somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দলিল যার ভূমি কি আসলেই তার? নতুন ভূমি আইনে মতে দলিলের সংজ্ঞাসহ নানাবিধ দিক

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বুঝে না বুঝে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ পাশ হওয়ার পরই সর্বত্র হৈচৈ শুরু হয়ে গিয়েছে। সবাই এটা নিয়ে মেতে ওঠেছে। মূলত “দলিল যার জমি তার” মুখরোচক স্লোগানটি ভালোই জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এই আইনের প্রয়োগের চেয়ে অপপ্রয়োগ হলে সাধারণ মানুষ কতটা বিপদে পড়বে সেটা নিয়ে কোন বিশ্লেষণ চোখে পড়ছে না। অথচ আইনের প্রয়োগিক বিষয় পর্যালোচনা করলে আশার পাশাপাশি হতাশারও নানাবিধ দিক রয়েছে। এটা ঠিক, চলমান ভূমি নিয়ে অরাজকার রাজত্বে ভূমি সমস্যা নিরসনকল্পে দেশের বিদ্যমান আইন ও বিচারিক কার্যক্রেমের অতিরিক্ত হিসাবে এই আইনটি যদি সত্যিকার অর্থে প্রয়োগ করা যায় তাহলে কিছুটা হলেও উপকারে আসবে। কিন্তু সমস্য হলো আইনের প্রয়োগের ক্ষেত্রে জটিলতা এবং আইনগতভাবে অস্বয়ংসম্পূর্তা।

প্রথমে আসা যাক, দলিল যার জমি তার বিষয়টি আসলেই কি। পূর্বে কি দলিল যার মালিকানা তার ছিলো না?

ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ মোতাবেক দলিল বলতে শুধু সম্পত্তির হস্তান্তরের কিংবা মালিকানা অর্জনের দলিলকেই বুঝানো হয় নি বরং সংজ্ঞার মধ্যে নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র প্রভূতিকে দলিল হিসাবে গণ্য করা হয়েছে।
আইনের সংজ্ঞাটি হুবহু তুলে ধরা হলোঃ
“দলিল” অর্থে ভূমির মালিকানা হস্তান্তর বা বন্টনের উদ্দেশ্যে সম্পাদিত বা কৃত যে কোনো দলিল, বায়না দলিল, রসিদ, আম মোক্তারনামা, নকশা, স্কেচ ম্যাপ, হাত নকশা, খতিয়ান, ডুপ্লিকেট কার্বন রসিদ, ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধের দাখিলা, বরাদ্দপত্র, ছাড়পত্র, অনাপত্তিপত্র, এফিডেভিট এবং এতদসংক্রান্ত অন্য কোনো দলিলও ইহার অন্তর্ভুক্ত হইবে,

তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। কারণ খতিয়ান সংশোধনের জন্য একবার ল্যান্ড সার্ভে মামলা হলে তা অনন্তকাল ধরে চলতে থাকলে এই আইন কি সমাধান দিতে পারবে? কিংবা যার খতিয়ান না থাকলে তিনি কি অবৈধ দখলদার হিসেবে গণ্য হবেন?

আইনের ৭ ধারার বিধান মোতাবেক State Acquisition and Tenancy Act, 1950 (Act No. XXVIII of 1951 ) এর section 143 বা 144 এর অধীন প্রণীত হালনাগাদকৃত বলবৎ সর্বশেষ খতিয়ান মালিক অথবা তাহার নিকট হইতে উত্তরাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তর বা দখলের উদ্দেশ্যে আইনানুগভাবে সম্পাদিত দলিল বা আদালতের আদেশের মাধ্যমে মালিকানা বা দখলের অধিকার প্রাপ্ত না হইলে, কোনো ব্যক্তি উক্ত ভূমি স্বীয় দখলে রাখিতে পারিবেন না।
তবে, শর্ত থাকে যে, উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা বা অন্য কোনো কার্যধারা দায়ের করিয়া থাকিলে তাহার উক্ত কার্য এই ধারার অধীন অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।


তার মানে বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। তবে , উত্তারাধিকারসূত্রে বা হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার রেকর্ড সংশোধন বা স্বীয় স্বত্ব ঘোষণার দাবিতে মামলা করলে অপরাধ বলিয়া গণ্য হইবে না।
এখানে হস্তান্তরের মাধ্যমে মালিকানাপ্রাপ্ত ভূমির দখলদার বিষয়টি প্রমাণ সাপেক্ষে বিষয় বিধায় এই ধারা কতটুকু কার্যকর করা যাবে তা চিন্তার বিষয়। অপরদিকে, এই ধারায় কোন অপরাধ সংগঠিত হলে সর্বোচ্চ শাস্তি ২ বছর পর্যন্ত কারাদন্ড এবং জরিমানাও করতে পারবে। সবচেয়ে ভাবনার বিষয় হলো, এই বিচার টা সরাসরি মোবাইল কোর্ট দ্বারা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরাও করতে পারবে। এখন মোবাইল কোর্টের বিচার দ্বারা সাধারণ মানুষ প্রভাবশালীদের দ্বারা প্রভাবিত হওয়ার বা স্বীয় ভূমি হইতে উচ্ছেদ হওয়ার একটা আশঙ্কা থেকেই যায়। প্রক্ষান্তরে, সঙ্গবদ্ধ ভূমি দস্যু বড় বড় কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো এই ধরার প্রয়োগ করে ভূমি দখলের একটা অঘোষিত লাইসেন্স পেয়ে যেত পারে!

অপরদিকে আইনের ৮ (৭) ধারায় বলা হয়েছে;
কোনো দেওয়ানি আদালতে দখল পুনরুদ্ধার সংক্রান্ত কোনো মামলা বিচারাধীন থাকিলে একই বিষয়ে এই ধারার অধীন কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাইবে না।

তাহলে এই আইনের প্রয়োগ কি আসলেই আইনত কতটুকু সম্ভব?

ভূমির স্বত্ব সংরক্ষণ ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল বজায় রাখার লক্ষ্যে ভূমি সংক্রান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এর বিলটি একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ। তবে, আইনটি অনেকটা তড়িগড়ি করে এবং অনেক বিষয়ের সুষ্পষ্ট ব্যাখ্যা দেওয়া হয় নি। আশাকরি বিধিতা তা সুষ্পষ্ট করা হবে। তবে, আইনটির প্রণয়নের ক্ষেত্রে আমলা নির্ভরতার পাশাপাশি অভিজ্ঞ বিজ্ঞ আইনজীবীদের প্যানেলে রাখা হলে বাস্তবতার আলোকে আরো ভালো ফলাফল আসতে পারে। এই আইনে মোবাই্ল কোর্টের বিধান রাখার মাধ্যমে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটদের ব্যাপক ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ এর দ্বারা কতটুকু সুবিধে পাবে তা বিবেচনার বিষয় রয়েছে। দলিলের যে সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে তা নিয়ে মালিকানার জটিলতা নিরসন বা সিদ্ধান্ত প্রদান বরাবরেই সময় সাপেক্ষে বিষয় হয়ে পড়বে। আইনের ৭ ধারাটি একটি ভয়ংকর ধারা। ওই ধারায় বলা হচ্ছে আপনার নামে রেকর্ড না থাকলে আপনি ভূমি দখলে রাখতে পারবেন না। তার মানে বিষয়টি হলো সম্পত্তি সংক্রান্তে খতিয়ানও দলিল হিসাবে গণ্য হবে এবং খতিয়ান যার জমির মালিকানাও তার হবে! এখন যদি খতিয়ানে ভুল আসে সেক্ষত্রে প্রকৃত মালিকও খতিয়ান সংশোধনীর পূর্বে ভোগান্তিতে পড়ে যাবেন কারণ খতিয়ান সংশোধন তো সময় সাপেক্ষে বিষয়। এই ক্ষেত্রে মূল মালিকও দখলচ্যুত হতে পারেন। কারণ, ভূমি রেকর্ড প্রক্রিয়াটিই ১০০% স্বচ্ছ নয়।
তবুও, নাগরিকগণের নিজ নিজ মালিকানাধীন ভূমিতে নিরবচ্ছিন্ন ভোগদখলসহ প্রাপ্য অধিকারসমূহ নিশ্চিতকরণ, ভূমি বিষয়ক প্রতারণা ও জালিয়াতির ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ এবং এর প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, সরকারি ও সর্বসাধারণের ব্যবহার্য ভূমি সম্পর্কিত অপরাধসমূহ প্রতিরোধ ও দমনে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, ভূমি সংক্রান্ত কিছু অপরাধের দ্রুত প্রতিকারের ব্যবস্থা গ্রহে লক্ষ্যে উক্ত আইন পজিটিভ ভূমিকা রাখবে মর্মে আমরা আশা করতেই পারি!



- মোহাম্মদ তরিক উল্যাহ
অ্যাডভোকেট
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
০১৭৩৩৫৯৪২৭০ ( কল করার পূর্বে হোয়াটস্অ্যাপে ম্যাসেজ দিন)

লেখক- আইন বিষয়ক উপন্যাস 'নিরু" এবং 'অসমাপ্ত জবানবন্দী', মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস 'মায়ের মুখে মুক্তিযুদ্ধ' এবং 'একাত্তরের অবুঝ বালক' ।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ বিকাল ৩:০৩
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্মৃতিপুড়া ঘরে

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৩০



বাড়ির সামনে লম্বা বাঁধ
তবু চোখের কান্না থামেনি
বালিশ ভেজা নীরব রাত;
ওরা বুঝতেই পারেনি-
মা গো তোমার কথা, মনে পরেছে
এই কাঠফাটা বৈশাখে।

দাবদাহে পুড়ে যাচ্ছে
মা গো এই সময়ের ঘরে
তালপাতার পাখাটাও আজ ভিন্নসুর
খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×