে তাদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরেও রাষ্ট্রপতি তাদের উত্তরসূরি অফিসে প্রবেশ না করা অবধি পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন।
• কোনও ব্যক্তি দু'বারের অধিক মেয়াদে রাষ্ট্রপতির পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন না, এটি পরপর হোক বা না হোক।
• রাষ্ট্রপতি স্পিকারকে উদ্দেশ্য করে একটি চিঠি লিখে পদত্যাগ করতে পারেন।
• রাষ্ট্রপতি তাদের কার্যকালীন সময়ে সংসদ সদস্য হিসাবে নির্বাচনের জন্য যোগ্য নন এবং সংসদের কোনও সদস্য রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচিত হলে তারা রাষ্ট্রপতির পদে প্রবেশের দিন সংসদে তাদের আসন খালি ঘোষণা করবেন।

নির্বাচনে ভোটার কারা?

বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সংসদ সদস্যরা ( ৩৫০ জন এমপি, নির্বাচিত ৩০০ ও সংরক্ষিত ৫০) । আগে প্রত্যক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হলেও ১৯৯১ সালের ২ জুলাই সংবিধানের ১২তম সংশোধনীতে পরোক্ষ পদ্ধতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান করা হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৪৮ অনুসারে সংসদ-সদস্যদের ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। সংসদ সদস্য হিসেবে স্পিকারও এই নির্বাচনে একজন ভোটার।
অর্থাৎ রাষ্ট্রপতি নির্বাচন আইন ও বিধিমালা অনুযায়ী, একাধিক প্রার্থী হলে সংসদের অধিবেশন কক্ষে নির্বাচনি কর্মকর্তার সামনে নির্ধারিত ব্যালট পেপারে পছন্দের প্রার্থীর নাম ও নিজের স্বাক্ষর দিয়ে তা জমা দিতে হবে। এর মুড়ি অংশে স্বাক্ষর দিয়ে ভোটারদের ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। ভোট দেওয়ার পর সংসদ কক্ষে স্থাপিত এক বা একাধিক ব্যাটল বাক্সে তা জমা দিতে হবে।
ভোট শেষে নির্বাচন কমিশনার প্রকাশ্যে ভোট গণনা করবেন। সর্বাধিক সংখ্যক ভোটপ্রাপ্তকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ঘোষণা করা হবে। আর সমান ভোট পেলে প্রার্থীদের মধ্যে লটারির মাধ্যমে ফল নির্ধারণ করা হবে।


নির্বাচন পরিচালনার বিধানঃ

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ‘নির্বাচনি কর্তা’ হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন পরিচালনা করেন।রাষ্ট্রপতি নির্বাচন করতে হলে স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে সিডিউল ঘোষণা করেন। নির্বাচনি সিডিউল ঘোষণার আগে কমিশন সংসদ সদস্যদের বিভক্তি সংখ্যা (সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদ সদস্যদের জন্য বরাদ্দকৃত বিভক্তি সংখ্যা), নাম ও নির্বাচনি এলাকা উল্লেখ করে ভোটার তালিকা প্রস্তুত ও প্রকাশ করবে।

নির্বাচন কোথায় অনুষ্ঠিত হয়?


জাতীয় সংসদের সংসদ-সদস্যদের বৈঠক সংসদ কক্ষে। সংসদ অধিবেশনের সময় এই নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। তবে, রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের প্রয়োজনীয় সময়ে যদি অধিবেশন না থাকে, তাহলে নির্বাচন কমিশন স্পিকারের সঙ্গে আলোচনা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে ভোটগ্রহণের কমপক্ষে সাতদিন আগে অধিবেশন আহ্বান করবে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে স্বাভাবিক সময়ের মতো রাষ্ট্রপতিকে অধিবেশন ডাকতে হবে না।


কখন ভোটের প্রয়োজন পড়ে না?


রাষ্ট্রপতি পদে একক প্রার্থী হলে বিধান অনুযায়ী ভোটগ্রহণের প্রয়োজন পড়ে না।

ভোটের নজিরঃ

১৯৯১ সালে পরোক্ষ ভোটে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের বিধান চালু হওয়ার পর থেকে মাত্র একবার রাষ্ট্রপতি পদে একাধিক প্রার্থী থাকায় সংসদে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ১৯৯১ সালের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তৎকালীন ক্ষমতাসীন বিএনপি আব্দুর রহমান বিশ্বাসকে রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আর ওই সময়ে বিরোধী দল ও বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রার্থী করেছিল বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরীকে। ওই নির্বাচনে আব্দুর রহমান বিশ্বাস বিজয়ী হন। এছাড়া প্রত্যেক বার একক প্রার্থী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন।

রাষ্ট্রপতিকে অভিসংশন করার পদ্ধতিঃ

রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বৈধ অভিযোগ আনা হলে এবং সংসদের দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি ভোটের সমর্থন পেলে তাকে অভিশংসন করা যায়।

-- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৪:০৬
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×